বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪

নতুন সূর্য



নতুন সূর্য
- যাযাবর জীবন

বছরটা পেরিয়ে গেল টুপ করে সূর্য ডোবার সাথে সাথে
কত কথা কত প্রেম কত স্মৃতি
ডুবে গেল সূর্যের সাথে সাথে;
পুরনোকে ভুলে নতুন দিনের আশায়
নতুন সূর্যের পানে
সবাই চেয়ে আছে;
প্রতি জানুয়ারিতে নতুন বছর আসে একবার করে
নতুন সূর্যে ঘুরে ঘুরে
প্রতি বছর নতুন নতুন মানুষ আসে বন্ধু হয়ে
জীবনে প্রেম একবারই আসে হৃদয় ঘরে?
কেও অনুভবে বুঝতে পারে,
কেও চারিদিকে খুঁজে মরে
খোঁজে না হৃদয় ঘরে।

অল্প কথায় কবিতা হয়
ভালোবাসা বুঝে নিতে হয়।



ঘুম বিলাস


ঘুম বিলাস
- যাযাবর জীবন

কিছু আগুন পেলে প্রেম পোড়াতাম
দহনে আগুনে কাটাকাটি
কিছু বরফ পেলে তোকে ঢেকে দিতাম
এত গরম সইতে পারে না প্রকৃতি;
চুমু খাব না কথা দিলাম তোকে
চুন খেয়ে ঠোঁট পুরেছে
আমায় একটু ঘুম ধার দে
স্বপ্নগুলো থাকুক সব তোরই।

মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৪

বাসনা



বাসনা
- যাযাবর জীবন

কখনো প্রেমের সূত্রপাত
কখনো প্রেমের সমাধি
শারীরিক আকর্ষণে,
কেও ত্বরিত বোঝে
কেও বা বোঝে
প্রেমের টানে শরীর বিসর্জনে;
মন ছাড়া শরীর দিয়ে কি হবে?
শরীর তো প্রতিদিনই কেনাবেচা হয়
অন্ধকারের হাটে;
বাসনা মিটে গেলে সে তো শুধুই মাংসপিণ্ড
তারপর?
ভালোবাসার খোঁজে জীবন কাটে।

সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪

বরফ বোধ


বরফ বোধ
- যাযাবর জীবন

মাঘের শীতে জমে গেছে প্রেম
কুয়াশার ভরে মোহগুলো মাটিতে
তোর স্পর্শগুলো সব ঢেলে দিয়েছি উনুনে
বরফে কি ভালোবাসার অনুভূতি থাকে?

ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপেও গরম চুমু খাওয়া যায়
তোর আর তার ঠোঁটের পার্থক্য কোথায়?
বিছানা তো গরম হতেই পারে নরম লেপের ওমে
তোর আর লেপের পার্থক্য কি শুধুই কামে?

ইদানীং তোর কথা মনে হলে বড্ড শীত লাগে
অনুভূতিগুলো তো মরে গেছে সেই কবে
তবুও শীতের রাতে তোকে জড়িয়ে থাকার বাসনা
এ তো কাম নয়
তবে কি স্পর্শের নির্ভরতা?
না কি?
?
?
?
আচ্ছা থাক.........



আমি ভালোবাসা বুঝি না।


রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৪

প্রকৃতির অংশ


প্রকৃতির অংশ
- যাযাবর জীবন

ঘুম ভেঙেছে সূর্যের
এখনো চোখ মেলেনি
শীতে কুঁকড়ে আছে সকালটা
রোদ দেখে নি
আকাশে কুয়াশা উড়ছে কিছু
কিছু ভাসছে মনে
বিষণ্ণতা প্রকৃতি জুড়ে
বিষণ্ণতার ছোঁয়া মনে
মনের রঙ বদল আকাশের রঙের সাথে সাথে
মনের ভাব বদল প্রকৃতির ভাবের সাথে সাথে;

মন কি প্রকৃতির অংশ না আমার
আজো বোঝা হলো না।

মোহের ষড়ঋতু



মোহের ষড়ঋতু
- যাযাবর জীবন

গাছের পাতাগুলো হলদেটে শীতের কুয়াশার ভরে
একটু বাতাসেই টুপ করে ঝরে পরে;
মনের ডালে মোহের পাতা বসন্তে পাতা ছাড়ে
শরতের আকাশে ওড়ে
বর্ষায় সতেজ হয়ে সবুজ রঙ ঝরে
হেমন্তে পাক ধরে
ফিকে হতে থাকে হৃদয় ঘরে
মোহের বিবর্ণ পাতা মাটিতে ঝরে
মোহকাটা হিম শীতের পরে
মোহাচ্ছন্ন মানুষগুলো ক্রমশ দূরে সরে;
প্রেমের শেকড় মাটির অনেক গভীরে
ভালোবাসার গাছ'কে প্রতিনিয়ত সবুজ সতেজ করে।



ওম



ওম
- যাযাবর জীবন

শীতের ঘন কুয়াশায় দুপুর কোথায়?
প্রহরগুলো কেটে যায় ধোঁয়াটে কুয়াশায়
ধোঁয়াটে মনে কিছু ধোঁয়াটে অনুভব
ধোঁয়াটে কুয়াশায় কাটে ধোঁয়াটে সময়;
কখন সূর্য ওঠে
কখন দুপুর হয়
কখন বিকেল গড়ায়
কখন যে সন্ধ্যে ঢলে রাতের বুকে,
প্রকৃতিকে বোঝার সাধ্য কার?
আমারও তো ঢলে পড়তে ইচ্ছে করে
তোর বুকে,
ওম নিতে
লেপমুড়ি শীতের রাতে।

শীত চুমু খায় লেপমুড়ি সকালে
রোদ চুমু খায় কুয়াশার দুপুরে
কুয়াশা চুমু খায় বিষণ্ণ বিকেলে
বিকেল ঢলে পড়ে রাতের আঁধারে
আঁধার জড়াজড়ি কুয়াশামুড়ি ঘুমে
আমার উপোষী ঠোঁট খোঁজে তোরে;
ঠোঁটেরও তো ওম দরকার
কনকনে শীতের রাতে।



মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৪

দহনের ফানুস


দহনের ফানুস
- যাযাবর জীবন

ওরে ও জীবন
আবার যদি কখনো প্রেম কড়া নাড়ে
তোর দ্বারে
বলে দিস তারে
পোড়-খাওয়া হৃদয়ের যাতনার কথা
বুঝিয়ে বারংবারে;
দহনের ফানুস কে ওড়াতে পারে?
পুড়েছে যে প্রেমে বারে বারে, বারে বারে।


সোমবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৪

জীর্ণ



জীর্ণ
- যাযাবর জীবন

জীবনের নানা পথে নানা মোড়
পথ খুঁজে পথ চলতে ক্ষয় হয় জুতোর
বুদ্ধিমানে পুরনো জুতো বদলে ফেলে
বোকারা পেরেক ঠুকে পথ চলে;

তুই সূর্যের দিকে তাকিয়ে জ্যোৎস্নায় পথ হাঁটিস
আমার পথে অন্ধকার অমাবস্যার
বহু ব্যবহারে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছি আমি
পুরনো জুতোটা বদলে ফেলে নতুন গন্তব্যে হাঁটা দে এবার।


দ্বৈত আলিঙ্গন



দ্বৈত আলিঙ্গন
- যাযাবর জীবন

হৃদয় থেকে একটু দূরে
আমার ধরাছোঁয়ার বাইরে
আনন্দের বসবাস,
হৃদয়ের খুব ভেতরে
আমার সাথে প্রতিনিয়ত
কান্নার সহবাস;
তুই কাছে থাকলেই ক্ষরণ
দূরে থাকলে দহন;
বড্ড এলোমেলো করে দেয়
কাছের ও দূরের
আনন্দ আর বেদনার
ভালোবাসা ও ঘৃণার
পাওয়া আর না পাওয়ার
ভাব সমূহের দ্বৈত আলিঙ্গন।






বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৪

খেলা



খেলা
- যাযাবর জীবন

এক্কা দোক্কা খেলার ঘরে
কানামাছি খেলে বাসন্তী ছলনা
দুটোই তো তোর খেলা
জানে সবাই তবু মন মানে না;
মনের খেলা দেহতে পৌঁছলে
বিবেক বাঁশি ফাউল বলে,
ধ্যাত! আগে বলবি না!!
প্রেম কি আর দাগ মেনে চলে?
নারী খেলায় পটু তুই
কারো হৃদয়ে লাল দাগ
কলায় পারদর্শী তুই
কারো মনে কাম ভাব;
ছলাকে কলা দেখিয়ে ঝাঁপি বন্ধ করে দিলে
বোকা প্রেমিকটা অন্ধকার খুঁজবে তোর বুকের খাঁজে
ছলনার কুঁচি যতই শক্ত বাঁধিস
প্রেমিকের চোখ ঠিকই চলে যায় খুলে যাওয়া শাড়ীর ভাঁজে।



বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৪

প্রবাদের প্রহসন


প্রবাদের প্রহসন
- যাযাবর জীবন

উদোর পিণ্ডি গরুর ঘাড়ে
চাপাতে নেই জুরি
গোস্যার ভাত কাকে ঠোকরায়
গরুর উপর চড়ি
ধূর্ত শেয়াল ঘাড় মটকায়
গোস্যাকারি ধরি;

উদোর অনেক লাভ হয়েছিল
পিণ্ডি পাবার ছলে
বারভাতারি গোস্যা বেটারে
পেটালো সবাই ঢোলে।


মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৪

মোহভঙ্গ



মোহভঙ্গ
- যাযাবর জীবন

কি আছে তোর?
মাথা ভরা টাক
অহংকার ভারি
কাঁকে ঠুকরে খাক

কি আছে তোর?
পায়ের আগে ভুঁড়ি
কুৎসিত কদাকার
দেমাগের নেই জুড়ি

কি আছে তোর?
রে মিসকিন
হাঁটা পথের যাযাবর
তোকে পোঁছে কোন মালকিন?

আজ বিজয়ের দিন
বিজয় আমার তোকে ডেকে
বিজয় তোর মোহ কেটে
কে কার এ পৃথিবীতে।



সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৪

রকম সকম



রকম সকম
- যাযাবর জীবন

জীবনটা নদীর মত
নিমিষে বয়ে যায়
যতই সামনে এগোয়
সময় ফুরায়.....

সময়টা বালির মত
নিমিষে গড়ায়
যতই শক্ত হাতে ধরি
মুঠোতে গলে যায়......

ভালোবাসা স্বপ্নের মত
সাদাকালো রয়ে যায়
যতই গাঢ় হোক
মন মেললেই হারায়.....

সম্পর্ক আঠার মত
মন পোড়ে হামেশায়
যদিও বা ছুটে যায়
হৃদয়ে রয়ে যায়......

তুই আমার মত
অভিমান উপেক্ষায়
যতই দূরে থাকিস
দুজনার মন দুজনায়।








রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৪

হিবিজিবি মন



হিবিজিবি মন
- যাযাবর জীবন

হাতের চুড়িতে মনের টুংটাং
মোহের তারে সুর হৃদয় তারে গান

কুঁচির ভাজে কাম তো জড়িয়েই রবে
বৃষনদেশে শুধু ব্যথাই ছড়াবে

সুন্দরী দেখলেই মনে প্রেম জাগতে হয়?
ভালোবাসা এতটা খেলো! বোধহয় নয়।

নোনতা



নোনতা
- যাযাবর জীবন

ভালো লাগে না ভাইরাসে আক্রান্ত
আমি
তুই
সে,
আমরা সবাই
মন ছোঁয়াচে এ ভাইরাসের
কারণ জানা নাই;
সময় নাই
অসময় নাই
অচিন দেশ থেকে
খারাপ হাওয়া আসে
মনের সাথে মেশে
দুজনে মিলে ভাসে
তারপর বাঁধ ভাঙ্গা বন্যার জল;
না হয় হলোই একটু স্বাদে নোনতা
কে আর গাল চুমে চাখে?




দোষারোপ



দোষারোপ
- যাযাবর জীবন

মুহূর্তের ফারাকে বদলে যায় মানুষ
বদলে যায় মন
বদলায় সময়
বদলে যায় জীবন;
মানুষ হয়তো বেঁচে থাকে অনেককাল
জীবন বদলানোর পর থেকে
প্রতি মুহূর্তে জীবনের সেই কোন এক অভিশপ্ত মুহূর্তকে
দোষারোপ করে করে।

কারো না কারো ওপর দোষ চাপানোতেই
আমরা মানসিক সান্ত্বনা খুঁজে বেড়াই
তা সে মানুষ হোক
ঘটনা হোক
কিংবা হোক না তুচ্ছ কোন এক মুহূর্ত।



শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৪


রুগী
- যাযাবর জীবন

কুয়াশার চাদরটা এবার উঠিয়ে নে না রে আকাশ?
শীত বুড়িটার বুঝি কাশি হয় না?
ছোঁয়াচে শীতের কবলে কুঁকড়ে আছে রাত
কুঁকড়ে আছে মানুষগুলো
কুয়াশায় ঢেকে আছে চাঁদ;
পেটে ভাত থাকলে না আগুন জ্বালার পয়সা মেলে?
দেহটাই তাদের শীতের আগুনে পুড়ছে জ্বলে
শীত বুড়িটার অত্যাচারে
ঠাণ্ডায় জমে কাঁপছে ওরা সবাই মিলে
রাস্তার ঐ মানুষগুলো রাস্তার ধারে;
আমি লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে গরমে ঘেমে
ক্রমাগত কাশতে থাকি
খুক্কুর ক্ষুক্কুর খুক
আমার বিবেকে ক্ষয়কাশ;
আমি হয়তো যক্ষা রুগী।

শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৪



শীতের ভোর
- যাযাবর জীবন

ভোর দেখেছে কে?
মাঘের সকালে,
রেল স্টেশনের প্লাটফর্মে
কিংবা রাজধানীর ফুটপাতে;
কুঁকড়ে থাকা কিছু মানুষ ও পশু
শুয়ে আছে জড়াজড়ি এক সাথে;
কারো গায়ে চটের বস্তা
কারো গায়ে শতচ্ছিন্ন চাদর
শীত বুড়িটার একটু লজ্জা কি করে
চেপে বসতে তাদের ওপর?
কিংবা আমাদের?
গায়ে চাপাতে গায়ে গরম কাপড়;
হিম শীতের সকালে
মানুষ আর পশুর জড়াজড়ি ওম নেয়া দেখে
প্লাটফর্মে কিংবা ফুটপাতে।

মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৪

অন্যরকম


অন্যরকম

- যাযাবর জীবন

একটা দিন ছিল অন্যরকম
একটা মেয়ে ছিল চাঁদের মতন
মেয়েটার চোখে ছিল কান্না জুড়ে
ছুঁয়ে দিতেই টুপ করে পড়লো ঝরে

একটা দিন ছিল মেঘে ঢাকা
একটা মেয়ে ছিল পটে আঁকা
মেয়েটার পরনে ছিল কালো শারী
ছুঁয়ে দিতেই হয়ে গেলো পূর্ণ নারী

একটা দিন ছিল তিন প্রহরের রাতের মত
একটা মেয়ের ছিল নানা রকম বায়না যত
মেয়েটার চোখে ছিল কি এক প্রেমের নেশা
ছুঁয়ে দিতেই কেটে গেলো ভালোবাসা

একটা দিন ছিল চৌপ্রহর'ই অন্যরকম
একটা মেয়ে ছিল বুঝি নি তার রকমসকম
একটা প্রেম ছিল মোহ দিয়ে পারদ ঢাকা
সময় বলে দেবে ভালোবাসা মিথ্যে না ফাঁকা।





সোমবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৪

পেন্সিলের আঁকিবুঁকি খেলা



পেন্সিলের আঁকিবুঁকি খেলা

- যাযাবর জীবন

রাত নামলেই অন্ধকার নামে
চোখেতে স্বপ্ন নামে
তুই নামিস
অশ্রু নামে;
তোর চোখে ঘুম নামে
আমার হাত কাগজে
দাঁতের ফাঁকে পেন্সিলে কামড়
প্রায়ঃশই শীষ ভাঙ্গে;
সাদা কাগজে পেন্সিলের আঁকিবুঁকি
কত যে সব কথা লেখে!
তোর কথা
আমার কথা
আমাদের প্রেমের কথা
আমাদের ভালোবাসা
অপেক্ষা
ক্ষরণ
বেদনা
কান্না;
আমি শুধুই
দেখে যাই
পড়ে যাই
কাগজ কলমের হাবিজাবি আঁকের
হিবিজিবি খেলা;
মাঝে মাঝে সুধাই পেন্সিলকে,
কে বলেছে তাকে এতসব কথা
কাগজে আঁকতে?

পেছনের বেঞ্চ থেকে মন দাঁড়িয়ে জবাব দেয়
"তোর ভালোবাসা বাঁচিয়ে রাখতে"।


শীতার্ত রাত



শীতার্ত রাত

- যাযাবর জীবন

রাস্তায় কিছু কুকুর ডাকছে
রাস্তায় কিছু বেড়াল কাঁদছে
রাস্তায় কিছু মানুষ কাঁপছে
মাঘের শীত দাঁত বসিয়েছে;
রাস্তার কুকুর রাস্তায় থাকে
রাস্তার বেড়াল পথের ধারে
রাস্তার মানুষ পলিথিন মাথায়
বেশী ঠান্ডা লাগলে
এরা সবাই আগুন তাপায়
আর নয়তো কিছু জমে মরে যায়,
কুকুর
বেড়াল
আর মানুষগুলো;

শীতবুড়ি আসবেই ঠান্ডা বয়ে নিয়ে মাথায়
রাস্তার কুকুর
বেড়াল
আর মানুষগুলোর মধ্যে পার্থক্য কোথায়?

গরম কাপরে আপাদমস্তক ঢেকে
মাফলারে মাথা মুড়ে
রাতের রাস্তায় হেঁটে যেতে যেতে
নিজেকে কেমন জানি কুকুর কুকুর লাগে;
তোমাদেরই বলছি,
হ্যাঁ ভদ্র মনুষ্য সমাজ
ঘেউ ঘেউ না করে তোমাদের ভাষায়
আমি তোমাদেরই বলছি,
যদি তোমাদের বিবেক জাগে।








তুই-আমি আর আবোল-তাবোল


তুই-আমি আর আবোল-তাবোল
- যাযাবর জীবন

কেন রে তুই এমন
যখন ইচ্ছে যেমন
প্রেমের কথায় মুখ ভেংচি
আবার ভালো'তো বাসিস তেমন;

ইচ্ছে হলেই যখন তখন
ওড়াস স্বপ্ন ঘুড়ি
তোর স্বপ্নে ভেসে গিয়ে
বাইতে হয় তরী;

তোর কথাতে অনেক ওজন
আমার কথা ফাঁকা
তোর পথে'তে না হাঁটলে
পথ'কে বলিস বাঁকা;

তোর কথাতে ঝড় ওঠে
পাহাড় নড়ে চরে
আমার কথা ব্যঙ্গের মাথা
গাঙ্গে গিয়ে পরে;

তুই করলেই প্রেম হয়
আমি করলে কি?
তোর আমার সম্পর্ক
বুঝতে পারি নি।

এমন কেন হবে
তোর কথাই সব রবে
আমার কথা কান্না হয়ে
জলে ভেসে যাবে।



রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৪

বিবেকের ঢাকনা



বিবেকের ঢাকনা
- যাযাবর জীবন

মাঘের পেরেক ঠুকে দিয়েছে
পায়ের পাতায়
শরীর তো কাঁপবেই শীতে
আমি আর তুই না হয় ঠোঁটে ঠোঁটে ওম নেব
লেপের তলায় শুয়ে
আরেকটু ঠান্ডা পড়লে না হয় আরো ঘন হয়ে
ঢুকে যাব আমরা দেহের ভেতর দেহ নিয়ে;

জানালা দিয়ে দেখব না আমরা
ল্যাম্পপোস্টের তলার ছালামুড়ি দেয়া
মানুষগুলোর দিকে চেয়ে
পথের কুকুরও কিছু আছে তাদের পাশে
শীতে কুঁই কুঁই হয়ে
ওম নিচ্ছে একসাথে মানুষ আর কুকুরে
পরস্পর জড়িয়ে ধরে শুয়ে;

দেখব না আমি দেখব না
দেখব না এসব মাখামাখি জানালা দিয়ে চেয়ে;
যদি বিবেক কথা বলে ওঠে?
তার থেকে চল মাথার ওপর লেপমুড়ি দিয়ে
কাপড় খুলি
তোর দেহে আমার ওম
রমণে রমণে আনন্দম;
শীত তো আসবেই প্রতি মাঘ মাসে।




খিদা



খিদা
- যাযাবর জীবন

ইদানীং রুচি বদলে গেছে আমাদের
বাসার খাবারে পেট ভরলেও
ভরে না মন
টাকার বদলে সেলুলয়েড কার্ড
এখনকার বিনিময় মাধ্যম
কি এসে যায় দামে
হোক না কিছু বেশি কিংবা কম।

ইদানীং রেস্টুরেন্টগুলোতেও আইটেমের বাহার
পদে পদ
নানা রকম বাহারি খাবার পদ
বিপণন পলিসিতে বলা হয় একশত পদ
পিঁয়াজ
লবন
কাঁচামরিচ
লাল-মরিচ
গোলমরিচ
এগুলোও নাকি শত পদের এক একটি পদ,
টাকার গরম আমাদের পকেটে
দৌড়-ছুট প্রতিযোগিতা
নিত্য নতুন খাবারেতে
না হয় হলোই একদিন
একটু বেশি খেয়ে বদনা দৌড়ের বিপদ;
শতপদ কি আর খাওয়া যায়?
পেটের খিদা থাক বা না থাক
আমাদের চোখের খিদা অনেক
কমে হয় না কোন কিছুতেই
না পরায়
না খাওয়ায়
না টাকায়।

আমাদের শরীরতো একটাই
অথচ আলমিরাতে কাপড়ের বাহার
যেন দোকান দিয়ে বসা যায়
আরে মূর্খ মানব!
ছতর ঢাকতে তোর কয়টা কাপড় লাগে?

আমাদের পেট তো একটাই
খাবার টেবিলে বাটির বাহার
যেন রেস্টুরেন্ট দিয়ে বসেছে সবাই
আরে চোখ-রাক্ষস
এক পেটে তোর কতটা খাবার ঢোকে?

আরে জীবনতো একটাই
তবুও টাকার নেশায় সব ছাড়ে
বাবা মা
ভাই বোন
আত্মীয় স্বজন
যেন টাকাই জীবন টাকাই মরণ;
আরে মরে গেলে ব্যাঙ্ক ভরা টাকাগুলো
রেখে আসিস'রে মাটির ঘরে
ওপরওয়ালার কাছ থেকে পরকালের সওদা করে নেব
যদি সেলুলয়েড কার্ড না চলে।







শনিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৪

পণ্য



পণ্য

- যাযাবর জীবন

পণ্য সবই
বস্তু বা অবস্তু
পণ্য সবাই
মানুষ বা পশু;
টাকায় সব যায় কেনা
হাঁড়ি কুঁড়ি থালা বাসন সোনা দানা
খাবার কেনা যায় হরেক রকমারি
দোকানে সাজানো সারিসারি
ক্ষুধা কেনা যায় কি?
টাকায় কেনা যায়
সুখ দুঃখ কান্না হাসি
দৈহিক প্রেম কিংবা দেহ যার যা খুশি
কেনা যায় নর
কেনা যায় নারী
মন কেনা যায় কি?


শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৪

স্বপ্ন-বিলাস



স্বপ্ন-বিলাস
- যাযাবর জীবন

সারা শরীরে দুষ্ট ক্ষত ছড়িয়ে পড়ে
প্রেম ভাইরাস আক্রমণে
ভ্রান্ত নর নারী বালির ঘর বাধে
স্বপ্নালু চোখে মনের কোনে;
মাথার ওপর বাস্তবতার ঢেউ আছড়ে পড়তেই
বালির ঘর ধুলোতে মেশে
পেট-টানের ঝাঁ ঝাঁ রোদ উঠলেই
এন্টিবায়োটিক ডোজ প্রেমের ভাইরাসে;
মন-টানের প্রেম-জ্বর ধাঁ করে বরফ।
অভাবের সংসারে ভালোবাসার ঠাঁই কোথায়?
চুমু'তে কি আর পেট ভরে?
ক্ষুধার কাছে পরাজিত
আমি
তুই
আর আমাদের ভালোবাসা,
প্রেম-জ্বর তো সেই কবেই সেরে গেছে!

এখন খুব মাঝে মাঝে স্বপ্ন-বিলাসে নস্টালজিয়া
"কোন একদিন প্রেম করেছিলাম আমরা";
পাশ বালিশটা জড়িয়ে ধরে
জিবে ঠোঁট চেটে ঘুমিয়ে পড়ি।



রবিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৪

অগস্ত্য যাত্রা



অগস্ত্য যাত্রা
- যাযাবর জীবন

পথ সুনির্দিষ্ট
আসা এবং যাওয়ার
ধরিত্রীর বুকে এলোমেলো পায়ে আঁকাবাঁকা পথে হাঁটা
কিছু সময়ের জন্য
তারপর অগস্ত্য যাত্রা অন্যভূবনের পথে
অজানার দেশে;
সবাই জানে
কেও মানে
কেও মনকে অন্ধকারে রাখে,
হঠাৎ চলে যাওয়ার সময় এলে
হতভম্ব চেয়ে থাকে;
যাবার কালে কারো মুখে আল্লাহ্‌ রসুলের নাম আসে
কেও সেই সৌভাগ্য থেকেও বঞ্চিত
দুনিয়াদারি বেছে নিয়েছিল যারা নিজ হাতে;
সুনির্দিষ্ট পথে চলে যায় সবাই
অচেনার দেশে
ডাক এলে
মুহূর্তের ব্যবধানে;

এত বড়াই কিসের রে, হে মূর্খ মানব?

কোন একদিন



কোন একদিন

- যাযাবর জীবন

একদিন
কোন একদিন
ঠিক তোকে দেখার দিন
আমার আমিত্বের মৃত্যু সেদিন
তারপর থেকে তোর মাঝে নতুন আমি;
ভাগ্যিস সেদিন
দেখা হয়েছিল তোর সাথে
তাইতো আজো প্রেম আছে
তুই আছিস আমি আছি
ভালোবাসা আছে;
আবার কোন একদিন
এমনি ভাবে
দেখা হবেই হবে
তোর সাথে;
আমি জানি
ঠিক জানি,
একদিন
আবার কোন একদিন।


বন্ধুত্বের বলিদান



বন্ধুত্বের বলিদান

- যাযাবর জীবন

মনে আছে সেদিনের সেই সোনালী সন্ধ্যা?
এমন তো কথা ছিল না
কথা ছিল সেদিন আড্ডা আর গল্পে
রাতকে ভোরে টেনে নেয়া
কথা ছিল তোর আর আমার দুজনের গল্প
গান গাওয়ার কথা ছিল দুজনে মিলে অল্প
ঝালমুড়ি আর চিপসের ঠোঙ্গায় সময় ওড়ানো
কোকের বোতলে বাঁশির সুর
আরো কত কিছু ছিল সে রাতের স্বপ্ন;
আসলে হয় না
আসলে ছেলে আর মেয়ের বন্ধুত্ব হয় না
শরীরের ছোঁয়া পেলেই শরীর কথা বলে
ঠোঁটের ছোঁয়ায় ঠোঁট
কামনার ধোঁয়ায় অসংলগ্ন বিবেক
তারপর মনে থাকে না কে কার ভেতরে
বন্ধুত্বের ঠাই হয় বিছানার চাদরে;
রমণ ক্লান্তি শেষে হয়তো অনুতাপ কিছু
তারপর দুজনার চলার পথ দুদিকে
মনের মাঝে কিছু দুঃসহ স্মৃতি
হয়তো অনেকদিন ধরে করে পিছু।



হে নারী


হে নারী
- যাযাবর জীবন

নারী তুমি কন্যা
তুমি জায়া
তুমিই জননী;
তোমার স্পর্শে
কান্না গলে হাসি হয়
অন্ধকার আলো দেখে
দুঃখগুলো উড়ে যায় খুশির ডানায়;
নারী তুমি
কন্যা হয়ে মমতাময়ী
জায়া হয়ে জীবন সঙ্গিনী
জননী হয়ে সর্বংসহা
সন্তানের অমঙ্গলে প্রয়োজনে রনাঙ্গীনি;

নারী তুমি প্রেমিকা,
তুমি ছুঁয়ে দিতেই
মেঘ গলে বৃষ্টি ঝরে
কুয়াশায় ভিজে শীত নামে
মন গলে প্রেম নামে
চাঁদের মাঝে জ্যোৎস্না দেখে
কবিতা কথা বলে
জীবন হয়ে ওঠে রঙিন।

নারী তুমি ছলনাময়ী
তোমার জন্যই রাত্রি
তোমার জন্য অন্ধকার
লোনা হয় চোখের জল
মনে বেদনার কোলাহল
সংসারে ভাঙন
অশান্তির জীবন।

হে জননী, মানুষ হয়ে তোমারই কোলে জন্মেছিলাম
হে প্রেমিকা, তুমি ছুঁয়ে দিতেই প্রেমে ভেসেছিলাম
হে জায়া, তুমি জড়িয়ে ধরতেই আমি পুরুষ হলাম
হে কন্যা, তোমার জন্যই সকল মমতা নিয়ে পিতা হলাম;

এত রূপে রূপবতী
এত নাম, সবই তো তোমারই
তবুও কেন মাঝে মাঝে বেশ্যার রূপ ধর, হে নারী?

তুমি হাস
তুমিই কাঁদ
তুমি গড়
তুমিই ভাঙ
ইচ্ছেমত রূপ বদলাও
পুরুষের সংসারে;
হে নারী, তোমারে কে পড়তে পারে?


বুধবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৪

ভালোবাসার রঙ



ভালোবাসার রঙ
- যাযাবর জীবন


সবাই কড়া নাড়ে ভালোবাসার দরজায়
কেও ভালোবাসা নিয়ে
দরজার ওপাশে অপেক্ষায়
কেওবা বেদনা বিলায়;
সবাই হাত বাড়ায় ভালোবাসায়
চাইলেই কি হাত ধরা যায়?
বেদনার কত রঙ মিশে আছে সেথায়।


ভালোবাসার অনুভব



ভালোবাসার অনুভব
- যাযাবর জীবন

সেই কত দিন কত মাস
কত বছর
কত যুগ
তোর সাথে গাঁটছড়া;
কালের গায়েও বটের ঝুরি নেমেছে
তবুও তুই কিন্তু তেমনি, আজো আমার চোখে
ঠিক যেমনটি দেখেছিলাম তোকে প্রথম ষোলোতে;
সময় বয়ে যায়
অনুভবগুলো রয়ে যায়
নির্ভরতা ও ভালোবাসার।

তুই না থাকলে সেই কবেই হারিয়ে যেতাম আমি
সময়ের স্রোতে।

রবিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৪

সুখ আর অসুখ


সুখ আর অসুখ
- যাযাবর জীবন

সুখের কিছু না কিছু অসুখ লেগেই থাকে
কিছু কিছু মানুষের মনে,
তার মধ্যে তুই একজন
বানানো অসুখে পড়ে থাকিস দিবারাত্রি
মনের ঘরের কোণে;
ভালোবাসায় কিছু না কিছু খাঁদ থেকেই যায়
কিছু কিছু মানুষের মনে,
তার মধ্যে আমি একজন
ভালোবাসা, মোহ আর মমতার মাঝে
এক চাঁদ ফারাক আমার প্রেমে।

তুই আমায় ভালোবাসিস
সেটা তোর অসুখ
আমি তোকে স্নেহ করি
সেটা আমার সুখ।

জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি এক একজনের এক একরকম
জীবনে অর্জন কারো বেশী কারো বা কম।


শনিবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৪

রঙ বদল



রঙ বদল
- যাযাবর জীবন

রাত বদলায় প্রহরের সাথে সাথে
আঁধার বদলায় চাঁদের সাথে সাথে
আমিও বদলে নিয়েছি নিজেকে
তোর সাথে সাথে;
তোর ভালোবাসায় ছিলাম সবুজ
ঘৃণায় হয়েছি বেগুনী
অভিমানে লাল
দুঃখে ধুসর
বেদনায় নীল;
তারপর সময়ের নদীতে অনেক জোয়ার ভাটা
সময় বদলের পালা দেখা হলো অনেক,
রঙ বদলের খেলায় ক্লান্ত হতে হতে
গিরগিটির খোলসটাই ঝেড়ে ফেলে দিয়েছি;
এখন আমি অমাবস্যার মত কালো।



বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৪

মাটির কাণ্ড


মাটির কাণ্ড

- যাযাবর জীবন

পূবাকাশে প্রেমের সূর্য উঠতে না উঠতেই
অভিমানের পারদ মাথার ওপর
পশ্চিমাকাশে বুনো রাগের টর্নেডো জমা হয় খুব সহসাই
দক্ষিণ দিক থেকে ধেয়ে আসা ঘৃণার ঝাপটায়
পশ্চিম মুখ করে
উত্তরদিকে মাথা দিনে অন্ধকার ঘরে ঠাঁই;
এখানে বড্ড আরাম
প্রেম নেই
অভিমান নেই
রাগ নেই
দুঃখ নেই
অনুভূতিগুলোকে অন্যরকম পাই;
শরীরের ওপর বাঁশের ঠেক দেওয়া
ঝুরঝুরে মাটিগুলো ঝরে পরতেই
শরীরটা হয়ে গেলো মাটি
আমি হয়ে গেলাম নাই;

মাটির সৃষ্টি মাটির দেহ
মাটির ওপর সুখ দুঃখ প্রেম বিরহ,
মাটির দেহ অনুভূতিহীন মাটির নীচে
মাটিতে মিশে মাটিতে অবশেষে;

মাটির কারিগর মাটির খেলা দেখে
আকাশের ওপর বসে
মাটির দেহের কর্মকাণ্ড দেখে
মুচকি মুচকি হাসে।


অনুভব


অনুভব
- যাযাবর জীবন

এই তো সেদিন;
যখন আমরা খুব কাছাকাছি ছিলাম
এই ধর আমি তোর বুকের ভেতর, অন্ধকার হয়ে;
তুই আমার মনের ঘরে, আলো জ্বালিয়ে;
ঠিক তখনই হঠাৎ করেই বৃষ্টি নামল অঝোর ধারায়
সেদিনের মাঘের শীতে কুকুর বেড়াল বৃষ্টিতে ভিজে
তুই কাঁপছিলি থরথর শীতে,
আমি তোকে জড়িয়ে ধরতেই তুই মেঘ হয়ে গেলি
মুঠোর ভেতর পড়ে রইলো কিছু ভেজা পেঁজা তুলো
হাত দুটি আমার মুখে বুলিয়ে নিতেই চোখের নদীতে বন্যা;
ঝাপসা চোখ মেলে তাকাতেই চারিদিক অন্ধকার
তুই মিলিয়ে গেলি ভোরের স্বপ্ন হয়ে
রেখে গেলি কিছু ভালোবাসার অনুভব;
অন্ধকারে মানুষ হয়েও তাইতো এখনো জ্যোৎস্না দেখি।



