শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৩

লেন্সে লেন্সে ক্যামেরার চোখে

 লেন্সে লেন্সে ক্যামেরার চোখে

 - মোঃ আহসানুল হক 


একটা সময় ক্যামেরায় তাকাতাম, ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্সে 

ক্যামেরার লেন্সে চারিপাশের সবকিছু স্পষ্ট দেখা যেত

স্পষ্ট দেখা যেত মানুষের সুখ দুঃখ হাসি কান্না আর অনুভূতিগুলোর গভীরতা

দেখা যেত খুব কাছের রং গুলো দেখা যেত দূরের অস্পষ্ট হয়ে আসা আলো  

দেখা যেত কাছের অনুভূতিগুলো, দেখতে পেতাম দূরের অনুভবগুলোও  

স্বচ্ছ লেন্সের ঝকঝকে কাঁচের ভেতর দিয়ে ফুটে উঠতো প্রকৃতি 

একই সাথে ফুটে উঠতো মানুষের প্রতিবিম্বগুলোও 

শাটারের ক্লিক ক্লিক শব্দে;  


ওয়াইড এঙ্গেল লেন্সে ছবি তুললে যেমন মানুষের সুখ দুঃখের অনুভূতিগুলো দেখা যায়

তেমনি স্পষ্ট দেখা যায় মানুষের রাগ, দুঃখ, ঘৃণা আর রিপুগুলোকেও

একটা সময় মানুষের রিপুর কদর্যতা দেখে দেখে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়লাম,

খুব কাছে থেকে দেখলে বোঝা যায় মানুষের বেশিরভাগ সুখগুলো মেকি

মানুষের দুঃখ-কষ্টগুলো ক্যামেরায় ঠিকমতো ধরা পড়ছে না 

শাটারের ক্লিক ক্লিকে স্পষ্ট হয়ে আসা রিপুগুলো ক্যামেরার মনিটরে নাচছে

চারিদিকের এত কদর্যতা আর ভালো লাগছিল না, 

একবার ভাবলাম ক্যামেরা বিসর্জন দেব,


তারপর কি একটা চিন্তা করে ওয়াইড অ্যাঙ্গেল বাদ দিয়ে তুলে নিলাম জুম লেন্স

কাছের মানুষগুলোকে বাদ দিয়ে অনেক অনেক দূর থেকে প্রকৃতি তুলি 

পাখি তুলি এমনকি অনেক দূরের মানুষগুলোর অবয়বও তুলি

সে অবয়বে অনুভূতির তীব্রতা ফুটে ওঠে না, কখনো ফুটে উঠতে চাইলে ক্লিক আর করি না  

জুম লেন্সের একটা সুবিধা হল কাছের কোন কিছুই দেখা যায় না, দেখতে হয় অনেক দূরে

অত দূর থেকে পশুপাখি কিংবা শাটারের ক্লিক ক্লিক শব্দে

মানুষের প্রতিচ্ছবি হয়তো ভেসে ওঠে 

কখনো হয়তো ছবিতে মানুষের ঘামের ফোঁটা ফুটে ওঠে তবে কষ্টগুলো অতটা অনুভব করা যায় না

মুখে হাসি হয়তো ছবিতে দেখা যায়, মনের খুশিগুলোকে অনুভব করা যায় না

হঠাৎ হঠাৎ হয়তো শাটারের ক্লিকে ভেসে ওঠে একটি দুটি হিংস্র চেহারা 

তবে অতদূর থেকে অনুভব করা যায় না রিপুর কদর্যতা

দূর থেকে জুম লেন্সে শাটারের ক্লিক ক্লিক শব্দে তোলা ছবি - অনেকটাই আমার মত অনুভূতিহীন;


বয়সের সাথে সাথে একটা সময় ফিকে হয়ে আসতে লাগলো স্মৃতিগুলো

কোন একটা ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুকে হঠাৎ হঠাৎই মনে পড়ে যায় 

তার আশেপাশের ঘটনাগুলো আর মনে করতে পারিনা, 

একদিন চিন্তা করলাম এই যে ফিকে হয়ে আসা স্মৃতি! একে ক্যামেরার লেন্সে দেখা যাবে কি? 

কিছু স্পষ্ট আবার কিছু অস্পষ্ট ছবি দেখতে কেমন লাগবে?

কি যেন ভেবে একটা ম্যাক্রো লেন্স কিনলাম, 

ম্যাক্রো লেন্সের মজা কি জানো?

এত পাওয়ার-ফুল লেন্সে শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট বিন্দুকেই শাটারের ক্লিকে ধরতে পারা যায়

যে নির্দিষ্ট বিন্দুটাকে দেখতে চাও ঠিকমতো ফোকাস করতে পারলে 

সেটাই ঝকঝকে পরিষ্কার হয়ে ওঠে আর আশেপাশের সবকিছু ঝাপসা 

ঠিক যেন আমার হঠাৎ করে আমার মনে ভেতর চলে আসা স্মৃতিগুলোর মতোই

হঠাৎ হঠাৎ একটি দুটি নির্দিষ্ট স্মৃতি, তারপর মুহূর্তেই আশেপাশের ঝাপসা ঘটনাবলি 

মনের ভেতর স্মৃতির লুকোচুরি খেলা শুরুই হলেই ম্যাক্রো লেন্স হাতে বের হয়ে যাই

ঘাসের ডগায় শিশিরবিন্দু, মশা মাছি পোকা মাকড় তুলে নিয়ে আসি ক্যামেরার লেন্সে 

কখনো আরও গভীরে - মশা কিংবা মাছির চোখের ভেতরটাও দেখার চেষ্টা করি 

যেখানটাতে ফোকাস হয় শুধু সেটার ছবিই ওঠে, আর বাকি সব ঝাপসা

ঠিক যেন আমার স্মৃতির মত। 


 

#কবিতা 


১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ 


লেন্সে লেন্সে ক্যামেরার চোখে

 - মোঃ আহসানুল হক 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন