স্ত্রী বনাম ইস্ত্রি
- মোঃ আহসানুল হক
ঐদিন আমার দোস্ত Arup Kumar Das আমারে একটা ছবি পাঠাইছে। তাতে লেখা আছে ইফতারের পর ইস্ত্রিকে বুকে নিয়া শুয়ে থাকার জন্য, তাতে নাকি সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়। আজকে বাংলাদেশ শিক্ষা বোর্ড এর সাইট থেকে আবার একই রকম একটা শিক্ষামূলক বক্তব্য দিছে ইফতারের পর স্ত্রীকে নিয়ে বিছানায় শুয়ে থাকার জন্য, তাতে নাকি সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়। একটা বাংলাদেশ শিক্ষা বোর্ড আরেকটা আমার দোস্ত মহা পণ্ডিত অরূপ, একই বক্তব্য দিল। শুধু পার্থক্য হলো গিয়ে একজন বলছে স্ত্রী আরেকজন বলছে ইস্ত্রি।
আমি অনেকক্ষণ চিন্তায় দেখলাম দোস্ত অরূপের বক্তব্য বেশি যুক্তিযুক্ত। ইস্ত্রি বুকে নিয়ে শুইয়া থাকলে শরীরে কারেন্টের প্রবাহ হইলেও হইতে পারে, তাতে ক্লান্তি দূর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর শিক্ষা বোর্ডের কথা শুইনা যদি স্ত্রীরে ইফতারের পরে জরায় ধরতে যাই তাইলে তার কাছ থেকে মাইর খাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। ইফতারের পরে বাচ্চাকাচ্চা সব বাসায়, বাসায় তো সব এমনেই সময়ই থাকে তবে ওই সময়টা আমার ঘরে বসেই আড্ডা মারে; বাচ্চাকাচ্চার সামনে কি এগুলা করা যায়? ছি:! আমার লইজ্জা লাগে না?
অনেক চিন্তা ভাবনা কইরা শেষ পর্যন্ত কেউ যাতে না দেখে এই জন্য আমি গেস্ট রুমের বাত্তি নিভাইয়া ক্লান্তি দূর করার লাইজ্ঞা ইফতারের পর ইস্ত্রিটারে বুকে চাইপা শুয়ে রইলাম। পুরা রোজার মাসে ইফতারের পর কি করতাছি না করতেছি বউ একদিনও খবর নেয় না, সে থাকে তার রান্নাবান্নার কাজ নিয়া আর নয়তো বাচ্চাকাচ্চার সাথে। আজ কি হইল জানিনা, চা হাতে আমারে খুঁজতে খুঁজতে গেস্ট রুমের বাত্তি জ্বালাইয়া বুকের মধ্যে ইস্ত্রিরে জড়ানো অবস্থায় আমারে পাইল। আশ্চর্য হইয়া জিজ্ঞেস করল - তুমি ইস্ত্রি বুকে জড়াইয়া বিছানায় শুয়ে রইছো কেরে?
আমি মজা কইরা কইলাম তোমারে তো পাইনা তাই ইস্ত্রিই ভরসা।
সে কি বুঝল সেইই জানে, মুখ ঝামটাই কইলো বুইড়া হইতাছস আর খাটাশ হইতাছোস। থাক তুই ইস্ত্রি বুকে চাইপা। দেখমুনে ইস্ত্রি তোরে কেমনে গরম করে। কইয়াই সে বাত্তি বুজায় দিয়া আমারে চা না দিয়াই ঘর থাইক্কা বাইর হইয়া গেল। আমিও স্ত্রী চিন্তা কইরা ইস্ত্রিরে আরো জোরে বুকে জড়াইয়া শুয়ে রইলাম।
ওমা একটু পরে দেখি বুকে কেমন গরম গরম লাগে। ঘটনা কি? বউয়ের কথা কি সত্য হইল? ইস্ত্রি আমারে গরম করতাছে? আচ্ছা আমি কি ঘুমায় গেছিলাম নাকি স্বপ্ন দেখছিলাম? ওইটা মনে হয় বউ ছিল না কোন জিন পরী ছিল। নাইলে আমার স্ত্রী কেন কইব ইস্ত্রির আমারে গরম করার কথা? আর কইলো তো কইলোই, এরা লাইজ্ঞা ইস্ত্রিও আমারে গরম করা শুরু কইরা দিল? বউয়ের তো এই সময় আমার কাছে আসার কোন কথাই নাই, ওইটা কনফার্ম কোন জ্বিন পরি হইব। ভাইব্বা হালকা ইস্ত্রির গরমের আরামে আমার চোখ বুইজ্জা আইতেছিল।
এক মিনিট পড়ই ধাক্কা দিয়ে ইস্ত্রি ফালাইয়া ফাল দিয়া বিছানায় উইঠা বইলাম। ইস্ত্রি তো আগুনের লাহান গরম হয়ে গেছে। ঘটনা কি?
বাতি জ্বালায় দেহি আমার স্ত্রী ইস্ত্রির প্লাগ সকেট এর মধ্যে লাগাইয়া রাইখা গেছেন।
আমি মনে মনে অরূপ রে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করলাম। আচ্ছা আপনারাই কন তো এত নিষ্ঠুস হয় কেন?
#রম্য
স্ত্রী বনাম ইস্ত্রি
- মোঃ আহসানুল হক
০৬ এপ্রিল, ২০২৩
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন