শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

স্মৃতির কথকতা

 মানুষ শুধু কুঁড়িয়েই যায়

সেই জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি,  

তবুও শেষমেশ আসলে হাতে থাকে না কিছুই 

থাকে শুধু স্মৃতির পাতায় গেঁথে যাওয়া স্মৃতিগুলো; 


থাকে কিছু মনমরা ঢলা রোদ কিছু তেজস্বী ঝলসানো দুপুর  

থাকে চাঁদ থাকে জ্যোৎস্না থাকে অমাবস্যা, 

থাকে বছরের তিনশত পঁয়ষট্টি দিনের মাঝে হাতেগোনা অল্প কিছু দিন

যখন তুই হেসেছিলি বালিকা, যখন তুই কেঁদেছিলি

যখন তুই ভালবেসেছিলি, যখন ছেড়ে গিয়েছিলি

যখন মনে প্রেম এসেছিলো আর জীবনটা তুইময় ছিলো,


থাকে কুঁড়িয়ে তোলা হাজার সম্পর্কের ভীরে অল্প কিছু সম্পর্ক

যারা ভালবেসেছিল, যারা দুঃখ দিয়েছিলো

যারা কিছু পাওয়ার আসায় কাছে এসেছিলো 

যারা স্বার্থের লোভে ছেড়ে গিয়েছিলো

যাদের জন্য হেসেছিলেম কখনো 

আর যাদের জন্য কাঁদতে হচ্ছে আজও,


ক্ষণস্থায়ী জীবনে কিছু দীর্ঘস্থায়ী অতীত  

স্মৃতির কোষে কোষে নেশার বিষের মত 

শরীরের ভেতর বাসা বাঁধে 

রোধ পোহায়

নিউরন কোষ কুঁড়ে কুঁড়ে খায়

বেড়ে উঠতে উঠতে একসময় যখন থেমে যায়

তারপর মন হামানদিস্তায় পিষে যায় স্মৃতিগুলো 

পিষে যায় মানুষগুলো, সম্পর্কগুলো

ভালোবাসা, হাসি-কান্না আর দুঃখগুলো 

তারপর বাতাসে উড়িয়ে দেয় সকল মৃতদেহ

মৃত মানুষ

মৃত সম্পর্কগুলো

মৃত অনুভূতির সকল অনুভব

তারপর সৎকার হয়ে যায় সকল দীর্ঘশ্বাসের;


ঐ তো ইতস্তত পড়ে আছি আমি 

স্মৃতিগুলো সব মেরে ফেলে,  


তোমরা শব বলে আমায় নিয়ে যাচ্ছ 

দেহটা সৎকারে। 



#হিবিজিবি_ভাবনা 

 

স্মৃতির কথকতা 

 - মোঃ আহসানুল হক 


১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ 





সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

তারার হাসি

 ঐ যে শ্যাওলা পুকুরটায় গাঢ় সবুজ জল! 

আঁধার নামতেই জলে কালো  

একমাত্র সূর্যই সাহস করে  

টুপ করে ডুবে যেতে, সন্ধ্যা নামতেই......... 

প্রেমে ডুবতে না পারার অক্ষমতা 

শুধুই প্রেমিকের...... 


কত রূপেই না দেখি চাঁদ'কে! 

কত শোভা, কত নাম আর প্রেমিকের কবিতায় আঁকা 

নিজস্ব আলো কোথায় তার? 

ধার করা আলোতে পথ চলতে চায় প্রেমিক 

প্রেমে অমাবস্যা এলে দোষ দেবে কাকে? 


সন্ধ্যা পার হতেই রাতের সাথে অন্ধকারের ফিসফাস

প্রেমের কবিতা বোনা হয় ব্যর্থতার জালে 

তারপর ঝপ করে কান্নার জাল ফেলতেই 

একটি দুটি রূপালী ইলিশের চকচক  

চাঁদের ধার করা সূর্যের রাতে;  


ভালোবাসার খুব গভীরে কোথাও কি আলো আছে?  

প্রেমের নিকষ কালো রাতে তারা'রা হাসে..................... 

প্রেমিকের কলম ব্যর্থতা লিখে 

রাত-বাদুরের পিঠে। 


#হিবিজিবি_এলোমেলো 


তারার হাসি 

 - মোঃ আহসানুল হক 


০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ 





বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

সংগ্রহ

 কতরকম শখই না মানুষের আছে  

এর মাঝে সংগ্রহে বিভিন্ন রকম জিনিস রাখা একটি শখ

সখ করে নানা জিনিষ  সংগ্রহ করে তারপর শোকেসে সাজিয়ে রাখে থরে থরে, 

কেউ মুদ্রা সংগ্রহে রাখে কেউ রাখে পুরনো স্ট্যাম্প

কেউ পুরনো গানের রেকর্ড 

কারও বা বইয়ের সংগ্রহ 

আমি ছোটবেলা সংগ্রহে রাখতাম লাল নীল সবুজ হলুদ নানা রঙের মার্বেল

তারপর সংগ্রহ করা শুরু করলাম বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিগারেটের প্যাকেট 

আরেকটু বড় হয়ে কৈশোরে এসে স্ট্যাম্প, তারপর বই

যৌবনে এসে সংগ্রহ ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হতে থাকলো টুকরো টুকরো নানা দুঃখ বেদনায় 

বেশিরভাগ খুব কাছের নিজের মানুষের দেয়া,  

ওগুলো বেশিরভাগই স্বার্থসংশ্লিষ্ট  

তারপর থেকে ক্রমাগত কষ্ট আর বেদনার ইতিহাস

সাপের মত পেঁচিয়ে ধরে রেখেছে স্মৃতিগুলো; 

আজকাল আর কিছুই জমাই না  

আয়নায় তাকালেই দেখি বয়সের ভারে ন্যুয়ে থাকা আমি 

আর পেছনে একরাশ লম্বা দুঃখ বেদনার দীর্ঘশ্বাস, 

কি নিদারুণ সংগ্রহই না আমার! 


#হিবিজিবি_দীর্ঘশ্বাস 


সংগ্রহ 

 -মোঃ আহসানুল হক 


০৫ ডিসেম্বর ২০২8

ঝগড়াচ্ছা - রম্য

 আমার একটা খারাপ অভ্যাস আছে, খুবই খারাপ অভ্যাস।  আমি ঝগড়া না করে বেশিক্ষণ থাকতে পারি না।  আমার মুখের ভেতরটা কেমন যেন চুলকায়, পোয়াতি মেয়েদের মত ক্রমাগত শরীর গুলায়।   

বাসায় থাকতে আমি সারাক্ষণ ঝগড়া করি, বউয়ের সাথে।  সেও কি ঝগড়া করে না? আরে করে বাবা! করে; এক হাতে তো আর তালি বাজে না! আমি যদি একশটা কথা শোনাই সে একটার তো জবাব দেয়! তাতেই আমি উৎসাহিত হয়ে পরবর্তী আরও দুইশটা বলার সুযোগ পাই। আমাদের কন্টিনিউয়াস ঝগড়া লেগেই থাকে।  

আমি যেমন আমার বউয়ের সাথে ঝগড়া করি!  ঠিক তেমনি আমার মেয়ে আমার সাথে ঝগড়া করে।  আমার মেয়ের ক্ষেত্রে আমার ভূমিকা আমার বউয়ের মত।  সে দুইশ বললে আমি একটা বলি তারপর আরও চারশো শোনার জন্য একটু খোঁচা মারি। 

ব্যাস! আর যায় কোথায়! 


আমার আরেকটা খুবই খারাপ অভ্যাস আছে। আমার বেশিক্ষণ ভালো না বাসলেও চলে না, কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগে। আর ভালোবাসার পাত্রীও ঘুরেফিরে এই দুইজনই। তবে এক্ষেত্রে আমার বউয়ের থেকে মেয়ে খানিকটা এগিয়ে।  মেয়েকে ১০০, ২০০ বার ভালবাসলে সে আমাকে এক দুইবার প্রতিদান দেয়।  ওইটুকু আমার জন্য যথেষ্ট।  বউকে অবশ্য ১০০ বার ভালবাসলে সে এক হাজার বার প্রতিদান দেয়। তবুও যেন আমার মন ভরে না।  

আজ দুইদিন ধরে বাসায় এদের দুজনার একজনও নাই।  আমার মন খুবই খারাপ।  মুখের ভেতরটা চুলকাচ্ছে ঝগড়া করার জন্য মন চুলকাচ্ছে ওদের ভালোবাসার জন্য।  আমি ছাদে বসে রেলিং এ হেলান  দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি, আর চিন্তা করছি কখন থেকে আমার এই অসুখের সূচনা!


একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখলাম - এই অসুখের সূচনা আমার খুব বাল্যকালে।  সূচনাটা অবশ্য প্রেম দিয়ে, অতঃপর প্রেমের অপ্রাপ্তিতে রাগ তার থেকে ঝগড়া।  সময় বাড়ার সাথে সাথে দুটোতেই আমি বেশ পটু হয়ে উঠেছিলাম। 

কবে থেকে প্রেমের সূচনা জানো? লেখাপড়ার ক্ষেত্রে তোমাদের আজকাল যেমন নার্সারি, প্লে গ্রুপ ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি! আমাদের সময় ছিল ক্লাস বেবি ওয়ান টু থ্রি।  আমি মনে হয় ছোটবেলায় বয়সের তুলনায় একটু বেশিই পেকে গিয়েছিলাম, তাই বাবা-মা আমাকে বেবিতে ভর্তি না করিয়ে সরাসরি ক্লাস ওয়ানে ভর্তি করায়। ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হয়ে দেখি আমার বড় ভাইও সেখানে আর তার বন্ধু-বান্ধবরা ও সেখানে। ক্লাসে আমি বয়সের তুলনায় সবচেয়ে ছোট ছিলাম, এমনকি সাইজে আর হাইটেও। যেদিকেই তাকাই আমার মাথার ওপর বিঘৎ-খানেক কিংবা আধা-একহাত মাথা দেখতে পাই। সাইজে ছোট বলে ক্লাসের বাকিরা কেউ আমাকে পাত্তাই দিতো না।  


আমাদের ছিলো কো-এডুকেশন স্কুল। স্কুলে ভর্তি হয়ে প্রথম দিনে আমার চোখ গেল সালুজার দিকে। আমার থেকে আধ হাত লম্বা, শ্যামলা মায়াবী চেহারার একটি মেয়ে।  তার ডাগর কালো চোখের দিকে তাকিয়ে যেন আমি কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলাম সেই ইঁচড়ে পাকা বয়সে। আচ্ছা তোমরাই বল পাঁচ বছর বয়সে কারো মনে কি প্রেম ভাব জাগতে পারে? কারো মনে পারে কিনা জানিনা আমার জেগেছিল। এখন ঐ বয়সে কেন প্রেম অনুভূতিটা এ তীক্ষ্ণ হয়ে মনে এসেছিলো তা বলতে পারব না।  প্রথম দর্শনেই প্রেম - বয়সে আমার থেকে এক বছর বড়, লম্বায় আমার থেকে আধ হাত বড় লাস্যময়ী একটা মেয়ের সাথে।  আমি তাকে কিছুই বলিনি,  তবে স্কুলটা হঠাৎ করেই যেন আমার খুব প্রিয় হয়ে উঠেছিল। সকাল হলেই স্কুলে যাওয়ার জন্য ছটফট করতাম,  আর স্কুলে গিয়ে সালুজা মেয়েদের যে বেঞ্চটায় বসতো তাই বসতো আমি ঠিক তার পাশেই ছেলেদের অংশে গিয়ে বসতাম। সপ্তাহ-খানেক এভাবেই চলেছিল।  


তারপর আমার মাথায় আকাশ ভাঙল - যেদিন স্কুলে প্রিন্সের আগমন ঘটলো।  প্রিন্স এ স্কুলেরই ছাত্র ক্লাস, বেবি থেকে ওরা বাকি ছাত্র-ছাত্রীরা একসাথেই পাস করে ওয়ানে উঠেছিলো, আমিই একমাত্র নতুন ছাত্র। আমি ভর্তি হওয়ার সময় প্রিন্স  কোথায় জানি বেড়াতে গিয়েছিল। প্রিন্সের চেহারা প্রিন্সের মতই সুন্দর।  আমার থেকে এক হাত লম্বা, ধবধবে ফর্সা নায়কের মত একটা ছেলে।  সে প্রথম দিন ক্লাসে ঢুকেই ধাক্কা দিয়ে আমাকে আমার জায়গা থেকে সরিয়ে দিয়ে বললো - কিরে পুঁচকি এখানে বসেছিস কেন?  আমি তার দিকে রাগত দৃষ্টিতে চাইতেই সে ফিক করে হেসে দিয়ে বলল - ওহে বাচ্চা এটা আমার জায়গা। সালুজার দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে  বললো - আর ওই যে পরীর মত মেয়েটা দেখছিস না! ওটা আমার বউ।  

ওমা তার কথা শুনেই সুন্দরীর মুখে প্রথমবারের মতো প্রশ্রয়ের হাসি আর আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। তারপর পুরোটা স্কুল সময় তাদের দুজনের খুনসুটি, আর আমার বুকে রাগের কাটাকুটি।  আমি অনেক চিন্তা করে দেখলাম সেটাই বোধহয় আমার জীবনে প্রথম প্রেম আর সেটাই বোধ হয় আমার প্রথম রাগ করা। তো সেই রাগ থেকে যেই প্রিন্সের সাথে ঝগড়া করতে গিয়েছি সে মাছি তাড়াবার মত করে ধারাম করে আমার মাথায় গাট্টা মারলো। আমি ছিটকে পড়ে গিয়ে রাগত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। রাগ মিটালাম বাসায় এসে মায়ের সাথে অযথাই ঝগড়ায় মেতে। সেই থেকে শুরু।   

আজ প্রিন্সই বা কোথায় সালুজাই বা কোথায়?  নাহ! পরবর্তীতে তাদের প্রেম আর টিকে নি। সালুজার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল মেট্রিক পরীক্ষার পরপরই।  প্রিন্স পরবর্তীতে আরও চারটা পাঁচটা লদগালদগি প্রেম করে শুনেছি শেষ পর্যন্ত থিতু হয়েছিল কার সাথে জানি। এদের কারোর সাথেই আজ আমার যোগাযোগ নেই। প্রিন্স তুই কি আছিস আমার ফেবু লিস্টে? সালুজা? ওরা থাকলে এই লেখা পড়ে হাসবে,  হয়তো আমাকে গালাগালি করবে। বিশ্বাস কর আমি কিন্তু তোদের পুরো নাম বলি নি, নিক নামে কয়জন কাকে চেনে? 


সবাই যার যার প্রেম নিয়ে ভালো থাকুক।  কিন্তু আমার এখন ঝগড়া করতে ইচ্ছা করছে। আচ্ছা ঝগড়া করার ইচ্ছা কি ঝগড়াচ্ছা হয় না? নাকি ঝগড়া + ইচ্ছা = ঝগড়িচ্ছা? যাই হোক আমি না হয় ভুল নামই দিলাম ঝগড়াচ্ছা! আচ্ছা! এর ব্যাসবাক্য কি? এটা কোন সমাসই বা কি? আমি অবশ্য বাংলায় ভয়ংকর রকম কাঁচা। ক্লাস টেনে টেস্টে বাংলা প্রথম পত্রে ৩৪ আর দ্বিতীয় পত্রে ৩২ পেয়ে কোনমতে দুই পেপার মিলে পাশ করেছিলাম। তারপর আর বাংলার ঘর মাড়াই নাই। থাক বাবা লেখার মত বিদ্যেটা তো হয়েছে! না হয় ভুল ব্যকরণে অথবা ভুল বানানে। 


ধ্যাত! যা ইচ্ছা তাই হোক, মুখের ভেতরটা ভয়ংকর চুলকাচ্ছে। আচ্ছা! ইচগার্ড দিয়ে মুখের ভেতর ডলা দিলে কি চুলকানি বন্ধ হবে? নাকি কচুর রস ডলব? ধ্যাত! কেউ তো এসে ঝগড়া করুক আমার সাথে! না হয় প্রেম! আকাশ লাল হতে হতে কালো হয়ে গেলো। কেউ এলো না। আচ্ছা! অন্ধকারের কি মন খারাপ হয়? 


#হিবিজিবি_হাবিজাবি 


ঝগড়াচ্ছা 

 - মোঃ আহসানুল হক 


০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪


#রম্য 


বন্ধুত্বের সম্পর্ক

 আমি প্রায়ঃশই নানা কারণে এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াই 

নানা রকম মানুষের সংস্পর্শে আসি, আর সম্পর্ক কুড়াই, 

প্রত্যেকটা মানুষ একজন আরেকজন থেকে অন্যরকম 

কিছু ভালো কিছু খারাপ কেউ বিরক্তিকর, যার যার স্বভাব মতন 

আমি প্রত্যেক ধরনের মানুষের সাথেই মিশে যাই খুব বেশ 

কারও কথা ভুলে যাই আর কারও কথা রয়ে যায় স্মৃতিতে রেশ 

তবে মনে দাগ না কাটলে খুব সময় লাগে না তাদের ভুলে যেতে 

এদের মাঝেই একজন দুজন খুব হঠাৎ করেই বসে যায় মনের রথে 

বন্ধুত্বের সূচনাগুলো এভাবেই হয়, দেশে কিংবা বিদেশে

তারপর মনে সম্পর্কগুলোর লালন পালন স্মৃতির পাশে; 

এদের কারো কারো সঙ্গে দেখা হয় না অনেকদিন হয়তো 

আজকাল যোগাযোগের কতই না মাধ্যম! তাই যোগাযোগ রয় তো 

তারপর পৃথিবীর গোলক ঘুরে দেখা হয়ে যায় কোথাও না কোথাও 

দেখা হতেই বিচ্ছেদের মধ্যেকার সময় গুলো হঠাৎ করেই উধাও 

গল্পে স্মৃতিচারণে দুজনার সময়গুলো কিছুদিন বেশ ভালই কাটে

তারপর আবার যে যার পথে বন্ধুত্বের সম্পর্কটা রয়ে যায় বটে। 


#হিবিজিবি_কথা 


বন্ধুত্বের সম্পর্ক 

 - মোঃ আহসানুল হক 


২২ শে নভেম্বর ২০২৪ 

কলকাতা,ইন্ডিয়া

কালের ভেতরের কাল

 অতীত থেকে চলতে চলতে

চলে এসেছি বর্তমানে 

হেঁটে চলেছি ভবিষ্যতের পানে 

চোখ বুজতেই চোখের পলকে 

সময় গাড়ি আলোর বেগে; 


এইতো কিছুক্ষণ আগে চোখ খুলতেই সকাল হয়েছিল 

সকালে সকালটা ছিল বর্তমান 

কিভাবে যেন চোখের নিমিষে দিনটা চলে গেল 

এখন রাতের প্রথম প্রহর, রাতটা এখন বর্তমান

আর সকাল হয়ে গেছে অতীত, 

রাতটা চোখে ঘুম নামিয়ে নিয়ে আসবে 

আর ঘুম ভাঙতেই সকাল 

এই সকালটা ভবিষ্যৎ 

এই সকাল আর ওই সকালের মধ্যে পার্থক্য কতটুকু?  


পলক ফেলার আগেই সময়গুলো গড়িয়ে যাচ্ছে 

বর্তমান ঢুকে যাচ্ছে অতীতের গহ্বরে 

ভবিষ্যৎ টেনে নিচ্ছে বর্তমানকে,

কালের ভেতরেও কি কাল থাকে? 

সময়ের দৌড়ে কে কবে জয়ী হতে পেরেছে? 


জীবনের আয়নায় পেছনে তাকালেই 

একে একে চোখে ভেসে ওঠে বাল্যকাল, কৈশোর আর যৌবন 

আজ প্রৌঢ়ত্বের দ্বারপ্রান্তে এসে মনে হয় এই তো সেদিনের কথা 

সময়ের গহ্বরে ওগুলো যেন শুধুই স্মৃতি 

মাঝে মাঝে মনে হয় সময় যেন কোথায় টেনে নিয়ে যাচ্ছে!  

তবে কি জীবনের হাত ধরে মৃত্যুর দিকে?  


আচ্ছা! 

মৃত্যুটা কি?  

অতীত, বর্তমান না ভবিষ্যৎ? 


#হিবিজিবি_হাবিজাবি  



কালের ভেতরের কাল 

 - মোঃ আহসানুল হক 


২০ নভেম্বর ২০২৪ 

চুপি, পূর্বস্থলী 

ওয়েস্ট বেঙ্গল, ইন্ডিয়া

ভালোবাসার রং-তুলি

 আজকাল প্রেম ভালোবাসার কথা লিখতেই আমার বড্ড ভয় 

প্রেম লিখতে গিয়ে যদি আবার প্রেমে পড়ে যাই! 

ভালোবাসা আঁকতে গিয়ে আবার যদি ভালবেসে ফেলি! 

তবুও লেখার মধ্যে প্রায়শই প্রেম ভালোবাসা এসেই যায় 

আর প্রেমের কথা আসলেই 'তুই'

ভালোবাসার কথা ভাবলেই 'তুই'

কাগজে হিবিজিবি আঁচড় কাটি 

প্রেম আঁকি, ভালবাসা আঁকি তারপর কেউ দেখে ফেলার আগেই 

সব মুছে দেই চটজলদি 

মনের মাঝে তোলপাড় তোর মুখচ্ছবি

আর আমি হাতে নিয়ে বসে থাকি ভালোবাসার রং তুলি,

বড্ড ভয় হয় সাদা ক্যানভাসটায় দাগ দিতে; 


ওই দেখ আকাশে এত বড় চাঁদ 

আমি অন্ধকারে 

আর তুই নদী 

মনের মাঝে তোলপাড় হিবিজিবি 

চাঁদ হাসে আর তুই বয়ে যাস নিরবধি

আমি রং-তুলি হাতে আর সাদা ক্যানভাসটায় দেখি তোর ছবি; 


যেদিন চাঁদ ঢুকে পড়বে অমাবস্যার জরায়ুতে 

সেদিন চারিদিক ঘন অন্ধকার হবে 

তুই বয়ে চলবি অন্ধকারের নদী 

সেদিন আমি নৌকো হব 

কালো মিশমিশে তালের নৌকো, আলকাতরায় মোড়ানো 

তোর বুকে বাইবো ভালোবাসার বৈঠা

তারপর সাদা ক্যানভাসে ভালোবাসার ঝড় উঠবে 

সেদিন আর ভয় লাগবে না প্রেম লিখতে 

সেদিন আর ভয় পাবো না ভালোবাসা আঁকতে 

সাদা ক্যানভাসে, ভালোবাসার রং-তুলিতে। 


#হিবিজিবি_রাতের_হাবিজাবি


ভালোবাসার রং-তুলি

 - মোঃ আহসানুল হক 


১৮ নভেম্বর,  ২০২৪ 

সুন্দরবন,  ওয়েস্ট বেঙ্গল 

ইন্ডিয়া

অদ্ভুত কিছু স্বপ্ন

 আমি মাঝে মাঝে যেন এ পৃথিবীতে থাকি না 

থাকি অন্য কোথাও, 

বেশিরভাগ ঘুমের ঘোরে

কখনো কল্পনায় কখনো স্বপ্নে 

হয়তো আকাশে কিংবা কোন এক অন্য জগতে

কিংবা অন্য কোন পৃথিবীতে;


তারপর একসময় ধীরে ধীরে নেমে আসি মেঘের ঝুরি বেয়ে

কখনো তুষার হয়ে কখনো কুয়াশা

কখনো মেঘ কখনো ঝর্ণা 

কখনো কলকল শব্দে কখনো নিঃশব্দে 

তারপর পাখির ডানায় বসে নামতে নামতে 

নেমে যাই কোন বটের ঝুরি তে

মেঘের ঝুরি থেকে বটের ঝুরি,

ব্যাপারটা কেমন হয়ে গেলো না?

স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনা জানো?

না জানলে তুলনা'টা বুঝবে না;


তারপর নামতে নামতে একবারে নেমে যাই মাটির তলদেশে

কখনো নদীর পলিতে কখনো সাগরের নিচের বালিতে

মাটির তলায় কেমন যেন একটা শান্তি শান্তি ভাব আছে

কেনই বা থাকবে না!

কোন একসময় তো ঘুমাতে হবে ওখানেই

তাই মাটির টান মাটি টানবেই

শরীর'টা তো মাটিই

তাই না?


মানুষ কখনো কখনো স্বপ্ন দেখে

কখনো চরম বাস্তবতায় স্বপ্ন দেখার সময়টুকুও করতে পারে না

বাস্তবতা পেটের জন্য

পেট'টাকে শান্ত করতে পারলে তবেই না বাকি চাহিদা,

আরে চাহিদার কি আর শেষ আছে?

থাক চাহিদার কথা আজ আর নাই বা বলি

ওটা তোলা থাক অন্য কোন সময়ের জন্য;


স্বপ্ন আর বাস্তব জীবনের মধ্যে পার্থক্য বড্ড তীব্র

একটা যদি সাদা হয় আরেকটা কুচকুচে কালো

একটা সুখের হলে আরেকটা প্রচণ্ড দুঃখের

একটা হো হো হাসির হলে আরেকটা বুকফাটা কান্নার

আমি যেমন হাসি দেখেছি তেমনি দেখেছি কান্না 

আমি হাসতে হাসতে কাঁদতে দেখেছি 

কাঁদতে কাঁদতে দেখেছি হো হো হাসিতে ফেটে পড়তে

আমার বড় একটা সমস্যা হলো 

আমি নিজেরটার পাশাপাশি অন্যের হাসিকান্নাও দেখতে পাই

অন্যের হাসিতে খুশি হই

কান্নায় বয়ে যাই নদী হয়ে

তারপর সূর্যের প্রখর তাপে অন্ধকার হতে হতে 

মিশে যাই মিশমিশে কালোর সাথে;


স্বপ্নগুলো এত অদ্ভুত কেন?

 


#হিবিজিবি_কথামালা 



অদ্ভুত কিছু স্বপ্ন  

- মোঃ আহসানুল হক



২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪



  

আমাদের তালহা - একটি সত্য ঘটনা

 একটা ফুটফুটে কিশোর, মাত্র ১৭ বছর। এবার ও লেভেল দিয়েছে। 

গত ১০ দিন ধর রোজ রাতে আমার ঘরে আসে, এসে চোখে বসে। বসে খুনসুটি করে। জিজ্ঞেস করে, বাপ্পা ঘুমাচ্ছ? আমার ঘুম ভেঙে যায়। 

ধমক দিয়ে বলি - যা তো বাবা! দুষ্টুমি করিস না, ঘুমাতে দে। 


তার হাসিহাসি মুখটা মুহূর্তে কান্নায় ছেয়ে যায়। অভিমান করে আমায় বলে - জানো না আমার এজমা? জানো না আমি মাটিতে শুতে পারি না? জানো না একটু উনিশ-বিশে আমার হাঁপানির টান ওঠে? তা হলে আমাকে মাটিতে শুইয়ে তুমি কেমন করে বিছানায় ঘুমাও বাপ্পা?


আমি লাফিয়ে বিছানা থেকে উঠে বসি। অন্ধকারে চেয়ে থাকি। একসময় অন্ধকারটাও ঝাপসা হয়ে যায় চোখের পানিতে। তারপর নির্ঘুম রাত। 


না, আমি কোন গল্প লিখছি না। 

আমি আমার কথাই লিখছি। 


আমার এই বাবাটা আমার ১৭ বছরের ভাতিজা - তালহা। আমরা দুই ভাই পুরানো চিন্তা চেতনার মানুষ, তাই হয়তো এখনো জয়েন্ট ফ্যামিলিতে মিলেমিশে থাকি। তালহারা দুই ভাই ওদের বাবা'কে বাবা ডাকে আর আমাকে ডাকে বাপ্পা, তাদের চাচীকে ডাকে বড় মা। আমার সন্তানদের কাছে তাঁদের চাচী - ছোট মা। সুতরাং বুঝতেই পারছেন আমাদের ফ্যামিলি বন্ডিং। 


তালহাকে গত ২৫ তারিখ বৃহস্পতিবার প্রাইভেট পড়ে আসার সময় এক আর্মি অফিসার ধরে নিয়ে যায়। তার অপরাধ ছিলো, পড়ে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরার সময় গাড়ির সিট এলিয়ে পা ড্যাশ-বোর্ডে উঠিয়ে আরাম করতে করতে আসছিলো। অনেক উঁচু র‍্যাংকের আর্মি ভাইয়ের তা সহ্য হয় নি। 

কি?  

এতবড় কথা?

আমাকে পা দেখায়!!!  

গাড়ি থামিয়ে বললো, পা দেখালি কেন? গাড়ি থেকে নাম্।


তালহা থতমত খেয়ে গাড়ি থেকে নামলো। 

তারপর তার মোবাইল চেক করে কি কি যেন দেখলো, তারপর উঠিয়ে থানায় নিয়ে গেলো। 

তালহা বলেছিলাম, আঙ্কেল আমি আপনাকে পা দেখাই নি, আমি শুয়ে ছিলাম মাত্র। আমি টিচারের বাসায় পড়তে এসেছিলাম এখন বাসায় ফিরছি। আমি মাত্র স্কুল শেষ করে এবার ও লেভেল পরীক্ষা দিয়েছেই। আমাকে ধরবেন না, প্লিজ ছেড়ে দেন। কিন্তু আর্মি অফিসার সাহেবের মোটা মাথায় কোন অনুনয়ই প্রভাব ফেললো না। তালহাকে অবাক করে দিয়ে তুলে নিয়ে গেলো।  

খবর পেয়ে আমাদের পরিবারের ওপর যেন বজ্র পড়লো। 


ডিটেল না বললাম, শুধু এটুকু বলতে পারি যে আমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব আর অসম্ভব করার ছিলো আমরা তার কোন কিছু করতেই বাকি রাখি নি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাদের সন্তানকে আনতে সফল হলাম না। 

কেন জানো?

ঐ আর্মি অফিসারের ইগো।

তাকে নাকি ঠ্যাং দেখানো হয়েছে। 

কোন অনুনয় বিনুনয় করেও তার মন গলানো গেলো না। 


আমাদের জানাশোনা কিছু আত্মীয়-স্বজন ওনার অনেক ওপরের লেভেলের অফিসার; ওনাদের দিয়ে ফোন করালাম, বললো তার মোবাইলে ভয়ংকর সব দেশদ্রোহী ভিডিও পাওয়া গিয়েছে। আমরা দেখতে চাইলাম কি ভিডিও। দূর দূর করে তাড়িয়ে দিলো।  


থানার লোকেরা থানায় ৩ দিন রাখলো আর্মি সাহেবের মন গলাবার জন্য, বাচ্চা ছেলে ভুল করে ফেলেছে নিজেদের গাড়িতে পা উঠিয়ে শুয়ে। তার মা বাবা অনেক অনুনয় করলো আর্মি অফিসার'কে, এই বলে যে স্যার ওর তো এখনো আঠারও হয় নি, ছেলেটার বাকি জীবনটা পড়েই আছে, ওর ভবিষ্যত নষ্ট করে দিবেন না; উনি পাথর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। যখন আর কোন অনুনয়েই কাজ হলো না ৩ দিন পর বাধ্য হয়ে থানা থেকে তাকে পাঠিয়ে দিলো জেলে। 


আজ প্রায় পনর দিন ধরে সে জেলে আছে, কেমন আছে, কি অবস্থায় আছে কিচ্ছু জানি না। ওখানে খাট পেয়েছে না মাটিতে ঘুমাচ্ছে, জানি না। কবে ফিরে পাব তাকে, জানি না। আমাদের সবচেয়ে ছোট সন্তান, সবচেয়ে ইনোসেন্ট আর হাসিখুশি বাচ্চাটা আজ শুয়ে আছে জেলে, হয়তো খাটে কিংবা মেঝেতে। 


আমি ঘুমাই কি করে? গত পনর রাত ধরে প্রায় সারারাত জেগে থাকি, তাহাজ্জুদে সেজদায় পড়ে থাকি।



মজার ব্যাপার কি জানো? তালহার কেসে কোথাও মোবাইল ভিডিও বা মোবাইল জব্দের কথা লেখা নাই। সে নাকি যেসকল  না না জানা পাঁচ ছয় হাজার ছাত্র মিলে সরকারের বিভিন্ন স্থাপনা ভাংচুর করেছিলো (যার মূল্য পনর লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা মাত্র) তালহা তাদেরই একজন। মনে শান্তি এলো, যাক! অধিকার আন্দোলনের যোদ্ধাদের সাথে আমাদের ছেলেটার নাম তো যুক্ত হলো! যেমন তার এক দাদার নামের পাশে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নামটা লেখা আছে।   


আচ্ছা! আমার মনে একটা প্রশ্ন খেলছে!!!  তালহার মোবাইলটা গেলো কোথায়? আর্মি অফিসার সাহেবের কাছে না থানার ওসির কাছে? কি করছে তারা ঐ বাচ্চা ছেলেটার মোবাইল দিয়ে? তাঁদের সন্তানদের উপহার দিয়েছে!  কত প্রশ্নের উত্তর যে আমাদের জানা হয় না! 


কার কাছে বিচার দেব? দুঃখে শোকে আল্লাহ্‌'কেই ডাকি, তাকেই বলি - হে আল্লাহ্‌! এ জালিমদের থেকে আমাদের সন্তানদের হেফাজত করুন। আমাদের সন্তানকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিন। 

সেজদায় প্রতি ওয়াক্তে দোয়া করি যেন ফিরে পাই, আমাদের সন্তানকে যেন ফিরে পাই।  

হোক সাত দিন হোক পনর দিন কিংবা মাস। 

ফিরে পাই যেন। 


#একজন_পিতার_কথা  


আমাদের তালহা 

 - মোঃ আহসানুল হক 


০৪ অগাস্ট, ২০২৪ 



বিঃদ্রঃ আজ তালহার মত হাজারো ছেলে এভাবেই বিনা অপরাধে জেলে পড়ে আছে, ওরা নিজেও জানে না কি অপরাধে। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও কি আমরা কথা বলার, নিশ্চিন্তে চলাফেরা করার স্বাধীনতাটুকুও হারিয়ে ফেলেছি? 

আজ ঘরে ঘরে এক একজন তালহার কাহিনী। 

 


 


 






 

ঘুমাতে পারে না আমার ছেলে, আগে রুমে থাকলে সারাক্ষণ এসি চালিয়ে রাখতো, তালহা যাওয়ার পর তার ঘরে এসি চলে না। জিজ্ঞেস করায় বলে - আমার ভাই এসি ছাড়া একটা রাতও কাটাতে পারতো না তার হাঁপানির টান উঠে যেত, সে এখন মেঝেতে শুয়ে। আমি এসি চালাই কিভাবে? 





ডিটেল না বললাম, শুধু এটুকু বলতে পারি যে থানায় আজকাল মানুষ কেনাবেচা হয়। 

দুঃখের বিষয় কি জানো! এই কেনাবেচার হাটে ঔরসজাত সন্তানকেই কিনতে যেতে হয় বাবাকেই অথবা চাচা কিংবা ভাই-বোনদের। দেশরক্ষা বাহিনী যেখানে মানুষ কেনাবেচার হাট বসায় সেখানে তো অসহায় পিতামাতাকে জন্ম দেওয়া সন্তানটা তাঁদের কাছ থেকেই কিনে নিতেই হয়। কেন? - তাকে দেশরক্ষা বাহিনীর অত্যাচার থেকে বাঁচাতে। তাই না?

 

আমরাও আমাদের সন্তান কিনতে গেলাম। থানার সাথে তো দফারফা হলো, কিন্তু  শেষ পর্যন্ত আমাদের সন্তানকে কিনতে সফল হলাম না। 

কেন জানো?

ঐ আর্মি অফিসারের ইগো।

তাকে নাকি ঠ্যাং দেখানো হয়েছে। 

কোন অনুনয় বিনুনয় করেও তার মন গলানো গেলো না। 


পতাকা রঙ

 


লাল সবুজ, পতাকা ছিলো 

বাংলাদেশটা ছিলো স্বাধীন 

হঠাৎ করেই লাল হলো

রক্তে ভেসে হলো পরাধীন;  


দামাল কিছু ছাত্র একদিন 

বললো মিলে অধিকার দাও 

পরাধীন দেশে অধিকার কই 

শাসক দল বললো - দূর হও;  


গুলির তুফান বইয়ে দিলো

আপামর ছাত্রের ওপর

ছাত্ররা সব উঠলো ফুঁসে 

সারি সারি লাশের ভেতর; 


সবুজ মানচিত্র লাল হয়ে 

পুরোটা সবুজ গেলো ঢেকে 

রক্তে জোয়ার আসে যখন 

রুখতে পারে কে তাকে?      


লাল হয়ে দেশ কাঁদছে সবে 

দেশটা পুরো শোকে হারা 

লাল হয়েছে চোখের সাদা 

কালো মণি বেয়ে রক্তধারা;


রক্তে বদলেছে মানচিত্র

কোথায় পাবে এখন সবুজ

ঝাঁকি খেয়ে রক্ত জেগেছে 

ছাত্রসমাজ হয়েছে অবুঝ;


একদিন তারা আনবে ছিনিয়ে

মানচিত্রের ঐ সবুজ রঙ 

রক্ত ধুয়ে গড়বে দেশ  

লাল সবুজের পতাকা রঙ। 



#হিবিজিবি_কথা


পতাকা রঙ 

 - মোঃ আহসানুল হক 



০৩ অগাস্ট, ২০২৪ 





   


আয়নার জবাব

 শোন! ঐদিন আমাদের মহল্লা থেকে ২ জন ছাত্র'কে ধরে নিয়ে গিয়েছে

 - হুম! আমি ঘুম 

জানো! কালকে পাশের বাসার ছেলেটাকে ধরে নিয়ে গিয়েছে

 - হুম! আমি ঘুম

এই শুনছো! আজ তোমার ভাতিজাকে ওরা তুলে নিয়ে গিয়েছে

 - কি!!!!! লাফিয়ে উঠলাম বিছানা থেকে 

সাথে তোমার ছেলেও ছিলো

 - আমি খালি পায়ে দৌড়ে পুলিশ স্টেশনে;


আমাদের চরিত্র আসলে এমনই

যতক্ষণ নিজের ওপর না এসে পড়বে ততক্ষণ আমরা ঘুমিয়েই থাকি 

আমাদের চেতনার উদয় হয় নিজ পরিবারের ওপর মুসিবত এসে পড়লেই

 - তাই না?

