মৃত ভার্চুয়াল গ্ৰুপ
- আহসানুল হক
জন্মের মতোই মৃত্যুটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা
তবুও আমরা মেনে নিতে পারি না
বিশেষ করে প্ৰিয়জনের চলে যাওয়া
হোক সে বাবা মা ভাই বোন
কিংবা কাছের বন্ধু অথবা নিকট স্বজন;
আজকাল ভার্চুয়াল জগৎ এক করেছে আমাদের অনেককেই
বিশেষ করে পুরনো বন্ধু বান্ধবদেরকে,
এক একটা গ্ৰুপ এক এক ধরণের
কিছু তুতো ভাইবোনের
কিছু আত্মীয় স্বজনের
কিছু স্কুল কলেজের সহপাঠীদের
কিছু খেলার মাঠের সাথিদের,
আমি মানুষ একজন তবুও সদস্য অনেক গ্ৰুপের;
এই যে ভার্চুয়াল জুড়ে এত এত গ্রুপ!
এরা সবাই কিন্তু আমার আপন
কতক্ষণ?
আমি ভার্চুয়ালে যতক্ষণ
তারপর নেট বিচ্ছিন্ন হলেই
সবাই যে যার মতন,
তবুও দিনের কোনও না কোন একটা সময় ঘুরে আসি ভার্চুয়ালে
কে কি লিখছে দেখে আসি উঁকি মেরে
সরবে কিংবা নীরবে
হয়তো মাঝেসাঝে ওখানে আমিও টুকটাক বলি
কিংবা কখনো সময় হলে আমরা কোথাও একসাথে মিলি,
হয়তো আমাদের কারো কারো সাথে কথা হয়েছে অনেক
হয়তো তাদের সাথে দেখা হয় নি কখনো
হয়তো কারো সাথে না দেখেই ঝগড়া করেছি
কিংবা না দেখেই কারো সাথে মিতালি গড়েছি;
হয়তো অনেকদিন খোঁজ নিয়ে হয় নি কারও
হয়তো হঠাৎ করেই চুপ হয়ে গিয়েছে সে প্রোফাইল
অনেকদিন পরে জেনেছি সে চলে গিয়েছে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে
অথচ কোনও একসময় মিতালি ছিলো আমার
হয়তো তার সাথে গল্পে মেতেছিলাম সারারাত ধরে,
হয়তো এদেরই কারও সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করেছিলাম
ভুল বুঝতে পেরে মাফ চাইবো ভেবেছিলাম
সুযোগ হয় নি আর;
স্কুলের বন্ধুদের গ্ৰুপটা কতই বা আর বড়!
পঞ্চাশ বা পঞ্চান্ন, খুব বেশি হলে ধরো
একজন, একজন করে চলে যাওয়া শুরু
ওদের কাউকে ডাকতাম গাধা কাউকে বা গুরু
বন্ধুদের মধ্যে ডাকে সীমারেখা কোথায়
ওদের কেউ নেই শুনলেই মন ভরে ওঠে ব্যথায়;
এক এক করে চলে যাচ্ছে সবাই
এক এক করে কমে যাচ্ছে গ্ৰুপের সদস্য
মাত্র তিরিশ বছর বয়সে প্রথম ওপারে যাত্রা করেছিলো কে?
নামটা আমি বলব না, দেখি কার মনে আছে!
তারপরের জন গেলো পঁয়ত্রিশে, তারপর চল্লিশের মধ্যে আরও দুজন
তারপর নিয়মিত যাত্রা বিরতিতে;
আচ্ছা, ওরা কি ওপারে গিয়ে নতুন গ্ৰুপ খুলেছে?
ওরা কি ওখানে আমাদের অপেক্ষায় আছে?
একটা সময় আমিও অবশ্যই চলে যাব
একটা সময় এক এক করে যাবে সবাই,
আচ্ছা তখন গ্ৰুপটার কি হবে?
শেষ ব্যক্তিটা কে থাকবে এই গ্ৰুপে?
গ্রুপের সদস্যগুলো একটা সময় চলে যাবে
রয়ে যাবে তাদের পোস্টগুলো
তাদের টুকটাক লেখা আর বন্ধুদের সাথে কমেন্ট'সে খুনসুটি
তাদের ছবিগুলো, তাদের অনুভব আর অনুভূতি
শেষের দিকের তিন চার পাঁচ বা ছয়জন যে মানুষগুলো থাকবে
- তারা নিজেদের মাঝে কি নিয়ে আলোচনা করবে?
ওরা কি প্রতিমাসে কেক কেটে বিদায় নেওয়া এক একজনের জন্মদিন পালন করবে?
নাকি মোমবাতি জ্বালিয়ে এক একজনের মৃত্যুদিন স্মরণ করবে?
নাকি এরপর কে যাবে তার অপেক্ষায় দিন গুনবে?
আমি শেষ ব্যক্তি হতে চাই না কোনোভাবেই
মৃত একটা গ্ৰুপের স্মৃতির পাহাড় বহন করার ক্ষমতা নেই আমার।
#কবিতা
মৃত ভার্চুয়াল গ্ৰুপ
- আহসানুল হক
০৯ মার্চ, ২০২৩
লেপ্চাখা, উত্তরবঙ্গ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন