শনিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৮

ভালোবাসার হিবিজিবি



ভালোবাসার হিবিজিবি
- যাযাবর জীবন


বিরহ তো অন্ধকার
আমার চোখেতে তাপ
ভালোবাসায় তোর চোখে কেন?
বাষ্প বাষ্প ভাপ

চাঁদ জানে না চাঁদনি কেমন
আলো বিলিয়ে যায়
তুই ছাড়া আমি অমাবস্যা
মন অন্ধকারে ছায়

জল জানে না জলের মর্ম
বয়ে চলা সারাক্ষণ
'তুই' নদীতে আমার ভেসে চলা
তোতেই আমার মন

শূন্য চোখ তাকিয়ে থাকে
শূন্যতার দিকে চেয়ে
তোকে ছাড়া আমি শূন্য
ভালোবাসতে গিয়ে

এই যে এত এত ভালোবাসা!
কবিতা আর গান গেয়ে
একবার মনব্যাথা সারিয়ে দিয়ে যাস
আদর চুমু খেয়ে।







হাসি কান্নার অনুভূতি



হাসি কান্নার অনুভূতি
- যাযাবর জীবন


আচ্ছা! অনুভূতি কি দেখা যায়?

ঠোঁট হাসে, চোখ কাঁদে
হাসি ঠোঁটে খুশি দেখি
দুঃখ দেখি অশ্রু চোখে
আচ্ছা! অনুভূতি কি তবে চোখ?
অনুভূতি কি তবে ঠোঁট?
আমি জানি না;

চোখ কি শুধুই কাঁদে?
উঁহু!
আমি চোখের আরও কত কত রঙ যে দেখেছি!

কখনো চোখ হাসতে দেখেছিস? খুশিতে,
সে যে কি অদ্ভুত সুন্দর!
না দেখলে বুঝবি না;

কামনা মদির চোখ তো নিশ্চয়ই দেখেছিস,
না দেখে থাকলে ভালোবাসাবাসির সময় আয়না দেখে নিস
কিংবা আমার চোখ,
উঁহু! ভুল বুঝিস না, আমি কামুক চোখের কথা বলছি না
আমি প্রেমিক প্রেমিকার কামের কথা বলছি, কিংবা স্বামী স্ত্রীর;

রিপু অন্ধ কামুক চোখ! সে অন্য জিনিস
তুই তো নিশ্চয়ই দেখেছিস;
আমি কতবার চোখ দিয়ে তোর শরীর চাটতে দেখেছি
কতজনকে, কতভাবে!
বড্ড ঘিনঘিনে অনুভূতি তাই না রে!
আমারই তো বড্ড ঘৃণা করে
তোর তো করবেই, সেটাই স্বাভাবিক;

লোভে চকচক চোখ দেখেছিস?
অর্থের লোভ, স্বার্থের লোভ
বড্ড কুৎসিত কদাকার,
আমি আর দেখতে চাই না সে মানুষগুলোর চোখ;

চোখের কথা বাদ দে,
এবার ঠোঁটের কথা বলি;
তোর খিলখিল হাসি,
আমি কতবার পাগল হয়েছি!

ঠোঁটে কিন্তু কান্না বসে
দেখেছিস কখনো?
না দেখলে আয়নায় দেখে নিস
যখনই আমার সাথে অভিমানে থাকিস;
একটা কথা কি জানিস!
তুই কিন্তু প্রচণ্ড রেগে গেলে ঠোঁটে কাঁদিস;

তুই কথা বলিস ঠোঁটে ঠোঁটে
তোর ঠোঁটে;
ঠোঁটে ঠোঁটে চুমু খাস
আমার ঠোঁটে;

আমি আমার অনুভূতি দেখতে পাই না
দেখি তোর চোখ
দেখি তোর ঠোঁট,

আমি আমার অনুভূতি চিনি না
চিনি তোর ঠোঁট
চিনি তোর চোখ;

আমি হাসি দেখি
কান্না দেখি
তোর ঠোঁটে চোখে,

আর অনুভূতিহীন ভালোবাসি তোকে,
ঠোঁটে ঠোঁটে।




কান্নার কোলাহল



কান্নার কোলাহল
- যাযাবর জীবন


ভালোবাসায় অপেক্ষা থাকে
অপেক্ষা থাকলেই থাকে অভিমান
অভিমান থেকে রাগ
মনে রাগ এলেই মুখে আগ্নেয়গিরি
গলিত লাভায় ভালোবাসার বিনাশ
ভাঙনের কানফাটা বজ্রপাত,
সময়ের কান্না বৃষ্টিতে এক সময় লাভা ঠাণ্ডা হতে থাকে
তারপর বরফ জমা অনুতাপ;

বরফে কি আর ভালোবাসা হয়?

তুই আগুন আমি জল
আর ভালোবাসায় কান্নার কোলাহল।





প্রথম দেখা



প্রথম দেখা
- যাযাবর জীবন


সেদিনটার কথা মনে আছে তোর?
ঐ যে, যেদিন আমাদের প্রথম দেখা!

আমি তোর অপেক্ষায়
ক্ষণে ক্ষণে পথের দিকে চোখ যায়
দ্বিধাহ্নিত অপেক্ষার প্রহর কি আর সহজে কাটে?
দুপুর গড়িয়ে বিকেল প্রায় হলো
আমি তখনো ঠায় দাঁড়িয়ে, রাস্তার ধারে
আমাদের পূর্ব নির্ধারিত জায়গায়;
আজকালকার মত মোবাইলের প্রচলন আর কোথায় ছিল তখন?
যোগাযোগ বলতে তো লাল রঙের এনালগ টেলিফোন
সেও কত লুকোচুরি সাবধানে!

অনেকক্ষণ অপেক্ষার বাদে একটা রিক্সা এসে থামলো
রিক্সার হুড তোলা,
রিক্সা থামতেই আমি দুরু দুরু বুকে এগিয়ে গেলাম
ধবল পায়ে লাল টুকটুকে ফিতা বাঁধা একপাটি হাই হিল জুতো মাটিতে নামলো
তারপর আরেক পা, নূপুর পড়া
তারপর লাল চাদরে ঢাকা পুরো অবয়ব
বুকের মধ্যে কোথায় জানি একটা কষ্ট কষ্ট অনুভব!

কোথায় জানি জলতরঙ্গ বাজলও, এই যে মিস্টার হ্যালো!
কি হলো?

তোর ঠোঁট নড়ছিল, আমার চোখ কমলার কোয়ায়
তোর কাজল চোখ, আমার দীঘির জলে শ্যাওলা সাঁতার
তোর ভ্রু নাচানি, আমি রংধনু দেখছি
তারপর তুই ফিক করে হেসে দিতেই আমি ডুবে গেলাম তোর টোলে;
সেই যে ডুবলাম! আর ভাসতে পারলাম কোথায়?

বড্ড অদ্ভুত ছিল রে সে দিনটা
আমাদের প্রথম দেখা
আর সেই সেদিন থেকেই মন কবিতার খাতা;

আমি কখনো কবিতা লিখি নি
খাতার পাতায় পাতায় শুধু তোকেই এঁকেছি,
ভোরে ও সকালে
দুপুর কিংবা বিকেলে
সন্ধ্যা আর রাতে
ঘুম ও স্বপ্নে
সূর্য আর চাঁদে
দিন রাত্রির প্রতিটা প্রহরে
যখন যেভাবে তোকে দেখেছি;

কবিতা সামনে রেখে কেও কি আর কবিতা লিখে?
আমি লিখি তোকে।







অমাবস্যার চাঁদ



অমাবস্যার চাঁদ
- যাযাবর জীবন


মানুষের জীবনে কিছু কিছু সময় আসে,
খারাপ সময়
কালো সময়
রাত্রি সময়
অসহায় সময়,
ঘুটঘুটে অন্ধকার মনটাকে ছেয়ে ধরে;

অন্ধকার সময়গুলোতে কাওকে পাশে পেতে ইচ্ছে করে
ইচ্ছে করে কারো হাতে হাত রাখতে
ইচ্ছে করে কেও তো থাকুক! মন হয়ে, অনুভবে;

আদতে অসহায় সময়ে কাওকে পাওয়া যায় না পাশে;
জীবনে যখনই খারাপ সময়গুলো এসেছে
খুব আপনজন
আত্মার আপন, রক্তের বন্ধন
কাওকে পাই নি কাছে;

অথচ তুই ঠিক ছিলি পাশে
সময়ে কিংবা অসময়ে
বুকের একদম কাছে,
প্রখর রোদে মেঘ হয়ে
বৃষ্টিতে ছাতা হয়ে
অন্ধকারে আলো হয়ে
নির্ঘুম রাতের বালিশ হয়ে
ভালোবাসায় জড়িয়ে নিয়ে;

প্রেমিক প্রেমিকা ভালোবাসে
স্বার্থের আশে;
রক্ত সম্পর্কগুলো?
খুব চেনা হয়ে গেছে, কালো সময়ে;

দম্পতির ভালোবাসা? গভীর অনুভবে;
অন্ধকার সময়ে আলো হয়ে
যখন কেও নেই পাশে,
যদি দাম্পত্যে প্রেম থাকে;

যেমন তুই আছিস, জড়াজড়ি হয়ে;

প্রেমহীন দাম্পত্য?
মন অমাবস্যার নাম শোন নি?
কালো সময় রাতের ছলে
নির্ঘুম বিছানা কথা বলে
মন আর কান্নার জড়াজড়ি চলে;

রাত্রি সময়ে কাওকে না কাওকে কাছে পেতে ইচ্ছে করে,
জ্যোৎস্না না হোক অমাবস্যা হয়ে, অনুভবে চাঁদটা তো থাকুক পাশে!

সুসময়ে সবাই রাতের চাঁদ হতে চায়
অসময়ে চাঁদ ঘুমায়, ঘুটঘুটে অমাবস্যায়;
অমাবস্যায় চাঁদনি হতে পারে কে?
আমি দেখিয়ে দেই তোকে।
















খারাপ অভ্যেস



খারাপ অভ্যেস
- যাযাবর জীবন


চোখ আলো চেনে, চেনে অন্ধকার
মন তো দিন আর রাত চেনে না রে
মন চেনে তোকে,
মনের যখনই ইচ্ছে হয় তখনই মন তুই
যখন তখন মনে এসে বসাটা বড্ড খারাপ অভ্যেস তোর;

দিনের অভ্যেস আলো
রাতের অভ্যাস কালো,
পূর্ণিমা?
সে তো মাসে একবার
ঠিক তোর মত,
উঁহু!
তুই তো আরও এক কাঠি সরেস
ভালোবেসে কাছে আসিস বছরে এক আধবার
আর বাকি সময় আমার তারা গোনা,
তুই আমার বড্ড খারাপ অভ্যেস, ভালোবাসায় বোনা;

ভালোবাসার খুব বেশী কাছে আসতে নেই
আমিও দূরত্ব বজায় রাখি অনেকটাই,
খুব বেশী কাছে আসলে একসময় ভালোবাসার পরত খোলা শুরু হয়
তারপর পেঁয়াজের খোসার মত খুলতে খুলতে এক সময় ভালোবাসাটাই নাই হয়ে যায়;
অনুভূতিহীন শুধু তোকে দিয়ে কি করব রে আমি?
কিংবা ভালোবাসাহীন আমাকে নিয়েই বা কি করবি তুই?
তার থেকে এই বেশ আছি!
অনুভূতির পরতে পরতে ভালোবাসা জড়ানো
আর মনের পরতে পরতে তুই
বছরে দু একবার দেখা!
তাতেই সই!
একটু চোখের দেখা, একটু গালের ছোঁয়া, একটা দুটো চুমু
তারপর আবার ভালোবাসার বিরহ,
বছরে বারোটি চাঁদ গুনব প্রতি জ্যোৎস্নায়
একটি দুটি কবিতা লিখব যখন মন চায়
আর বাকি রাতগুলোতে ভালোবাসার তারা গুনব একটা দুটো করে
এখানে নির্ঘুম চোখে আমি, ওখানে ভালোবেসে তুই;

জানিস! মাঝে মাঝে বড় অসহায় লাগে
যখন তুই হুট হাট চাঁদ হয়ে আসিস মধ্য দুপুরে
সূর্য থেকে জ্যোৎস্না ছাঁকার আমার কি সাধ্য আছে বল?
ভালোবাসিস?
বড্ড বেশী?
তবে একবার চিৎকার করে বল!
তারপর ভরা জ্যোৎস্নায় দুজন অন্ধকার হই চল।





অন্ধকারের চাঁদ



অন্ধকারের চাঁদ
- যাযাবর জীবন


জ্যোৎস্না রাতে কি আছে রে?
ঘুম কোথায় দু-চোখে?
মন খারাপের বৃষ্টি ঢল
কষ্ট কষ্ট বুকে

কেও তো আছে, চাঁদনি রাতে
আমার জন্য কাঁদে
খুঁজতে গেলেই পালিয়ে যায়
আকাশ হারায় চাঁদে

কে আছে রে তোর ভেতরে?
আমার জন্য কাঁদে
কখন তোকে ফেলেছি আমি?
ভালোবাসার ফাঁদে

কি আছে রে তোর ভেতরে?
মনটা আমার কাঁদে
অমাবস্যায় চাঁদনি খুঁজি
অন্ধকারের চাঁদে।






কিছু বলা, কিছু না বলা কথা



কিছু বলা, কিছু না বলা কথা
- যাযাবর জীবন


কত মানুষের সাথে কত কথাই না বলা হয়!
কত কথা রয়ে যায় মনের ভেতর;
কত কত কথা মনে আসে, বলা হয় না মুখ ফুটে
কিছু কিছু কথা খুব হঠাৎই বের হয়ে আসে মুখ ফস্কে
কথায় কথায় নিছক কথার পিঠে
যেগুলো আসলে মনের কথা না
তবুও মুখ ফস্কে হঠাৎ বের হয়ে আসা কথার কথায় সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায় মুহূর্তেই
অথচ মনের ভেতরের কথাগুলো কেও শোনে না, কেও বোঝে না;

তোর সাথে, তার সাথে, ওর সাথে কত কথাই না হয়েছে আমার, কথায় কথায়;
তোর সাথে, তার সাথে, ওর সাথে কত কথাই না রয়ে গিয়েছে মনের খাঁচায়!
ওরা ওরা তারা মুখ ফস্কে আসা কথা ধরে নি কখনো
কিংবা কখনো জিহ্ব পিছলে আসা কোন কথায় আঘাত পেলে সাথে সাথে বলে দিয়েছে
আমি সাথে সাথে ব্যাখ্যা দিতে পেরেছি, কেন বলেছি,
ভুল হলে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি, সাথে সাথেই;

অথচ তুই?
মুখ ফস্কেছে তো রক্ষা নেই
কার সাধ্য আছে তোকে বোঝানোর?
কোন কবে কি এক কথা বলেছিলাম তা নিয়ে হাজার ইতং বিতং
কবে কখন কিভাবে কার দিকে তাকিয়েছিলাম তা নিয়ে কত শত রঙ ঢং!
মনে আছে?

আমি এর ওর সোজা কথাই বুঝি না মাঝে মাঝে
তোর এত বাঁকা কথা বুঝব কিভাবে রে?
অত বুদ্ধি কি আমার মাথায় ধরে?

অথচ দেখ!
আজ কোথায় তুই? কোথায় আমি?
কোথায় আমাদের সম্পর্ক?
আর কোথায় মনের অনুভবগুলো?
শুধুমাত্র কোন এক সময়ের জিহ্ব পিছলে আসা কথায় কথায়
ভুল করে মুখ ফস্কে বলে ফেলা কোন এক কথার পিঠে কথায়,
আজ দূরত্ব আমাদের মাঝে দূর, সুদূর;

আচ্ছা এত এত যে কথা বলেছি তোর সাথে!
কথায় কথায় একটা ছোট্ট কথা বলতে কিন্তু ভুলে গেছি
ভালোবাসি,
তোকে বড্ড ভালোবাসি
বড্ড বড্ড বেশী।





ভালোবাসার শেকল



ভালোবাসার শেকল
- যাযাবর জীবন


ভালোবাসা কারো জন্য ঘর
কারো জন্য শেকল;

তবুও মন চায় কেও ভালোবাসুক
কেও তো থাকুক জীবনে যার জন্য বেঁচে থাকা মধুর,
যাকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করে
যাকে নিয়ে রোদে পুড়তে ইচ্ছে করে
যাকে নিয়ে জ্যোৎস্নাস্নান
যার কথাগুলোই মধুর গান;

আমি ভালোবাসতে জানি না
তবে ভালোবাসা বুঝতে পারি,
বুঝেই বা লাভ কি?
সবাই কি আর ভালোবাসা গ্রহণ করতে পারে?
আমার বড্ড এলার্জি ভালোবাসা ভাইরাসে
বড্ড শরীর কেমন করে
মনে রাত ধরে;

বিনিময় দিতে না পারলে কিছু গ্রহন করতে আমার বড্ড অস্বস্তি,
আর তোর ভালোবাসা?
বড্ড তীব্র রে
খুব যন্ত্রণা দেয় আমায়
কেন এত ভালোবাসিস বলতে পারিস?

ভালোবাসার শেকলে আমার বড্ড ভয়
তোর ভালোবাসায় খুব অস্বস্তি হয়;
আমার ধু ধু প্রান্তর, খোলা আকাশ
হু হু ঝড়, পাগলা বাতাস
গহীন বন, খাড়া পাহাড়
নীল সাগর, মন সাঁতার
ভালোবাসায় কে বাঁধবে আমায়?
সাধ্য আছে কার?

তবুও তুই বসে থাকিস আমার জন্য
ঠায় অপেক্ষায়,
আমার উড়াল ডানা একা একা দূর অজানায়।



মন ছুঁয়ে মন



মন ছুঁয়ে মন
- যাযাবর জীবন


ঐ যে বাতিগুলো দেখছিস!
ঐ যে অনেক দূরে;
অন্ধকার থেকে কি চমৎকারই না লাগে!
অথচ কাছে গেলেই মন হতাশ
বিজলি বাতির কি আর এমন বিশেষত্ব আছে বল?
প্রতিদিনই দেখছি ঘরে বাইরে;
ভালোবাসাটাও অনেকটা দূর থেকে দেখা ঐ সুন্দর বাতিগুলোর মত,
কাছে থেকে খুব ম্যাড়ম্যাড়ে, একঘেয়ে
তাই না রে?

হ্যাঁ বললি কি?
তবে কেন ভালোবাসিস?
বড্ড দুঃখ পেলাম রে,
আমি ভেবেছিলাম না বলবি;
কই আমার কাছে তো তুই প্রতিদিনই চকচকে নতুন
একেবারে আনকোরা
আমি প্রতিদিন তোকে দেখি মোড়ক খুলে খুলে, মনের আয়না জুড়ে
ভালোবাসা কখনো পুরনো হয় না রে;

এই যে ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকি তোকে, মন ছুঁয়ে;
বুঝতে পারিস?
পারিস না?

ধ্যাত!
তবে তো তুই ভালোবাসাই বুঝিস না,
তবে কেন ভালোবাসি বলে শুধু শুধুই মুখে ফ্যানা তুলিস?
ভালোবাসা মুখের বুলি না রে
ভেতরের,
অনেক অনেক ভেতরের অনুভব
তুই বুঝবি না;

আমি তোকে খুব ভালোই বুঝতে পারি
তুই শরীর ছুঁতে চাস, ভালোবাসি বলে
আমি ভালোবাসি মন ছুঁয়ে ছুঁয়ে
তুই আমায় বুঝিসই না,
শরীর ফুঁড়িয়ে যায় দুজন আলাদা হওয়া মাত্র
অনুভব? সে অনেক ভেতরে রে;
যেদিন মন ছুঁয়ে দেবে মন, সেদিনই ভালোবাসা হবে
আর নয়তো কাগজের আঁকিবুঁকি, নিছক কবিতা;

এই যে ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকি তোকে,
মন ছুঁয়ে;
যদি কখনো হারিয়ে যাই
সামলাতে পারবি নিজেকে?



কষ্ট রঙের কষ্ট



কষ্ট রঙের কষ্ট
- যাযাবর জীবন


কত রকম কষ্টই না দেখি চারিদিকে
কত রঙের, কত অনুভবের!

কারো অর্থের কষ্ট কারো স্বার্থের
কারো ভালোবাসার কারো ভালোবাসাহীনতার
কারো প্রেমের কারো বিরহের
কারো ঘরের কারো বাইরের
কারো সংসারের কারো ভাঙনের;

কত রঙের, কত অনুভবের কষ্টই না ছড়িয়ে আছে চারিদিকে!
আমার নিজেরও তো কিছু গোপন কষ্ট আছে
তবে সে কষ্টের রঙ নেই
আমি নাম দিয়েছি কষ্ট রঙের কষ্ট,
আমারও কিছু গোপন অনুভূতি আছে
তবে নেই অনুভূতির বড়াই
আমি নাম দিয়েছি একান্ত গোপনানুভুতি;

কষ্ট রঙের কষ্টগুলো দেখতে দেখতে আমি কেমন জানি রঙহারা
একদিন অনেক অনেক নীল দেখতে দেখতে আমি ঠিক আকাশ হয়ে যাব,
তারপর ঐ দূর আকাশের ওপারে, যেখানে পৌঁছতে হয় নীলঘুমে;

নানা কষ্টের অনুভূতিগুলো সইতে সইতে আমি অনুভূতিহীন
একদিন অনেক অনেক গোপনানুভুতি সইতে সইতে আমি ঠিক মাটি হব,
তারপর মাটির ঘরের অন্ধকারে, স্বপ্নহীন কালঘুমে।



সময়



সময়
- যাযাবর জীবন


সময়কে ধরতে পেরেছে কে?
ধরার আগেই সময় বয়ে গেছে, কালের বাঁকে;

আনন্দের মুহূর্তগুলো চোখের নিমিষেই উধাও
বেদনার সময়গুলো খুব ধীরে কাটে, তবে বয়ে যায়
শুধুমাত্র স্মৃতিগুলো রয়ে যায়,
সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেদনার সব স্মৃতিগুলো
মনের খাতায়,
মানুষের সাধ্য কি সময়কে ধরার?

তুই সময় ধরতে গিয়ে কান্না ধরেছিস
আমি অন্ধকার ধরতে গিয়ে রাত
ভালোবাসার কমতি ছিলো না কারো মনেই
তবুও কেও কারো ধরতে পারি নি হাত;

দেখিস! একদিন ঠিক আমরা সময় ধরব দুজনে
আর হারিয়ে যাব, কালের স্মৃতি হয়ে;
মাটির দুটি ঘরে দুজন গভীর ঘুমে
ওখানে নিশ্চয়ই সময় স্থির হয়ে রবে।







যোগ্যতা



যোগ্যতা
- যাযাবর জীবন


ভালোবাসতে কোন কারণ লাগে না
কখন যে কাকে ভালো লেগে যায়!
আর ভালোলাগা কখন যে ভালোবাসায় পরিণত হয়!
কে বলতে পারে?

যোগ্যতা লাগে ভালোবাসা পেতে হলে,
সবাই কি আর ভালবাসা পায়?
তবে কেও কেও পায়
কারণ ছাড়াই

এই যে তীব্র আলোটা দেখছিস!
ওটা তোর ভালোবাসা
পথটা একদম ঝকঝকে স্বচ্ছ
দূর বহুদূর পর্যন্ত

ঐ যে টিমটিমে আলোটা দেখছিস!
ওটা আমার ভালো লাগা
ঘোলাটে ম্লান
যে কোন সময় হারিয়ে যেতে পারে

ভালোবাসার যোগ্য আমি নই
তবুও তুই আমাকে কারণ ছাড়াই ভালোবাসিস;
ভালোবাসা পাওয়ার সব গুণ তোর মাঝেই নিহিত
অথচ আমি তোকে চেষ্টা করেও ভালোবাসতে পারি নি
কেও ফুল ভালোবাসে কেও গন্ধ
তুই পাথর ভালোবেসে অন্ধ;

একদিন দেখিস ঠিক হারিয়ে যাব তোর আলোকিত পথ ধরে
দূর বহুদূরে
সেদিনও কি ভালোবাসবি ঠিক এমনি করে?
আমার ভালোলাগা তোকে কিন্তু পথ দেখাবে না, ঘন অন্ধকারে।




রাতের কান্না




রাতের কান্না
- যাযাবর জীবন


অন্ধকারের কিছু শব্দ থাকে
থাকে কিছু আলো
শব্দ থাকে নিস্তব্ধতার
বধির হলেও,
শব্দ থাকে রাতের, নিস্তব্ধ ও কালো;

হৃদয়ের শব্দ শোনে হৃদয়
যে ভালোবাসে,
আর বাকিদের কাছে ধুকপুক;

আচ্ছা! রাতের কান্না শুনেছ?
কিংবা হৃদয়ের?
ঐ যে একটা তারা খসে পড়লো
কখনো তো রাতের অশ্রু চেনো!

এবার কিছু ইচ্ছের নৌকা ভেড়াও, হৃদয়ের তীরে
তারপর না হয় হারিয়ে যাও অন্ধকারে, জোনাকির ভীরে।





শিক্ষার অভাব



শিক্ষার অভাব
- যাযাবর জীবন


বেঁচে থাকার জন্য কত কিছুই না শিখেছি!
শিক্ষা, দীক্ষা, ক্ষুধা নিবারণ, আয় উপার্জন
বেঁচে থাকার প্রতিযোগিতায় শিখেছি ছিনিয়ে নেয়া
ছলে, বলে, কৌশলে যেভাবেই হোক না কেন!
প্রতিযোগী কে হটিয়ে দেয়া;

শিখেছি লোভ, লালসা, রিপু, লিপ্সা
চুরি, বাটপারি, ঘুষ, জোড় করে কেড়ে নেয়া,
আরে বাবা এগুলো কি আর ইচ্ছে করে করি?
সবই তো করতে হয় বেঁচে থাকার প্রয়োজনে;
মন কে বুঝ দেয়া কতই না সহজ
তাই না?

অসম প্রতিযোগিতা,
আকাশ সম চাহিদা আমাদের পশু করে দিয়েছে;
আদতে বেঁচে থাকার জন্য খুব বেশী কিছু কি প্রয়োজন?
একটা জিনিষের প্রয়োজন তো আছেই
মানুষ হওয়া;

বেঁচে থাকার জন্য কত কিছুই না শিখেছি!
ভালোবাসার জন্য শেখা হয় নি ভালোবাসা।


স্বপ্ন আমার জন্য না



স্বপ্ন আমার জন্য না
-যাযাবর জীবন


মনে আছে নদী পাড়?
নীল পানি
সবুজ মাঠ
আর লাল টুকটুক শাড়িতে তুই;

চোখে চোখে
মনে মনে
স্বপ্নে স্বপ্নে
তোকে আমি ছুঁই;

ইশশ! জীবন কবিতা হলে কি ভালোই না হত!!

স্বপ্ন সবাইকে মানায় না
স্বপ্ন আমার জন্য না।




সোমবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৮

এবড়ো থেবড়ো রাস্তা




এবড়ো থেবড়ো রাস্তা
- যাযাবর জীবন


রাস্তাটা উঁচু নিচু,
এবড়ো থেবড়ো, ভাঙাচোরা;
শরীরের মত, প্রেমের মত, জীবনের মত;
তবুও নিত্যই পথ বাওয়া;

প্রেম কি রে?
অনুভব, অনুভূতি
উঁচু নিচু শরীর বাওয়া,
খানিকক্ষণ ঝাপাঝাপি সুখ, তারপর কান্না হাওয়া;

জীবন কি রে?
কর্ম, অর্থ, স্বার্থ
অর্থের মাপকাঠিতে ধনী গরীব,
দম্ভ, অহংকার, তারপর মাটি হওয়া।








ভালোবাসার ট্রেন



ভালোবাসার ট্রেন
- যাযাবর জীবন


কেও কেও ভালোবাসার ট্রেনে ওঠে পড়ে
বুঝে কিংবা না বুঝে
কেও ইচ্ছে করে, কেও ভুল করে
গন্তব্য না জেনে;

ভালোবাসার ট্রেন একবার ষ্টেশন ছেড়ে দিলে
কার সাধ্য আছে তার গতি থামাবার?

ভালোবাসার ট্রেন শুরুতে একটু একটু করে এগিয়ে চলে
ধীরে ধীরে গতি বাড়তে থাকে
তারপর এক সময় বল্গাহীন গতিতে ছুটে চলে অনিশ্চয়তার দিকে;

শেষ ষ্টেশন কোথায় জানে না প্রেমিক
পথের শেষ জানা নেই ভালোবাসা ট্রেনের,
ঐ দূরে, বহুদূরে
প্রেমিকা নামক মরীচিকা ষ্টেশন দেখা যায়,
কোন ট্রেন পৌঁছায়
কোন ট্রেন তীব্র গতিতে ধেয়ে চলে অনিশ্চিত গন্তব্যে;

ভালোবাসার গন্তব্য কোথায়?
কবিতার টুকরো পাতায়।









অবহেলিত, একতরফা



অবহেলিত, একতরফা
- যাযাবর জীবন


কিছু কিছু ভালোবাসা একপেশে
কিছু কিছু খুব বেশী একতরফা,
সে বাবা মার ভালোবাসাই হোক কিংবা সন্তানের
কিংবা ভাই বোন আত্মীয় পরিজনের
আর নয়তো প্রেমিক প্রেমিকার
কিংবা স্বামী স্ত্রীর;

একই বাবা মায়ের সন্তানদের মধ্যে কেও থাকে দুধে ভাতে
কেও বাবা মায়ের সাথে ডাল ভাতে এক থালে এক পাতে
একজন থাকে চরম অবহেলিত হাঁড়িচাচে;
দুধভাত, ডালভাত ভাই বোনগুলো ভালো মন্দে মিলে মিশে থাকে একসাথে
অবহেলিত চিরকালই বাবা-মা ভাই-বোন থেকে অনেক দূরে,
তবুও সংসারের প্রয়োজনে এরাই হাল ধরে একপেশে
একতরফা সয়ে যায় মুখ বুজে,
সাধারণত সংসারের বড় সন্তানগুলোকে কলুর বলদ বলে;

যারা একতরফা পেয়ে অভ্যস্ত তারা পেতেই থাকে,
টাকা পয়সা, অর্থ বিত্ত
প্রেমিক/প্রেমিকা কিংবা স্বামী/স্ত্রীর ভালোবাসা,
চারিদিক থেকে ভালোবাসার বৃষ্টিতে এরা সিক্ত থাকে
আর মাঝে মাঝে চারিদিক ভেজায় স্বার্থ বৃষ্টিতে;
অবহেলিত একতরফা সয়ে যাওয়া মানুষটি
হয়তো একপেশে ভালোবাসায় ডুবে,
প্রেমিক/প্রেমিকা এরা কোথায় পাবে?
মাঝে মধ্যে স্বামী/স্ত্রীর সাথে,
সংসার ঘানি টেনে কখনো সময় পেলে;

একপেশে পাওয়ার দলের মানুষগুলোকে দেখতে পাচ্ছ?
আয়না দেখ,
একতরফা সয়ে যাওয়া মানুষ দেখেছ?
আমায় দেখ।




ভালোবাসার অভ্যেস



ভালোবাসার অভ্যেস
- যাযাবর জীবন


বোকারা একপেশে ভালোবাসে
একপেশে ভালোবাসায় কাঁদে জীবনভর
আমার একপেশে ভালোবাসাকে তুই ঠেলে সরিয়ে রেখেছিস একপাশে
আর আমায় জড়িয়ে রেখেছিস অভ্যাস বসে;

যেদিন থেকে তুই আমার ভালোবাসা
সেদিন থেকে তুই আমার নীলাকাশ
যখনই তোর আকাশে ডানা মেলি
তখনই তুই রাত
যখনই তুই রাত আমি চাঁদ হই আকাশে
তুই জ্যোৎস্নাস্নান সেরে গভীর ঘুমে অন্ধকারে
যখনই তুই গভীর ঘুমে আমি স্বপ্ন হয়ে তোর চোখে
আমি স্বপ্নে আসতেই তুই চেয়ে থাকিস চোখ বড় করে;

তুই আমার ভালোবাসা
আমি তোর অভ্যেস
ভালোবাসা কি আর বদলায় রে?
অভ্যাস বদলে যায় সময়ের সাথে সাথে;

যখন আমার তোর কথা খুব মনে হয়
যখন আমার তোতে ভিজতে ইচ্ছে হয়
আমি চাঁদের কাছে চলে যাই
তোকে আর কোথায় পাব বল?
চাঁদনিতে ভিজে ভিজে কান্না শুকাই;

যখন আমার খুব মন খারাপ হয়
যখন তোর থেকে অনেক দূরে সরে যেতে ইচ্ছে হয়
আমি সাগরের কাছে ছুটে যাই
সাগর আর কতটুকুই কাঁদাবে বল?
সে তো নিজেই কান্নার জল।

তোকে ভালোবাসা কিংবা না বাসাটা আমার হাতে ছিল
দূরে সরে যাওয়া শুধুই তোর হাতে।





মাটির টান




মাটির টান
- যাযাবর জীবন


এই সবুজ এই গ্রাম
মাটির কাছাকাছি মাটির টান,
সবুজ সবুজ ধানক্ষেত অবুঝ অবুঝ মন
ইচ্ছে হলে মাটি ইচ্ছে হলে বন
ক্ষেতের আল ধরে ধরে এঁকে বেঁকে চলা
গুনগুন ভাটিয়ালি মাটির কথা বলা
গাছের ফাঁকে ফাঁকে হরিয়াল ডাহুক
গ্রামে আসলেই মন মাটি, মাটিতেই সুখ।





ঈর্ষাহ্নিত প্রেমিকা




ঈর্ষাহ্নিত প্রেমিকা
- যাযাবর জীবন


ঈর্ষা
সবাই বলে মানবিক ব্যাধি;

টাকা পয়সা
সহায় সম্পত্তি
শিক্ষা দীক্ষা
বন্ধু বান্ধব
প্রেমিক প্রেমিকা
কত কিছুই না মানুষের থাকে!
এগুলোর কোনটাই আমার নেই;

তবে একটা জিনিষ আমার আছে
অনেক বেশী মাত্রাতেই আছে,
ঈর্ষা
এক মানবিক ব্যাধি,
তোমার আছে কি?

সবচেয়ে ভয়াবহ কি জান?
যখন আমি ঈর্ষাহ্নিত প্রেমিক,
এ ব্যাধি মানবিক নয়
মানসিক;

আরও মজার ব্যাপার জান কি?
প্রেমিক তবুও সহ্য করে,
ঈর্ষাহ্নিত প্রেমিকা?
প্রেমিককে রক্ষা কর আল্লাহ্‌।





নানা রকম গল্প




নানা রকম গল্প
- যাযাবর জীবন


প্রত্যেকটা মানুষের জীবনেই একটা গল্প থাকে,
কারোটা খুব সাদামাটা
বেশীরভাগ গল্পগুলোই বড্ড জটিল;

সাদামাটা গল্পগুলো সাদামাটা জীবনেই শেষ হয়ে যায়
সাদামাটা ভাবে;

জটিল গল্পগুলো বেশীরভাগ রক্তাক্ত করে
একটা গল্প হয়তো শেষ হয়ে গিয়েছে খুব অল্পতে
কিন্তু তার রেশ রয়ে যায় সারাটা জীবন ধরে;

জটিল গল্পগুলো বেশীরভাগ সংসার কেন্দ্রিক;

কারো বাল্য বিবাহ কারো বয়স বৈষম্য
কারো স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্য
কোন সংসার পরকীয়ায় আক্রান্ত
আর বিচ্ছেদে দাম্পত্য;

অবহেলিত সন্তানের গল্প বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ
কিংবা দুর্ঘটনায় বাবা-মা হারানো
বাবা-মা হারা সন্তানের কষ্ট, পরগাছা হয়ে জীবন যাপন;

অসুখ বিসুখ, শরীর, স্বাস্থ্য
অর্থ, স্বার্থ
রিপুর তাড়না
বিবেকের দংশন
প্রেম, প্রীতি, ভালোবাসা;
প্রতিটা অনুভূতিই এক একটি গল্প তৈরি করে
প্রতিটা গল্পই এক একটা সম্পর্ক তৈরি করে
এক এক ভাবে, এক এক জনের জীবনে
কিছু সুখের সম্পর্ক গড়ার গল্প
আর বেশীরভাগ কষ্টের গল্প,
ভাঙনের গল্প;

ভাঙন
সে নদীরই হোক আর সম্পর্কের,
বড্ড পোড়ায়;
ভাঙন তো চোখের নিমিষে
ভাঙনের গল্প শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যায়
কষ্টের অনুভূতিটা সারাজীবন কাঁদায়।








মঙ্গলবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৮

ভালোবাসার বোকামি



ভালোবাসার বোকামি
- যাযাবর জীবন


মন একটা ঘর
ঘরের ভেতর অনুভূতির কেওর
একটা ছোট্ট জানালা, ভালোবাসার;

কেও জানালাটা খোলাই রাখে
চাঁদ ঢোকে, চাঁদনি ঢোকে
ঘর জুড়ে ভালোবাসার জুঁই গন্ধ ম ম করে;
কেও জানালায় উঁকি দেয় ভীরু চোখে
ভয়ে ভয়ে ভালোবাসার গন্ধ শুঁকে
জীবন কেটে যায় অর্ধ-ভোজনে
আর হা হুতাশ বিষণ্ণ নয়নে;
কেও কেও জানালা না খুলে কাঁচের শার্শিতে চাঁদ দেখে
চাঁদনি নাগালের অনেক দূরে
ভালোবাসার গন্ধ শুধুই আফসোসে;
কারো কারো জানালায় শার্শিই থাকে না
এদের বাস অন্ধকারে
জীবন কাটে ঘরের কোণে;

তোর জানালাটা হাট করে খোলা
আমি কোন দলেই পড়ি না
তবুও কেন তুই রক্তাক্ত হোস আমায় ভালোবেসে?

জীবন একটা ঘর
ঘর থেকে বের হলেই পথ
জীবনের পথ;

কেও এগিয়ে যায় দৃপ্ত পায়ে
পথের জয় পথ মাড়িয়ে,
কেও ভীরু ভীরু পা বাড়ায়
জীবন কি আগায়?
কেও এক পা আগায় তো দু পা পিছায়
জীবনে জয় থেকে বেশী পরাজয়,
কেও কেও কেওর বন্ধ করে ঘরে ফিরে আসে
জীবন থমকে থাকে ঘরের কোণে;

তোর দৃপ্ত পদচলা জয় জয়কারে
আমি কোন দলেই পড়ি না
তবুও কেন তুই রক্তাক্ত হোস আমার কাছে এসে?

গোলাপে তো কাঁটা থাকবেই
তবুও কেও হাত বাড়ায় রক্তাক্ত হতে
আর কেও দূর থেকে গন্ধ শুঁকে
তুই ক্যাকটাস আপন করেছিস ভালোবাসায় জড়িয়ে;
এত বোকাও মানুষ হয়?








বৈপরীত্য



বৈপরীত্য
- যাযাবর জীবন


সবাই যখন সাদা দেখে আমি কেন কালো দেখি?
সবাই যখন আলো দেখে, আমার চোখ অন্ধকার;

যখন তুই অনেক খুশি, তোর চোখেতে দুঃখ দেখি
ঠোঁটের কোণে তুই হাসি ধরিস, চোখের কোণে কান্না রাখিস
যখন তুই অভিমানে, রাগের প্রকাশ তোর মনে
যখন তুই সবার সাথে, একাকীত্ব তোর চোখে
যখন অনেক ভালোবাসিস, মনের মাঝে কান্না করিস,
এত বিপরীত অনুভূতি নিয়ে মানুষ বাস করে কিভাবে?

বৈপরীত্য কি তোর মনে না আমার চোখে?
আমিই কেন উল্টো দেখি?
তবে কি আমি উল্টো মানুষ?

উঁহু!
তা কেন হবে?
আমার মন যখন খুশি আমার মুখে তখন হাসি
আমার যখন হাসি পায় আমি হো হো হাসি
আমার যখন মন খারাপ তখন আমার কান্না পায়
আমার যখন কান্না পায় আমি আকুল কাঁদি;

মুখে হাসি নিয়ে চোখ কাঁদানো
আর মনে ভালোবাসা নিয়ে রাগ দেখানো
শুধু তোরই শোভা পায়,
বৈপরীত্য তোর মাঝে, আমার সরল অনুভূতি।




বিশেষ শ্রেণী




বিশেষ শ্রেণী
- যাযাবর জীবন


আজকাল দিনকাল জানি কেমন হয়ে গেছে!

আজকালকার সন্তান বাবার প্রেম দেখে
মায়ের সাথে নয়,
বিছানায় উলঙ্গ অন্য কার সাথে;

আজকালকার সন্তান মায়ের প্রেম দেখে
বাবার সাথে নয়,
উলঙ্গ জড়াজড়ি অন্য কারো সাথে;

আজকালকার বাবা-মা,
পরকীয়া ঘরে ঘরে;

আজকালকার সন্তান
ছেলে কিংবা মেয়ে হোক
শরীর'কে বড্ড সস্তা মনে করে,
আজকালকার সন্তান
স্কুল পর্ব শেষ হওয়ার আগেই
নিজের কৌমার্য হরণের গল্প করে,গর্বভরে;

আমি একটা বিশেষ শ্রেণীর কথা বলছি,
বাংলায় জন্ম নিয়েও যারা ইংরেজিতে ঘেউ করে;
অর্ধ শিক্ষিত বাবা-মা জোর করে ভুল ইংরেজি ঝাড়ে
আর অতি শিক্ষিত সন্তানের কাছে যেন ইংরেজও হার মানে;

কদিন পর এদের সতীত্ব খুঁজতে হবে ডিকশনারিতে।





সম্পর্কের সীমারেখা



সম্পর্কের সীমারেখা
- যাযাবর জীবন


সম্পর্কের একটা সীমারেখা থাকা উচিত
প্রতিটা সম্পর্কের;

এখন সময় লাগে না সম্পর্ক গড়তে
সময় লাগে না সম্পর্ক ভাঙতে
আজকাল সীমারেখা টানা হয় না কোন সম্পর্কে;

ইচ্ছে হলো তো বন্ধু ইচ্ছে হলো তো শত্রু
সীমারেখা নেই ভাব আর আড়ির মাঝে;

ইচ্ছে হলো তো ভালোলাগা ইচ্ছে হলো তো ঘৃণা
ইচ্ছে হলো তো প্রেমিক ইচ্ছে হলো তো বিচ্ছেদ;

পরকীয়া সম্পর্ক তো হরেদরে
পরকীয়া ঘরে ঘরে;

সীমারেখা হীন সম্পর্কগুলোতে বড্ড তাড়া
তাড়া গড়বার
তাড়া ভাঙবার
তাড়া প্রেমের
তাড়া বিচ্ছেদের
তাড়া শরীরের;

চোখাচোখি থেকে ভালোলাগা
ভালোলাগা থেকে ইশারা
ইশারা থেকে কাছে আসা
কাছে আসতে আসতেই প্রেমিক প্রেমিকা
সম্পর্ক শুরু হয় ঠোঁট থেকে
সময় লাগে না কাপড় খুলতে
আজকাল খুব বেশী তাড়া কাপড় খোলার
প্রেমিক প্রেমিকা কিংবা পরকীয়ার
সীমারেখা কোথায় ভালোবাসার
আজকাল প্রেম মানেই কি কাপড় খোলা?
খুব বেশী ভালগার হয়ে গেলো না?
সময় নেই চিন্তা করার;

তারপর
একদিন, দুদিন, তিনদিন
শরীরে শরীর মিলে প্রেমের প্রতিদিন
এক কথা থেকে দু কথা
দু কথা থেকে মনকষা
মনকষা থেকে অভিমান
অভিমান থেকে রাগ
রাগ থেকে বিচ্ছেদ,
বিচ্ছেদে যেন আরও বেশী তাড়া;

কালকের প্রেমিক আজকের চোখের বালি
প্রেমিকার বিরহ, সর্বস্ব কেড়ে নিলো
কাপড় কি জোড় করে খুলেছিল?

কালকের প্রেমিকা আজকের নাগিনী
প্রেমিকের বিরহ, ব্যবহার করে ছুঁড়ে দিল
কাপড় কি আরেকজন এসে খুলেছিল?

আজকাল সবকিছুতেই খুব তাড়া
সীমারেখা ছাড়া
সম্পর্ক গড়া ও ভাঙায়।




চাতক



চাতক
- যাযাবর জীবন


সব ঠোঁটেই চুমু হয়
আমার ঠোট পাখির নয়
তবুও বড্ড উপোষী রয়,

ঠোঁটে ঠোঁটে পাখির প্রেম
আমার বড্ড হিংসে হয়;

এর থেকে পাখি হওয়া ভালো।



কাছের মানুষ



কাছের মানুষ
- যাযাবর জীবন


খুব কাছের মানুষকে আমরা খুঁজে পাই না
অথচ সে আছে, আড়ালে হলেও খুব কাছে,
মনের আয়নায় তাকিয়ে দেখ মন খুলে
ওখানে কেও না কেও তো আছেই
ভালোবেসে, আর ভালোবেসে।




এলোমেলো স্বপ্ন



এলোমেলো স্বপ্ন
- যাযাবর জীবন


কোন এক একাকী রাতে ভাঙা একটা চাঁদ থাকবে আকাশে
আর থাকবে একটু মেঘ
বাতাস থাকবে এলোমেলো
বাতাসে মেঘ ওড়াউড়িতে কখনো আধো জ্যোৎস্না কখনো ধুসর অন্ধকার,
জানালাটা খুলে রেখেছি
তুই আসবি আমার এলোমেলো স্বপ্ন বেয়ে
চাঁদ থেকে নেমে জ্যোৎস্না হয়ে
জানাল দিয়ে মেঘ ঢুকবে ঘরে
সাথে তুই;

আমি একাকী খাটে
তুই এলোমেলো চুলে আমার বুকে ঝরে পড়তেই আমি এলোমেলো
বুনো মহুয়ার কড়া গন্ধ তোর গায়ে
মাতাল হাওয়ায় একবার জানালা খুলছে আবার বন্ধ হচ্ছে
মাতাল হচ্ছি আমি তোতে
আধো জ্যোৎস্নায় সাদা শাড়িতে তোকে পরী লাগছে;

কোত্থেকে এক দুষ্ট বাতাস শাড়ির আঁচল উড়িয়ে দিতেই আমার চোখ পাহাড়ে
কি সুন্দর আহারে!
এতটা উচ্চতায় আমায় মানায়?
আমি উপত্যকা বেয়ে নামতে থাকি
দীর্ঘ ছন্দে তোর বুকের ওঠানামা দেখছি
একটা ঢোক গিললি কি?
গলা বেয়ে বুক হয়ে নাভিতে নাভিশ্বাস
ততক্ষণে বাতাসে আগুন
পুড়ছি আমি
পুড়ছিস তুই
পুড়ছে কাম;

বড্ড গরমে হাঁসফাঁস
জল কোথায়?
নদীতে;
আমি বললাম ডুব দেব?
তুই বললি বড্ড গভীর
আমি বললাম কি আসে যায়?
তারপর ডুবসাঁতার
তোর শীৎকার;

গোসল সেরে ডাঙায় উঠতেই তুই এলিয়ে পড়লি আমার বুকে
বললি বড্ড ঘুম পেয়েছে
চাঁদের বাতিটা নিভিয়ে দাও এবার,
আমি মেঘকে বললাম পরীর ঘুম পেয়েছে এবার ঢেকে দাও চাঁদ
মেঘ চাঁদ ঢেকে রাখলও সারারাত
পরী আমার বুকে ঘুম
আমি স্বপ্নের বুকে;

আচ্ছা! মাঝে মাঝে স্বপ্নগুলো সত্যি হলে কি এমন ক্ষতি হয়?
স্বপ্ন সত্যি হয় না,
কোন পরী আসে না জানালা বেয়ে
আমার নির্ঘুম একাকী রাত কাটে অন্ধকারে।






কাগজের বন্ধন, কাঁচের সম্পর্ক



কাগজের বন্ধন, কাঁচের সম্পর্ক
- যাযাবর জীবন


দাম্পত্য;
কাগজের বন্ধন,
কাঁচের সম্পর্ক
খুব ঠুনকো কাঁচ
যে কোন সময় ভেঙে যেতে পারে জোর বাতাসে
কিংবা একটু ঘষাতে,
বাতাস, অবিশ্বাসের
ঘষা, কানকথার;

কাঁচ পুরু হতে থাকে সময়ে
প্রেমে
ভালোবাসায়
বিশ্বাসে
শ্রদ্ধাবোধে,
পুরু হয় সম্পর্ক
সুখী হয় দাম্পত্য;

কালের স্রোতে ঝড় আসে ঝঞ্ঝা আসে
বিশ্বাসের দাম্পত্য অটুট থাকে
এক সময়ের ঠুনকো কাঁচ পুরু হতে হতে ক্রিস্টালে পরিণত হতে থাকে
কাঁচের দাম্পত্য পঁচিশ বছরে রজত জয়ন্তী পার করে;

রজত জয়ন্তী অনেকেই পার করে,
কেও সুখী হয়ে
কেও বাধ্য হয়ে
বাধ্য হয় জীবনের মোড়ে মোড়ে
কাঁচের সম্পর্ক ভাংতে পারে না বাধ্য হয়ে;
লোক লজ্জা
সন্তান
পরিস্থিতি
স্বার্থ
কত কিছুই না জড়িয়ে থাকে দাম্পত্য ঘিরে!

আমি অনেক দাম্পত্য দেখেছি
কাঁচের সম্পর্ক ভেঙে গেছে রজত জয়ন্তীর পরে
সেও কোন না কোন পরিস্থিতিতে
কোন না কোন কারণে
পরকীয়া ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে;

পরকীয়া - এক নতুন ভাইরাস
আজকালকার যুগে,
বয়স মানে না
সম্পর্ক মানে না
লোকলজ্জা মানে না
শুধু চুর চুর করে ভেঙে দেয় কাঁচের দাম্পত্য
নিজের অজান্তে;

অনেক কাঁচের দাম্পত্য
প্রেম, ভালোবাসা আর বিশ্বাসে ধীর ধীরে পরিণত হয় অভঙ্গুর হীরে,
যারা অটুল বিশ্বাসে, অপার ভালোবাসায়
দাম্পত্যের পঞ্চাশ বছর পার করে
আমরা সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করি তাদের ঘিরে;
এ তো স্রেফ কাঁচের সম্পর্ক নয়
আমি বলি কোহিনূর হীরে।








ভাঙনের সন্তান



ভাঙনের সন্তান
- যাযাবর জীবন


আজকাল প্রেম করতে সময় লাগে না
সময় লাগে না বন্ধনে জড়াতে
সময় লাগে না কবুল বলতে,
কিছুদিন সং সেজে সংসার
ভাঙনের শব্দ আরও কম সময়ে
কাবিননামা ও তালাকনামার মধ্যবর্তী সময়ে
আরেকজন নতুন অতিথি চলে এসেছে
ততদিনে একটি ফুটফুটে শিশু দুজনার মাঝে
তাতে কি হয়েছে?
ভুল বুঝাবুঝি, ইগো আর অহংকারের কাছে সন্তান বড্ড তুচ্ছ
আজকালকার নিত্য কালচার;

আমি পুরনো মানুষ
ভাঙন সয় না
তবু দেখতে হয় প্রতিনিয়ত
নিজেরই আশেপাশে
কাছের ও দূরের মানুষের মাঝে চারিপাশে
ভাঙনের সংসারে বলির পাঠা হয় সন্তান;

বাবা মা আবার প্রেম করে
নতুন সম্পর্ক গড়ে
কিছু সম্পর্ক বিয়েতে গড়ায়
কেও কেও বিয়ের পিঁড়িতে বসার আগেই পিঁড়িতেই ফাটল দেখে
দূরে সরে যায়;

যাদের নতুন সংসার তাদের পুরনো মধুচন্দ্রিমা নতুন করে
আগের ঘরের সন্তান থাক না আপাতত দাদী বাঁ নানীর কাছে,
ভাঙনের সন্তানদের কারো হয়তো নতুন বাবা মার সংসারে ঠাই হয়
আর বেশীরভাগ কোথাওকার নয়;
বাবা মার কাছে এরা বড্ড উচ্ছিষ্ট
দাদীর তো আর সংসার নেই, চাচার সংসার
চাচীর দাঁত পিষা,
নানীরও বা সংসার কোথায়, মামার আশ্রয়ে
মামীর কটু কথা;
জীবন কেটে যায় লাথি ঝাঁটায়
ঘৃণার বীজ তো বপন হয়ে গেছে ছোটবেলা থেকেই
কৈশোর কিংবা যৌবন একদম একার
ছেলেগুলো বেশীরভাগ বখে যায়
মেয়েগুলো গুমরে মরে চাচী আর মামীর সংসার যাঁতায়;

কতজন?
কতজন?
ভাঙনের সংসারে জীবন যাপন
কত কত ভাঙন আমার চোখের পাতায়;
এরা বড্ড অসহায়
এদের কেও নেই কোথাও।




অস্থির সময়




অস্থির সময়
- যাযাবর জীবন


আছে
কেও একজন তো আছেই
বুকের কাছাকাছি
মনের একদম কাছে;

সে আমায় জড়িয়ে রয়
আমায় অস্থির করে দিন আর রাতের সকল সময়
চিন্তা, চেতনা আর অনুভবে,
যখনি হাত বাড়াই
তাকে ধরতে যাই
সে স্পর্শের বহুদূরে;

দূরে থেকেও কাছে থাকা যায়
দূরে থেকেও পাশে থাকা যায়
খুব পাশে
একদম বুকের বাঁ পাশে
আচ্ছা! ওখানে কি হৃদয় থাকে?

হৃদয় থাকলেই কি মন কেমন করতে হয়?
কোন একদিন তাকে স্পর্শে পেলে জেনে নেব
কেন সে জড়িয়ে থাকে আপন হয়ে অষ্টপ্রহরের অস্থির সময়?
শিখে নেব তার কাছে, ভালোবাসা কারে কয়।






বোধহীন ভালোবাসা



বোধহীন ভালোবাসা
- যাযাবর জীবন


ভালোবাসায় আশা থাকে
আকাঙ্ক্ষা থাকে
ভালোবাসার কিছু চাহিদা থাকে,
তোর কাছ থেকে আমি কোন আশাই করি না
আকাঙ্ক্ষা নেই আমার মাঝে
নেই চাহিদা
আমি বোধহয় তোকে ভালোবাসিই নি;

ভালোবাসায় ঈর্ষা থাকে
আমার দিকে কেও তাকালেই তুই লাল হয়ে যাস,
আমার কোন ঈর্ষা নেই
আমি বোধহয় ভালোবাসিই নি;

ভালোবাসায় রঙ বেরঙের অনুভূতি থাকে মনে
তুই ক্ষণে লাল, ক্ষণে নীল, ক্ষণে সবুজ
রংধনুর সব রং তোর মাঝে
অনেক ভালোবাসিস বুঝি?
আমি অনুভূতি বুঝিই না
আমার কাছে সব কালো আর সাদা
ভালোবাসার অনুভূতি আমার অজানা;

তুই মিছেই ভালোবাসা খুঁজিস বোধহীন পাথরে।




সন্দেহের গর্ত



সন্দেহের গর্ত
- যাযাবর জীবন


একদিন আমি আকাশ ছিলাম
তুই পাখি
অনেক উড়েছিস আমার বুকে
তারপর ভালোবাসার ডানা ভেঙেছিস সন্দেহের ভীষণ ঝড়ে;

একদিন আমি সাগর ছিলাম
তুই মৎসকুমারী
অনেক ডুবেছিস আমার বুকে
তারপর ঈর্ষায় ডুবে গিয়েছিস সন্দেহের তুমুল ঝড়ে;

ভালোবাসায় সন্দেহ শুধুই অবিশ্বাস ডেকে আনে
ভাঙনের কানফাটা শব্দ শুনতে পাস নি তুই,
আমি হারিয়ে গিয়েছি নীলের বুকে
নীল হয়ে;

তোর ভেতরটা দেখেছিস?
ওখানে একটা গর্ত আছে,
অন্ধকার গর্ত
আসলে কবর;
ওখানে একটা লাশ চাপা দেয়া আছে,
তোর ভালোবাসার,
উঁহু!
আমার।

সন্দেহটাকেই আজো বড্ড সন্দেহ তোর,
এখনো ভীষণ সন্দেহ নিয়ে মাঝে মাঝে গর্তে উঁকি দিস
মনে মনে ভাবিস
গর্ত থেকে শবটাকে টেনে তুলবি কি না;
আবার সন্দেহ মাথাচাড়া দিতেই মাটি চাপা দিস ভালোবাসাকে,
উঁহু!
আমাকে।









মঙ্গলবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৮

ভালোবাসার আয়না



ভালোবাসার আয়না
- যাযাবর জীবন


কত দূরে তুই আজ? কত দূরে?
আমাদের মাঝে যে দূরত্ব ভীষণ!
অথচ একদিন তুই আর আমি ছিলাম
দুজন দুজনার বড্ড আপন;

আজ দৃষ্টির আড়ালে তুই,
বৃষ্টির আড়ালে চোখ, দৃষ্টি ঝাপসা ভীষণ
দেখ! আকাশে মেঘ জমেছে কেমন!

সব মেঘে কি আর বৃষ্টি হয়?
কিছু চোখে কান্না রয়,
তুই কখনই আমার চোখ পড়তে পারিস নি
অথচ আমি তোর দিকে তাকিয়েই বলে দিতাম
- আজ তোর মন সূর্য
- কিংবা আজ তোর মন মেঘ
- কিংবা আজ তোর মন রাত
- কিংবা আজ তোর খুব ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে আমায়,

তুই খুব আশ্চর্য হয়ে বলতি
- আচ্ছা! আমার মন পড়ে নেও কিভাবে?

আরে বোকা তোর মন তো তোর চোখেই লেখা থাকে
ভালোবাসার মানুষের চোখ পড়তে না পারলে কি আর ভালোবাসা হয়?

যদি খুব বিষণ্ণ রাতে যদি মনের আয়নায় আমাকে দেখতে পাস
তাহলে বুঝে নিস আমিই ছিলাম তোর ভুল ভালোবাসা,
আর যদি অন্য কাওকে দেখিস তাহলে তুই ছিলি আমার মোহ;
ভালোবাসার আয়নায় দাগ কাটে না মোহ।






বাধ্য উপবাস



বাধ্য উপবাস
- যাযাবর জীবন


আজ সারাদিন ধরেই টিপটিপান্তি বৃষ্টি ঝরছে;

সন্ধ্যেবেলায় একচোট খুব ঝুম হয়ে গেলো
রাতের রাস্তা বেশ ফাঁকা ফাঁকা
রাস্তার নিশিকন্যাগুলোর আজ বেশ মন খারাপ
ইতিউতি ঘুরছে দল বেঁধে কিংবা একা;

মাঝে মাঝে একটি দুটি রসিক গাড়ির লাইট দেখা গেলেই
একসাথে তিন চারজন হামলে পড়ে
অধিকাংশ গাড়িই হুস করে বেড়িয়ে যায় কাদাজল ছিটিয়ে,
কোন কোন রসিক নাগর গাড়ি থামায় ল্যাম্পপোস্টের ধারে
একজনকে বেছে নেয়
তারপর লাল লাইটটা মিলিয়ে যায় ঐ অন্ধকারে;

বাকিরা ঝাপসা তাকিয়ে থাকে টিপটিপান্তি বৃষ্টিতে
মনে কোন ভাবের উদয় হয় না তাদের
না জ্যোৎস্নায় না বৃষ্টিতে
শুধু মনে একটাই চিন্তা - আজ খদ্দের জুটবে তো?
নতুবা কাল না হয় গা ধুয়ে শুদ্ধ হয়ে আরেকটি বাধ্য উপবাস;

মাঝে মাঝে বৃষ্টিও রসিকতা করে
পেটের সাথে,
নিশিকন্যাগুলোর চোখে কোন আলো নেই
তারা তাকিয়ে থাকে অনাগত গাড়ির লাইটের দিকে
টিপটিপান্তি বৃষ্টি কিংবা ঝুমঝুমান্তি জ্যোৎস্না রাতে।





আয়নার ওপাশে কে?



আয়নার ওপাশে কে?
- যাযাবর জীবন


আয়নায় নিজেকে দেখে বড্ড করুণা হয়
আয়নার ওপাশে কে?
আপাদমস্তক রিপুতে মোড়া দানব
মানুষের চেহারাতে;

চেহারায় সাদাকালো!
সে তো হতেই পারে,
ওপরওয়ালা এক একজনকে বানিয়েছেন এক এক ভাবে;

আমি চামড়ার ওপরের রঙ বলছি না রে
ভেতরের রঙ কি আর সবাই দেখতে পারে?

স্বার্থের রঙ দেখে আপনজনে
প্রেমিক-প্রেমিকা ভালোবাসার কদর্যতা চেনে
আমি নিজেকে দেখি আয়না ভেঙে ভেঙে;

আয়নার এপাশে আমার আপনজনেরা সারি'তে সারি'তে,
অথচ আমি ছাড়া কারো স্থান নেই আয়নার ওপাশের আমি'তে
আমার অস্তিত্ব পুরোটাই আমিত্বে,
খুব স্বার্থপর হয়ে গেলো কি?
মিথ্যে কথা বলে না আয়নার ভেতরের আমি;

আচ্ছা!
এত যে বড়াই, এত অহংকার!
ভালো করে ভেবে বল তো দেখি
কে কে আছে তোর জীবনে?

উঁহু! ওভাবে নয়,
আয়নায় ভেতরটা দেখে সত্যি উত্তর দে।






শুক্রবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৮

ওলোটপালট



ওলোটপালট
- যাযাবর জীবন


এক মুহূর্ত ভালো লাগার
একটা মুহূর্ত ভালোবাসার;

ভালো লাগা বদলে যায় এক মুহূর্তেই
কারণে আর অকারণে;

ভালোবাসা কি আর সহজে বদলায়?
ভালোবাসা বদলাতে অনেক সময় লাগে
ভালোবাসা বদলাতে শুরু করে একটু একটু করে
অনেক সময় ধরে, অনেক অনেক কারণ পরে;

ভালো লাগা ও না লাগার মাঝে পার্থক্য এক মুহূর্ত
ভালোবাসা ও না বাসার মাঝে পার্থক্য সম্পর্ক;

এক মুহূর্তের ভালো লাগা আর না লাগায় কি এসে যায়!

এক মুহূর্তের ভালোবাসায় একটা পুরো জীবন ওলোটপালট হয়ে যায়
ভালোবাসাবাসির একটা মুহূর্ত একটা জীবন হয়ে যায়।







শরীরীয়



শরীরীয়
- যাযাবর জীবন


শরীর তো শরীরই,
সাদা কালো
মোটা চিকন
লম্বা খাটো
মাংসের দলা
কিংবা মাটির,
তবুও সবকিছু এই শরীর ঘিরেই
শরীরবৄত্তিক
শরীরীয়;

টাকা পয়সা
সহায় সম্পত্তি
অর্থ বিত্ত,
আশা আকাঙ্ক্ষা
কামনা বাসনা
ভোগ লালসা
রিপুর তাড়না,
সব কিছুই শরীর ঘিরে
সব কিছুই শরীরীয়;

শরীর?
এই আছে, এই নাই
নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার সাথে সাথেই মাটি;
তবুও নিত্য রেষারেষি, হানাহানি
হিংসা বিদ্বেষ, তুচ্ছ অহংকার
আর রিপুর কাছে মাথা নত
ক্রমাগত, ক্রমাগত;
কি আছে রে, এই শরীরে?

ঐ যে পড়ে আছে শব
একদিন শরীরই ছিল সব;
নিঃশ্বাসটা বন্ধ হওয়ার সাথেই
এক নিমিষে মাটি।




যন্ত্রমানব



যন্ত্রমানব
- যাযাবর জীবন


একটা সকাল, পাখির ডাকের
একটা দুপুর, মন খারাপের
একটা বিকেল, হলুদ হলুদ
সন্ধ্যা এলেই, বিষণ্ণ লাল

একটা দিন ভালো মন্দের
কখনো মেঘ কখনো সূর্যের
একটা রাত আনন্দ বিরহের
কখনো তারা কখনো চাঁদের

সকাল কখনো রাত'কে ছুঁতে পারে না
সূর্য ছুঁতে পারে না চাঁদ'কে
তবুও প্রহর গণনা, দিন রাত আর সূর্য চাঁদে;

একটা তুই
একটা আমি
কিছু বোধের বোধ
আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না
বড্ড ক্ষণস্থায়ী মানসিক অনুভূতি,
মানবিক অনুভব;

মানবিক অনুভূতি বইয়ের ভাষা
গল্প, কবিতার পাতায় পাতায় ঠাসা;

অনেক ভালোবেসে তুই আমায় ছুঁয়ে ছুঁয়ে দিয়েছিস
ধরে রাখতে পেরেছিস কি?
আরে বোকা, যান্ত্রিক অনুভূতিতে ভালোবাসা দাগ কাটে কি?
যন্ত্র'কে ধরা যায়, ছোঁয়া যায়
আপন করেছিল কে কবে?

আমি শুধুই একটা যন্ত্র
আমার সাথে জড়িত কেবলমাত্র অর্থ আর স্বার্থ।






মুখোশের ভেতরের আমি


মুখোশের ভেতরের আমি
- যাযাবর জীবন


আজকাল প্রায়ই হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে
সূর্যের প্রখর রোদে কি আর হারানো যায়?
চারিদিকে চেনা চোখ
কোথাও না কোথাও কারো না কারো চোখে পড়ে যেতেই হয়
হারানো হয় না মানুষের ভিড়ে;
ভাগ্যিস একটা মুখোশ আছে
যখন ইচ্ছে হারিয়ে যাই মুখোশের আড়ালে;

কোথায় আজ আমি?
গুটিয়ে নিয়েছি নিজেতে নিজে;

আজকাল বড্ড জানতে ইচ্ছে করে নিজেকে নিজে
আয়না তো চেহারা দেখায়
আমি মন দেখতে চাই,
মন পড়ার আয়না কোথায়?
মুখোশের ভেতর কি আর মন পড়া যায়?
মুখোশের আড়ালে মন গুঁটিয়ে রাখতে রাখতে
মনটাই হারিয়ে গিয়েছে কোথায়!

আমি কে?
মুখোশের আড়ালে টাইপ করা কিছু শব্দাবলী,
কখনো হাসি, কখনো কাঁদি;
ভাগ্যিস মুখোশ আড়াল করে রাখে আমায়।



ভালোবাসার ফ্যানা



ভালোবাসার ফ্যানা
- যাযাবর জীবন


ভালোবাসার কথা আমরা কেও মুখে বলি নি,
না তুই
না আমি,
আমাদের মাঝে কি ভালোবাসা হয় নি?

আজকার চোখের দেখাতেই ইশারা
দু দিন চা পান তো তিন দিনে লাভ ইউ, লাভ ইউ মুখে ফ্যানা
চারদিনে উম্মা চুম্মা
সপ্তাহ যেতে না যেতেই বিছানা
তারপর মাসের শেষ না হতেই বিচ্ছেদ বেদনা,
আর বছর জুড়ে ভার্চুয়ালে চিৎকার - "ভালোবাসা ছলনা";

আরে বাবা, এত তাড়া কেন?
ভালোলাগা থেকে ভালোবাসায়
আর ভালোবাসা থেকে বিচ্ছেদে;
চিৎকার করে জানান না দিলে ভালোবাসার মানুষকে কি অন্য কেও নিয়ে যাবে?
মনে ভয় নিয়ে ভালো লাগা হয়, ভালোবাসা হয় না
ভালোবাসা শুধুই দুটি হৃদয়ের অনুভব,
কাছে কিংবা দূরে থেকে;

যুগ যুগ বিশ্বাসের সাথে পরস্পর ছুঁয়ে থাকার একান্ত সময়;
সে কি ভালোবাসা নয়?
মুখে না বললে কি ভালোবাসা হয় না?
কই? আমরা যে মুখে একবারও ভালোবাসি বলি নি
আমাদের মাঝে কি ভালোবাসা হয় নি?
তবে এখনো কিভাবে পরস্পরের হৃদয় ছুঁয়ে আছি?

ভালোবাসা! শুধুই হৃদয় অনুভব
যারা ভালোবাসে তারাই জানে,
আর বাকিরা হারানোর ভয়ে মুখে ফ্যানা তোলে।




রবিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৮

স্পর্শ কথা বলে




স্পর্শ কথা বলে
- যাযাবর জীবন


স্পর্শগুলো বড্ড অদ্ভুত
স্পর্শগুলোর আলাদা আলাদা ভাষা আছে
স্পর্শগুলো কথা বলে, স্পর্শে স্পর্শে;

এক এক জনের স্পর্শ এক এক রকম
স্পর্শগুলোকে কিন্তু আলাদা করা যায়
কারো স্পর্শ স্নেহের, কারো মমতার, কারো বা ভালোবাসার
তোর স্পর্শে শুধুই আদর;

কারো কারো স্পর্শে কামভাব প্রবল
আচ্ছা! শরীর কি শুধুই শরীরের জন্য?
মন স্পর্শ না করে শরীর স্পর্শ করলে পাপ হয় না?
গা ঘিনঘিন করে উঠে না?
কেও কেও তো মন স্পর্শই করতে চায় না;

কারো কারো চোখই মন স্পর্শ করে নেয়
কারো কারো চোখ মমতার কথা বলে দেয়
কারো কারো চোখের স্পর্শ ভালোবাসার টানে
আবার কিছু কিছু চোখ শুধুই শরীর ছানে,

শরীরে শরীর ছানাও কিন্তু স্পর্শ হয়
ভালোবাসা কাম নয়
আচ্ছা! কুকুরের মধ্যে কি ভালোবাসা হয়?
নাকি শুধুই ভাদ্রে ভাদ্রে শরীর শরীরে লেগে রয়?

জানিস! মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে করে তোর স্পর্শ পেতে
তোর চোখে, চোখ হারাতে
বুকের ভেতর জড়িয়ে নিতে,
যখন তোকে খুব বেশী কাছে পেতে ইচ্ছে হয়
আমি জ্যোৎস্নার স্পর্শ মেখে নেই সারা গায়ে
তারপর চোখ বন্ধ করি মন ভেবে তোর বুকে
আর জুঁই এর সুবাস জড়িয়ে থাকে আমায় সারারাত ধরে
তোকে ভেবে চোখ ঘুমিয়ে গেলে গভীর অন্ধকারে;

তোর একটু স্পর্শই আমার পুরোটা পৃথিবী
কবে একটু স্পর্শ দিবি?









মনের রঙ



মনের রঙ
- যাযাবর জীবন


আলো রঙ বদলায় প্রহরে প্রহরে
রঙ বদলায় সূর্য
রঙ বদল প্রকৃতির
রঙ বদল মনের;

মাঠ দেখেছ?
ঘাসের মাঠ
ধানের মাঠ
যবের আর ভুট্টার মাঠ;

শস্যের ক্ষেত তো দেখেছই তোমরা
ঢেঁড়স, পটল, মরিচের ক্ষেত
লাউ, কুমড়ো, শসার মাচা
সবুজের রঙ তো দেখেছই তোমরা;

সবুজের কত বাহার হতে পারে দেখেছ কি তোমরা?
ধানের শীষ সবুজ
লাউ কুমড়ো পটল সবুজ
সবুজ যব ভুট্টার ক্ষেত,
অথচ দেখ! ধান পাকলেই সোনা রঙ
যব আর ভুট্টা পাকলেই সোনা
কত সহজেই না সবুজ বদলে যায় সোনালীতে
সূর্য বদলায় রূপালী হয়ে সাদায়
বিকেল বেলাটা দেখ! সূর্যটা আবার লাল হয়ে হয়ে ধুসর
তারপর একদম অন্ধকার;

জ্যোৎস্নার রঙ চেন?
কেও বলে হলদেটে
কেও বলে ম্যাড়ম্যাড়ে
আমি বলি সোনালু;

আচ্ছা! বল তো মনের রঙ কি?
লোকে বলে মন নাকি রঙধনু!
কি জানি! হতেও পারে;
দাঁড়াও, আয়নায় দেখে নি,
ওহে আমারটা তো দেখি অন্ধকার
এখানে কোথাও নেই লাল সবুজের বাহার
তবে কি মন কালো? নাকি আমিই অন্ধকার!






খোলা আর বন্ধ চোখ



খোলা আর বন্ধ চোখ
- যাযাবর জীবন


তীব্র মোহ শুধু আনন্দের কথা বলে
তীব্র উল্লাস জীবনের থরে থরে
এই যে সকাল সন্ধ্যা রাত
আর সূর্য তারা চাঁদ
এই যে সাদা সাদা মেঘ আর কাশ
আর রঙ বেরঙের শরতের আকাশ
সবই জীবনের কথা বলে,
রঙ খেলে না বন্ধ চোখে
শরত খেলে না পাথর মনে।

চোখ খোলা আর বন্ধের মাঝে ঘুমের বাস
চোখ খোলা আর বন্ধের মাঝে মৃত্যু বাস করে,

মৃত্যু দেখেছ কি চোখ খোলা রেখে?
আমার চোখে তাকাও
হ্যাঁ, আমার চোখে;

কেও কেও জীবন দেখে পাথর চোখে
ভাবালুতার স্থান নেই সে চোখে
নেই জীবনের উল্লাস
নেই অনুভূতির উত্তাপ,
ভালো করে তাকিয়ে দেখ
আমার চোখে কোন জীবন নেই।





ইট পাথরের নগরী



ইট পাথরের নগরী
- যাযাবর জীবন


আড়মোড়া ভাংছে শহর
আড়মোড়া ভাংছে সূর্য
কি আছে এই ইট পাথরের নগরীতে?
তবুও ফিরে আসতেই হয় এখানে, জীবন সংগ্রামে;

মাঝে মাঝে যখন অসহ্য হয়ে যাই
কিছু সবুজ নিয়ে আসি
সবুজের বুক চিড়ে
মাঝে মাঝে কিছু নীল নিয়ে আসি
আকাশে উড়ে উড়ে, সাগরে ঘুরে ঘুরে
মাঝে মাঝে সোঁদা মাটির গন্ধ নিয়ে আসি
গ্রাম নদী ঘুরে ঘুরে, নিঃশ্বাস বুক ভরে;

তারপর আবার আমি পথর হয়ে যাই
ইট পাথরের নগরীতে;
তোমরা একে জীবন্ত শহর বলো
আমার কাছে মৃত নগরী।



একদিনের কথা ও জীবন বদল



একদিনের কথা ও জীবন বদল
- যাযাবর জীবন


তুই ভোরের সূর্য, প্রখর আলো
আমি সূর্যাস্ত, অন্ধকার কালো
মাঝে পুরো একটি দিন ;

এক দিনে কত কিছুই না ঘটে যায়!
কত কত জন্ম
কত কত মৃত্যু
নদীতে কত স্রোত বয়ে যায়
জীবনে কত নতুন সম্পর্ক
কত মন ভালোবাসায়
কত প্রেম বেদনায়;

তোর মনে নতুন মানুষ নতুন দিনে
খণ্ড খণ্ড ভালোবাসার মেঘ, আজ তোর মনে
আর ত্রিখন্ডিত তুই ত্রিভুজ প্রেমে
তুই সূর্যোদয় প্রতিদিন, নতুন নতুন রঙে
সূর্যাস্তে কি আর রঙ থাকে রে?
আমি তো প্রতিদিনই অন্ধকার, শুধুই তোতে;

তুই ভুল করে ভালোবেসেছিলি আমায়
আবার ভুল করছিস ত্রিভুজ প্রেমে,
আমি তো ভুল করে ভালোবাসি নি তোকে
তবে এখন কেন ভুলে যাব রে ভুল করে?

অন্ধকারের রঙ বদলের প্রয়োজন হয় না
সূর্যের রঙ বদল প্রহরে প্রহরে,
আমি না হয় কালোই রইলাম
তোকে ভালোবেসে অন্ধকারে।





আমি, তুমি, তাহারা, তাহারা ও উহারা



আমি, তুমি, তাহারা, তাহারা ও উহারা
- যাযাবর জীবন


ভোরটা পাখিদের
কিচিমিচি ঠোঁটে ঠোঁটে
সকালটা কুয়াশার
শিশির শিশির
সূর্য সবার
লাল লাল রোদ;

আমারও পাখি হতে ইচ্ছে করে
ডানায় রোদ মাখিয়ে
একদিন ঠিক উড়ে যাব
মায়ার পালক ফেলে




অবগাহনের রাত



অবগাহনের রাত
- যাযাবর জীবন


আজ সন্ধ্যেবেলা সাগর পারে বসে
আকাশের সাথে অনেক কথা হচ্ছিল;
সুখের কথা, দুঃখের কথা
পছন্দের কথা, অপছন্দের কথা
ভালো লাগার কথা, ভালোবাসার কথা;
যখনই তোর কথা বলতে শুরু করলাম
আকাশ অন্ধকারে ছেয়ে গেল
আমার মন খারাপ টুপ করে সাগরে এক ফোঁটা লোনা জল বাড়িয়ে দিতেই
আকাশ আমায় চাঁদ এনে দিল
আমি জ্যোৎস্নায় ভেসে উঠতেই সাগরজলও ঝিলমিল করে হেসে উঠলো,
আকাশের সাথে না হয় আরেকদিন বাকি গল্পটুকু সেরে নেব;

আজ চাঁদনিতে অবগাহনের রাত
আয় ভালোবাসায় ডুবি।




মনের সীমানা




মনের সীমানা
- যাযাবর জীবন


ওখানে ঐ দূরে
রাস্তার শেষ মাথায়
একচিলতে আলো দেখা যায়;
কোথাও না কোথাও রাস্তাটা শেষ হয়েছে
আমি কখনো শেষটা দেখি নি,
আমি হয়তো দৃষ্টি প্রতিবন্ধী
আচ্ছা! সমাপ্তিতে কি আছে?