কেন পাশের বাড়ির ছেলেটা আমার ছেলের খেলার সাথী ছিলো না?

কিংবা মহল্লার ছেলেগুলো?

আমার ছেলে কিংবা মহল্লার অন্য কোন ভাই এর ছেলে

যখন ওরা তুলে নিয়ে যাচ্ছিলো! 

 - ওরা ডেকেছিলো, ডেকেছিলো সাহায্যের জন্য

অথচ আমি তো ছিলাম ঘুমে কিংবা ঘুমের ভানে, 

এখন এত তাড়া কেন আমার?


মানুষের দিকে আঙুল তোলার আগে 

নিজেকে জিজ্ঞেস করে দেখুন তো আয়নায়!


উত্তর পেতে দেরি হবে না - যদি মানুষ হয়ে থাকেন

আর যদি ওদের মত বালিতে মুখ গুঁজে আয়নাকে প্রশ্ন করেন

তা হলে আয়নার কি দায় পড়েছে আপনার সাথে কথা বলতে?

আয়না কথা বলে শুধুমাত্র মানুষের সাথে।


#হিবিজিবি_কথামালা


আয়নার জবাব 

 - মোঃ আহসানুল হক 


০৩ অগাস্ট, ২০২৪ 


   


টেবিল চশমা বুদ্ধি কলম

 আমার চাচা একাত্তর এ যুদ্ধ করতে গিয়ে শহীদ হয়েছিলেন

সেই হিসাবে আমাদের ফ্যামিলির মুক্তিযোদ্ধা ট্যাগ লাগানোর কথা  

কিন্তু সেদিনই নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা ফ্যামিলির ট্যাগ থেকে ছাড়িয়েছি,    

যেদিন থেকে বুঝতে শিখেছি, আমারই কতিপয় রক্তের আত্মীয়-স্বজন   

শহীদ আত্মীয় আর ভাই এর মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার নানা ফায়দা লুটছেন

তখন থেকেই আমি তোমাদেরই মত নরমাল ফ্যামিলি - ভুল করেছি?  


কাজের জন্য কার না সরকারি অফিসে দৌড়াতে হয়! আমারও হয়েছিলো 

সেখান থেকে প্রতিদিনই নতুন নতুন কিছু না কিছু শিখে আসতাম 

ইউনিভার্সিটির স্যর'রা সেগুলো কখনো  শিক্ষা দেন নাই, এটা হয়?      

ওনারা ভুলে যেতেই পারে তাই বলে বাবা-মাও এ শিক্ষাগুলো দেবেন না! 

তাহলে এখন সরকারি অফিসে কাজ করাই কি দিয়ে? বড্ড লাগছে ভয়  

আর দিনের পর দিন শুধু শুধুই ওখানে টেবিলে টেবিলে ঘুরে জুতা ক্ষয়; 


কিছু উদাহরণ, যেগুলোকে হাতেকলমে প্র্যাক্টিক্যালও বলতে পারো 

এই ধর প্রথমেই শুনলাম টেবিল মানি, বোকা আমি বুঝলাম না 

একজন বুঝিয়ে দিলো, টেবিলের ওপর যে ফাইলটা রয়েছে গাধা,  

তা চালু করার জন্য টেবিল মানি দিতে হবে না! - ঐ ঘুষ যাকে বলে 

আমি বোকার মত জিজ্ঞেস করলাম, টেবিল মানি দিয়ে ফাইল চালু? 

ফাইল কি ইঞ্জিন? উনি রাগত দৃষ্টি হেনে বললো- মুড়ি খা গাধা; 


আমি মুড়ি পাই কই? তাই টেবিল মানি দিয়ে ফাইলে স্টার্ট দিলাম 

তার পরের মাসে গিয়ে দেখি ফাইলটা টেবিলের এধার থেকে ওধারে

তারমানে কাজ হয়ে গেছে; আমি বললাম এবার ফাইলটা দিয়ে দেন

ধমকে উঠে বললো, চশমা মানি কে দেবে? আমার জিজ্ঞাসু দৃষ্টি 

বললো, ষাঁড় যে ফাইলটা পড়বেন তার জন্য চোখে চশমা লাগাবে না?

আমি কিঞ্চিৎ বুঝে গিয়েছি এবার, বললাম চশমা কিনতে কত নেন?  


পরের মাসে গিয়ে দেখলাম ফাইল নেই, জিজ্ঞাসা করতেই বললো 

আরে বুদ্ধি মানি না হলে ফাইল চলবে কিভাবে? ষাঁড়দেরও বুদ্ধি লাগে 

আর এটা তো এক ষাঁড়ের বুদ্ধিতে হবে না, কয়েকজন মিলে বসবে,  

এখানে বুদ্ধিমানির পরিণাম অনেক অনেক বেশি, আমি অসহায় ছিলাম 

ফাইলটা সাইন করাতেই হবে নাইলে অনেক বড় বিপাকে পড়ে যাব 

অনেক কষ্টেসৃষ্টে ধার করে বুদ্ধিমানি দিলাম, এবার ফাইলে কলম ঘষবে;


ভেবেছিলাম কাজ হয়ে গেছে, আনন্দিত চিত্তে পরের মাসে আবার গেলাম 

গিয়ে দেখি ফাইলের খবর নাই, খোঁজ নিয়ে জানলাম ষাঁড়ের আলমিরাতে

আমি বললাম বুদ্ধিমানি তো হয়ে গেছে, এখন সাইন করতে কি বার্তা?

যেন গাধার দেখছে, এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে বললো - কলমমানি কই?

ওটা কি? বললো বুদ্ধিমানির খরচ বুদ্ধিতেই শেষ, উপায় একটা বের হয়েছে 

সাইন করবে কি দিয়ে কলম না কিনে? কলম ছাড়া সাইন হয় নাকি? - অগত্যা; 


ষাঁড়ের সাইনের জন্য টেবিল, চশমা, বুদ্ধি আর মন কলমমানি দিতে দিতে 

বছর পার করে তবে ফাইল পেলাম হাতে - সেলুকাস দেশে আমাদের বাস

আপনাদের কারও কি এ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে? আমার কেন হলো?

শরীরে ট্যাগ লাগাই নি বলে? চাচা কি ট্যাগ লাগাতে শহীদ হয়েছিলেন? 

স্বাধীনতা কি এসেছে? স্বাধীন দেশের অফিসে এভাবে ভোগান্তি পোহাতে হয়?

তবে তো আমরা স্বাধীন হইই নি, স্বাধীন হওয়ার ভান করছি; বিবেকবুদ্ধি দিয়ে ক্ষয়।  


#হিবিজিবি_হাবিজাবি


টেবিল চশমা বুদ্ধি কলম

 - মোঃ আহসানুল হক 



০২ অগাস্ট, ২০২৪ 





       

বাবা-মায়ের খালি বুক

 দুহাজার চব্বিশ সালের জুলাই  

উঠলো এক স্বৈরাচারী হাত 

হাজার প্রাণ কেড়ে নিলো তারা 

আর জনগণের নির্ঘুম রাত; 


একটা চাকরির অভিপ্রায়ে কিছু 

ছাত্র-ছাত্রী একটা দাবি তুলেছিলো 

বিনিময়ে নেমে এসেছিলো তপ্ত বুলেট 

জীবনটা শীশার আগায় ঝুলেছিলো;  


এত বড় কথা! অধিকার বলিস  

তোরা সব এখনো রাজাকার 

বলেছিলো সেদিন গলা উঁচিয়ে 

জানো না কে? -ঐ স্বৈরাচার; 

  

গলা তুললি কেন? অধিকার চেয়ে 

পরাধীনতার এই দেশে 

মৃত্যুর মিছিল লম্বা হলো বড্ড   

সারি সারি শহীদের বেশে; 


পরাধীন দেশে দেখতে হয় না

চোখেতে কোন রঙিন স্বপন 

দেখতে গিয়ে দেখলি না কি হলো? 

মৃত্যুটা হলো বিনিময়ে আপন;  


গুলি চলে মাটিতে আর আকাশ পথে  

সরকারি সব বন্দুক থেকে 

মুছে দেবে তারা অধিকারে নাম

একেবারে ঝেঁটিয়ে এদেশ থেকে; 


লাখো মানুষের কান্না চোখ 

পানি ঝরে আজ অবিরত 

মৃত্যুর মিছিল বড় হতে থাকে

গুলি চালাতে ওরা থাকে যত;  


মরে পড়ে থাকে ঘরের শিশু

জানালায় দিয়ে একটু উঁকি 

জানবে না কখনো কেন মরেছে 

জীবন দিয়েছে কেন তাকে ফাঁকি;  


বাদ যায় না ছাদের শিশুটাও  

খেলছিলো ঝাঁকড়া চুল নেড়ে   

আকাশ পথে হেলিকপ্টার থেকে 

গুলি এসে জীবন নিলো কেড়ে;  


পথঘাটে থেকে হাজার হাজার

উঠিয়েছে তারা ছাত্রের দল 

বাদ যায় নি শিশুটা পর্যন্ত 

রিমান্ড হয় কি? শিশুর বল;  


আমার বাড়ির একটা শিশু

কাটাচ্ছে রাত অন্ধকার জেলে

তোমার বাড়ির কেউ কি আছে? 

স্বৈরাচারীর গরাদ সেলে;  


তবে জানবে না কি দুঃখে বলি 

বাবা-মায়ের আজ প্রাণ ফাটে 

আছাড়ে বিছাড়ে মা কাঁধে ঘরে

বাবা ফিরে আদালতে ঘাটে ঘাটে; 


মানুষ আমরা তখনই মানুষ 

মনুষ্যত্ব যখন থাকে বুকে 

বিবেক তাঁদের মরে গেছে কবে

কোন কি পাপে ধুঁকে ধুঁকে; 


ভুলে গেছে তারা মরতে হবে

তবুও কাঁপে না একটু বুক 

কি জবাব দেবে হাশরের মাঠে 

দেখাবে কিভাবে ঐ খুনি মুখ।


#হিবিজিবি_মনের_হাবিজাবি_কথা


বাবা-মায়ের খালি বুক 

 - মোঃ আহসানুল হক 


০১ অগাস্ট, ২০২৪ 



 


   


রক্তের হোলি

 বলতে পার রাজাকার কারা?

৭১ এ হানাদার বাহিনীর সাথে ছিলো যারা

আর ৭১ এ লাখো মানুষের পাশে ছিলো না যারা;

রাজাকার কি বংশ পরম্পরায় হয়?

তা হলে তো চার কোটি রাজাকারের সংখ্যা বারো কোটি হয়; 

আরে তা নয়, তা নয়

ওটা কথার কথা, ট্যাগ লাগাতে হবে না?

তাই বলে সাধারণ মানুষের কথা বাদই দিলাম

মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কিংবা নাতিরা কিভাবে রাজাকার হয়?

অত কথা জিজ্ঞেস করো না তো!

বড্ড বিরক্ত লাগে

আর বিরক্ত করলে গুলি করে দেব

 - সব রাজাকারের বাচ্চারা; 


বলতে পার মুক্তিযোদ্ধা কারা?

৭১ এ হানাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত ছিলো যারা

আর ৭১ এ লাখো মানুষের ঢাল হয়ে ছিলো যারা;

মুক্তিযোদ্ধা কি বংশ পরম্পরায় হয়?

উঁহু! ওটা যারা যুদ্ধ করেছে তারাই মাত্র হয়,

তাহলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ত্রিশ শতাংশ কেন?

ত্রিশ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা এখনো বেঁচে আছে?

অত কথা জিজ্ঞেস করো না তো!

বড্ড বিরক্ত লাগে

আর বিরক্ত করলে গুলি করে দেব

 - রাজাকারের বাচ্চারাই এত প্রশ্ন করে; 


আচ্ছা! এই যে রাজাকার এই যে মুক্তিযোদ্ধা! 

তারা এখনো বেঁচে আছে?

বেশিরভাগই মরে গেছে 

দু পক্ষেরই 

অল্প কিছু বেঁচে আছে 

তারাও ধুঁকতে ধুঁকতে মৃত্যুর অপেক্ষায় পথ চেয়ে;

তাইলে এই যে এ নিয়ে এত এত গালাগালি!

রাস্তায় রাস্তায় সকল দেশরক্ষা-কারি সরকারি বাহিনী!

কি করছে ওরা খোলা বন্ধুক হাতে?

ট্যাঙ্ক কেন মোড়ে মোড়ে পথে পথে?

গুলি চলছে কেন আকাশ থেকে?

অত কথা জিজ্ঞেস করিস না 

বড্ড বিরক্ত লাগে

আর বিরক্ত করলে গুলি করে দেব

 - রাজাকারের বাচ্চারাই এত প্রশ্ন করে; 


গুলি তো করছেনই

দেদারসে

নতুন করে আরও কি করবেন?


এবার রক্তের হোলি খেলব পথে পথে, রাজপথে


আর ঐ রক্তাক্ত বাংলাদেশ?

 - এবার তোকেই গুলি করব। 


আচ্ছা! 

সংজ্ঞা অনুযায়ী বলতে পার ২৪ এর রাজাকার কারা?

হানাদার বাহিনীর সাথে ছিলো যারা

আর লাখো মানুষের পাশে ছিলো না যারা;


তাহলে ২৪ এর মুক্তিযোদ্ধা কারা?

সংজ্ঞা অনুযায়ী হানাদার বাহিনীর সাথে ছিলো না যারা

আর লাখো মানুষের পাশে ছিলো যারা। 



#হিবিজিবি_মনের_হাবিজাবি_কথা 


রক্তের হোলি

 - মোঃ আহসানুল হক 


৩০ জুলাই, ২০২৪ 


সুশীল চাটনি

 বুদ্ধিজীবী অনেক দেশে 

সুশীল তাদের নাম 

সরকারি দল পেলেই হলো 

চাটা তাদের কাম;


পা থেকে মাথা সব চাটে তারা 

নেই ঘৃণা এদের 

চাটতে পারলেই অপার শান্তি 

আনন্দ তাঁদের; 


অনেক নাকি বুদ্ধি তোদের

ছাত্র ছিলি নাকি?

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াটাই তোদের

শুভঙ্করের ফাঁকি; 


আপামর জনতার সাথে 

কবেই ছিলো তারা 

চেটে চেটে তকমা সুশীল

হাতিয়েছিলো যারা;


চাটতে চাটতে জিহ্বা ক্ষয় 


জুতা হাতে নিয়ে 


বিবেকটারে বিকিয়ে দেয় 


জুতা চাটতে গিয়ে;


দাবির আওয়াজে এরা নিশ্চুপ

জনগণের দাবি 

এরা আসলে মানুষ নাকি 

প্রায়শই আমি ভাবি;


আজকে দেশের ক্রান্তি-লগ্নে

কোথায় দেশের সুশীল 

বালির মধ্যে মুখ লুকিয়ে

পাছা তাক আকাশের চিল; 


এখন তাঁদের কান বন্ধ

শুনতে পারে না শব্দ  

ধর্ম নিয়ে বলেই দেখ না 

করবে তোমাকে জব্দ; 


ধর্ম বলতে ইসলামের কথা 

বলতে চেয়েছি আমি 

বাকি সব ধর্ম তাঁদের কাছে

ভাতার কিংবা স্বামী; 


আজকে তোদের মুখ বন্ধ 

অধিকারের বজ্র নিনাদে

নিজের ঘরে অন্ধকার কোনে 

স্ত্রীর ডিমেতে তা দে;


তোদের পেলে একটা একটা 

পেছনে বাঁশ ফাটাবে

এরপর কোন আওয়াজ তুলিস

স্যান্ডেল চেটে খাওয়াবে; 


চাটতে চাটতে জিহ্বায় ঘা

চাটার লালা তোরা ঘুটে খা 

সাথে নিয়ে কিছু সমাজের ঘা 

সুশীল চাটনি মিলিয়ে খা। 


#হিবিজিবি_মনের_হাবিজাবি 


সুশীল চাটনি

 - মোঃ আহসানুল হক 


৩০ জুলাই, ২০২৪ 




 


পণ্য

 আমরা এমন একটা দেশে বাস করি

যেখানে সব কেনাবেচা হয় 

সোজা পথে না কিন্তু!

টেবিলের তলায় হাত পেতে

টেবিলের তলা বলতে কি বুঝায়? 

নিশ্চয়ই বোঝাতে হবে না তোমাদের

না বুঝলে এ হিবিজিবি পড়তেই এসো না; 


একটা সময় পণ্য কেনাবেচা হতো 

এখন হট-কেক মানুষ

হ্যাঁ, ঠিকই শুনছো

 - আজকাল মানুষ কেনাবেচা হচ্ছে দেদারসে

আর কেনাবেচা হচ্ছে লাশ;


কারা টেবিলের তলায় হাত পেতে বিক্রি করছে জানো?

ঐ যে সব জান্তার দল

যারা শত শত হাজারে হাজারে মানুষ ধরে নিয়ে এসেছে

যারা কাতারে কাতারে মানুষ'কে লাশে পরিণত করেছে

হ্যাঁ, যা বুঝছো - সেটাই

তারা বিক্রি করছে দেদার দামে;


ক্রেতা কারা জানো?

ঐ যে মানুষ নামের যে পণ্যগুলো বিক্রি হচ্ছে তাদের বাবা-মা 

আত্মীয়-স্বজন, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব নামের কিছু অসহায় মানুষ

জীবিত পণ্যগুলো বিক্রি হচ্ছে দেদার দামে?

কত?

আরে নাহ! কেজি হিসাবে না

বিক্রেতারা দাম হাঁকায় বাবা-মায়ের আর্থিক অবস্থান জেনে,

লাশগুলোও বিক্রি হচ্ছে কিন্তু, হয়তো কিছুটা অল্প দামে

এগুলোর কোন বিক্রয় রশিদ দেয়া হয় না

সরকারে কোষাগারে ট্যাক্স ভ্যাটেরও কোন বালাই নাই

তবুও বাবা-মা নামের ক্রেতারা কিনছে দেদারসে;


আরেক ধরণের পণ্য বিক্রি হচ্ছে

সেটা না জীবিত না মৃত 

সেটা হচ্ছে গুম

গুম হওয়া পণ্যগুলোর বাবা-মা অস্থির হয়ে সন্তান নামক পণ্য খুঁজছে 

তার সুবিধা নিচ্ছে আপামর অসাধু বিক্রেতার দল

শুধুমাত্র খবরের দাম আসল পণ্য থেকে অনেক অনেক গুণ বেশি

খবরটা কি জানো?