লিলুয়া বাতাস


লিলুয়া বাতাস
- যাযাবর জীবন

প্রেমের বাতাস বয়ে যায়
দিনে আর রাতে
আকাশ আর মাটিতে,
কেও দেখে
কেও অনুভব করে
কারো বাস অন্ধকারে;
কেও গরম বোধ করে
কারো ঠাণ্ডা লাগে
প্রেমের বাতাস বয়ে চলে বসন্ত সমীরণে;
কেও গা জুড়ায় বসন্ত বাতাস মনে করে
কেও শরতের মেঘে ভেসে চলে
কেও গা উদলা রাখে গরম বোধে
শীতের হাওয়ার কাঁপুনিতে
কেও বন্দী রাখে নিজেকে ঘরের কোণে;
প্রেমের বাতাসের তাতে কি এসে যায়?
বইতে বইতে নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে মানবের দিকে তাকায়
তারপর নিজের মত বয়ে যায় নিজের রাস্তায়।

সুখ সুখ কষ্টগুলো লিলুয়া বাতাস
দুঃখ দুঃখ সুখগুলো বাতাসে ভেসে বেড়ায়
সুখ বিলাসী দুঃখ ওড়ায়
দুঃখ বিলাসী দুঃখ কুড়ায়
বাতাস লিলুয়া হোক আর প্রেমের হোক
দুঃখ কাঁদে তার রাস্তায়
সুখ হাসে দাঁড়িয়ে তার যায়গায়;
সুখ আর দুঃখ মিলে করুণার দৃষ্টিতে
মানবের দিকে চায়
সুখী হতে গিয়ে বোকা মানুষগুলো
দুঃখ বিলাসে ভেসে যায়।

বুধবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৪

কুকুর মানব


কুকুর মানব
- যাযাবর জীবন

কুকুরের জিহ্বায় ওৎ পেতে বসে থাকি,
রিপুর লালা ঝরতে থাকে ক্রমাগত;
লোভ অর্থের
লোভ স্বার্থের
লোভ কামের
উন্মত্ত ক্রোধে ছিন্নভিন্ন করে দেয়ার জিঘাংসা মনের,
শুধু কুকুরের প্রভুভক্তিটুকু অনুপস্থিত আমার মাঝে
যে থালাতেই খাই
সে থালাই ফুটো করে যাই,
ওহে, ওহে
আমি দানব নই; মানব।

মাঝে মাঝে ভাবি
মানুষগুলোর জিহ্বা কুকুরের মত
মুখ থেকে বের হয়ে থাকলে
বড্ড ভালো হতো;
এক এক মানবের এক এক রঙের জিহ্বা,
জিহ্বায় এক এক রিপুর এক এক রঙ;

মানুষগুলো হয়তো বেঁচে যেত অমানুষের ধোঁকা থেকে।


মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৪

নির্বোধ অভিমান



নির্বোধ অভিমান
- যাযাবর জীবন

চোখ ধাঁধানো সূর্যের আলোতেও কেও কেও অন্ধকার দেখে;
প্রেমিকার বুকের বাসি বকুল ঘ্রাণ
মধ্য দুপুরেও রাতের নেশা জাগায় প্রেমিকের মনে
স্বপ্নের ঘোরে ঠোঁট চুমে রক্তাক্ত প্রেমিক নিজে নিজে
অভিমানী প্রেম শামুকের খোলে;
অস্তগামী লাল সূর্যের পানে ডানা ঝাপটে উড়ে যায় সাদা বালিহাঁস
অভিমানের পালক ভেসে যায় ভাটির টানে
সাগর-নদীর সঙ্গমস্থলে
ঘোলা চোখে নদীর দু-পাড়ে বসে অস্পষ্ট সূর্যাস্ত দেখে প্রেমিক প্রেমিকা
ভালোবাসা কাঁদে অভিমানের সিন্দুকে
সাগরে ফোঁটায় ফোঁটায় নোনাজল বাড়ে;
শিকারি গাংচিল ছোঁ মেরে মাছ তুলে নেয় ঠোঁটের ডগায়
পালক থেকে লবণ জল ঝেড়ে ফেলে ডানা মেলে আকাশে,
প্রেম কিংবা নির্বোধ অভিমানে তার কি আসে যায়?
গৃহস্থের উঠানের ছড়ানো ধান, ধানশালিকে খুঁটে খায়।






সোমবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৪

ভালোবাসার ভাষা


ভালোবাসার ভাষা
- যাযাবর জীবন

যে ভাষাতেই ভালোবাসার কথা বলা হোক
স্পর্শের আকুলতা বড্ড প্রবল;
প্রথমে একটু চোখে দেখাদেখি
তারপর হাত ছোঁয়াছুঁয়ি
একটু পাশে বসা
তারপর চুমু
চুমুতে আদর
আদরে কাম
কামে রমণ
ভালোবাসা তুঙ্গে।

ভালোবাসার ভাষা কি?
বিছানা?

ভালোবাসাহীন রমণ পশুতেও করে
ভালোবাসতে মানুষের বিছানা লাগে।


রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৪

অস্থির সময়



অস্থির সময়
- যাযাবর জীবন

সকালের কুয়াশার ডানায় ভর দিয়ে সূর্য উঁকি দিতে না দিতেই
দুপুর চড়ে বসে সময়ের ঘোড়ায়
তপ্ত রোদের ভাপ পিঠে পড়তে না পড়তেই
বিষণ্ণ জানালার পাশে বিকেলের নরম রোদ গড়ায়;
সময়ের পিঠে চড়ে দৌড়ে চলে অস্থির সময়
এক একটা দিন শেষ হয় চোখের পলকে
আমি হাঁটি হাঁটি পা পা এগোই
অন্তহীন যাত্রার দেশে;
ভাবনার পিঠে চড়ে বসে অলীক কল্পনা
ছলনার পিঠে ছলনাময়ী চাঁদ
স্বপ্নে ছলনাময়ী নারী,
প্রায়শই চিমটি কেটে অনুভব করতে হয়
এখনো জীবিত আছি।


শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৪

ভালোবাসার খোঁজ


ভালোবাসার খোঁজ
- যাযাবর জীবন

কেও ভালোবাসা খোঁজে
কেও ভালোবাসার মানুষ খোঁজে
সম্ভব আর অসম্ভব সব স্বপ্নের ভাঁজে;
খড়ের গাঁদায় খুঁজলেই কি মেলে সুঁই?
সিগারেটের ধোঁয়ায় ওড়ে চিন্তা শুধুই
আর দহনের কলমের ডগায় কবিতার কঙ্কাল;
ভালোবাসা শুধুই কাব্যে মেলে
অথবা আষাঢ়ে গল্পে
কিংবা সস্তাদরের কবিতায়।

আমরা ভালোবেসে আর অথবা না বেসে বেঁচে থাকি
আমরা ভালোবাসা আর ভালো না বাসার মাঝে বাস করি
আর প্রতিনিয়ত ভালোবাসার নামে দহন খুঁড়ি
আদতে আমরা কেও কারো জন্য নই
ভালোবাসা নামক অলীক কল্পনা শুধুই কাব্যে গড়ি।


আড়াল


আড়াল
- যাযাবর জীবন

আয়নার সামনের আমি আর পেছনের আমিতে
যোজন যোজন ফারাক,
ফারাক চিন্তা চেতনার
ফারাক ভালোবাসার
ফারাক তোর আর আমার;

অন্ধকারের আমি'কে কেন সামনে টেনে আনতে চাস?
কিছু কিছু চেহারা মুখোশে ঢেকে থাকাই ভালো;
আড়ালের আমি'কে সামনের আমির বড্ড ভয়
পেছনের আমি অন্ধকারের চেয়েও কালো।

মুখোশ খুলে গেলে সইতে পারবি না
রাতের চুমুর তৃষ্ণা চা'য়ে মেটে না।



শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৪

শূন্যতা


শূন্যতা
- যাযাবর জীবন

হিসেবে আমি বরাবরই বড্ড কাঁচা;
জীবনের শূন্যগুলো গুনতে গিয়ে
হাতের কড়ায় শূন্য খুঁজে পাই না,
অথচ পুরো জীবনটাই ছেয়ে আছে শূন্যতায়;
আমি শূন্য হয়ে বসে
শূন্য হাতে শূন্য গুনছি;
শূন্যতা থেকে শূন্য ছেঁকে
আলাদা করব কি ভাবে?