ঐখানে ঐ সুদূরে
মনের শেষ সীমানায়
কেমন যেন ছায়া ছায়া অন্ধকার,
কোথাও না কোথাও তো আলো আছে
ভালোবাসা আছে
আমি ভালোবাসা বুঝি নি,
আমি বড্ড মন প্রতিবন্ধী
আচ্ছা! মনের শেষ সীমানায় কি আছে?

কারো সময়ের আগেই পথ ফুরিয়ে যায়
কারো পথের আগেই জীবন;
কে আছে আমার মনের সীমানায়?
ভালোবাসা বোঝে না মন প্রতিবন্ধী,
জীবনে কত কিছুই না অজানা রয়ে যায়!


নদী ফেরায় না




নদী ফেরায় না
- যাযাবর জীবন


নদী ফেরায় না কাওকে
হয় ভাসিয়ে নেয়
কিংবা ডুবিয়ে দেয়,
স্রোত গুনেছে কে, কবে?

অনেক ভেসেছি আমি নদীতে
আর তুই কান্নার জলে,
বার বার ডুবতে চেয়ে তোতে
ডুবেছি অশ্রু নদীতে;

আচ্ছা! জ্যোৎস্নায় ভেসেছিস কখনো?
ঐ দেখ, জ্যোৎস্না ভাংছে স্রোতে
আর টুকরো টুকরো সহস্র ঝিঁঝিঁ
পরোটা নদীপথ ধরে;

চাঁদটা টুপ করে ডুবে যাবার আগে
একবার বল ভালোবাসি
তারপর চল ডুবে যাই জলে
দুজন দুজনার অতলে।





বন্ধন, ভালোবাসা ও ঘৃণার



বন্ধন, ভালোবাসা ও ঘৃণার
- যাযাবর জীবন


পরস্পরের গন্ধ চেনে স্বামী স্ত্রী
ভালোবাসা কিংবা ঘৃণায়;

যুগ যুগ এক বিছানায় থেকেও কোন কোন দম্পতির এক ঘৃণা দূরত্বে বাস
যোজন দূরত্বে থেকেও কোন কোন দম্পতির মনে ভালোবাসার সুবাস,
ভালোবাসা ও ঘৃণা দুটোরই ক্ষমতা তীব্র
কাছে টানার কিংবা দূরে সরার;

মন এক আজব ঘর,
মনই মানুষকে বাধ্য করে যোজন যোজন দূরত্বের কাওকে
পাগলের মত ভালোবাসতে,
আর পরিস্থিতি মানুষকে বাধ্য করে
বুকে তীব্র ঘৃণা নিয়ে একসাথে লেগে থাকতে;

সম্পর্ক হৃদয়ে হৃদয়ে,
কেও দাম্পত্য কাটায় এক বুক ভালোবাসায়
কেও দাম্পত্য মেনে নেয় এক বুক ঘৃণায়;
বন্ধন হৃদয়ের,
দাম্পত্য কেবল একটি নাম।



কলুষিত ভাবনা




কলুষিত ভাবনা
- যাযাবর জীবন


মাঝে মাঝে তোকে দেখলেই বড্ড অন্যরকম অনুভব
মাঝে মাঝে তোকে দেখলেই জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে
মাঝে মাঝে তোকে দেখলেই চুমু খেতে ইচ্ছে করে
প্রগলভতার স্থান তো ভালোবাসায়?
মন কি তবে ভালোবাসে তোকে?
মনের অজান্তে।

আজকাল মন খুলি না, মনের সামনে
যদি ভালোবাসায় কামের উদ্রেক হয়?
যদি প্রেম কলুষিত হয়!
তবে মন বোঝাব কি দিয়ে?

আমি দূরত্ব তৈরি হতে দেব না
তোর আর আমার মাঝে,
সম্পর্কে শরীর নিয়ে এসে;

থাকুক না কিছু অনুভব শুধুই মনে মনে;

এই যাহ্‌!
দিলাম তো কলুষিত ভাবনাগুলো খুলে খুলে।







বাণিজ্য



বাণিজ্য
- যাযাবর জীবন


উড়তে চাইতেই তুই আমায় আকাশ দিলি
আমি সারা গায়ে নীল মাখলাম,
ভাসতে চাইতেই তুই আমায় সাগর দিলি
আমি নীলে বিলীন হলাম
ডুবতে চাইতেই তুই তোকে দিলি
আমি অন্ধকার হলাম;

ভালোবাসায় সব দিয়ে দিতে নেই
আমার গ্রহণ করার ক্ষমতা সীমিত,
তুই শুধু দিয়েই গেলি
আমি শুধু নিয়েই গেলাম
সব দিয়েও তুই কান্না পেলি
সব পেয়েও আমি শুন্য হলাম;

ভালোবাসাও তো আসলে বিনিময় রে
আমি তো পুরো বাণিজ্য পেলাম;

আমাদের মাঝে ভালোবাসা হয়েছিল কি?







দহনের রাত



দহনের রাত
- যাযাবর জীবন


আজ কেন যেন তোর কথা বড্ড মনে পড়ছে
আকাশে আধভাঙ্গা চাঁদ আর অর্ধেক নীলাভ জ্যোৎস্না
আমি তারা গুনছি
চাঁদ কখনই আমার না;

একটা সময় ছিল,
রাত ঘুমিয়ে গেলে মোবাইলটা জেগে উঠতো
তুই তো সারারাত জেগেই থাকতি আর যখন তখন মোবাইলে বোতামে হাত
ক্রিং ক্রিং শব্দে ভুস করে জেগে উঠতাম আমি গভীর ঘুম থেকে,
তারপর প্রেম সারারাত;
বড্ড অন্যরকম ছিল সে রাতগুলো
বড্ড অন্যরকম স্বপ্ন
অন্যরকম সময়;

এখনকার মত মোবাইলে এত ফিচার ছিল না তখন
শুধুমাত্র কথা বলা যেত
সেটা ডিজিটাল যুগের সূচনালগ্নের কথা
এনালগ টেলিফোনের বিকল্প মাত্র;

যে রাতে ঘুম ভাঙাতি, সে রাত প্রেমরাত
বড্ড অন্যরকম ভালোবাসাবাসিতে মাখা
সময় কোনদিক দিয়ে গড়াতো
চাঁদ কখন সূর্য হত
বুঝতেই পারতাম না দুজনা,
জানিস! এখন আর কেও রাতে ঘুম ভাঙ্গায় না
কেও হুট হাট ফোন করে বলে উঠে না
আমি কিন্তু বাসে উঠলাম, দেখা হবে তো!
দূরত্ব ছিল, ময়মনসিংহ আর ঢাকা
কতবার পাড়ি দিয়েছিস তুই লম্বা পথ একা
অথচ দূরত্ব ঘুচে নি আমাদের,
আমার যাওয়া হলো না একবারও তোর কাছে
বড্ড স্বার্থপর ছিলাম রে আমি,
এখন শুধুই দহনের অনুভব;

আজ বড্ড মনে হচ্ছে তোর কথা
আজ বড্ড ইচ্ছে করছে বাসে চাপতে
কোথায় যাব?
তুই কি আর আমার অপেক্ষায় বসে আছিস?
আজ যোগাযোগটাও তো হারিয়ে গিয়েছে;

একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে
স্বার্থপরের উচিত সাজা;
এখন শুধুই আত্মদহন
আমার একার,
আর নির্ঘুম রাতে তারা গোনা
চাঁদ সূর্য তোরই ছিল, ওগুলো কখনোই আমার না;
আমি সেদিনও অন্ধকার ছিলাম
আজো কালো;
ভালো থাকিস তুই, অনেক ভালো।







মুখোশের ওপাশ এপাশ




মুখোশের ওপাশ এপাশ
- যাযাবর জীবন


দেখার জন্য চোখ
অথচ আমরা চোখে ঠুলি পড়ে ঘুরি
রঙিন পৃথিবীকে কালো দেখতে
কিংবা রঙিন চশমা লাগিয়ে থাকি
সাদাকালো জীবনকে রঙিন দেখতে,
আসলে চোখ আড়াল রাখতে, মানুষ থেকে
চোখ মনের কথা বলে,
যদি মনের কদর্যতা তোমরা পড়ে ফেল চোখে!

একই মানুষের হরেক চেহারা
এক এক রূপ এক এক স্বার্থে
আমরা চেহারা আড়াল করি মুখোশ ঢেকে,
চেহারায় কি দেখার আছে?
রূপের ছটা, না কদর্যতা?
সৌন্দর্য তো মনে
কদর্যতা প্রকাশে;

কত রঙের মুখোশই না আছে!
মুখোশের বাইরের রঙিন দিকটা সবাই দেখে
এপাশ ঢেকে থাকে অন্ধকারে,
মুখ থেকে মুখোশ কতই না আলাদা!
আমার মনের কদর্যতায় আমি নিজেই শিহরিত
আমার তো মুখোশ লাগেই! মন আড়াল করতে;
আয়নায় তাকাই না কত যুগ হয়ে গেছে!
ভুল করো না তোমরা, মুখোশের ওপাশ দেখে।




ঝুমঝুম ঝুমঝুম ভেজা রাত



ঝুমঝুম ঝুমঝুম ভেজা রাত
- যাযাবর জীবন


অন্ধকার রাতে নিয়নবাতিগুলো জ্বলছে ঠিকই
রাস্তা আলো করে,
তবুও কখনো কখনো নিয়নের আলো বড্ড ঝাপসা লাগে
ভেজা কাঁচে
কিংবা ঝুম বৃষ্টিতে,
দৃষ্টিভ্রমের মত;

খোলা চোখে তো সবই ফকফকা দেখা যায়,
তবুও কখনো কখনো কেন যে ঝাপসা দেখি তোকে?
যখনই তুই মন-আয়নার ওপাশে
আর বৃষ্টিভেজা রাতে;

এই যে বৃষ্টি ঝুমঝুম রাত
আর অঝোর বৃষ্টিপাত,
কোথায় যেন বিষাদের গান বাজছে করুণ সুরে
ঝুমঝুম ঝুমঝুম বৃষ্টির তালে তালে,
জানালার ফাঁক গলে হাত বাড়িয়ে আঁজলা পেতে কিছু বৃষ্টি ধরি
চোখে জলের ঝাঁপটা দেই,
দৃষ্টিতে স্বচ্ছতা এলো কি?
কই? এখনো বড্ড ঝাপসা তোর মুখ
ঝাপসা নিয়ন বাতি,
আর ঝুমঝুম ঝুমঝুম অঝোর বৃষ্টি;

তবে কি জলের ভেতরই তুই আমার দৃষ্টিভ্রম?
চোখের জল
বৃষ্টির জল
নদী বা সাগরের জল
কি এসে যায়?

এমনি কোন এক ঝুমঝুম ভিজে যাওয়া রাতে
যদি হুট করে চলে আসিস বৃষ্টি ভেদ করে,
সোঁদা মাটির গন্ধ নেব তোর বুকের ঘ্রাণে
তারপর না হয় আমিই বৃষ্টি হব, তোর উঠোনে।









ভালোবাসার পাপ



ভালোবাসার পাপ
- যাযাবর জীবন


কখনো জলে ডুবিস কখনো ভাসিস নীলে
পাখা কোথায় তোর পাখি?
একদিন আমিও আকাশ ছিলাম
আমি কাকে ভালোবাসি?

কোন একদিন সাঁতার কেটে যাস আমার বুকে
একদিন না হয় মাছ হয়ে যাস ডুব সাঁতারে
ডুবতে ডুবতে আমরা নদী হয়ে গেলে
না হয় ভাসব দুজন নীলে;

তুই শিমুল দেখিস আমি পলাশ
দুটোই তো লাল, চোখ তাকালে
ভালোবাসা কখন লাল হয় জানিস?
ভালোবাসা বিহনে;

কখনো তুই স্বপ্ন ভাঙিস কখনো ভাঙিস আমায়
টুকরো টুকরো কত ব্যথা কথা মনে পড়ে যায়
কখনো পাইনি প্রেম, যখন তোকে খুঁজি
আচ্ছা তুইই বল, মন ভাঙলে পাপ হয় না বুঝি?

তুই শরীরে শরীর খুঁজিস
আমি খুঁজি তোকে
আদিম খেলায় হারজিত কার হয়েছে?
ভালোবাসা আমায় পাপ দিয়েছে।





অবুঝ সবুজ



অবুঝ সবুজ
- যাযাবর জীবন


সবুজ বড্ড অবুঝ
অবুঝ তুই
অবুঝ তোর মন;
শুধু শুধুই নীল করিস আমায়
শুধু শুধুই লাল
যখন তখন........




জীবনের মোড়ে মোড়ে


জীবনের মোড়ে মোড়ে
- যাযাবর জীবন


রাস্তাটা বিভাজিত মোড়ে মোড়ে
দুই, চার, ছয়, আট, ভাগে,
বিভাজন মনে মনে
জীবনের মোড়ে মোড়ে;

বিভাজন মেনে নিতেই হয়
ইচ্ছা বা অনিচ্ছায়, জীবনে;

জীবন অংক নয়
কখনো নিঃশেষে বিভাজ্য হয়
বাকিটুকু হতাশা,
তবুও জীবনের মোড়ে মোড়ে আশা।



লেখক, পাঠক ও ছাপা অক্ষর



লেখক, পাঠক ও ছাপা অক্ষর
- যাযাবর জীবন


এই যে কালো কালো পিঁপড়ার সারি;
বোঝ না?
ধ্যাত! তুমি আনাড়ি;

আমি বইয়ের কথা বলছি,
কবিতা
গল্প
উপন্যাস
খটমটে প্রবন্ধ
রসময় প্রেম কাহিনী
রম্য রচনা
যে কোন কিছুই হতে পারে
ছাপা অক্ষর,
সাদা কাগজ আর কালো কালি;

এই যে প্রতিদিন সাদা কাগজে কলম দৌড়ায়!
কালো কালো গুঁটি গুঁটি অক্ষর সাজে,
কে জানে কোথায় কার ক্ষত!
অথচ কলমে জীবন কথা অবিরত;

কালো পিঁপড়ের ভেতরেও কিন্তু রক্ত আছে,
জানো?
লাল লিখতে পারে না সবাই;

ঐ দেখ কালো পিঁপড়ের দল, হেঁটে যাচ্ছে সারি সারি
কলম আঁকছে কিছু
লাল কিংবা কালো;
কেও পড়ছে কি?