পণ্যটা কি জীবিত না মৃত, 

মৃত হলে তবুও দাম দিয়ে কিছুটা হলেও মনের শান্তি

 - আসল খবর তো পাওয়া গেলো!

তবে লাশ পাওয়া যায় না এসকল পণ্যের - যত মূল্যই দিতে চাও

আর জীবিত পণ্যের খবরের দাম অনেক গুণ বেশি

তারপর দরদাম চলে জীবিত পণ্য উদ্ধারে

দাম শুরু হয় কোটি থেকে

যে দেশের পিয়নের চারশো কোটি টাকার লিগ্যাল সম্পদ

সে দেশে কোটির নিচে আর দাম হাঁকা যায়!

তবে শেষ পর্যন্ত যেটুকু খবর পেলাম

 - জীবিত পণ্য কোটি টাকাতেও উদ্ধার করা যায় নি একটিও

এ পণ্যের ব্যবসাকে ধোঁকাবাজি ছাড়া আর কি বলব!!! 


আমরাই পৃথিবীর বাইরে একমাত্র দেশ

যেখানে পণ্য হলো মানুষ

ক্রেতারা মানুষ

বিক্রেতারা কি?

 - বড্ড জানতে ইচ্ছে করে। 


#হিবিজিবি_মনের_হাবিজাবি_কথা 


পণ্য 

 - মোঃ আহসানুল হক 


২৮ জুলাই, ২০২৪ 




 

  

মৃত বাংলাদেশ

 এই তো মাত্র কিছুদিন আগে

ছাত্রছাত্রীরা হাসিখুশি উচ্ছল 

ক্লাস করতো, গান গাইতো, নাচতো

কিছু কিছু আবার প্রেমও করতো;


তারপর হঠাৎ করেই কি থেকে জানি কি হয়ে গেলো 

হঠাৎ করেই কেউ একজন চিৎকার করে অধিকারের কথা বললো 

হঠাৎ করেই সেই চিৎকার সবার হয়ে গেলো

সবার হতে হতে তা স্লোগান হয়ে গেলো;


তারপর হঠাৎ একদিনই কারও কারও এ স্লোগান পছন্দ হলো না 

তারপর অশুভ শক্তি নিয়ে তারা ঝাঁপিয়ে পড়লো ছাত্রদের ওপর 

রেহাই পেলো না ছাত্রীরাও 

তারপর রক্ত আর রক্ত

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো, রাস্তাঘাট এমন কি বাসার ছাদেও রক্ত

কিসের রক্ত জানো!

ঐ ছাত্রছাত্রীদের যারা অধিকারের কথা বলতে গিয়েছিলো

যাদের কথার টুঁটি চেপে ধরেছিলো হায়েনা বাহিনী

এক জান্তব উল্লাসে এখানে সেখানে পথে ঘাটে

গুলি চালিয়েছিলো সরকারি বন্দুকে

সাথে ছিলো আরেক নৃশংস হেলমেট বাহিনী

হেলমেটের আড়ালে মুখ লুকিয়ে তারা পথে নেমেছিলো 

গরু জবাই করার ছুড়ি নিয়ে

কেন? 

কারণ তারা পোষা, মাসোয়ারা ভোগী 

ছাত্রদের অধিকারের চিৎকারে তাঁদের না মাসোয়ারা কাটা যায়!

তাই ছুড়ি হাতে কুপিয়েছিলো নির্দ্বিধায় রাস্তায় 

জান্তার ছায়াতলে জানে কিছু হবে না তাঁদের; 


তারপর একসময় রাতের বেলায় সব বাতি নিভিয়ে দিয়ে

তারা নির্বিচারে গুলির বন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছিলো মহল্লা আর মহল্লায়

বাতি নিভানো বলতে কি বলছি জানো?

ঐ যে বিজলি বাতি এবং বিবেকের বাতি

আসলে কি ঠিক বললাম?

বিবেক বলে কিছু থাকলে তবেই না তা নেভানো যায়; 


আজকাল আর কেউ পড়াশোনা করে না 

এখন কারও মনে গান বাজে না 

এখন নাচের বদলে দৌড়ে জান বাঁচানোর সময়

এখন আর কারও মনে প্রেম আসে না,

আসবে কি করে বলো?

যে মেয়েটা প্রেম করতো তার প্রেমিক মরে পড়েছিলো রাস্তায়

যে ছেলেটা প্রেম করতো তার প্রেমিকাকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছে

আজকাল ঘরে ঘরে কান্না

তারপরও ওরা থামে না 

আজকাল আকাশপথে হামলা চালায়

আজকাল গুলি চলে মাটিতে আর আকাশে 

আজকাল হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ পাশের জন রাস্তায় পড়ে যায়

রাস্তা ভেসে যায় রক্তে

আজকাল বাবা-মা আর ছোট বাচ্চাদের নিয়ে ছাদে ওঠে না 

উঠবে কি করে বলো!

আকাশপথের গুলিতে ঐ যে কচি পায়ে চলা ছোট্ট মেয়েটি!

ওর লাশ দেখেছ তোমরা?

বীভৎস;


একটা সময় আসবে যখন বিশ কোটি বাংলাদেশির মধ্যে 

উনিশ কোটি মানুষ ওরা মেরে ফেলবে 

বাকি এক কোটি চাটার দল আর জান্তা 

তারও একটা সময় পরে আবার তাঁদের মধ্যেও উঠবে রক্ত দেখার নেশা

মানুষ না পেয়ে নিজেদের মধ্যেই লড়বে রক্তের নেশায়

কাতারে কাতারে চাটার দল মরবে

তারপর শুধু বেঁচে থাকবে অল্প কিছু জানোয়ার

আর লাল সবুজের বাংলাদেশ?

সে তো মারা গেছে সেই কবেই! 

 - মানুষ শূন্য হয়ে। 


একদিন সবুজ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলো মানুষ

আর মৃত বাংলাদেশে বেঁচে আছে অল্প কিছু হায়েনা

ওরা তারপর কি খাবে?

নিজেদের নিজে?



#হাবিজাবি_মনের_হিবিজিবি_কথা 


মৃত বাংলাদেশ

 - মোঃ আহসানুল হক 


২৯ জুলাই, ২০২৪ 



     


   


চিৎকার

 ছেলেটা বলতে চেয়েছিলো কিছু কথা 

বলতে চেয়েছিলো তার কিছু মৌলিক চাহিদার কথা 

হয়তো অধিকারের সুরে 

তাই হয়তো একটু চিৎকার করে

তাতে কি হলো জানো?

ওর চারিদিকে যারা ছিলো তারাও শুনতে পেলো

শোনার পর তাদের মনেও আসলো 

 - আরে! এ তো আমাদেরও মনের কথা 

তারাও গলা মেলালো ছেলেটার সুরে; 


অনেক জন যখন চিৎকার করে গলা মেলায়

কি হয় জানো? 

 - একটা অনুরণন তৈরি হয় 

 - অনুরণনগুলো একসাথে হয়ে একটা স্লোগানের সৃষ্টি হয়


স্লোগান সৃষ্টি হলে কি হয় জানো?

 - কিছু মানুষের ভেতরে ভীতির জন্ম নেয়

ভীতি থেকে কি হয় জানো?

 - স্লোগানগুলোর গলা চেপে ধরে 

 - স্লোগানগুলোর গলা চেপে ধরতে গিয়ে বিবেক হারিয়ে ফেলে

 - বিবেকহীন মানুষরা যে কি করতে পারে তা তোমরা দেখছ

তাই না?


ছেলেগুলো কেন যে তাদের চাহিদার কথা বলতে গেলো?

কি লাভ হলো?

ঐ যে দেখছ সারি সারি লাশ!

 - বাংলাদেশের পতাকায় মোড়া 

কখনো প্রশ্ন এসেছে মনে! 

 - এদের কেন পতাকায় মোড়া হলো?

লাল সবুজের পতাকায়?


এরা সবুজ শ্যামল দেশে বুকের রক্ত ঝরিয়ে লাল করে দিয়েছিলো

তাই তো আপামর দেশের মানুষ এদের ভালোবেসে 

কাফনের জায়গায় লাল সবুজে মুড়ে দিলো;


এরা আর কথা বলবে না কখনো

বলবে না তাদের চাহিদার কথা 

বলবে না অধিকারে কথা অধিকারের সুরে

তবে কোটি প্রাণের মাঝে এরা বেঁচে থাকবে চিরকাল

 - শহীদের মর্যাদায়

 - অত্যাচারীর গুলিতে নিহত হয়ে এরা শহীদ হয়ে গেলো;


আর কোটি মানুষের মনে জাগিয়ে দিয়ে গেলো - 

বলো

তোমরাও বলো

চাহিদার কথা বলো

অধিকারের কথা বলো 

চিৎকার করে অনুরণন তোলো

হোক না স্লোগান!

শহীদের লিস্ট বড় হতে হতে না হয়  

একসময় পুরো দেশটাই শহীদ হয়ে যাবে! 



 

#হিবিজিবি_মনের_হাবিজাবি_কথা 


চিৎকার 

 - মোঃ আহসানুল হক 


২৮ জুলাই, ২০২৪ 

 




  





শবের মিছিল

 একদিন আমিও যুবা ছিলাম, সাহস ছিলো বুকে

আজ যেন বেশ বয়স হয়েছে, বাঁচছি ধুঁকে ধুঁকে 

তখন আমি সন্তান ছিলাম, চিন্তা ছিলো বাবার

আজকে যখন বাবা আমি, সব চিন্তাই আমার; 


পঁচাশি থেকে নব্বই, ছিলাম রাজপথে পড়ে  

স্বৈরাচারের নিপাত করে, ফিরে এসেছিলাম ঘরে

নূর হোসেন শহীদ হলো, হন্তক চালালো গুলি 

'স্বৈরাচারের নিপাত যাক'- বুকে লেখা ছিলো বুলি; 


সেদিনও আমি নির্ভীক যুবা, তার পাশে রাজপথে

বাবা সেদিন চিন্তায় ছিলো, অপেক্ষায় চেয়ে পথে 

আজ আমার সন্তান সব, পথে পথে রাজপথে 

সময়টা কি চলছে তবে! উল্টো চাকার রথে; 


আজ কেন রক্ত আমার, বরফ ঠাণ্ডা হলো!  

জুজুর ভয়ে অস্থির থাকি, এই বুঝি ধরে নিলো

আজকে আমার সন্তানের বুকে, গুলির বড্ড ভার 

তবে কি সেদিন করতে পারি নি, নিপাত স্বৈরাচার;


আজকে আমি বাবা হয়ে, সন্তানের পথ চেয়ে থাকি

ঐ যে কারা আসছে যেন, কাঁধে লাশ কেন? - এ কি!

সন্তানের বুকে গুলি লাগার আগে, দেই নি বুক পেতে

খাটিয়া ধরে কাঁদছি মরাকান্না! পারি নি বাবা হতে?


দরজার সামনে দাঁড়িয়ে এখন কাকে খুঁজবে দুচোখ

সন্তান আমার পতাকায় মোড়া, ঘুমিয়েছে তার চোখ 

বাকি সন্তানেরা এখনো রাস্তায়, বুকে পিঠে গুলি খায় 

বাবারা সব বিশ্রামে আছে, পিঠ এলিয়ে বিছানায়;


যেদিন বাবাদের ঘুম ভাঙবে, দাঁড়াবে সন্তানের পাশে

কাতারে কাতারে পিতা সন্তান, শবের মিছিল লাশে  

সেদিনও তারা গুলি চালাবে, আমার ট্যাক্সের বন্দুকে 

সন্তানের সামনে বাবা দাঁড়িয়ে, গুলি টেনে নিতে বুকে।


    


#হিবিজিবি_মনের_হাবিজাবি_কথা 


শবের মিছিল

 - মোঃ আহসানুল হক 


২৭ জুলাই, ২০২৪ 


 


 

 




 


জীবন্ত লাশ

 ওরা বলেছে মুখ বন্ধ কর

আমি মুখ বন্ধ রেখেছি

সাহস হয় নি বলতে আমার 

চারিদিকে যা দেখেছি  

আমি ওদের কথা রেখেছি, 

মুখ বন্ধ রাখতে রাখতে 

আমি বোবা হয়ে গিয়েছি 

আজকে আমি বলতে পারি না

তবুও কোথায় কি হচ্ছে জেনেছি; 


ওরা বলেছে কান বন্ধ কর

আমি কান বন্ধ করেছি

সাহস হয় নি শুনতে আমার 

কি হচ্ছে চারিদিকে 

আমি ওদের কথা রেখেছি

কান বন্ধ রাখতে রাখতে 

আমি বধির হয়ে গিয়েছি 

আজকে আমি কিছুই শুনি না

কিন্তু ওদের কথাই শুনেছি; 


ওরা বলেছে চোখ বন্ধ কর

আমি চোখ বন্ধ রেখেছি

সাহস হয় নি দেখতে আমার 

চারিদিকের ঘটনাগুলো  

আমি ওদের কথা রেখেছি

চোখ বন্ধ রাখতে রাখতে 

আমি দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছি 

আজকে আমি কিছুই দেখি না

আমি ওদের চোখেই দেখছি;  


ওরা বলেছে বিবেক বেঁচে দাও 

আমি অল্প-মূল্যে বেঁচে দিয়েছি 

সাহস হয় নি তাঁদের না বলতে  

সবাই নাকি বেচছে দেদারসে  

আমি ওদের কথায় বেঁচেছি 

বিবেক বেঁচে আমার লাভই হয়েছে

আমি বিবেক-শূন্য মানুষ হয়েছি  

আসলে মানুষ? আমি জানি না 

শুধু ওদের কথামতোই চলেছি;


হঠাৎ একদিন বোবা হয়ে আসা কথাগুলো বললো

 - কথা বলার চেষ্টা কর   

হঠাৎ একদিন বধির কান কানপড়া দিয়ে বললো 

 - কথা শোনার চেষ্টা কর 

হঠাৎ একদিন অন্ধ চোখ বলে উঠলো

- তাকা চারিদিক

তারও অনেক দিন পর 

হঠাৎ একদিন বিবেক কড়া নেড়ে বললো

 - এবার মানুষ হ, 

আমি মানুষ হতে গিয়ে আয়নায় দেখলাম

 - মানুষের অবয়বে দাঁড়িয়ে - জীবন্ত লাশ। 


 


#হিবিজিবি_হাবিজাবি


জীবন্ত লাশ

 - মোঃ আহসানুল হক 


২৭ জুলাই, ২০২৪ 


  

ভয়

 রক্ত

রক্ত

অনেক রক্ত ............


 - কার? 

মানুষের

 - কোথায়?

পথে পথে

 - কিভাবে? 

এই চুপ, জিজ্ঞেস করতে হয় না; 



অধিকার!!!! 

 - খাওয়ার

 - পরার

 - বাসস্থানের

 -  চিকিৎসার 

 - কথা বলার

 - বেঁচে থাকার ............


 - কার? 

মানুষের

 - কোথায়?

আমার দেশে

 - কিভাবে? 

জানি না; 


আমি খেতে পাই না 

পড়তে পারি না

 - মূল্যবৃদ্ধি 

বাসস্থান 

 - সাধ্যের বাইরে


আমি কথা বলতে পারি না

 - ভয়ে

আমি মাথা উঁচু করে চলতে পারি না 

 - ভয়ে  

আমি চিৎকার করে কাঁদতে পারি না

 - ভয়ে 


কোথায়?

 - আমার দেশে

কেন? 

 - বলা যাবে না

কেন বলা যাবে না 

 - ভয়ে;


ভয় আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে

ভয় আমার আত্মার ভেতরে

ভয় চারিদিকে, চারিদিকে


কেন?

 - যদি গুম হয়ে যাই!

 - যদি মেরে ফেলে!!


নাহ! আর আমি আর কিছুই বলব না

আমার বড্ড ভয় লাগে........................ 


#হিবিজিবি_হাবিজাবি


ভয় 

 - মোঃ আহসানুল হক 

 

২০ জুলাই, ২০২৪




মৃত্যুর দলিল

 কে বলেছে সময় ফুরোঁয় সময়ের আগে?

মৃত্যু! সময়ের সাথে সাথে জীবনের ভাগে

ওরা বলে, আহা! চলে গেলো সময়ের আগে

আমি বলি জীবনটা কাটিয়েছে, সে তার ভাগে;


ঐ যে বৃদ্ধা ধুঁকছে, আশি কিংবা নব্বইয়ে

মৃত্যুর অপেক্ষায় তিলে তিলে পায়ে পায়ে 

অথচ হুট করে মরে গেলো প্রৌঢ় সন্তান 

জীবনের কোটা পূরণে মৃত্যু নিয়ে যায় প্রাণ;


তিল তিল করে জঠরে, রূহের ফুঁৎকার 

ভূমিষ্ঠ হতেই তারস্বরে দিয়েছিলো চিৎকার 

একটা পুরো জীবন কেটে যায় হেসে-খেলে   

মৃত্যু অমোঘ, রূহ'টা টুপ করে চলে গেলে; 


রূহ নামক এক আজব বস্তু, কে দেখেছে, কবে?

ওটাই জীবন, মৃত্যুতে দেহ ছেড়ে চলে যাবে 

কেউ একজন ডাকবে ঐ অনেক ওপর থেকে

মুহূর্তে চলে যেতে হবে সবকিছু ফেলে রেখে;  


পরকালের জীবনের কথা ক'জন বুঝে চলে  

হিসাব দিতে হবেই তাকে পাই-পাই তিলে-তিলে 

অর্বাচীনের কালক্ষেপণ, যত্রতত্র হেসে-খেলে  

অথচ একটি মাত্র স্বাক্ষর বাকি, মৃত্যুর দলিলে। 



#হিবিজিবি_হিবিজিবি 



মৃত্যুর দলিল 

 - মোঃ আহসানুল হক 


১১ জুলাই, ২০২৪ 






  



কোরবানির হাট

 কোরবানির হাটে আজকাল কেজিতে গরু বিকোয় 

যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী কিনছে, অর্থের বিনিময়  

কোরবানি দিতে হয় পশুত্ব, মনের ভেতরে যেথায়  

মাংসের হিসাব কেজির হিসাবে, কোরবানি কোথায়?