তুই তোর হিসেব বুঝে নিয়েছিস কড়ায় গণ্ডায়
শূন্যগুলো সব আমার ভাগে।



বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৪

স্বপ্ন



স্বপ্ন
- যাযাবর জীবন

প্রজাপতির ডানার ভরে পুরনো মনের রাস্তায়
নতুন প্রেমের বাঁক যদিওবা আসে
নির্মম বাস্তবতা, পাতাঝরা শীতের চাবুক ভরে
আঘাত করবেই বিবর্ণ করে দিতে;
টর্নেডো থেমে যাবার পর লণ্ডভণ্ড জীবন
বানভাসি সম্পর্কগুলো ধুঁকে ধুঁকে চড়ে গিয়ে ঠেকে
চাতকের তৃষ্ণায় তৃষিত কাক
ঠোঁট ডুবায় লবন জলে;
সময়ের সাথে কোথায় উড়ে যায় প্রজাপতি
কোথায় ডুবে যায় মন
কোথায় ভেসে যায় প্রেম
কোথায় বা ভালোবাসার স্বপ্ন?
ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখতে কার না ভালো লাগে?
চোখ মেললেই
জীবন সংগ্রামে
তুই
আমি
চারিপাশের সমাজ
আমাদের সংসার
আর নির্মম পরিহাসের প্রাত্যহিক জীবন।

কে বলে প্রেম মহান?
আমি দেখেছি প্রেমে শূন্যতা
শূন্যতায় দহন
দহনে আঁচর
কাগজে কলম;
নাই বা হলো কবিতা
তবুও তো ক্ষরণের কালিতে লেখা
লাল রঙে কিছু ভালোবাসার কথা।

বুধবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৪

নির্ঘুম


নির্ঘুম
- যাযাবর জীবন

নির্ঘুম রাত্রি, অন্ধকার চারিদিক
কোথায় জ্যোৎস্নার বাস?
কোথায় জোনাক?
কোথায় বা চাঁদ?

বোধ বুদ্ধিহীন ভালোবাসার অনুভব
প্রেমেতে বুদ্ধিনাশ
দহনে জীবন্মৃত
পড়ে থাকে যেন লাশ।

ঘুমের ওপারে স্বপ্ন
ভূবনের ওপারে তোর বাস
হাত বাড়ালেই শূন্য
তবুও হৃদয়ে মিলনের আশ।

ছোঁয়ার আগেই ফুরিয়ে যায় স্বপ্ন
ধরার আগে তুই
শূন্যের মাঝে শূন্য হয়ে আমি
সারারাত জেগে রই।





মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৪

তৃষ্ণা


তৃষ্ণা
- যাযাবর জীবন

তোকে দেখি না
অনেক দিন হয়ে গেছে;
চৈত্রের খরা লেগেছে দুটি চোখে
আকণ্ঠ তৃষা দেহমাটিতে
চাতক চোখ কোথায় না খুঁজে বেড়ায় তোকে?
তুই একবার দেখা দিয়ে গেলে
চৌচির মাটিতে
হয়তো আবার দূর্বা জন্মাবে,
হৃদয়ের ঘর্ষণে আকাশে বজ্রপাত না হলেও
নিশ্চিত বৃষ্টি নামবেই চোখের কোল বেয়ে;
কত দিন হয়ে গেছে
দেখা হয় নি তোর সাথে;
তোকে একবার বড্ড দেখতে ইচ্ছে করছে
চোখের আলো নিভে যাবার আগে।


রবিবার, ২ নভেম্বর, ২০১৪

আমরা এখন


আমরা এখন
- যাযাবর জীবন

তুই ভালোবাসার কথা বলতেই
সূর্যটা ডুবে গেল
আমি ভালোবাসার ডাক শুনতেই
অমাবস্যা ধেয়ে এলো;
প্রেমের কথা
তোর কিংবা
আমার
দুজনের কারোরই সয় না;
ভালোবাসার চুমুতে কতবার রক্তাক্ত হয়েছি
তুই আর
আমি
দুজনেই।

এখন আমরা
দুজন দু-ভুবনে,
তাই হয়তো আকাশে সূর্য হাসে
দিনে সোনালী রৌদ্র,
সূর্য মুখ লুকোলেই আকাশেতে চাঁদ ওঠে
রাতে জ্যোৎস্নার বান,
পাখি গান গায়
নিশ্চিন্ত আপন মনে;
কি দরকার আছে বল
নষ্ট ভালোবাসার বাসর সাজিয়ে
প্রকৃতিকে কষ্ট দিয়ে?
তার থেকে
এই তো বেশ ভালো আছি
তুই
আমি
দুজনে
দু-ভুবনে।

যখনই তোর কথা মনে পড়বে
না হয় কিছু সময়ের জন্য
ডেকে নেব তোকে
আমার কল্পলোকে,
আর মাঝে মাঝে ছন্দহীন কিছু শব্দ সাজিয়ে
তোকে নিয়ে আঁকিবুঁকি খেলবো
কাগজে কলমে
কবিতার আদলে।


শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৪

ভুল


ভুল
- যাযাবর জীবন

আজ খুব ভোর বেলায়
যখন সূর্যেরো ঘুম ভাঙ্গে নাই
আমার পা চলে গিয়েছিল হেঁটে হেঁটে
তোর বাড়ির রাস্তায়;
প্রাতঃভ্রমণ?
নাহ, ঠিক তাও না
কেমন যেন ঘোরের মাঝে
দম দেওয়া পুতুলের মত, পায়ে পায়ে;
তোর বাড়ির সামনে দাঁড়াতেই
চোখ চলে গিয়েছিল বারান্দায়
খালি বারান্দাটা দেখে মন কেমন কেমন,
মনের মাঝে সেই সেদিনের তপ্ত দুপুরের স্মৃতি
ঝাঁপিয়ে চলে এলো খুব সহসায়
সেদিনের সেই ভুল চোখের ওপর
যখন তখন নেচে বেড়ায়
আমি অপলক চেয়ে দেখি অসহায়;
তোর ভুল ছিল আমায় কাছে ডাকা
আমার ভুল ছিল তোর কাছে যাওয়া
আমাদের ভুল ছিল দুজনার এক হওয়া
খেসারত গুনছি দুজন আজ
দু-ভুবনে
বিচ্ছিন্ন হয়ে;

এখন হাত দেখলেই বড্ড ভয় পাই
যদি আবার কেও হাত বাড়ায়?
যদি আবার চলে যাই একই ভুলের দোরগোড়ায়?
তার থেকে এই ভালো
তুই
আমি
আর আমাদের ভুলগুলো
আর মাঝে মাঝে স্মৃতির জাবর কাটা।









একা একা



একা একা
- যাযাবর জীবন

এ আমি কোথায় চলে এলাম?
এ কেমন তর জীবন?
এখানে দিন রাতের পার্থক্য বুঝি না
কখন সূর্য ওঠে ভোর হয়
কখন ডুবে গিয়ে সন্ধ্যা নামে
কখন চাঁদ হাসে আকাশের কোলে
কিছুই বুঝি না;
এখানে সব কেমন যেন ঘোলা ঘোলা
অনেক দিন হয়ে গেলো কারো সাথে কথা হয় না
অনেক দিন হয়ে গেলো চাঁদ দেখা হয় না
অনেক দিন হয়ে গেলো রাত জাগা হয় না
অনেক দিন হয়ে গেলো ভালো করে ঘুমও হয় না
ইদানীং কেমন যেন ঘুম আর জাগরণের মাঝামাঝি
কেটে যাচ্ছে দিন আর রাত্রি
কেমন এক ঘোরের ঘোরে;
আজ বড্ড রাত জাগতে ইচ্ছে করেছে
আজ বড্ড চাঁদ দেখতে ইচ্ছে করছে
আজ কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে কোনো মানুষের সাথে
যেন তেন একজন মানুষ হলেই হয়
যে কথা বলবে আমার সাথে;
ইদানীং মানুষগুলো জানি কেমন হয়ে গেছে
সামনে দিয়ে চলে যায়
যেন দেখেও দেখে না
কোন কথা তো বলেই না
ভদ্রতা জ্ঞান হারিয়েছে নাকি সবাই মিলে?
এই যে ভাই একটু তাকান না এদিকে
ও ভাই!
হ্যাঁ আপনাকেই বলছি
এই যে আমি এখানে,
নাহ্
অন্য সবার মত ইনিও দেখলেন না আমায়।

আমি একজন মানুষ খুঁজছি
একটু কথা বলার তরে
একা একা আমার যে বড্ড দম বন্ধ লাগে
এই সাড়ে তিন হাত মাটির ঘরে।




সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৪

ভোরের স্বপ্নে



ভোরের স্বপ্নে
- যাযাবর জীবন

ভোরটাই আজ অন্যরকম
তুই মাথার পাশে বসতেই
পাখির কিচিরমিচিরে ভৈরবী সুর
আজ রবি সেজেছে পূব আকাশে
কুসুম লাল বিশাল থালায়
স্বর্গ থেকে আসা গা জুড়ানো হিমেল বাতাস
তোর আঁচলের দোলায়
কপাল চুমেছিলি কি?