আজকাল কেই বা পড়ে!
সবার হাতেই কলম, সবাই লিখতে পারে;
ধুলো পড়া বই
আলমিরাতে অবহেলায়,
মাঝে মাঝে যখন বাসায় বিশেষ মেহমান আসে
কোমর বেঁধে ধুলো ঝাড়া হয় আলমিরাতে,
আর চোখে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দেয়া
চকচকে আলমিরা
আমার বইয়ের সংগ্রহশালা
লোক দেখানো অহংকার
আমাদের তুলনা মেলা ভার;

আজকাল পাঠক কোথায়?
লেখক মেলায়।









বুধবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৮

একার রাস্তা



একার রাস্তা
- যাযাবর জীবন


ঐ যে রাস্তাটা দেখছিস!
একসময় ছিল আমাদের স্বপ্নের রাস্তা
আজ রাস্তাটা আমার একার;

এখানে এখন কোন প্রেম নেই
কোন ভালোবাসা নেই
কোন অনুভূতি নেই
এটা এখন শুধুমাত্র একটা রাস্তা
আমারই মত একা;

হাতে হাত রাখার কেও থাকলে রাস্তা হয় দুজনার
ভালোবাসার
পথ চলার,
এক সময় তুই ছিলি
আকাশ ছিল নীল
রাস্তা ছিল রঙিন
আর বাতাসে সতেজ অনুভূতি,

আজ রাস্তাটা দেখ
বড্ড ম্যাড়ম্যড়ে
বিষণ্ণ
একা;

জীবন তো রাস্তাই
তাই না
কখনো দুজনার
কখনো সবার
কখনো একার।









রক্তচাপ



রক্তচাপ
- যাযাবর জীবন


জীবন চলছে চাপে চাপে
কখনো তোর কারণে রক্তে উচ্চচাপ
কখনো মনে মনখারাপের নিম্নচাপ;

যখন তোর প্রেম চাপে
আদরে জড়িয়ে ধরিস
আর চুমুতে চুমুতে দমবন্ধ নাভিশ্বাস;

যখন তোর অভিমান চাপে
চোখ তোর লাল শিমূল
আর মেঘের ঘরে কান্না ঝরে,

যখন তোর রাগ চাপে
আমি তাকাই না তোর দিকে
চোখে তোর আগুন ঝরে,

তোর উপর কিছু চেপে বসলেই আমি ভীত হই
আর রক্তে আমার উচ্চচাপ,
আমার জন্য তাও ভালো রে
ভালোবাসা, অভিমানে জড়িয়ে থাক;

যখনই তোকে কাছে পাই না
যখন তুই অনেক দূরে
আমার বড্ড মন খারাপ আর মনের ভেতর নিম্নচাপ,
নিম্নচাপে বড্ড ঝড় হয় রে
ঝুমঝুমান্তি বৃষ্টি হয়
প্লাবন ডাকে চোখে;
তার থেকে তুই থাক, হয়ে আমার রক্তচাপ
তবুও আমার হয়ে থাক
ভালোবাসায় জড়িয়ে রাখ
আদরে সোহাগে জড়িয়ে থাক।



অর্থের অর্থ

অর্থের অর্থ
- যাযাবর জীবন


অর্থ মানুষ'কে বদলে দেয়
খুব, খুব বেশী বদল স্বভাবে
প্রাচুর্যে কিংবা অভাবে;
অর্থের অর্থ জানে কে?

চুরি সবাই করে,
প্রাচুর্যে পুকুরচুরি
অভাবে খাদ্যচুরি,
পুকুর-চোর চেনে সবাই, ধরতে যায় না কেও
কিল, চড়, ঘুষির কপাল বেটা রুটি-চোর ও;
ক্ষুধা পেট সবাই বোঝে
অর্থের অর্থ বোঝে কে?

বড্ড অসম অর্থের থাকা আর না থাকায়
অসম জীবনযাপন ধনী আর গরীবের
অসম প্রাচুর্যের আর অভাবের
অর্থের অসামঞ্জস্য তো খুব বুঝতে পার
অর্থের অর্থ জানো?

অর্থ নিয়ে আমার খুব বেশী স্মৃতি নেই
আছে অর্থকষ্ট নিয়ে
অভাবের স্বরূপ দেখেছি আমি
খাদ্য কিনেছি শ্রম বিকিয়ে,
অর্থের অর্থ খুঁজে যাচ্ছি আজো
অর্থের পিছু ধেয়ে;

সকল অনর্থ অর্থকে ঘিরে
কাটাকাটি হানাহানি স্বার্থ
স্বার্থপরতা মানুষের ভেতরে
তারও মূলে রয়েছে অর্থ,
যার যার স্বার্থ সবাই বোঝে
অর্থের অর্থ বোঝে কে?

তোমারা প্রায়শই স্বার্থের কথা বল
ক্ষুধার স্বরূপ দেখেছে কে?
স্বার্থে মানুষ কতটা বদলে যায়
আমার থেকে ভালো জানে কে?

স্বার্থের স্বরূপ দেখেছে যে 
অর্থের অর্থ জানে সে।







আবরণ




আবরণ
- যাযাবর জীবন


আজকাল নতুন ফ্যাশনে মেতেছিস তুই,
হিজাবের আবরণে জড়িয়ে রাখিস নিজেকে;
কেন রে?
আমার থেকে নিজেকে লুকোতে?

প্রেম লুকোতে পেরেছিস আবরণে?

কই আর পারলি বল!
ঐ তো প্রেম পড়ে নিচ্ছি তোর চোখে
গড়গড় করে;

ভালোবাসা লুকোতে পেরেছিল কে, কবে?

জানিস!
তোর নেকাবে জড়ানো ঠোঁট আমায় আরও বেশি মাতাল করে।


ব্যর্থতা




ব্যর্থতা
- যাযাবর জীবন


আপনজন মানেই তো আপন
তাই না?
আপনজন কি হিসাব করে?
উঁহু! হিসাব কষে স্বার্থ,
আমি তোমার জন্য এই করেছি ঐ করেছি
তথাকথিত আপনজনদের মুখে নিত্যই শুনি;

আমি মুচকি হেসে বলি, আমি ধন্য, আপ্লুত;
বিনিময়ে কি করতে পারি?
বেশির ভাগের উত্তর, অর্থ সংশ্লিষ্ট
বাকিদের অন্য কোন স্বার্থ
চুপ করে থাকে নি বাছারা কেও;

সম্পর্কের মাঝে আজকাল কোথাও না কোথাও বিনিময় জড়িয়ে আছেই,
রক্তের সম্পর্কের মাঝে তো শতভাগ
বন্ধুত্ব ও আত্মীয়তার মাঝে বেশিরভাগ;
তবে কি সম্পর্ক মানেই বিনিময়
সম্পর্ক মানেই স্বার্থ?

ভালোবাসার সম্পর্ক
মনের টান
নিখাদ বন্ধুত্ব,
কোথায় এগুলো?
আছে, খুব দুর্লভ
তবে একটা দুটো খুঁজে পাই
আমার জীবন খাতায়,
আর ছাপা আছে ডিকশনারির পাতায়;

আমিই আজ পর্যন্ত কাওকে বলতে পারি নি
তোমার জন্য এই করেছি, ঐ করেছি
তবে কি আমি কারো আপনজন হতে পারি নি?
এ ব্যর্থতার দায়ভার আমারই।






অনুভূতিশুন্য



অনুভূতিশুন্য
- যাযাবর জীবন


কাওকে কাওকে ভালো লাগার কোন কারণ লাগে না
কারণ লাগে না ভালোবাসার,
অনেক পেয়েছি ভালোবাসা, মানুষ থেকে
কারণে আর অকারণে

মাঝে মাঝে নিজেই খুব আশ্চর্য হয়ে যাই
মানুষের অযাচিত ভালোবাসা পেয়ে;
আশেপাশের মানুষগুলো কেন এত ভালো?
কই?
আমি তো ভালোবাসতে পারলাম না কাওকে,
তবে কি আমি মানুষ নই?

অপছন্দ করার অবশ্যই কোন না কোন কারণ লাগে
কারণ লাগে ঘৃণার,
হুট হাট মানুষের চোখে ঘৃণা দেখি, খুব সহসাই
কারণে আর অকারণে

মাঝে মাঝে খুব আশ্চর্য হয়ে যাই
আশেপাশের মানুষের চোখে ঘৃণা দেখে
আমি কি এতই খারাপ?
কই?
আমি তো ঘৃণা করতে পারলাম না কাওকে,
তবে কি আমি মানুষ নই?

কি জানি?
আমি বোধহয় বোধবুদ্ধিহীন
অনেকটাই হয়তো অনুভূতিশুন্য,
তবুও কি জানি কেন খুব সহজেই
ভালোবাসা ও ঘৃণাগুলো পড়ে ফেলি
মানুষের চোখে,
ধ্যাত! পাথরের চোখেও দেখি জল আসে
কারণে আর অকারণে।






বিভাজন




বিভাজন
- যাযাবর জীবন


রাস্তাটা চলে গিয়েছে দূর
অজানা বহুদূর,
আমাদের জীবনের রাস্তা
তোর আর আমার;

একটা সময় ছিল
রাস্তায় নামার আগেই রাস্তা ফুরিয়ে যেত হাসি-খেলায়
যখন পাশে থাকতি তুই,
আর এর ওর চোখ ফাঁকি দিয়ে
চোখের নিমিষে ফুরিয়ে যাওয়া আমাদের রেশন সময়;

এখন সেগুলো শুধুই স্মৃতির কাঁটা
আর সেসব কথা মনে হলেই রক্তাক্ত অনুভূতি
আর কোথায় যেন এক দমবন্ধ অনুভব;

ভালোই তো কাটছিল আমাদের সরল জীবন
সরল সময়ে সরল রাস্তায়,
হঠাৎ বাস্তবতা বিভেদ টেনে দিয়েছিল জীবনে,
অনেক গরল সময় পরে বক্রতা এসেছিল চলার পথে
ভাগ হয়েছিল রাস্তা দুটি দিকে,
পথের ও জীবনের;

আজ একার রাস্তাটা বড্ড লম্বা লাগে
আর তুই হীনা মনবন্ধ অনুভব;

আসলে রাস্তা, রাস্তার জায়গাতেই থাকে
বক্রতা যত আমাদের মনে
বিভক্তি মানুষের মাঝে
আর বিভাজন রাস্তার;

আমরা পথ মাড়াই
পথের,
জীবনের;
বাস্তবতা মেনে।





জড়




জড়
- যাযাবর জীবন


আজ বড্ড গুমোট গরম
কেমন ঘোলাটে আকাশ
বৃষ্টি হব হব করেও কাঁদছে না মেঘ
মেঘের বোধহয় অনেক মন খারাপ,
মন খারাপ বাতাসের
তাই তো স্তব্ধ হয়ে থেমে আছে,
মন খারাপ সূর্যের
টুকি দিয়েছে মেঘের আড়ালে,
আর মন খারাপ তোর
তুই অন্ধকারে;

মন খারাপে সবারই কিছু না কিছু প্রকাশ থাকে
শুধু আমারই মন খারাপ হতে নেই
আমি বোধবুদ্ধিহীন এক জড়,
বস্তু, পদার্থ, গাছ, প্রাণী, কত ডাকেই না ডাকে আমায় মানুষগুলো
শুধু মানুষ নামেই ডাকে নি কেও কখনো;

কে কবে শুনেছে মাটির মন খারাপ?

এক ঠায় থিতু মাটির দলা
রোদে পোড়ে, বৃষ্টিতে ভেজে
হলুদ বিকেলে নিঃসঙ্গতার কি বুঝবে সে?

মাটি কবে ফেলেছিল গভীর দীর্ঘশ্বাস?




শনিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৮

ইনসমনিয়ার রাত



ইনসমনিয়ার রাত
- যাযাবর জীবন


কিছু বৃষ্টি নিয়ে শ্রাবণ
কিছু কান্না নিয়ে ভালোবাসা,
ঘুমোবার জন্য রাত;
আজকাল বড্ড ইনসমনিয়ায় ভুগছি
আমার সমস্ত জমানো ঘুম নিয়ে তুই নিশ্চিন্ত ঘুমে
ঘুম নগরীতে;
আচ্ছা! ওখানে কি চাঁদ ওঠে?
ফুল ফোটে?
বৃষ্টি নামে যখন তখন?

জানিস!
অন্ধকার ডাকলেই আমি ছুটে যাই তোর কাছে
আর তুই আলো হতে গিয়ে রাত্রির ওপার দেশে,
অমাবস্যার রাতে চাঁদনি ঘুমিয়ে যাওয়ার পর
আমার রাত কাটে নিদ্রাহীন চোখে;

চাঁদনি ভালোবেসে আমি চাঁদের দিকে তাকাই নি কখনো
আজকাল বড্ড চাঁদ দেখতে ইচ্ছে করে
ঘুমহীন অমাবস্যা রাতে,

কোথায় কমতি ছিল ভালোবাসায়?

আরেকবার সুযোগ পেলে শুধরে নিতাম আবার প্রথম থেকে
তারপর নিশ্চিন্ত ঘুমতাম তোর বুকে মাথা রেখে।







আয়না কথা কয়



আয়না কথা কয়
- যাযাবর জীবন


একদিন খুব রাতে আয়না কথা বলে ওঠে,

কোথায় চলেছ জীবন?
মৃত্যুর দিকে?

ওখানে কি আছে?
শান্তি

আমায় নেবে?
উঁহু, নিয়ম নেই
একলা যেতে হয়

একা খারাপ লাগবে না?
এখানেও তো একাই ছিলাম

কই? এখানে তো কত মানুষ!
বুকের গভীরে তাকাও তো!
অনেক মানুষের মাঝে তুমি কি একা নও?

ওখানে যে অন্ধকার!
এখানে অন্ধকার নেই?
উঁকি দাও মনের ভেতর

ওখানে তো মাটি!
আরে বোকা, আমিও তো মাটি

ওখানে আনন্দ নেই,
ওখানে দুঃখও নেই,

ওখানে ভালোবাসা নেই
ওখানে ক্ষরণও নেই

ওখানে লক্ষ্য নেই কোন
এখানেই বা লক্ষ্য কোথায়?
শুধুই টাকার গোলামী

ওখানে আপনজন কেও নেই
ওখানে স্বার্থও নেই

ওখানে শুধুই মরণ
আরে মরণের পরেই তো চিরস্থায়ী জীবন

কে বলল তোমাকে?
আমি যে আস্তিক

আয়না রাগ করে বলে, তবে মর
আমি মুচকি হেসে বলি
চিরদিন কেও কি আর বেঁচে থাকে?

তবে চল
আচ্ছা, চল

আয়না মিলিয়ে যায় অন্ধকারে
আমি অপেক্ষায় মাটি হতে।



বর্ষা বিলাসের ধুম



বর্ষা বিলাসের ধুম
- যাযাবর জীবন



বৃষ্টি নেমেছে ঝুম
চল রিক্সায় ভিজি, পর্দা ঢেকে
কি আসে যায় ঠোঁট ভিজে গেলে?
কেও দেখবে না পর্দার আড়ালে;

ঐ চেয়ে দেখ কপোত কপোতীর বর্ষা বিলাসের ধুম।





ঘুমঘোরে স্বপ্নচোখে




ঘুমঘোরে স্বপ্নচোখে
- যাযাবর জীবন


ভালো আছি পাখি
ভালো আছি রাত
ভালো আছি তারা
ভালো আছি চাঁদ
তোর কেন মন ভালো নেই?

ভালো আছি ঘুম
ভালো আছি স্বপ্ন
ভালো আছি মন
ভালো আছি প্রেম
তোর কেন মন ভালো নেই?