টানাটানির মাঝেও একদল মানুষ কোরবানির হাটে যায় 

বৎসরে একবার কোরবানি করতে কষ্টের টাকা জমায় 

সৎ উপায়ে অর্জনের টাকায়, কোরবানি করতে হয় 

কোরবানির অর্থ মনের পশুত্ব বিসর্জন, শুধু অর্থ নয়;


সাধারণ মানুষ হাটে যায়, হাজারে গরু ছাগলের খোঁজে 

যে যার সামর্থ্যের ভেতর, কোরবানির পশুর খোঁজে

অসাধারণ কিছু মানুষ আছে, অসাধারণ পশু খোঁজে

লক্ষের ওপর ছাগল চাই আর কোটিতে গরু খোঁজে; 


সাধারণ মানুষ সাধারণ পশু কেনে সাধারণ সব দামে

সৎ উপার্জনে অসাধারণ মানুষ কোথায় পাবে খুঁজে 

অসাধারণ মানুষ পশু কেনে কিছু অসাধারণ সব দামে    

অসাধারণের অসাধারণ উপার্জন, সাধারণে সব বুঝে; 


লাল সাদা ছোপছোপ দাগ, এক ছাগলের সারা গায় 

এক চতুর পাগলে পনর লক্ষ ছাগলের দাম হাঁকায় 

কোরবানির হাট জোড়া মানুষ, দাম শুনে ভিমড়ি খায়    

বার লক্ষে ছাগল কিনে, খুশিতে এক ছাগল লাফায়; 


বেটে মোটা খাটো লম্বা, নানা রঙের গরু বাহারি 

দড়ি ধরে দাঁড়ি টানে, দাঁড়িয়ে চতুর এক ব্যাপারী 

গরুর দাম হাঁকে কোটিতে, মোছ দাঁড়িতে দিয়ে তা

কিছু বলদ লাইনে দাঁড়িয়ে, এরাই নাকি সব ক্রেতা; 


উচ্চ বংশীয় পশু বলে, চতুর বিক্রেতাদের গলাবাজি   

ওনার ক্রেতাগণ হারাম উপার্জনে, হজ্জ করা সব হাজী 

একটি পশুও নিম্ন বংশের নয়, চাপাবাজি করে বিক্রেতা

হারাম টাকার হালাল ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে যায় সব ক্রেতা;  


হালাল হারাম কে বাছে? বিবেক আগেই হয়েছে ক্ষয় 

হারাম টাকায় হজ্জ কোরবানি এদের দ্বারাই সব হয় 

ধর্মের নামে খরচ করেছি আল্লাহ্‌'কে কেন পাব ভয়?  

হারাম টাকার হালাল ব্যবহার, ধর্মের নামেই যত হয়। 


#হিবিজিবি_মনের_হাবিজাবি_কথা 


কোরবানির হাট 

 - মোঃ আহসানুল হক 



১৫ই জুন, ২০২৪ 



 


 




 

      

বাবা-মা, সন্তান আর কিছু কথা

 সন্তান জন্মে বাবা-মায়ে'র সকল অবদান 

জন্মের পর তাদেরই লালন পালনে সন্তান

সন্তান পালনে বাবা-মা দিনরাত এক করে 

বাবা-মা গাছতলায় থেকে সন্তান রাখে ঘরে;  


মায়ের স্নেহে বাবার আদরে বেড়ে ওঠে সন্তান

বড় হয়ে উঠতে তাদের মন অন্য সুরে গায় গান

ডানা শক্ত হলেই স্বপ্ন-চোখে উড়াল দেবার সাধ  

বাবা-মা তাদের উড়াল-ডানায় দিতে পারে না বাঁধ;

 

সন্তানদের জন্য দিনমান মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রম 

উদয়াস্ত মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বাবার উপার্জন 

সন্তান সন্ততি বাবা-মায়ের কাছে সবচেয়ে প্রিয়জন

অথচ সন্তানদেরই হাতে গড়া হাজারও বৃদ্ধাশ্রম;


একদিন তারাও বাবা-মা হবে, হবে তাদেরও সন্তান

ওরাও একদিন বাবা-মা হিসাবে রাখবে অবদান 

একদিন ওদেরও পাঠিয়ে দেবে প্রিয় সব সন্তানে  

তিলে তিলে তাদেরই হাতে গড়ে ওঠা বৃদ্ধাশ্রমে।  



#হিবিজিবি_কথোপকথন


বাবা-মা, সন্তান আর কিছু কথা 

 - মোঃ আহসানুল হক 


১১ জুন, ২০২৪ 




 

  

দীর্ঘ ঘুম

 আজকাল ঘুমগুলো যেন বড্ড দীর্ঘ হয়

আজকাল বেড়ে গেছে ঘুমানোর সময়

ইদানীং ভালো লাগে না জাগতিক কিছু 

মৃত্যু কি তবে ধেয়ে আসছে পিছু পিছু?


আজকাল ঘুমগুলো হয় বড্ড বেশি গাঢ় 

আজকাল ঘুম ভাঙলেই মন খারাপ আরও

ঘুম ভাঙলেই আজকাল মৃত্যুর কথা মনে হয়

তবে কি খুব কাছে চলে এসেছে মৃত্যুর সময়?   


আজকাল চোখে স্বপ্ন বসে না আর কোন 

আজকাল মৃত্যু খুব কাছে এসেছে যেন

গভীর ঘুম কি মৃত্যুর খুব কাছাকাছি নয়?

হয়তো একদিন ঘুম ভাঙবে না, মৃত্যুর সময়।


#হিবিজিবি_মনকথা 


দীর্ঘ ঘুম

 - মোঃ আহসানুল হক 


১১ জুন, ২০২৪ 




 


নানা রকম মানুষের নানা রঙের মন

 নদীর ধারে সবুজ ঘাসের প্রান্তর 

যতদূর চোখ যায় ধানের মাঠ 

বাতাসে ঢেউ ওঠে অবুঝ সবুজে   

প্রশান্তির দোলায় মনে প্রকৃতির প্রেম; 


পাহাড়ের কোল ঘেঁষে ভিজে মাটির গান 

ঝর্ণায় বয়ে চলে সুরের তাল লয় ছন্দ  

অরণ্যের বুক চেরা পাখিদের ডাকে  

মনে জীবনানন্দের কবিতায় গান; 


সবুজের এপার-ওপার সীমানা ছাড়ানো 

গভীর বনে বসে একা ভাবি নির্জনে 

রঙের এমন খেলা কোথায় যেন দেখেছি  

এক স্বপ্ন-মাঠে ঘাসের বিছানায় শুয়ে; 


ঘন বনে হাঁটতে হাঁটতে সবুজের স্বপ্নে 

আমিও হারাই অবুঝ সবুজের সাথে 

প্রকৃতির বুকে মিশে যেতে যেতে 

স্বপ্ন-ভঙ্গ গ্রিন-ম্যাগপাই এর ডাকে;


নীলের সাথে সবুজ মেশানো অদ্ভুত পাখি

আলোর সাথে অন্ধকার মেশানো বন 

আনন্দের সাথে কত কত দুঃখ মেশানো

নানা রকম মানুষের নানা রঙের মন। 



#হিবিজিবি_রাত্রি_হিবিজিবি_মন


নানা রকম মানুষের নানা রঙের মন

 - মোঃ আহসানুল হক 


০২ জুন, ২০২৪ 

নীরবতার কথা

 নীরবতাও কথা বলে অব্যক্ত ভাষায় 


আমার নিস্তব্ধতায় মিশে নৈঃশব্দ্যের ঠোঁট 

প্রহর ঘুমায় নির্লিপ্ততার শব্দে 

প্রকৃতিতে এগোয় সময়ের প্রহর; 




পথের ধারে গাছেরা দাঁড়িয়ে নীরবে


পাখিরাও চুপ হয়ে শোনে স্তব্ধতার গান


নদীর ঢেউয়ে নীরবতার বয়ে যায় 


নদী-পাড়ে তালগাছের এক পায়ে ধ্যান; 



বাবুই বাসা বেঁধেছিল নারিকেল ডালে

অনাগত সন্তানের আবাসস্থল  

কিছু তঞ্চক মানুষের দল 

বাসাগুলো নিস্তব্ধ ভাসছে বাতাসে; 


শব্দেরা ভাষা হারায় নিস্তব্ধতার মাঝে  

না বলা কথায় অনেক কিছুই বলে


যাদের বোঝার তারা কি বোঝে?

পাড় ভাঙে ঢেউয়ের কুলকুল শব্দ;   


কিছু কথা রাতের অন্ধকারে ওড়াই  

চাঁদের আলোয় ভাসে নীরবতার মায়া


তারাদের ফিসফিসানি অদৃশ্য কথায়

পথ খুঁজে পায় বাদুর, নৈঃশব্দতার শব্দে; 


কিছু কথা ঢেকে রাখি ভোরের অপেক্ষায় 

আকাশের লালিমায় গলা মেলায় পাখি 

বন হরিণের পদচারণায় নিস্তব্ধতা ভাঙে 

জেগে উঠি আমি, পাখিদের কলকাকলি।


#রাতের_হিবিজিবি_গল্প 



নীরবতার কথা 

 - মোঃ আহসানুল হক 


০১ জুন, ২০২৪ 




  




পাখি জীবন

 উড়তে চায় সবাই

পারুক আর নাই'ই পারুক, 

পাখি আকাশে দেখলেই মানুষের মনে সাধ জাগে 

 - আকাশে ডানা মেলার

 - পাখির মত উড়ে চলার 

মানুষেরও ইচ্ছে করে পাখি হওয়ার

তোমাদের করে না?


না করলে তবে তো তোমার চোখে স্বপ্ন খেলে না 

তুমি হয়তো রক্ত মাংসের মানুষ

 - তবে পরিস্থিতির চাপে

 - কিংবা সংসারের চাপে

 - আর নয়তো অন্য কোন কারণে 

তোমার চোখ থেকে স্বপ্ন উড়ে গেছে, 

এখন হয় তুমি চোখ বন্ধ করলেই ঘুমে ঢুলে পড়ো

কিংবা সারারাত দুশ্চিন্তায় জেগে থাকো চোখ বন্ধ করে; 

আর নয়তো অবশ্যই পাখিদের উড়ে যাওয়া দেখে তোমার চোখ স্বপ্ন দেখে

 - পাখি হতে

 - ডানা মেলতে আকাশে......... 


আমি কি কিঞ্চিৎ ঠিক বললাম?

 - অথবা পুরোটাই?


যাক ও প্রসঙ্গ বাদ দেই, 

আমরা খুব সাধারণ মানুষের কাছে চলে আসি

যাদের চোখ ভরা স্বপ্ন এখনো চোখের কোলে 

যারা পাখি দেখলেই মনের আকাশে ডানা মেলে

আমি তাদের দলে

আমি তাদেরই দলে,

শুধু তোমাদের সাথে আমার পার্থক্য 

 - আমি স্বপ্নে ডানা মেলি না 

 - আমি ঘর থেকে বের হয়ে যাই, ঐ পাখিদের পিছু পিছু

 - শুধু মনে মনে পাখি হয়ে নয়, ঘর থেকে বের হয়ে 

 - সংসারের মায়া সংসারে ছেড়ে দিয়ে 

 - বাস্তব কারও ঘাড়ে বাস্তবতাগুলোকে চাপিয়ে দিয়ে 

তারপর একদম পাখি হই, পাখিদের পিছু পিছু

হয়তো পাখিরই জীবন আমার - আর মানুষের অল্প কিছু;


অনেকেই হয়তো পাখি হওয়ার স্বপ্ন দেখে তবে পাখি হতে পারে না

 - মধ্যে চলে আসে কিছু সম্পর্ক নামক বন্ধন 

    আর সংসার নামের সং এর শূন্য অন্তঃসার, 

তবে এগুলোর মধ্যেও আমি পাখি হই

মানুষের জীবনের মধ্যে থেকেই কাটাই ইকারাসের জীবন

ঐ অনেক উঁচুতে ডানা মেলে

মাটি থেকে অনেক অনেক অনেক ওপরে উড়ে 

তারপর কিছুদিন মেঘের সাথে সখ্যতার পরে 

আবার ফিরে আসি মাটিতে, আমার মাটির ঘরে

সংসার নামক মধুর এক বন্ধনের টানে 

কিছুদিন সং এর সাথে সার করি 

তারপর আবার ইকারাসের ডানায় উড়ি;


এ জীবনটা সবার নয়

পাখি হতে হলে সংসারে কিছু মানুষ লাগে 

যাদের ভরসায় আকাশে ডানা মেলা যায়

নিশ্চিন্তে পাখা মেলা যায়, ইকারাস ডানায়। 


#হিবিজিবি_হাবিজাবি


পাখি জীবন

 - মোঃ আহসানুল হক 


১৯ মে, ২০২৪


 



 

টাকার টাকা


আজকাল মানুষের জীবনের প্রধান লক্ষ্য 

 - টাকা উপার্জন,  

অনেক অনেক টাকা

অঢেল ব্যাঙ্ক ব্যাল্যান্স 

বেশুমার সম্পত্তির পাহাড়; 


টাকা উপার্জনের কোন হারাম হালাল নেই

চিন্তা নেই সৎ কিংবা অসৎ পন্থার 

যে কোন উপায়ে টাকা এলেই হল 

হারাম হালালের বাছবিচার তো ধর্মানুসারীদের 

মানুষ তো টাকার কাছে ধর্ম বিকিয়েছে কবেই

বিকিয়েছে বিবেক, বিকিয়েছে মনুষ্যত্ব বোধ

এখন শুধু টাকা আর টাকা

টাকা ছাড়া যেন জীবনটাই ফাঁকা;    


আজকাল কে না টাকা খায়! 

টাকা খায় সরকারি দপ্তরের চেয়ার টেবিল

প্রতিটা ফাইল, ফাইলের পাতায় পাতায় প্রতিটা দস্তখত

আর টেবিলের ওপাশে দস্তখত দাতা মানুষগুলো?

আরে নাহ! ওরা দরবেশ সমতুল্য

এরা ধর্মকর্ম খুব মানে!  

সনাতন ধর্মীরা সকালে পুজো দিয়ে এসে

বিকেলের প্রসাদ সংগ্রহ করে টেবিলের ড্রয়ারে

আর বাকিরা নামাজ শেষ করে 

টুপি পেতে দেয় টেবিলের খোলা ড্রয়ারে

ওহে ম্যাংগো মানুষ!

ফাইলে সাইন চাইলে ড্রয়ারে কিছু দিয়ে যান,

আমি মাঝেমাঝে ভাবি টেবিলের ওপাশে বসা লোকগুলো 

কি অসম সাহসে ভিক্ষা করে সরকারি দপ্তরে!


আর বেসরকারি অফিস আদালত!

ওখানে টাকার বদলে ওখানে টন টন ঘি চলে 

প্রত্যেকটা মানুষ সকালে হাত ভরে ঘি মেখে আসে

সারাদিন বসের পেছনে ঘি ডলে 

যার ঘি যত খাটি কিংবা পরিমাণে বেশি 

এখানে তারই কর্তৃত্ব চলে

আর যারা ঘি ঢালতে জানে না তারা পেছন পড়ে থাকে;


টাকায় কি না হয়!

টাকাতেই আজকাল মানুষের মর্যাদা নির্ণয়,

আর নিজেদের সম্পদ দেখানোর নেশা - আদতে রিয়া

বোঝে ক'জনা? 


আরে তুমি এগুলো নিয়ে খোঁচাখুঁচি করো না তো!

একটু বয়স হলে না হয় নিজেকে সুদ্ধ করে নেব 

 - হজ্জ করে নামাজ ধরে

বিবেকের সমর্পণ তওবা করে কাবা ঘরে,


ওহে মানুষ! 

ওখানে যেতে হয় হালাল উপার্জনে। 


আরে ধ্যাত! তুমি কিছু জানো না

শুধু শুধুই উপদেশ দিতে এসো না,  

হালাল হারাম - টাকার গায়ে কোথায় লেখা থাকে?

টাকা তো টাকাই 

কাগজের নোট

আহ! কি সুগন্ধ!

টাকার গন্ধের চেয়ে মধুর গন্ধ আর কি আছে?

টাকাই টাকা 

আমার টাকার টাকা। 



#হিবিজিবি_হাবিজাবি 


টাকার টাকা 

 - মোঃ আহসানুল হক 



১২ মে, ২০২৪ 




 

ঘুমঘোরে ফিনিক্স পাখি

 মন যা পেতে চায় 

 - মন কতটুকু পায়? 

      যতটুকু পায়, আদৌ কি চেয়েছিলো?

        - ভালোবাসা সবসময় পাওয়া যায় না; 


মন যা ছুঁতে চায় 

 - কতটা ছোঁয়া যায়?

      যা কিছু ছুঁয়েছিলো, সেটা কি চেয়েছিলো? 

         - মন আদতে ছোঁয়া যায় না; 

 

ঐ তো ভালোবাসা নামক একটা সম্পর্ক 

 - কোন একটা সময় জীবনে আসে 

      মনের ভেতর শীতল পাটি পেতে বসে

       - ভালোবাসার নামে শরীর ছোঁয়া, তারপর কান্না; 


সম্পর্ক আঠায় জুড়ে না 

 - কোন একটা সময় নতুন সম্পর্ক হয়

      প্রেম হোক না নাই হোক, স্বামী-স্ত্রী নাম রয় 

        - শরীর মিলে মিলে বংশোদ্গোম;


মন এটা চায় নি 

     - শরীরের চাহিদা 

ভালোবাসা পায় নি 

     - কামের বাসনা 

সম্পর্কটা ঠিক হয় নি 

    - মানুষের জুড়ে দেয়া 

বিছানায় স্বামী-স্ত্রী

   - কামের পর একাকী 


ইশশ! 

  সেদিন আরেকটু সাহস করলেই হতো

   - মন যা চেয়েছিলো শরীর তা পেতো

     - মন যাকে চেয়েছিলো শরীর তাকে ছুঁতো 

       - ভালোবাসাবাসি দুজনার হতো 

         - আফসোস ভেসে বেড়ায় অন্ধকার ঘরে; 


তারপর ঘুমঘোরে স্বপ্নে স্বপ্নে 

   - চাওয়া আর পাওয়ার বিভ্রমে 

       দুজন দুজনার দিকে ফিরে 

        - দুজনার হাত হয়তো দুজনকে ছোঁয়, অন্য কাওকে ভেবে

             জড়িয়ে ধরতে গেলেই ছোঁয়ার বিভ্রমে জেগে ওঠে দুজনে 

                 তারপর পাশ ফিরে আবার ঘুমায়, চোখে স্বপ্ন নিয়ে  

                    - অন্ধকারে কোথায় জানি লক্ষীপ্যাঁচার ডাকে

                          রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে


দুজনার স্বপ্নগুলো উড়ছে অন্ধকারে 

   জুড়ে দেওয়া সম্পর্কটার শুরু থেকে 

        ডানাভাঙা এক স্বপ্ন উড়ছে 

            উড়ছে 

              উড়ছে 

            উড়ছে 


আমরা স্বপ্ন দেখি ঘুমঘোরে 

    ঘুমঘোরে 

      ঘুমঘোরে 


আকাশে চাঁদ ঝুলে থাকে,  

   জ্যোৎস্না থাকুক কিংবা অমাবস্যা

      চাঁদের কি এসে যায়? 