দেখিস, একদিন ঠিক আমরা চুমু খাব
মন ভরিয়ে
সেদিন তোর মন ভালো হয়ে যাবে
চোখে ঘুম জড়িয়ে

আজ না হয় চাঁদ বাতিটা জ্বলুক আকাশে
তুই নিরাভরণ হ, চাঁদনি ভেজা হয়ে
আমি স্বপ্ন চোখে তাকিয়ে দেখব তোকে
তোর নেশায় বুঁদ হয়ে

স্বপ্নটা ভেঙে গেলেই তুই মিলিয়ে যাবি আকাশে
আমি গভীর ঘুমে;

ভালো আছি পাখি আমি
ভালো আছি চাঁদ
ঘুমঘোরে ডাকছে আমায় মোহময়ী রাত।




জীবন গাড়ি



জীবন গাড়ি
- যাযাবর জীবন


ক্রমাগত পথচলা আমাদের
এক ষ্টেশন থেকে আরেক ষ্টেশন
এক গাড়ি ছেড়ে আরেক গাড়ি
এক জীবন থেকে আরেক জীবন;

জীবনের শুরুটা খুব অদ্ভুত
পানির ভেতর দোল খেতে খেতে
মায়ের পেটে নৌকা জীবন
ভেসে ভেসে, ডুবে ডুবে
গন্তব্য পৃথিবী নামক ষ্টেশন;

তারপর মায়ের কোলে
দোদুল দোলে
মায়ের বুকে ওমে ওমে
হামাগুড়ি, গড়াগড়ি
শিশু ষ্টেশন;

বাবার হাত ধরে ধরে
হাঁটি হাঁটি পা ফেলে
দিদির আদর মাথায় করে
মায়ের শাসন পড়ার বইয়ে
ছেলে বেলা, দুরন্তপনা
নতুন ষ্টেশন স্কুল জীবন;

বন্ধু-বান্ধব আড্ডাবাজি
পড়ার ফাঁকে একটু ফাঁকি
ঐ মেয়েটা রে সুন্দরী
সিগারেট ঠোঁটে ভাবের গাড়ি,
ঐ ছেলেটা বড্ড খাসা
কোমর নাচন নতুন শেখা,
মনের ভেতর ইটিশপিটিশ
কৈশোরে ভিড়ল গাড়ি;

যৌবন তো প্রজাপতি
প্রেমের ডানায় ওড়া-উড়ি
কলেজ ইউনি শিক্ষা গাড়ি
পড়ালেখা, ক্লাস ফাঁকি
আড্ডাবাজি যখন খুশি
পড়ায় খেলায় মধুর সময়
পরীক্ষা এলেই বোধোদয়
ঐ দেখা যায় চাকরি ষ্টেশন
কঠিন জীবন অন্ন অহ্নেষণ
শিক্ষা বড্ড জরুরী
শিক্ষা জীবন গাড়ি;

চাচা মামা ফোনের গাড়ি
চাকরি ষ্টেশন পাকড়ে ধরি
আর নয়তো ইন্টারভিউ
অফিস অফিস জুতা ক্ষয়,
চাকরি কি আর সহজে হয়?

একা একা একলা জীবন
রাত কাটানো বড্ড বিষম
মন শুধু কেমন কেমন
ঐ দেখা যায় বিয়ের গাড়ি
উঠবো কি উঠবো না
দিল্লির লাড্ডু সংসার ষ্টেশন;

পান থেকে চুন খসলে
বৌ চলল বাপের বাড়ি
হাঁড়িকুঁড়ি ঝনঝন
অফিসে গণ্ডগোল
চাকরির টেনশন
বাচ্চা কাচ্চা ট্যাঁ টো
সংসার জীবন;

একটা সময় আসে খুব অদ্ভুত
চারিদিকে অনেক লোকজন
তবুও বড্ড একা
সংসার সঙ্গী? ভালোই আছে অন্যভূবনে
মনটা বড্ড ফাঁকা ফাঁকা
ছেলেমেয়েরা যে যার সংসারে
নাতিপুতি? গেজেট ঘরে
মোবাইল ল্যাপটপ নেটের যুগ
সময় কোথায় কথা বলার?
বার্ধক্য ষ্টেশন একলা উদাস;

কোথায় যেন টিং টিং ঘণ্টা বাজছে
ঐ দূরে, মাথার ভেতরে,
ট্রেনটা দেখা যায় না এখান থেকে
তবে জানি আসছে, দ্রুত কিংবা ধীরে,
এটাই শেষ গাড়ি গন্তব্যে নিয়ে যেতে,
গন্তব্য, শেষ ষ্টেশন;

ষ্টেশনটা কেমন?
জানা নেই।




নিস্তব্ধতা




নিস্তব্ধতা
- যাযাবর জীবন


কখনো কখনো সময় চুপ
কখনো কখনো আমি,
কখনো কখনো কিছু লিখতে ইচ্ছে করে না
কখনো কখনো নৈঃশব্দ্যতাই কবিতা

এই যে চড়া রোদ
এই যে অসহ্য গরম
আর ঘামক্লান্ত দেহ
খুব ভালো করে তাকিয়ে দেখ
রোদে পুড়ছে কিছু কবিতা

দুপুর রোদের একটা অন্যরকম নেশা আছে
তপ্ত রোদে গা ঝিমঝিম
ছেঁড়া স্যান্ডেলের নিচে পিচ-গলা রাস্তা
নেশাগ্রস্ত রোদে আমি হাঁটছি পা টেনে টেনে
মাথাটা বড্ড ফাঁকা ফাঁকা
আর পিচে গলছে কবিতা

এখানে এই দুপুর রোদে
তোর আর আমার অনেকগুলো গল্প ছিল,
প্রেমের ও বিচ্ছেদের;
আজ শুধুই নিস্তব্ধতা
আর নৈঃশব্দ্যতার কবিতা।






মানুষের গল্প




মানুষের গল্প
- যাযাবর জীবন


তোমরা হাসির কথায় হাস
হো হো করে হাস,
দুঃখ পেলে কাঁদ
চিৎকার করে কাঁদ,
সেটা ঠিক আছে
সেটাই ঠিক;

ভালোবাসায় অভিমান
ভালোবাসায় ঘৃণা
ভালোবাসায় হাসি
ভালোবাসায় কান্না
সবই ঠিক আছে;

শুধু ঠিক নয় হেরে যাওয়া,
হারতে জন্ম হয় নি মানুষের;

জীবন সমান্তরাল নয়
খারাপ পরিস্থিতি আসতেই পারে জীবনে,
উঠে দাঁড়াও
রুখে দাঁড়াও,
পা না থাকলে হাতের ওপর
হাত না থাকলে মনের ওপর;

জীবন'কে স্বীকার করে নাও জীবনের মত
যখন যেভাবে যে অবস্থাতেই থাক,
এটাই জীবন
মানব জীবন;

আলোতে বাঁচ
অন্ধকারে নয়
বাঁচার মত বাঁচ
মানুষের মত বাঁচ;

হেরে যাওয়া মানুষের কোন গল্প নেই।




আকাশের ভালোবাসা



আকাশের ভালোবাসা
- যাযাবর জীবন


তোকে ভালোবাসি
সেটা আমার সমস্যা
কতটা ভালোবাসি?
না হয় নাই হলো তোর জানা;

চাঁদ আলো দেয়
আলো দেয় তারা
আমার ভালোবাসা?
সে তো সূর্যের পেছনে, খুব সযতনে,
সূর্যের দিকে কি আর তাকিয়ে থাকা যায়?
তবে ভালোবাসা দেখবি কি করে?
তারচেয়ে তুই চাঁদনি হয়ে থাক চাঁদের রাতে,
আমি কোথাও না কোথাও থাকব, ভালোবাসা হয়ে;

চাঁদ, তারা, সূর্য
আর নীল, ধুসর, কালো
আকাশ বুকে ধরে সবাইকে,
ভালোবেসে।



জ্যোৎস্নার চাদর




জ্যোৎস্নার চাদর
- যাযাবর জীবন


তুমি ছলনায় ভাসাও নারী
আমি ডুবতে থাকি অতলে
ভালোবাসার যন্ত্রণা
ভালোবাসাই বুঝতে পারে;

অন্ধকার কোথায়?
রাতের চাদরে;
ছলনাময়ী চাঁদ দেখায় দিনে
আমি জ্যোৎস্নার অন্ধকারে।






বোধের বাইরের অনুভূতি



বোধের বাইরের অনুভূতি
- যাযাবর জীবন


একদিন খররোদে কেও একজন মেঘ হয়ে আসে
মাথার ওপর ছায়া হয়
দু এক ফোঁটা বৃষ্টি হয়ে ছুঁয়ে দেয়
তারপর আবার উড়ে যায় দূর আকাশে
আরেকজন সারাজীবন ভেজে,
এটা তো প্রেম নয়!

স্বামী-স্ত্রী সারাজীবন পরস্পর ছুঁয়ে ছুঁয়ে ঘুমায়,
সবার মাঝে কি আর প্রেম হয়?
তবে হয়, কারো কারো মাঝে অবশ্যই হয়
তাঁদের মাঝে গভীর প্রণয় রয়,
আর বাকিদের পাশ বালিশ,
শরীর ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকাটাই প্রেম নয়;

ব্যাখ্যাতীত কিছু সম্পর্ক আছে মন ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকার
অনেক দূর থেকে
ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না
শুধুই মন অনুভবে,
সেও তো প্রেম নয়;

প্রেম তবে কি?
বোধের বাইরে কোন অনুভূতি?


আপন কে?



আপন কে?
- যাযাবর জীবন


কে আপন সংসারে?
জানতে ইচ্ছে করে;

আপন কারে কয়?
বড্ড জানতে ইচ্ছে হয়;

পৃথিবীকে জিজ্ঞাসা কর, সবচেয়ে আপন কে?
পৃথিবী বলবে মা,
অবশ্যই মা আপন?
তবে জীবনের একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত,
তারপর?

বাবা?
সে তো সংসারের খুঁটি,
কন্যাদের খুব কাছাকাছি
ছেলেদের থেকে দূরত্ব একটু বেশী;

ভাই-বোন?
উঁহু! স্বার্থ আপন;

প্রেমিক প্রেমিকা?
উঁহু! সে তো ক্ষণিকের,
জীবন চাকায় বেশীরভাগ প্রেম পিষে যায়
আর অল্পকিছু গাঁটছড়া বাঁধে
সংসার নামক সং সারে;

স্বামী-স্ত্রী?
মনের মিল তো শেষ ষ্টেশন পর্যন্ত
নয়তো বিষময় ষ্টেশন
আর লাইন-চ্যুত বগি;

বন্ধু বান্ধব?
- বন্ধুত্বের পরীক্ষা চাও তো টাকার লেনদেন;

আত্মীয় স্বজন?
- দুধের মাছি;

তবে?
সবচেয়ে আপন কে?

হঠাৎই আয়নায় চোখ গেলো,
ঐ তো জবাব দেখা যায় আয়নায়
পৃথিবীতে সবচেয় আপন
আমার আমি;

আমি বড্ড বেশী স্বার্থপর
তাই না?

যা ইচ্ছে ভাবো তোমরা
আমার কিছুই আসে যায় না,
সত্য তো তিতাই, তাই না?

পৃথিবীতে সবচেয়ে আপন
- আমার কাছে আমি
- তোমার কাছে তুমি,
- আর টাকা, সবচেয়ে দামী;

কি বিশ্বাস হলো না?
আয়নার সামনে দাঁড়াও,
মনের আয়না;
মনের আয়না মিথ্যা বলে না।






আকাশের গল্প



আকাশের গল্প
- যাযাবর জীবন


গল্পটা ছিল আকাশের,
নীল আকাশের;
তোমরা তাকে যতটা নীল দেখ, আসলে সে ততটা নয়
তোমাদের মন যখন খুশিতে সূর্য হয়ে ওঠে
সূর্য যখন খুশিতে হেসে ওঠে
আকাশ তখন আকাশ নীলে মাতে
আকাশ নীল বোঝ? আকাশের মত নীল,
আকাশ পরিমাপের সাধ্য কি মানুষের?

মানুষের মনের সাথে সাথে আকাশ কিন্তু রঙ বদলে ফেলে
যখন তোমাদের মনে দুঃখগুলো উথলে ওঠে
আকাশ নিজেকে ঢেকে ফেলে মেঘের আড়ালে
তোমাদের সাথে সাথে আকাশ কাঁদে, বৃষ্টি হয়ে ঝরে;
যখন শেষ বিকেলে তোমাদের অনেক মনখারাপে হৃদপিণ্ড ক্ষয়
আকাশেরও তখন বড্ড মন খারাপ হয়
লাল দেখনি আকাশে? শেষ বিকেলে
হৃদপিণ্ডে কি থাকে? রক্ত কি লাল নয়?
মানুষের সাধ্য কি আকাশ পরিমাপের ?


তবে বেশীর ভাগ সময় আকাশ কিন্তু মন খারাপে কালোই হয়ে রয়,
সন্ধ্যায় টুপ করে সূর্যটা ডুবে গেলেই
মানুষগুলো ধীরে ধীরে অমানুষ হয়ে ওঠে
রিপুগুলো সব তাদের চোখেমুখে ফুটে
মানুষের কালোতে ছেয়ে থাকে আকাশ
আকাশ দুঃখ পায়, কষ্ট পায়, রঙ হারায়
মানুষ আর অমানুষের পার্থক্য তার চোখে লেগে রয়
আর মানুষের ময়লাগুলো ঢেকে দিতে আকাশ রাত্রি হয়,
পাপগুলো তো কালোই, তাই না!
নীল আকাশ অন্ধকার কালো হয়;
আকাশ বোঝার সাধ্য কি মানুষের?




ভুল নদী



ভুল নদী
- যাযাবর জীবন


আমাদের একটা নদী ছিল,
প্রেমনদী;
হঠাৎ হঠাৎই তুই গভীরে ডুব দিতি
তারপর একদিন ভুস করে ভেসে উঠে
ফিক করে হেসে দিয়ে বলতি
ভালোবাসি, ভালোবাসি

আমাদের একটা নদী ছিল,
প্রেমনদী;
হঠাৎ হঠাৎই তোকে হারিয়ে ফেলতাম
তারপর একদিন খুঁজে পেয়ে জড়িয়ে ধরতাম
ঠোঁটে ঠোঁটে বলতাম
ভালোবাসি, ভালোবাসি

জানিস!
আমার জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছে সেই নদী
এখন চারিদিকে বড্ড ডুবোচর
তাই বোধহয় তোরও ডুব দেয়া হয় না আজকাল
আমিও অপেক্ষায় থাকি না কারো ভেসে ওঠার
তবুও মাঝে মাঝে আমার মন চলে যায় নদী পারে
কি যেন একটা খুঁজি ওখানে
খুব হঠাৎই;
আচ্ছা! তোর নদীটিও কি মরে গেছে?
তুইও কি বেড়াতে যাস মরা নদী তীরে?
আমার মত, হঠাৎ অবসরে;

এক সময় আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতাম কফির মগ হাতে
আর কফি খেতাম চুমু ঠোঁটে
কফি খেতাম কি?
কই? মগ তো ভরাই থাকতো,কফিতে!
আমরা কেবল চুমু খেতাম, প্রেম খেতাম
কফির মগের বাহানাতে;

সময় সব বদলে দেয়,
এক সময় শরীর ফুরিয়ে যায়
এক সময় মন ঝিমিয়ে যায়
এক সময় কথা বলতে ভালো লাগে না
এক সময় শুধুই নৈঃশব্দ্যতা,
তারপর এক সময় চর পরে যায় প্রেমনদীতে
তবুও কোথায় যেন একটা অনুভব রয়ে যায়
মননদীতে,
মন তো নদীই রে;
তাই না?

শরীর বড্ড একঘেয়ে রে
সব সময় কি আর চুমু খেতে ভালো লাগে?
তারচেয়ে চল বসি আজ কফির মগ হাতে
আয় কফির স্বাদ নেই ঠোঁটে জিহ্বে
পুরনো স্মৃতি রোমন্থনে;

আচ্ছা! কি দেখছিস বার বার পেছন ফিরে?
কিছু হারিয়ে গিয়েছে কি?