        ভালোবাসার ফিনিক্স পাখি ওড়ে প্রতিটা প্রেমিকের মনাকাশে 

             প্রতি রাতে ঘুমঘোরে  

                জ্যোৎস্না কিংবা অমাবস্যায়। 


#হাবিজাবির_হিবিজিবি 


ঘুমঘোরে ফিনিক্স পাখি 

 - মোঃ আহসানুল হক 


১৮ এপ্রিল, ২০২৪ 





 

চোখগেলো পাপিয়া

 আজকাল কেমন যেন শরীর খারাপ করা প্যাঁচপ্যাঁচে গরম পড়ছে। প্যাচপ্যাচে গরম বলতে সারাদিনই শরীর বেয়ে লবণ বের হয়, পানির সাথে লবণের মিশ্রণকে বইয়ের ভাষায় ঘাম বলা হয়, আমি বলি চর্বি গলা পানি। ঘরে থাকলে সারাদিনই মাথার ওপর বনবন করে ক্লান্ত ফ্যানটা ঘুরে। ঘরের ভেতর আমার বেশিক্ষণ ভালো লাগে না আমি গরম খেতে চলে যাই কোন না কোন জঙ্গলে, কিংবা গ্রামের মেঠো-পথ ধরে কোন এক গাছের ছায়ার তলে শুয়ে থেকে নীলাকাশের দিকে তাকিয়ে গরম খাই। কখনো কখনো মৃদুমন্দ বাতাসে শরীর জুড়িয়ে আসে, কখনো একটি দুটি পাখির ডাকে চোখ মেলে তাকাই, দূর আকাশে পাখিদের ওড়া-উড়ি দেখি, আবার ক্লান্ত দুপুরে শরীর এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করি। মাঝে মধ্যে যখন বাতাস বন্ধ হয়ে যায়! প্যাঁচপ্যাঁচে গরমে চর্বি গলে গলে পড়তে থাকে তখন কোন এক শ্যাওলা পুকুরে ডুব দিয়ে বসে থাকতে ইচ্ছে করে। আমার জন্য কেইবা আর আর বাথটাবে বরফ ঢেলে সুগন্ধি ঢেলে রাখবে। তবে কখনো সখনো গভীর জঙ্গলে গাছতলায় শুয়ে দিবাস্বপ্ন দেখতে খারাপ লাগে না। স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলে আমি নেমে পড়ি কোন এক পুকুর কিংবা খালে, পদ্ম-পুকুর কিংবা শ্যাওলা পুকুর তাতে কি যায় আসে। গলা পর্যন্ত পানিতে ডুবে শুয়ে শুয়ে আমি পাখ-পাখালির কিচির-মিচির শুনি। কোথাও কি একটা চোখগেলো পাপিয়া ডেকে উঠলো? আমি চারিদিকে ভালো করে তাকাতেই দেখি পুকুর পাড়ের ধারে একটা গাছের ডালে চোখগেলো চোখগেলো পাপিয়া ক্রমাগত ডেকে যাচ্ছে। মন থেকে গরমটা মুহূর্তে হাওয়া হয়ে গেলো। আমি ক্রমাগত চোখগেলো চোখগেলো ডাকে চোখগেলো পাপিয়ার দিকে অপলক চেয়ে রইলাম। কি অদ্ভুত সুন্দর একটা পাখি!!! একটা পাখি আমার একটা দুপুর বদলে দিয়ে গেলো। 



#হিবিজিবি_হিবিজিবি 


চোখগেলো পাপিয়া 

 - মোঃ আহসানুল হক 


১৬ এপ্রিল, ২০২৪



আফসোসের দীর্ঘশ্বাস

 আমি কোথা থেকে এসেছি?

কোথায় চলেছি?

শেষ পর্যন্ত কোথায়ই বা যাব?

মাঝে মধ্যেই ভাবনাগুলো বড্ড ভাবায়;   


জন্মের আগে কোথায় ছিলাম?

বিশ্বাসীদের হিসেবে আলমে আরওয়াহ'তে

মৃত্যুর পর কোথায় যাব?

বিশ্বাসীদের হিসেবে আলমে বারযাখে, 

অবিশ্বাসীদের কাছে রূহের জগৎ বলে কিছু নেই

আমি বিশ্বাসীদের দলে; 


এই যে আলমে আরওয়াহ থেকে মাতৃ জঠর!

চারমাস ওখানে থেকে মাংসপিণ্ড বেড়ে ওঠার সাথে সাথে রূহের ফুঁৎকার 

আমার দ্বিতীয় জীবনে আগমন,  

কতই না নিশ্চিন্ত জীবন; 

 

তারপর এলামে পৃথিবীতে, চিৎকার করে কেঁদে উঠে 

কাঁদবো নাই বা কেন?

নিশ্চিন্ত জীবন থেকে কেই বা যেতে চায় অনিশ্চিত জীবনে

আমি কাঁদছিলাম আর হাসছিলো সবাই, আমার আগমনে

আমার তৃতীয় জীবনে পদার্পণে; 

 

ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠার সাথে সাথে চিনতে লাগলাম নিষ্ঠুর পৃথিবী

সবাই দৌড়চ্ছে উদ্ভ্রান্ত রেসের ঘোড়ায় চেপে

লোভ নামক রিপুর কাঁধে বসে  

অর্থ নামক স্বাচ্ছন্দ্যের পিছে 

স্বার্থ নামক কালো কালি মেখে

আলো নামক সম্পর্কগুলো পিষে;


তারপর দৌড়তে দৌড়তেই কখন জানি 

মৃত্যু নামক এক অমোঘ নিয়তি ছুঁয়ে দেয়  

নিজেকে আবিষ্কার আলমে বারযাখে 

তোমরা বলছ, আহা! লোকটা মারা গেছে;  

কই?

আমি তো দিব্যি বেঁচে আছি - আমার চতুর্থ জীবনে

আচ্ছা! পাপপূণ্যের মাপকাঠিতে রূহটা কি ইল্লিয়্যিনে যাবে না সিজ্জীনে?


এই যে আলমের জগতের মধ্যেখানের জগৎটা!

কি কি'ই না করেছি এখানে!

পূণ্য কি আসলে কিছু কামিয়েছি? 

পাপাচারের কি কি'ই না বাকি রেখেছি!

কিসের জন্য?

অর্থের জন্য, স্বার্থের জন্য? 

আসলে কার জন্য?

এই যে পাপের পথের কামানো অর্থের পাহাড়?

সাড়ে তিন হাত অন্ধকার ঘরে কিছু কি নিয়ে যাচ্ছি?

তবে কার জন্য এ পাপের পথে দৌড়েছি?

সন্তানের জন্য?

শব হয়ে আমি সবই দেখছি

দেখছি আমার বুকের ওপর আছড়ে পড়ে তাদের কান্না

আমি জানি তারা আমাকে অনেক ভালোবাসে, অনেক মায়া করে

কিন্তু আমাকে যেতে হবে একটু পরই ঐ অন্ধকার ঘরে

বড্ড ভয় করছে,

এই যে প্রিয় সন্তানদের জন্য এত এত কিছু করেছি!

তারা কেউ কি যাবে আমার সঙ্গে?

জিজ্ঞেস করতে খুব ইচ্ছে করছে

ঐ যে স্ত্রী! কান্নায় একটু পর পর অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে!

সে যাবে?

মা এখনো বেঁচে আছেন - ওনার কান্নাও শুকিয়ে গেছে

উনি যাবেন?

কেউ তো যাবে না সঙ্গে, শুধু যাবে আমলনামা

তবে কার জন্য এ জীবনটা দৌড়েছি?


আর একটা বার তৃতীয় জীবনটা শুরু করতে পারলে

নিজেকে শুধরে নিতে পারতাম কি?

কোন জীবনই আর ফিরে আসবে না 

আকাশে বাতাসে শুধু আফসোসের দীর্ঘশ্বাস।  



#হিবিজিবি_হাবিজাবি


আফসোসের দীর্ঘশ্বাস

 - মোঃ আহসানুল হক 


১৪ এপ্রিল, ২০২৪



 

হ্যাঁ এর জয় জয়কার

 ততক্ষণ তুমি ওদের যতক্ষণ ওদের হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলিয়ে যেতে পার; 

একবার হ্যাঁ তে না এর ছাই ঢেলে দেখই না! 

তুমি কারোরই কেও না

হোক সে বাবা-মা কিংবা ভাই-ভাই-বোন অথবা স্ত্রী কিংবা সন্তান 

দূর করে দিতে কিংবা দূরে সরে যেতে  জুড়ি নেই 'না' এর

হ্যাঁ এর থেকে আপন আর কেউ নেই

 - অর্থ কিংবা সম্পর্কে; 


যত বড় বেঠিকই হোক না কেন!  

 - জী হ্যাঁ 

তুই, তুমি, আপনি সঠিক বলেছেন

যতক্ষণ আমি হ্যাঁ তে আছি,

আমি ততক্ষণ সবার আপন

আর সবাই আমারও আপন

 - যতক্ষণ আমার মুখে 'হ্যাঁ'

ঠিক বললাম কি? 


 -হ্যাঁ রে ভাই, হ্যাঁ।


#হ্যাঁ_মনের_হিবিজিবি 


হ্যাঁ এর জয় জয়কার 

 - মোঃ আহসানুল হক


৪ নভেম্বর, ২০২৪

হাসিমুখ

 একটা বয়স পর্যন্ত বাবা মায়ের কাছে সন্তান বড়ই আপন 

আবার এই আপন সন্তানটাই ধীরে ধীরে পর হতে থাকে ঘরে বউ এলে, 

খুব হঠাৎ করেই বদলে যেতে থাকে বাবা মায়ের সাথে মধুর সম্পর্কগুলো; 


একটা বয়স পর্যন্ত সন্তানের কাছে বাবা-মা বড়ই আপন 

আবার এই আপন সম্পর্কটাই একটু একটু করে পর হতে থাকে শরীরের যৌবন এলে

বাবা মায়ের সাথে দূরত্ব আরেকটু বাড়ে মনে প্রেম এলে   

তারপর সম্পর্কের নদীতে ভাটা চলে ঘরে বউ এলে, 

খুব হঠাৎ করেই বদলে যেতে থাকে বাবা মায়ের সাথে আগের মধুর সম্পর্কগুলো; 


এমনটা যে কেন হয় আমার জানা নেই 

আমি কান পেতে সংসারে  ভাঙ্গনের শব্দ শুনি,

একটা সময় খুব দুঃখ হতো

আজকাল আর হয় না, 

দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে চোখ 

ঘা খেতে খেতে শক্ত হয়ে গেছে মন

সন্তান থাকাকালীন সময়ে বাবা মায়ের কাছ থেকে ঘা খেতে খেতে,

বাবা হওয়ার পর থেকে সন্তানদের কাছ থেকে ঘা খেতে খেতে,

জীবনের চক্র ঘুরেফিরে প্রত্যেকের জীবনেই আসে; 


আজকাল কেন জানি দুঃখ গুলো আমাকে আর তেমন করে ছোঁয় না 

কিংবা হয়তো কে জানে কষ্টগুলো আরও গভীর হয়ে কামড়ে বসে 

কিন্তু আমি কষ্টগুলোকে লুকিয়ে রাখি হাসির অন্তরালে; 


আজকাল আমি সবকিছুতেই হাসি 

সুখেও হাসি দুঃখেও হাসি 

মন ভালো থাকলেও হাসি মন খারাপ থাকলেও হাসি 

মন খুশি থাকলেও হাসি চোখ কান্না করলেও হাসি 

হয়তো হেসেই উড়িয়ে দিতে চাই মনের সকল অনুভূতিগুলো 

উড়িয়ে দেয়া না গেলেও আড়াল তো করা যায়!  

সেটাই বা কম কিসে? 


তোমরা নিশ্চয়ই সাদাকালো ছবি দেখেছো 

সাদার ঠিক ওপাশেই রয়েছে কুচকুচে কালো 

আমরা সবাই সাদা দেখতে চাই, কালো তে আমাদের বড্ড ভয় 

আমরা সবাই হাসতে চাই, মনের ভেতর যতই কান্না রয়,

অনুভূতিগুলো না হয় সব আমারই থাকুক,  মানুষ না হয় আমার হাসিমুখই দেখুক।


#হিবিজিবি_আর_হাবিজাবি



হাসিমুখ

- মোঃ আহসানুল হক 



৩১ অক্টোবর, ২০২৪

প্রকৃতি ও প্রেম

 ঐ অনেক দূরে আলো নিভে যাচ্ছে

তোমরা সূর্যাস্ত বলো

আমি বলি সূর্যের ঘুম 

অনেকে বলে লালের ক্ষরণ

তারপর অন্ধকার;


ঐ যে আরও অনেক অনেক দূরে!

ঐ অস্তগামী সূর্যের কাছাকাছি! 

ওখানে পাশাপাশি দুটি মানুষ বসে আছে

ওরা কি সূর্যাস্ত দেখছে, নাকি ডুবে আছে প্রেমে? 

বড্ড অদ্ভুত লাগছে সূর্যের গায়ে দুটি ছায়া, 

প্রেমের সময়গুলো বড্ড অদ্ভুত কাটে  

চারিদিকে এত এত সৌন্দর্য 

অথচ দুজন মেতে থাকে দুজনায়

ওদের প্রকৃতি দেখার সময় কোথায়?


সূর্য কি হাসছে ওদের দেখে? 

কিংবা আকাশ!


#হিবিজিবি 


প্রকৃতি ও প্রেম  

 - মোঃ আহসানুল হক


২৭ অক্টোবর, ২০২৪

কাঁদছে আমার দেশ

 আমি জানি তুমি একটুও ভালো নেই, হে জন্মভূমি; 

কি করে ভালো থাকবে বল! 

মাত্রই না তোমার পুনর্জন্ম হলো? 

এর মাঝেই কত কিছুই না তোমাকে সইতে হলো! 

আমরা বুঝি, খুব ভালো করেই বুঝি 

কতটা দুঃখ কষ্ট আর দুর্দশার মধ্যে একটি দেশের পুনর্জন্ম হয় 

কত লাখো মানুষের চোখের জলে একটি দেশের জন্ম হয়; 


এর মধ্যেই আশেপাশের হায়েনার দলের তীব্র থাবার ভয় 

চারিদিক থেকে শকুনিরা লোলুপ দৃষ্টিতে চেয়ে রয় 

চারিদিকে সাপের দল ছোবল মারতে তক্কে তক্কে রয়

চেয়ে থাক শকুনিরা

চেয়ে থাক হায়নারা 

খুঁজুক সুযোগ সাপেরা

তোমার পাশে আছে মানব সন্তানেরা 

যারা তোমাকে নিয়ে গর্ব করে

যারা তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে  

যারা তোমাকে নিঃস্বার্থ ভালবাসে; 


আজ তোমার বড়ই দুঃসময়, 

হায়নার থাবায় ওরা গেট খুলে দিয়েছে 

চেয়ে আছে শকুনির দল খুবলে খাবে  পানিতে ভেসে যাওয়া মৃত দেহগুলো 

ছোবল মারে তারা প্রতিটা অসতর্ক মুহূর্তে

আর পৈশাচিক আনন্দ ভোগ করে পশুত্বে, 

তুমি ভেবো না, হে জন্মভূমি 

তোমার দুর্দিনে তোমার বুকে একদল মানব সন্তান দাঁড়িয়ে আছে তোমার পাশে, 

অসময় কেটে যাবে একদিন নিশ্চয়ই 

আবার তুমি ঘুরে দাঁড়াবে 

আবার আমরা চিৎকার করে গলা ফাটিয়ে বলবো

 - এই তো আমার দেশ 

 - এই আমার সোনার বাংলাদেশ।  


#হিবিজিবি_মনের_হাবিজাবি_কথা 



কাঁদছে আমার দেশ 

 - মোঃ আহসানুল হক


২২ শে অগাস্ট, ২০২৪


চাঁদের নিস্তব্ধতা

 আকাশে চাঁদের উঁকিতেই আকাশ খিলখিল, 

আজ পূর্ণিমা

আমি গহীন বনে

বনের গাছগুলোর মাথা জ্বলজ্বল করছে চাদের আলো পিছলে পড়ে 

কিছু সৌন্দর্য মন কাড়ে আর কিছু হতবিহ্বল করে 

আমি অনেকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে আছি আকাশের দিকে চেয়ে; 


মাঝে মাঝে নিস্তব্ধ বনের নিস্তব্ধতা খানখান করে দিচ্ছে কিছু রাতের পাখি 

অদ্ভুত অদ্ভুত সব ডাকে, 

আমি মনে মনে তাদের ধমক দিচ্ছি নিস্তব্ধতা ভেঙে দেয়ার দায়ে 

সবাই নিস্তব্ধতা উপভোগ করতে জানে না 

আমি নিস্তব্ধতার নিশ্চুপ প্রাণী 

আমি নির্জনতায় নিস্তব্ধতা উপভোগ করতে জানি, 

জীবনে ঠেকেই বুঝেছি নিশ্চুপ নিস্তব্ধতার চেয়ে শ্রেয় কিছু নেই

তোমাদের ঐ ইট-কাঠের হৈচৈ এর সমাজে 

আমি আমার নিজের সমাজ গড়ে নিয়েছি নিস্তব্ধ মনের ভেতরে 

কোত্থেকে জানি এক রাত-প্যাঁচা খুব কাছেই ডেকে উঠলো তারস্বরে 

এবার আমি সত্যিই বিরক্ত হয়ে প্যাঁচার পানে ধমকে উঠলাম

প্যাঁচার কিছু আসলো গেলো কি? 

আমার মৃদু ধমকে খানখান হয়ে গেলো জ্যোৎস্নার নিস্তব্ধতা 

হো হো করে উপহাসের অট্টহাসি হেসে উঠলো নিস্তব্ধ বনের নীরবতা।  


#হিবিজিবি_হিবিবিজি 


চাঁদের নিস্তব্ধতা 

- মোঃ আহসানুল হক 


২২ মে, ২০২৪

হাজারিখিল

অতীত কেনাবেচা

 মানুষের সাথেই মানুষের পরিচয়

কিছু বন্ধুত্ব কিছু প্রণয়

কিছু সম্পর্ক হারায় 

আর কিছু পরিণয়; 


আমরা অতীত মনে করি হারানো অতীতের ভাঁজে 

আমরা সম্পর্ক খুঁজি হারানো সম্পর্কের মাঝে,  

অতীত ফিরে আসে না

ফিরে পাওয়া যায় না হারানো সম্পর্ক

শুধু একাকীত্বের সময় মনে পড়ে

পুরনো সেই সম্পর্কের গল্প, 

সম্পর্ক লিপিবদ্ধ হয় কলমের আঁচরে  

আর থরে থরে দুঃখগুলো সাঁজে কবিতার ভাঁজে; 

বয়সের সাথে সাথে অনেক স্মৃতিই ম্লান হয়ে আসে

অথচ একটি দুটি হারানো সম্পর্ক মস্তিষ্কে বসে 

আঁচর কাটে অতীত, না পাওয়ার বেদনায়

মানুষ প্রেম নাম দেয়, কাগজের খাতায় 

কলম লিখে যায় অপ্রাপ্তির কিছু গল্প 

হোক না সে সম্পর্কের স্থায়িত্ব যতই অল্প, 

তোমরা লেখার মাঝে গল্প খুঁজ 

কলম আঁকে কবিতা 

পুরনো যত কথা ছিল

লেখা হয় কি সবই তা? 


কেউ গল্প লিখে কেউ কাব্য ছাপে 

কেউ কবিতা লিখে নিজেকে যাচে 

কারও লবণ কান্নায় আর কারও ঘামে  

কেউ দুঃখগুলো বেঁচে দেয় কবিতার দামে। 


#হিবিজিবি_হাবিজাবি 


অতীত কেনাবেচা 

 - মোঃ আহসানুল হক 


১২ এপ্রিল, ২০২৪ 

মানুষের মত পাখি

 কোন এক তপ্ত দুপুরে এক সবুজ পাখি 

কোত্থেকে উড়ে এসে ক্লান্ত বসে এক বটের ডালে

ডালটা মাত্র পাতা ছাড়ছিল 

সবুজ পাতা দেখে পাখিটার মন ভালো হয়ে গেলো

গাছে'রে সুধালো - আশ্রয় দেবে?


গাছ হেসে বলল - ডাল তো খালি পড়েই আছে

আমিও এখানে আছি একাই  

তুমি থাকলে কথা বলার সঙ্গী হয় - থাকবে তো?

পাখি বলল - থাকবো

গাছ মুচকি হেসে বলল - কতদিন? 

পাখি বলল - যতদিন ভালো লাগে

পাখি থেকে গেলো;


কোত্থেকে জানি একসময় পাখির সঙ্গিনী এলো 

ওরা প্রেম করে, গাছ দেখে আর হাসে

ওরা ঘর বাঁধে গাছের ডালে 

তারপর সংসার পাতে

একসময় ডিম দেয়, দিনের পর দিন ডিমে তা দেয়

বাচ্চা ফোটে, বাচ্চা বড় হয়  

তারপর কোন একটা সময় পাখির বড্ড একঘেয়ে লাগে 

গাছকে বলে মেঘ ডাকছে আমায় 

ডাকছে আকাশ, এখানে আর ভালো লাগছে না

এবার উড়াল দেব 

হয়তো সামনে আরও ভালো কিছু আছে;


গাছ মুচকি হেসে বলে - চলে যাবে?

পাখি বলে - যেতে হবে,

গাছ বলে - যাও তবে;

আবার যদি কখনো একলা হয়ে যাও

আবার যদি উড়তে উড়তে ক্লান্ত হয়ে যাও 

আবার যদি কখনো এ পথ দিয়ে উড়ে যাওয়া হয়! 

তবে একবার ফিরে এসো, দুদণ্ড আমার ডালে বসো

শুনবো তোমার উড়ে উড়ে ঘুরে বেড়ানোর গল্প,

পাখি বলল - আসবো কোন এক দিন হয়তো

গাছ হেসে বলল - এসো; 


পাখি উড়ে চলল আকাশের পানে 

নতুন ঠিকানায় সন্ধানে 

গাছ কিছুক্ষণ মন খারাপ করে রইলো

তারপর আবার অপেক্ষার পালা - নতুন কোন পাখির জন্য,

পাখি আসে, পাখি যায়

কিছু পাখি ক্ষণিকের জন্য বসে, বটের ফলে ক্ষুধা নিবারণ করে

তারপর আবার উড়ে যায়

কখনো হয়তো অচিন কোন পাখি আসে 

ডালে বসে আশ্রয় চায়, তারপর কিছু সময়ের জন্য বাসা বাঁধে 

সংসার করে, বাচ্চা হয় - তারপর উড়ে যায় নতুন গন্তব্যে

ঠিক ঐ সবুজ পাখিটার মত;


সকলেই যাওয়ার আগে বলে যায় - হয়তো আবার আসব

কথা দিয়ে কথা না রাখা মানুষের অভ্যাস, পাখিদেরও?

গাছ ভাবে - হয়তো মানুষের সংস্পর্শে এসে পাখিরাও মানুষ হয়ে গেছে

কথা দেবার সময়ও ভাবে না, রাখতে হবে তাও জানে না। 



#হিবিজিবি_হাবিজাবি



মানুষের মত পাখি

  - মোঃ আহসানুল হক 


১২ এপ্রিল, ২০২৪ 

কাড়ি কাড়ি টাকা

 ভাই আমি রোজা রেখেছি সারাদিন কাটাতে হয় অত্যন্ত সাবধানে

যেন রোজা রেখে ভুলেও একফোঁটা পানি পেটে না চলে যায় 

খাওয়া খাদ্যের তো প্রশ্নই ওঠে না, তবে ঘুষ খাই অবলীলায় 

আরে বাবা! বাজারের যে অবস্থা! বেতনের টাকায় সংসার চলে? 

টাকা জিনিষটাই বড্ড নোংরা তবুও ঐ আর কি, সংসার চালাতে;


তবে আজকাল আর আগের মত হাত দিয়ে টাকা ছুঁয়েও দেখি না 

আরে বিকাশ নাম্বার আছে না? ডিজিটাল দেশের ডিজিটাল লেনদেন

আরে নাহ! ব্যাঙ্ক একাউন্টে ট্রান্সফার করো না, ডকুমেন্ট থেকে যায়

তবে একাউন্টে ক্যাশ জমা করে রিসিটটা হোয়াটস এপে পাঠিয়ে দিও 

সময় মত ফাইল সই হয়ে যাবে, রোজাদার বলে কথা, 

আমি আবার কথার পাকা, রোজা রেখে কারও হক মারি না, 

ওহ আরেকটা কথা, আমার একাউন্ট কিন্তু ইসলামি ব্যাংকে

ঐ সব সুদের কারবারি আমি করি না;  


আমরা এক আজব জাতি!!!!!  

সুদ হারাম বলে ঘুষের টাকা রাখি ইসলামি ব্যাংকে

মানুষের হক মেরে খাই নির্দ্বিধায় 

চোগলখোরি গীবত তো হরেদরে ঘরেঘরে 

আরে ওটা একটু না করলে আমাদের মুখের আরাম হবে কি করে!

সেলুকাস মানসিকতা; 

কি বললেন ভাই? নামাজ?

আরে ভাই আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সারাদিন না খেয়ে আছি  

এটাই অনেক বেশি না? 

তবে নামাজটাও ধরে ফেলব ইন শা আল্লাহ্‌,  

আরেকটু বয়স হোক, চুল দাঁড়ি ভালমতো পাকুক 

আপনাদের ফাইলের সংখ্যা আরেকটু বাড়ুক

তবেই না ফাইভ স্টার হজ্জের প্যাকেজ কিনতে পারব!  

ভাই অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে, ফাইভ স্টারে যেতে না পারলে ইজ্জত থাকে?  


একবারে হজ্জ করেই নামাজ ধরব ভেবে রেখেছি 

দোয়া করবেন ভাই আমার জন্য

আর ফাইলটা সাইন হলেই আপনাকে মেসেজ করে দিব; 

এই যে সারাজীবন কামানো দুনিয়াবি অর্থ আর স্বার্থ! 

মালাকুল মউত যখন এসে ডাক দিয়ে বলবে, চল 

তখন সবকিছু তুচ্ছ মনে হবে না? 

পেছন ফিরে কি কিছু দেখতে পাব? 

পুরোটা জীবন কি ভেসে উঠবে চোখের সামনে?  

এই যে ঘুষের টাকায় গড়া আলিশান প্রাসাদ! 

এই যে ব্যাংকে জমানো কাড়িকাড়ি অর্থ!  

এই যে পরিবার পরিজন!  

এদের কাওকে কি নিয়ে যেতে পারব? 

অথচ কতজন কতভাবেই না কামিয়েছি ওই অর্থ  

ঐ দিন কাজে আসবে কোন?

সবাই নিজেকে প্রশ্ন করতে পারে না। 


#হিবিজিবি_ভাবনা 


কাড়ি কাড়ি টাকা 

 - মোঃ আহসানুল হক 


০৭ এপ্রিল, ২০২৪

প্রয়োজনাতিরিক্ত

 প্রয়োজনাতিরিক্ত কিংবা মাত্রাতিরিক্ত 

দুটোই বিষবৎ, আবশ্যিক পরিত্যাজ্য;  


সে চাহিদাই হোক কিংবা প্রাপ্তি

ক্ষমতা, টাকা কিংবা সম্পদ 

লোভ লালসা আর যত রিপু 

অথবা সম্পর্ক, দূর থেকে যতটুকু;

আচ্ছা সম্পর্ক? সেটা কেন কলুষিত হয়? 


একটা আছে রক্ত সম্পর্ক - বাবা-মা, সন্তান

আরেকটা সম্পর্ক আছে খুব কাছের - স্বামী স্ত্রী, 

এই সম্পর্কগুলো তো আত্মার, 

এগুলোতেও কি মাত্রা মেনে চলতে হয়? 

এত যে মাত্রার কথা বলছ? - বড্ড ভয় হয়; 


সম্পর্কেও মাত্রা আছে, আছে ধনাত্মক আছে ঋণাত্মক

ধনাত্মক সম্পর্কগুলো স্বাস্থ্যকর, মাত্রার মধ্যে যত  

ঋণাত্মক সম্পর্ক ক্ষতিকর, মাত্রা ছাড়া যত্রতত্র  

আজকাল ঘরে ঘরে ঋণাত্মক সম্পর্কের ডামাডোল 

বাবা-মা আর সন্তানের মাঝে - যখন স্বার্থ আর সম্পত্তি  

স্বামী আর স্ত্রীর মাঝে - যখন পরকীয়া সুরের ঊর্ধ্বগতি  

আত্মীয়দের মাঝে তো সারাক্ষণই - স্বার্থের ঢোল বাজে

বন্ধু-বান্ধবের মাঝে টাকা পয়সার লেনদেন - খুব বাজে;


একটা মানুষের প্রয়োজন কতটুকু? 

অন্ন বস্র বাসস্থান সচ্ছলতার পরিমাণ 

এই পরিমাণের পরিমিতিবোধ লোপ পেলেই যত গণ্ডগোল 

লোভ এসে ভর করে, বিবেকের ঘুম অন্ধকারে 

লোভের পারদ চড়ে, চাহিদার পরতের ঘরে 

আরও চাই আরও চাই রক্তে অস্থি মজ্জায় 

রাশ টানবে কি করে? - প্রাপ্তি টাকায়, বিবেক ঘুমায়

লোভ অর্থের দিকে টানে, অর্থ অনর্থ আনে

মনুষ্যত্বের অবক্ষয়! অর্থ থাকলে সব হয় 

সম্পদের পাহাড় গড়ে, মনুষ্যত্বের ঘাড়ে চড়ে 

বিবেক ঘুমাক - আমার কি?

মনুষ্যত্ব মরে যাক - আমার কি? 

আমি চাহিদার ওপর লোভ চাপিয়ে - সম্পদ গড়েছি;


আমি আজকাল প্রায়শই নিজেকে খুঁজি 

মাত্রাতিরিক্ত লোভের খাঁজে  

আমি আজকাল প্রায়শই নিজেকে খুঁজি 

প্রয়োজনাতিরিক্ত অর্থের ভাঁজে, 

আমি সম্পর্কের ভেতরের সম্পর্কগুলোকে খুঁজি 

অবহেলায় হারানো সব সম্পর্কের মাঝে 

তারপর মাঝে মাঝে বিবেক ঘুম থেকে উঠতে চাইলেই 

মাত্রাতিরিক্ত চাহিদার চাপে মনুষ্যত্ব চাপা দেই। 


#হিবিজিবি_হাবিজাবি


প্রয়োজনাতিরিক্ত

 - মোঃ আহসানুল হক 


০৫ এপ্রিল, ২০২৪

ধার করা জীবন

 এই যে সারাজীবন কামানো দুনিয়াবি অর্থ, সম্পর্ক আর স্বার্থ! 

মালাকুল মউত যখন এসে ডাক দিয়ে বলবে, চল 

তখন সবকিছু তুচ্ছ মনে হবে না? 

পেছন ফিরে কি কিছু দেখতে পাব? 

পুরোটা জীবন কি ভেসে উঠবে চোখের সামনে?  

এই যে তিলেতিলে গড়া সহায় সম্পত্তি!  

এই যে ব্যাংকে জমানো অর্থ!  

এগুলোর কোনটা কি সাথে নিয়ে যেতে পারব? 

কিংবা এই ধরো পরিবার পরিজন! আত্মীয়-স্বজন

বন্ধু-বান্ধব আর যতসব সম্পর্ক! 

এদের কাউকে কি সাথে নিয়ে যেতে পারব?

ঐ যাত্রায় কেউ কি সঙ্গী হতে রাজি হবে?


কোন একদিন আয়নাকে প্রশ্নগুলো করেছিলাম, 

আয়না কিছুক্ষণ চুপ করে ছিলো 

কি যেন ভাবছিলো......... 

অনেকক্ষণ ভেবে আমাকেই ছোট্ট দুটি প্রশ্ন করলো - 

 তুমি যেতে? অন্য কারও সঙ্গী হয়ে?

 তুমি নিয়ে যেতে পারবে কিছু, কাফনের কাপড়ের পকেটে ভরে?

আমি চুপ করে প্যাঁচার মত মুখ লুকোলাম ঘর অন্ধকার করে;


আমরা আসি একা কাঁদতে কাঁদতে

যাই একা কাঁদাতে কাঁদাতে 

মধ্যের জীবনটা মৃত্যুর কাছ থেকে ধার করা।  

ধার করা অল্প একটু জীবনে আমরা অর্থের জন্য লড়ি  

লড়ি স্বার্থের জন্য, লড়ি সম্পর্কের জন্য 

লড়ি সম্পর্ক বাঁচাতে কিংবা ভাঙতে 

কিছু সম্পর্ক জন্মসূত্রে নিয়ে আসি, আর কিছু সম্পর্ক এখানে গড়ি

কিছু হাসি খেলায়, কিছু শোকে-দুঃখে জীবনটা পাড় করি

তারপর ধার করা জীবনের সমাপ্তিতে একদিন 

টুপ করে ঘুমিয়ে যাই সাড়ে তিন-হাত ঘরে, 

সম্পর্কগুলোকে কাঁদিয়ে।  



#হিবিজিবি_হাবিজাবি 


ধার করা জীবন 

 - মোঃ আহসানুল হক 


২৮ মার্চ, ২০২৪ 

সবুজ আনন্দ

 একদিন কোন এক মনখারাপের নীলচে বিকেলে বসে ছিলাম গভীর বনে 

বনের ভেতর একটা ছোট্ট পুকুর ছিল 

জংগলে দৌড়ে সন্ধ্যা নামে

বিকেল হতে না হতেই চারিদিক কেমন যেন অন্ধকার অন্ধকার হয়ে এসেছিলো

আমি গভীর জংগলে পুকুর পাড়ে একা 

হাতে ক্যামেরা তবুও কিছু ক্লিক করতে ইচ্ছে করছিলো না;


হঠাৎ করেই দেখলাম একজোড়া প্রজাপতি

ওরা ঘুরে বেড়াচ্ছিল মনের খুশিতে ইতিউতি 

পরস্পরের সাথে ওড়া-উড়ি খেলায় ব্যস্ত 

একটা শুকনো গাছের ডালে নজর যেতেই দেখলাম ফড়িঙ দম্পতি

অন্ধকার হয়ে আসার আগেই যেন পরস্পর'কে খুলে খুলে দেখায় মত্ত

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করেই হয়তো শারীরিক প্রেম

ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কে না চায়? 


আমি লজ্জায় অন্যদিকে তাকালেও আমার ক্যামেরার চোখ ফিরছিল না 

নির্লজ্জ ক্যামেরার ক্লিক শব্দ যেন নিস্তব্ধ বনে বোম ফাটাল

প্রেমরত্ত ফড়িং-দ্বয় কি চমকে উঠেছিলো? 

কি জানি! ওরা কথা বলে না, তাই উত্তর জানা হল না 

তবে মনে হল শব্দে তাদের প্রেমের কোন ব্যাঘাত ঘটলো না 

একটু পরই দেখলাম রমণ শেষে দুজন দু'ডালে;


হঠাৎ করেই দেখলাম পুকুরে আরেক পাড়ে কি যেন সবুজ সবুজ দেখা যায়

ভালো করে তাকিয়ে দেখি পানিতে একটা সবুজ ভেলভেটের ছায়া

প্রায় অন্ধকার হয়ে আসা পুকুরের ওপাড়ে কি আছে ভালো করে দেখতেই চমক

ও কি! সত্যিই তো একজোড়া সবুজ ভেলভেট

লোকে আদর করে ডাকে 'সবুজ তাউড়া'

ওদের দেখেই খুশিতে আমার ক্যামেরা ক্লিক ক্লিক শুরু করে দিলো

মুহূর্তেই কোথায় যেন উড়ে গেলো মনখারাপের সন্ধ্যা

সবুজ আনন্দে চারিদিক কেমন যেন ঝলমল করে উঠলো

নীলচে বিকেল পরিণত হল সবুজ সন্ধ্যায়

বেশ কিচ্ছুক্ষণ সন্ধ্যার জলকেলি শেষে ফুড়ুৎ করে উড়ে গেলো ভেলভেট দম্পতি

ঘরে ফেরার সময় তাদের

পাখিদেরও ঘর আছে;


সন্ধ্যে গাঢ় রঙ ধরতেই আমি হাঁটা ধরলাম ফিরতি পথে

জংগলের ভেতর দিয়ে বেশ অনেকটা পথ হেঁটে যেতে হবে

পশু-পাখি মানুষ সবাই ঘরে ফেরে সন্ধ্যে নামলেই 

আমিও ফিরছি, এলোমেলো জংগলের পথ ধরে;

ঘরের কথা মনে হলেই মন অন্যরকম, সংসার বড্ড মায়ার 

যতই বাইরে কাটাই না কেন সন্ধ্যে হলেই ঘরের জন্য মন কেমন করে

বুকের খাঁচায় কোথায় যেন এক অদৃশ্য মায়ার টান পরিবার পরিজনের জন্য 

আমি এ টান অস্বীকার করতে পারি না  

আমার কাছে ঘর মানেই স্ত্রী পুত্র-কন্যা পরিবার, আমার কাছে ঘর মানেই সংসার  

সবাই ঘরে ফেরে, আমি ফিরি সংসারে। 


#এলোমেলো 


সবুজ আনন্দ 

 - মোঃ আহসানুল হক 


২৬ মার্চ, ২০২৪ 

এই বেশ ভালো আছি

 আমি কেন যেন একটু অন্যরকম, 

সবাই কাওকে না কাওকে ভালোবাসে

অথচ আমি ভালোবাসা বুঝি না

আমি ভালোবাসতে জানি না, 

 - তবুও কিছু একটা অনুভব বুকের ভেতর 

    কোথায় যেন আঁচর কাটে 

সম্ভবত লোকে একে মায়া বলো

তোমরা ভালোবাসো, আমি মায়া করি; 


যখন রোদ দুপুরে ঘরটা ভরে থাকে 

আমি রাত্রি দেখি জ্যোৎস্না চোখে 

যখন ছাদের ওপর বৃষ্টির টাপুর টুপুর নদী

আমি রংধনু খুঁজি চাদের টর্চ জ্বেলে 

সবুজ ভেলভেটে নীল-দাঁড়ি সুঁইচোরা একা

আমারই মত সূর্য দেখে বন্ধ চোখে, 

চোখে বন্ধ্যাত্ব এলে তবেই না কান্নার খরা 

ভালোবাসার বন্ধ্যাত্ব কেউ কেউ ঢাকে মায়া দিয়ে

মানুষ পাষাণ উপাধি দেয় নির্মম ডাকে, 

প্রিয়জনরা বলে উল্টা-মানুষ আদর করে

পাগল ডাকলে যে রেখে আসতে হয় হেমায়েতপুরে! 


মানুষ ভালোবাসা ভালোবাসে, পাষাণ নয়

মানুষ মানুষকে কাছে টানে, পাগল নয় 

আমি এই বেশ ভালো আছি, মানুষ থেকে দূরে 

তোমাদের ভাষায় পাগল হয়ে, তোমাদের থেকে  সরে; 


আমি তোমাদের মত মানুষ হতে চাই না 

আমি তোমাদের মত ভালোবাসতে চাই না

মানুষ হওয়ার চেষ্টায় যদি আমার মায়াটাই হারিয়ে যায়! 

আমি বাঁচব কি নিয়ে?  


#হিবিজিবি_হিবিবিজি 


এই বেশ ভালো আছি 

 - মোঃ আহসানুল হক 


২৪ মার্চ , ২০২৪

স্বপ্ন-সিঁড়ির অজানা ধাপ

 মানুষের চাহিদার শেষ নেই 

বিশেষ করে টাকার চাহিদা, চাহিদা সম্পদের

মানুষ প্রতিনিয়ত স্বপ্ন দেখে ধনী হওয়ার  

চাহিদা অনেক অনেক বড়লোক হওয়ার;


হাজার-পতি স্বপ্ন দেখে লাখপতি হওয়ার 

লাখপতির স্বপ্ন কোটিপতি হওয়া  

মিলিওনিয়ারের স্বপ্ন বিলিয়নিয়ার 

বিলিয়নিয়ার এর স্বপ্ন ট্রিলিয়নিয়ার 

স্বপ্নের পারদ চড়তেই থাকে স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে 

কতটা টাকা অর্জনে যে ধনী হওয়া যাবে তার পরিমাপ কে জানে?

চাহিদার পেছনে ছুটন্ত মানুষগুলোর ধনী আর হওয়া হয় না;


মানুষ ক্রমাগত স্বপ্ন দেখে ওপরে ওঠার 

অথচ কতটুকু উঠতে হবে তা কারও জানা নেই

জানা নেই কোথায় থামতে হবে 

অথচ ক্রমাগত সিঁড়ির ধাপ বাইতে থাকে 

আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন সিঁড়ি

সিঁড়ির শেষটা কারোরই দৃষ্টিগোচরে আসে না   

অথচ সিঁড়ি বাইতেই থাকে কি এক অজানা লোভের ডাকে  

সিঁড়ি বাইতে বাইতেই হাজার-পতি থেকে ট্রিলিয়নিয়ারের ঠাই হয় 

অন্ধকার ছোট্ট সাড়ে তিন হাত মাটির ঘরে; 


ধনী হওয়ার অসম প্রতিযোগিতায় ধনী আর হওয়া হয় না মানুষের 

আমাদের কালক্ষেপণ সম্পদের পেছনে, স্বপ্ন-সিঁড়ির অজানা ধাপে 

অথচ মৃত্যুর পরের জীবনটা কেউ দেখতে পেলে 

মানুষের স্বপ্নগুলো হয়তো অন্যকিছু হতো,

হতো কি?


লোভ রিপু কি অন্যকিছু হতে দিতো?


#হিবিজিবি 


স্বপ্ন-সিঁড়ির অজানা ধাপ

 - মোঃ আহসানুল হক 


২১ মার্চ, ২০২৪

তিনশত পঁয়ষট্টি দানব

 পাহাড় পাথর, পাহাড় মাটি

বন সবুজ, বন হরিৎ 

সাগর নীল, সাগর পানি 

মানুষ রক্ত হাড় চামড়া; 


পাহাড় পাথর কোথাও মাটি  

অথচ পাথর আর পাথরের কাঠিন্যে কতই না পার্থক্য! 

পার্থক্য মাটি আর মাটির রঙে 

পার্থক্য মাটি আর মাটির ধরণে

পাহাড় সবুজ, অবুঝ অবুঝ

পার্থক্য পাহাড়ের সবুজে আর গাছপালার সবুজে; 

আমি আশ্চর্য হয়ে জলরাশির দিকে তাকিয়ে থাকি

পানির রঙ কে বলতে পারে? 

অথচ পানিকে এক এক জায়গায় দেখি এক এক রূপে এক এক রঙে 

যখন ঝর্ণা থেকে নেমে আসে! - বর্ণহীন স্বচ্ছ টলটলা 

তারপর মাটি বেয়ে নামতে নামতে কিঞ্চিৎ ঘোলা ঘোলা 

নদীতে নামে প্রবল বেগে, নদী গড়ায় তীব্র স্রোতে 

রঙ বদলাতে থাকে নদীর জল - নাব্যতার সাথে সাথে 

কোথাও ঘোলা, কোথাও সবুজাভ, কোথাও নীলাভ, 

সাগরে পড়তেই জলের রঙে রঙ লাগে 

কোথাও সবুজাভ কোথাও সবুজ, কোথাও নীলাভ কোথাও নীল

কোথাও বা ফিরোজা হতে হতে সবুজাভ নীল 

সাগরের পানি রঙ বদলায় কোথাও সাগরের গভীরতায়

কোথাও প্ল্যাংটনের রঙের সাথে,

অথচ আঁজলা ভরে যে কোন জায়গা থেকে পানি নাও! 

  - রংহীন স্বচ্ছই দেখবে হাতে; 


আকাশটা বড্ড রং বদলায় - আলোর সাথে সাথে

সকালে লালচে হতে হতে সাদা হয়ে নীল

বিকেলে নীল থেকে ধুসর হতে হতে লালাভ 

কুয়াশা আর বৃষ্টির দিনে মন খারাপের ধোঁয়াটে সাদা 

সূর্যের বাতিটা নিভে গেলেই হালকা আঁধার নেমে আসে

রাতে চাঁদ বাতি জ্বললে মায়াবী সোনালী

আর চাঁদ ঘুমিয়ে থাকলে নিকষ কালোর মাঝে তারার ঝিলিক 

আচ্ছা! আকাশটা তৈরি কি দিয়ে? 

কি দিয়ে তৈরি রংধনু?


মানুষগুলোর দিকে তাকাও! 

এক একজন এক একরকম 

কারও চেহারার সাথে কারও মিল নাই

মিল নাই এক অঞ্চলের মানুষের রঙের সাথে আরেক অঞ্চলের মানুষের রঙের 

মিল নাই এক একজন মানুষের মানসিকতার সাথে অন্য আরেকজন মানুষের 

অথচ নামের এরা সবাই কিন্তু মানুষ,

কি অদ্ভুত!  তাই না?

পার্থক্য সবকিছুতেই কিছু না কিছু থাকবেই, 

'মনুষ্যত্ব' কেবল মাত্র একটা শব্দ 

শুধুমাত্র মানুষের সাথে সংশ্লিষ্ট 

তাহলে মানুষের মনুষ্যত্বে কেন এত এত পার্থক্য?  

কেন মনুষ্যত্বের বিচারে একজন মানব আরেকজন দানব? 

আমার খুব মানুষ হতে ইচ্ছে করে 

অথচ মনুষ্যত্বের খোলসে একজন দানব পুষে যাচ্ছি অহর্নিশি তিনশত পঁয়ষট্টি।


#কবিতা 


তিনশত পঁয়ষট্টি দানব 

 - মোঃ আহসানুল হক 


ফটিকছড়ি 

১৯ ফেব্রুয়ারি,  ২০২৪

সমালোচনা

 আমরা সবাই নিজেদের এক্সপোজ করতে ব্যস্ত 

ঐ যে আজকাল কি একটা টার্ম ব্যবহার করে না? 

 - শোকেস মাইসেল্ফ না কি যেন! 

এর অর্থ কি নিজেকে প্রদর্শন নাকি অন্য কিছু? 


আমরা সবাই ব্যস্ত নিজেকে প্রদর্শনে 

 - নাকি বলা উচিৎ স্বীয় স্বকীয়তা বিপণনে, 

যারা গল্প কবিতা লিখতে পারেন - তারা ব্যস্ত বই ছাপানোতে

যারা বই ছাপিয়ে ফেলেছেন - তারা ব্যস্ত বইয়ের প্রোমোশনে

যারা গান গাইতে পারেন - তারা ব্যস্ত মানুষকে গান শোনানো'তে 

যারা কবিতা আবৃত্তি করতে জানেন - তাদের চেষ্টা আবৃত্তি শোনানোর

আর যারা নৃত্য জানেন - তাদের চেষ্টা নৃত্য প্রদর্শনে, 

আর এগুলো দেখানো শোনানো পড়ানো আর বিক্রির মহরত কোথায় হয় জানেন? 


হ্যাঁ,  ঠিক ধরেছেন

তা তো ধরবেনই

এটাই এখনকার সবচেয়ে প্রচলিত মাধ্যম 

আমিও যেখানে হাবিজাবি সব উগরে দেই

বুঝলেন না? 

আরে বাবা এই যে এই ফেসবুক! 

 - আজকালকার সবচেয়ে জনপ্রিয় বিপণন মাধ্যম; 


এই যে ভাই! ঠ্যাস মেরে কথা বলছেন কেন? 

এইটুকু কেন বোঝেন না যে যাদের প্রতিভা আছে তারাই প্রতিভার বিপণন করেন

আর আমার মতো যারা বেগুন - তারা ফেসবুকে করেন ঠ্যাস মারা সমালোচনা,

তাই না? 

এটা কেন বোঝেন না যে, যাদের প্রতিভা আছে তারাই প্রতিভার প্রকাশ করবে 

 - না হলে বন্ধু বান্ধব জানবে কি করে? 

প্রতিভার প্রকাশ না থাকলে বিপণন হবে কি করে? 

বিপণন না হলে শিল্প সাহিত্যের প্রসার ঘটবে কিভাবে? 

অথচ আজকাল আপনাদের ঠ্যাস মারা সমালোচনার তুবড়ি পড়লে মনে হয় 

 - ফেসবুকে ঢোকাটাই বিড়ম্বনা; 


এই যাহ! 

আমিও কি বোকার মত সমালোচকদেরই সমালোচনা করছি?  

তাও আবার ফেসবুকে! 

আমাকে দিয়ে কিছছু হবে না। 


#হিবিজিবি 


সমালোচনা 

 - মোঃ আহসানুল হক 


১৫ জানুয়ারি,  ২০২৪

ভাবনার দোলা

 ট্রেনে উঠলেই মন কু ঝিক

রেলের পাতে রেলের চাকা ঝম ঝম ঝম ঝম __

মনে মাদল বাজে ছম ছম ছম ছম; 


আজকাল ঠিক বুঝতে পারি না খুশির মাদল বাজে না দুঃখের 

কাজের মাদল বাজে না অকাজের 

বোঝা আর না বোঝার কারণ তো আছেই.....  

 - আগে পায়ে সর্ষে নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম কাজে

আজকাল ঘুরে বেড়াই অকাজে,

ঘুরে বেড়ানোটা মনে হয় অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে 

 - কাজে কিংবা অকাজে, সেই ছোটবেলা থেকে; 


একদিন হয়তো ঘুরতে ঘুরতেই উধাও হয়ে যাব 

 - হয়তো সমান্তরাল অসীম রেলের পাতে 

   নয়তো বাসের চাকায় পিচ ঢালা পথে 

   কিংবা প্লেনে করে হারিয়ে যাব সুদূর আকাশের গায়ে

   আর নয়তো নদীপথে লঞ্চে কিংবা জাহাজে ঘুরতে ঘুরতে ডুবে যাব অথৈ পানি নিচে, 

একদিন না একদিন তো চলে যেতেই হয় সবাইকে 

ঘোরার নেশা যার রক্তে সে আর অত কিছু কি ভাবে? 

তার চেয়ে এই বেশ ভালো 

 - সমান্তরাল রেলের পাতে কু ঝিক ঝিক 

ছুটছে রেলের চাকা 

ছুটছে মন 

ছুটছি আমি 

ফিরে আসা আর না আসার ভাবনায় দুলতে দুলতে। 


#কবিতা 


ভাবনার দোলা 

 - মোঃ আহসানুল হক 


১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

বাবা-মা সন্তান

 সম্পর্ক গুলো একেকজনের সাথে একেক রকম 

যতদিন শিশু ছিলাম বাবা মায়ের কোলে 

একটু বড় হয়ে হাত বাড়াতে শিখতেই আঙ্গুল ধরেছিল একে একে ভাই বোন আত্মীয়-স্বজন 

তারপর আরেকটু বড় হতেই বাড়ানো হাতে বন্ধুবান্ধব 

বড় হতে হতে পরিচিতির গণ্ডি বাড়তেই থাকলো 

শিশু সন্তান থেকে আমি নিজেই হয়ে গেলাম কারো ভাই কারও চাচা কারও মামা;  


কৈশোর পেরিয়ে যৌবন আসতে না আসতেই আমি কোন এক প্রেমিকার প্রেমিক 

বিয়ের পিঁড়িতে বসার পর থেকে বউয়ের স্বামী 

এখন পর্যন্ত এ পদটা স্থায়ী হয়ে রয়েছে,  স্থায়ী হয়ে গিয়েছে স্বামী হিসেবে দায়িত্ব কর্তব্য, 

তারপর ঘরে একে একে সন্তান সন্ততি আসা শুরু করতেই আমি হয়ে গেলাম বাবা

বাবা ডাকটা খুব সহজ, তবে বাবা নামক কর্তব্যের জোয়ালটা অত্যন্ত ভারী 

বাবা হতে গেলে নিজেদের সাধ আহ্লাদ অনেকটাই বিসর্জন দিতে হয় 

সাধ আহ্লাদ বিসর্জন দিতে হয় মা হয়ে গেলেও 

নিজেদের পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখতে গেলে মাঝে মাঝে খুব আশ্চর্য হয়ে যাই 

 - আমিও কোন এক কালে প্রেমিক ছিলাম, সে ছিল প্রেমিকা 

 - আমিও কোন এক কালে স্বামী ছিলাম, সে ছিল স্ত্রী 

আর ছিল আমাদের নিজস্ব কিছু সময়; 


- আজ আমরা কেবলই বাবা-মা আর আমাদের ধ্যান-ধারণা সব সন্তানদের ঘিরে 

শত দুঃখ কষ্ট হাসিমুখে সয়ে 

সন্তানদের ভবিষ্যতের দিকে চেয়ে

সংসারে বাবা নামক এক মুখোশ পরা সং 

 - জোয়াল কাঁধে চলেছি; 


তবু সন্তানদের মুখে যখনই হাসি দেখি তখনই মনে হয় সং সাজা সার্থক 

আবার সাধ্যের অতীত চেষ্টাতেও যখন সন্তানদের গোমরা মুখ দেখতে হয় 

তখন মনে হয় কি দরকার ছিল বাবা হওয়ার?  

বেশ তো ভালো ছিলাম সন্তান হয়ে বাবা মায়ের কোলে; 

আচ্ছা! তোমাদেরও কি এরকম মনে হয়?  

আমি বাবাদের বলছি 

আমি মায়েদের বলছি 

সংসারে সন্তানরা বাবা-মা হওয়ার সুখ কিংবা দুঃখ কি বোঝে? 

তবে একদিন বুঝবে 

 - যেদিন তারা নিজেরা বাবা-মা হবে; 

- আজ বুঝি,  কত কষ্টই না বাবা-মাকে দিয়েছি।  


#কবিতা 


বাবা-মা সন্তান 

 - মোঃ আহসানুল হক 


৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

পলি পড়া সম্পর্কগুলো

 এক একটা সম্পর্ক এক এক রকম 

কিছু সম্পর্ক আছে রক্তের 

ওগুলো পরিবর্তন করা যায় না 

রক্তের সম্পর্ক গুলো ভালো থাকবে না খারাপ থাকবে তা অনেকটাই স্বার্থসংশ্লিষ্ট 

সম্পর্কের পারদের ওঠানামা স্বার্থের তাপমাত্রার সাথে

ওগুলো প্রত্যেকের জীবনেই কিছু না কিছু থাকবে; 


আর কিছু সম্পর্ক তৈরি করে নিতে হয় 

কিছু তৈরি করা সম্পর্ক কাচের মতই ভঙ্গুর 

কিছু পাথরের মত মজবুত 

মানুষের চলার পথে এগুলো ঢেউয়ের মতো আসে 

বেশিরভাগই বয়ে যায় আর কিছু সম্পর্কে গভীর পলি পড়ে থাকে 

আমি ক্রমাগত ঢেউয়ের ভিড়ে পলি পড়া সম্পর্ক গুলো খুঁজি

যেগুলো পাথরের মত শক্ত, লোহার চেয়ে কঠিন  

যেগুলো মনের অনেক গভীরের দাগ রেখে যায়,

আমি সেই সম্পর্ক গুলোর কথা বলছি যেগুলোতে মনের নদীতে 

গভীর স্রোত অনুভব করি আর স্রোতের সাথে বয়ে চলি; 


জীবনের রক্তের সম্পর্ক গুলো বেশিরভাগই কাঁদায় 

আর নদীর স্রোতে বয়ে আসা সম্পর্ক গুলো বেঁচে থাকার প্রেরণা যোগায় 

ঐ যে ঐ সব পলি পরা সম্পর্কগুলো,

বেশিরভাগ মানুষ এ সম্পর্ক গুলোকে মূল্যায়ন করে না 

তারা ছোটে রক্তের সম্পর্ক গুলোর পেছনে 

আঘাতের পর আঘাত খেয়েও আরো আঘাত খেতে 

আমি আঘাতে আঘাতে নিম তেতো হতে হতে কখন জানি নিজেই নিমগাছ হয়ে গেছি

আজকাল কাটলেও রক্ত বের হয় না,

তারচেয়ে হঠাৎ হঠাৎ জলে ভেসে আসা সম্পর্কগুলো 

মাঝে মাঝে মাকড়সার জালের মত এমন পেচিয়ে রাখে যে 

চেষ্টা করেও জাল ছাড়ানো যায় না 

এ সম্পর্ক গুলো হতে আমি অবশ্য জাল ছাড়াতেও চাইনা,

আমি ইতিউতি নদী জঙ্গল পাহাড় সাগর ঘুরে বেড়াই 

আর পলি পড়া সম্পর্কগুলো কুড়াই 

নাম না জানা কি সব জানি এক মায়ায় জড়াই 

বিচ্ছেদের সময় এ সম্পর্কগুলো বড্ড কাঁদায় 

আমি কাঁদতে কাঁদতেই পথ পাড়ি দেই 

নতুন কোন এক পলি পড়া সম্পর্কের খোঁজে;


সম্পর্কের চেয়ে মধুর কষ্টদায়ক সম্পর্ক আর কিছু নাই।


#কবিতা 


পলি পড়া সম্পর্কগুলো 

 - মোঃ আহসানুল হক 


৩১ জানুয়ারি , ২০২৪ 

নিউইয়র্ক