এই যাহ্‌!
ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো তোকে ধরতে না ধরতেই
আবার কবে আসবি ভোরের স্বপ্নে?




শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৪

জীবনের ঘূর্ণন


জীবনের ঘূর্ণন
- যাযাবর জীবন

আচ্ছা, ঠিক আছে
আজ তবে এইটুকুই থাক;
কাল আবার না হয় পাখির ডানার ভরে
নতুন করে ভোর হবে
আবার ভালোবাসব নতুন করে
আবার না হয় তপ্ত রবি মাথায় করে দুপুর গড়াবে
ভাটার টানে পাল তুলে বিকেল ধেয়ে যাবে
অস্তগামী সূর্যের পানে
ভালোবাসার গুনগুন গানে,
পাখিদের কলকাকলিতে নেমে আসবে সন্ধ্যে
তারপর আবার নতুন একটি অন্ধকার রাত
আবার মন খারাপ
আবার অনুযোগ আবার অভিমান
আবার নতুন করে বাঁধব না হয় বিষণ্ণ কিছু গান;
আজ না হয় এইটুকুই থাক
পুরনো অনুযোগের অভিমান ভরা রাত।

ক্রমাগত বাঘবন্দি খেলায় আজ আমি ক্লান্ত
অনুযোগের বাক্স-পেটরাগুলোও উপচে পড়েছে আজ
আজ না হয় এইটুকুই থাক;
তারপর আবার না হয় কালকে আসবে নতুন প্রভাত
নতুন করে ভালোবাসতে
নতুন ভাবে মত্ত হতে প্রেমে
নতুন করে আবিষ্কার দুজন দুজনে
তারপর আবার নতুন অনুযোগের পাহাড়ে
নতুন অভিমানের চারাগাছ
এভাবেই প্রতিদিন অঙ্কুরে মৃত্যু নতুন নতুন প্রেমের আশ
তারপর নতুন নতুন দীর্ঘশ্বাস;
দিন তো কেটে যাচ্ছেই হাসি আনন্দে
রাত্রি বিষণ্ণতার ভারে
তুই
আমি আর আমাদের
নিত্য নতুন প্রেম
তুই
আমি আর তোর
নিত্য নতুন অভিমান
চাঁদ সূর্যের মতই
প্রকৃতির দান।




বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৪

চাঁদের কপালে চন্দ্রবিন্দু



চাঁদের কপালে চন্দ্রবিন্দু
- যাযাবর জীবন

তোর কথায় তোর মুখে
তোর লেখায় তোর হাতে
আগুনের স্ফুলিঙ্গ;
বরফ গলা পানি গড়িয়ে পড়ুক
ঠান্ডা হতে ধরণী।

তোর বানানো দুঃখের সাগরে
ঢেউ উঠুক এলোমেলো
এলোচুল উড়ুক উড়ুক
আকাশে চাঁদ উঁকি
চাঁদের কপালে ভালোবাসা, চন্দ্রবিন্দু।

অনির্ধারিত দিনক্ষণ মেপে ভালোবাসা হয় না
নির্ধারিত পথের শেষে নেই কোন হাতছানি
তারচেয়ে ভাল
তোর শরীরে ও মননে চন্দ্রচ্ছটা;
যদি জ্যোৎস্নারাত তবে প্রেম
যদি অমাবস্যা তবে বিরহ
এভাবেই কেটে যায় ভালোবাসার প্রহরগুলো
সুখ
দুঃখ
হাসি
আনন্দ
কান্না
আর বেদনার কোলাজ।

তুই কর জ্যোৎস্না স্নান
আমি নিজেই অন্ধকারের গান।



মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৪

এখনো তুই ষোড়শী


এখনো তুই ষোড়শী
- যাযাবর জীবন

চায়ের কাপে চামচের টুংটাং
কিংবা তোর হাতে চুড়ির টুংটাং
দুটোই আমার কাছে গান

টিনের চালে বৃষ্টির রিমঝিম
আর তোর পায়ে নূপুরের রিমঝিম
দুটোই তো আমার গানের তান

সাগরের জলরাশি, জোয়ার ভাটার টান
আর তোর চোখে বয়ে যাওয়া অভিমানের বান
দুটোরই স্বাদ তো'রে লবন

তোকে দেখে ভাবুক না লোকে যা ইচ্ছে
বয়স্কা, প্রৌঢ়া কিংবা হেলে পড়া যৌবন,
আমার চোখে এখনো তুই সেই প্রথম দিনের
কিশোরী ষোড়শী, চির নবীনা,
এখনো তোকে দেখতেই ডামাডোল বাজিয়ে
মনেতে প্রেমের পদার্পণ;

প্রেম পাত্র একই আছে এখনো
কানায় কানায় পূর্ণ প্রেম সরোবর
ভালোবাসার পাত্র একই রকম টই টুম্বর
চুমুকে চুমুকে পিয়ে যাই তোকে প্রতিদিন
দিন আর রাত্রির অষ্টপ্রহর।


প্রতিকূল জীবন


প্রতিকূল জীবন
- যাযাবর জীবন

বাতাসের গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে কে?
কিংবা
স্রোতের?

বুদ্ধিমানে পাল তোলে বাতাসের অনুকূলে;

কেও কেও বৈঠা বায় স্রোতের প্রতিকুলে
কাওকে হেঁটে যেতে হয় বন্ধুর পথ ধরে;

মরণের খুব পাশাপাশি হেঁটে চলেছে জীবন,
সমান্তরালে;

আমি ক্রমাগত বিপরীত পথ চলায়,
ডুবে যেতে যেতে ভেসে ওঠার চেষ্টায়
জীবনের পথ পরে।

সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

চাঁদনি পাগল



চাঁদনি পাগল
- যাযাবর জীবন

তোর বুকেতেই দেখেছি আমি উথাল প্রেমের ঢেউ
চুপি চুপি দেখেছি আমি আর দেখেনি কেউ

মধ্যরাতে দেখেছি আমি সূর্য প্রেমের ঢেউ
তোর চোখেতেই ছিল শুধু আর দেখেনি কেউ

দেখেছি আমি তোর চোখেতে অহংকারের ঢেউ
তোকে চেয়ে হাত বাড়াতেই পুড়িয়ে দিল কেউ

লক্ষ তারায় খুঁজি আমি একটি চাঁদের ঢেউ
আমার মত চাঁদনি পাগল চাঁদ খোঁজে'নি কেউ।



বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

ক্রমাগত


ক্রমাগত

- যাযাবর জীবন

ভ্রান্ত প্রেমিক প্রেমিকা
পথভ্রষ্ট অস্থির ভ্রান্ত প্রেমে
হেঁটে চলে ভ্রান্ত পথে,
প্রেম কথা বলে।

প্রেমের প্রারম্ভ বড্ড মধুর
ঠোঁটে ঠোঁট অস্থির চুমুর
সুযোগ খোঁজে অস্থির কামে
প্রহর বয়ে যায় অস্থির প্রেমে;
তারপর?
একসময় হেঁটে চলে যে যার পথে
খুব অস্থির হয়ে দুজন দুদিকে
এতটুকু মতের গরমিল হলে;
একজন বিচ্ছেদের কবিতা লেখে
একজন মিছে রাত জাগে
কিছুদিন ধরে,
দুজনায় বড্ড অস্থির সময় পার করে।

তারপর?
আবার বেল পাকে
গাছ থেকে টুপ করে
বেল পড়ে;
বেলতলায় আবারো অস্থির প্রেমের
ক্রমাগত ঘোরাঘুরি
বারেবারে বারেবারে।

প্রেম পাকে
প্রেম ঝরে,
প্রেমিকের জন্মই হয়েছে
প্রেমে পরার তরে।




বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

স্পর্শে চেনা


স্পর্শে চেনা

- যাযাবর জীবন

বেশিরভাগ স্পর্শ কামের
বন্ধু আর বান্ধবী
প্রেমিক আর প্রেমিকা
চেনা আর অচেনা, ছেলে আর মেয়েতে;
স্পর্শগুলো আলাদা করা কঠিন
কামের আর ভরসার।

কিছু স্পর্শ শুধুই ভরসার
স্বামী আর স্ত্রী
বাবা-মা আর সন্তান
ছোঁয়া মাত্রই স্পর্শগুলো আলাদা চেনা যায়
পুরোটাই আদর আর ভরসার।

তোকে ছুঁয়ে থাকি
শয়নে-স্বপনে কিংবা জাগরণে
দিন-রাত মনে মনে;
তোকে ছুঁয়ে থাকার স্পর্শ,
কিসের?
বড্ড জানতে ইচ্ছে করে।




মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

অন্যভূবনের অন্যঘর



অন্যভূবনের অন্যঘর
- যাযাবর জীবন

ঘরটা অন্ধকার
অনুভবে অন্যরকম;
কারো জন্য শান্তি
কেও পায় অশান্তি
সম্পূর্ণ অচেনা অনুভব
অন্যরকম
অন্যভূবনে।

ওখানে একলাই যেতে হয়
কারো সাথে নয়
ওখানে অসীম অন্ধকার
আপাত: চোখে দেখার
আলো হয়তো আছে সেখানে
অন্যরকম, অন্যভূবনে
এখান থেকে আঁধার লাগে
ওখানে নাকি বাতি জ্বলে
অন্যরকম
অন্যভূবনে।

ওখানে যেতেই হয়
ইচ্ছে বা অনিচ্ছাতে নয়;
কেও অপেক্ষা করে ডাক আসার
কেও ভয়ে থাকে ডাক শোনার;
ডাক আসবেই,
আজ
কাল
কিংবা
পরশু;
যেতেই হবে সবাইকে সেখানে
অচেনা এক
অন্য অনুভবের
অন্যভূবনে।



সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

স্বপ্ন



স্বপ্ন
- যাযাবর জীবন

রাতঘুমেতে স্বপ্ন কুঁড়াই
স্বপ্ন মালা গেঁথে যাই
দুপুরঘুমে স্বপ্ন উড়াই
সূর্যালোকে পোড়াই তাই;
চোখের ভেতর স্বপ্ন ওড়ে
মনের ভেতর স্বপ্ন পোড়ে
স্বপ্ন ওড়াই স্বপ্ন পোড়াই
মুঠো ভরা প্রেমের ছাই;

মন বাড়িয়ে তোকে ধরি
ধরতে গেলেই স্বপ্ন নাই।


সাধ



সাধ
- যাযাবর জীবন

এখন আর কোনো পার্থক্য বুঝি না
সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা কিংবা রাত্রির;
সূর্যের সাথে সম্পর্কের সুতো ছিঁড়ে গেছে
কোথায় যেন সময় ঘড়ির
চাঁদের সাথে সম্পর্ক জুড়ে গেছে
কোথায় যেন আমার দেহ ঘড়ির;
এখন চোখ খুললেই দিন আমার
চোখ বুঝলেই রাত্রি
ঘড়ির কাঁটায় সওয়ার হয়
প্রহরগুলো যাত্রী;
টিক টিক টিক টিক
দেহ ঘড়ির কাঁটা,
সদর্পে এগিয়ে চলেছে
বন্ধ হওয়ার পথে;
আজ, কাল বা পরশু
কি যায় আসে?
মনে বড় সাধ জাগে
বন্ধ হয় যেন ঘড়ি
কোন এক চাঁদনি রাতে
কথা বলতে বলতে চাঁদের সাথে।

রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

বদলাবদলি



বদলাবদলি

- যাযাবর জীবন

ভোরটা ভরা পাখির ডাকে
সূর্য উঁকি গাছের ওপর
সকাল ভরা ঘুম চোখেতে
রৌদ্র যখন মাথার ওপর;
দুপুর ভরা আলসেমিতে
ভাতের থালায় কাক বসে খায়
বিকেল ভরা আনন্দেতে
খেলার মাঠে সময় গড়ায়;
সন্ধ্যে হলেই একাকীত্ব
গড়িয়ে ঢোকে মনের ঘরে
রাত্রি আসে মন খারাপের
ডুবিয়ে দিতে অন্ধকারে।

তুই আমাকে তোর রাত্রিটা দে
বদলে আমার বিকেলটা নে;
অন্ধকার আমারই থাক
চাঁদনি তোকে দিলাম
ভালোবাসা সব তোরই জন্য
ক্ষরণগুলো আমি নিলাম।




অনন্যোপায় সময়


অনন্যোপায় সময়

- যাযাবর জীবন

যদি কখনো হারিয়ে যাই
যদি কখনো হারিয়ে যেতেই হয়
ভেবে নিস
আমি ছিলেম অনন্যোপায়

যদি কখনো থেমে যাই
যদি কখনো থেমে যেতেই হয়
ভেবে নিস
পথটাই আমাদের নয়

তবুও জীবন ছিল
ভালোবাসা ছিল
তুই ছিলি
আমি ছিলেম

শুধু সময়টাই আমাদের নয়।

শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

ঘুমদুপুরে স্বপ্ন


ঘুমদুপুরে স্বপ্ন
- যাযাবর জীবন

ঘুমদুপুরে স্বপ্ন ঘুমিয়ে
ঢুলুঢুলু চোখে পরশ বুলিয়ে
স্বপ্ন এসেছিল তোকে নিয়ে
আমি ছিলেম ঘুমঘুম হয়ে
একলা ঘরে একলা খাটে
একলা দুপুরে স্বপ্ন লয়ে;
চোখ মেলতেই
তিতলি ডানায়
দুপুর ঘুমের স্বপ্ন উড়ে যায়
সূর্যটা বারে বারে স্বপ্ন পোড়ায়।

ঘুমদুপুরটা স্বপ্ন দেখেছিল
আমি ছিলেম গভীর ঘুমে
তুই এসেছিলি দুপুরের স্বপ্নে
রয়ে গিয়েছিস ঘুমচোখ চুমে।



শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

প্রেম নেই


প্রেম নেই
- যাযাবর জীবন

ডাকিছিস কেন রে রাতের আঁধারে
জোছনা ডুবিয়া গেলে
ভালোবাসার মানুষ দেখিতে হয় নাকি রে
বারে বারে টর্চ জ্বেলে;
জলের গভীরে লোনাপ্রেম টান
ভালোবাসা ডুবিয়া গেলে
ক্ষরণে ক্ষরণে অনেক কাঁদিছি
প্রেম তলিয়াছে অতলে।

সবুজ পাহাড়ে ডাকে না প্রেম
জলকেলি ভুলিছে প্রেমের বুনোহাঁস
নীল আকাশে পাখা মেলে না আর
প্রেমডানা ভাঙা বালিহাঁস।



বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

সমাপ্তি


সমাপ্তি
- যাযাবর জীবন

মেঘের ওপর বাড়ি তোর
মেঘের ওপর ঘর
চাঁদের সাথে খেলিস তুই
চাঁদ সওদাগর;
মাটির দেশের মানুষ আমি
মাটির সাথেই বাস
মাটির ডাকে যখন তখন
মাটির ঘরের আশ।



অব্যক্ত


অব্যক্ত
- যাযাবর জীবন

কিছু না কিছু কথা রয়েই যায়
কাওকে না বলা কিছু কথা
খুব ভেতরে মনের অগোচরে;
হাজার পাওয়ার ভিরেও
কিছু অতৃপ্তি রয়েই যায়
খুব গভীরে মনের ভেতরে;
অব্যক্ত কিছু চাওয়া
থেকেই যায়
মনে মনে, মনের ঘরে;
তারপর একসময়
সময়ই ফুরিয়ে আসে
চোখের নিমিষে
মাটির ডাকে;
সকল অব্যক্ত কথামালা
অতৃপ্তি আর
মনের যত কামনা বাসনাগুলো
ঘুমিয়ে পড়ে চুপ করে
মাটির দেহের সাথে
মাটির ঘরে।

মাটিরে মাটি ডাকে
তোরা কাঁদিস কেন?



দূরত্ব


দূরত্ব
- যাযাবর জীবন

কাল রাতেও চাঁদ হেসেছিল আকাশে
কাল রাতেও স্বপ্ন এসেছিল দুটি ঘুমচোখে
এসেছিলি তুই স্বপ্নের আবেশে
অনুভবে ভালবেসে;
আগে তোকে স্পর্শ করলেই
সারা মুখে মুচকি হাসি আলো বিলাতো
ঘুমে কিংবা জাগরণে,
ইদানীং তোকে জড়িয়ে ধরলেও
মুখে কেমন বিরক্ত ভাব দেখি
ঘুমে কিংবা জাগরণে;
স্পর্শ একই আছে
একই আছি আমি
ভালবাসাও আছে সেই একই রকম;
তবে কি দেখার ভুল?
নাকি বদলেছে সময়
আর বদলে গেছিস তুই
বদলেছে তোর ভালবাসার ধরণ!

এখনো তোকে ছুঁয়ে থাকতে ইচ্ছে করে আমার
সেই প্রথম দিনের মতোই
মনে মনে অনুভবে
তবুও কোথায় যেন একটা অস্পষ্ট আড়াল
একটা ছায়া খুঁজে পাই মনের ঘরে
ঠিক ভাল করে বুঝি না;
হয়তো বোঝার ভুল আমারই
কিংবা সময়ের কিংবা চাঁদের
আর নয়তো রাতের অথবা স্বপ্নের;

তোর আর আমার মাঝের দূরত্ব তো মাত্র
"এক ঘুম স্বপ্ন"।


সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

চাঁদের সাথে কথোপকথন


চাঁদের সাথে কথোপকথন
- যাযাবর জীবন

মধ্যাকাশে মধ্যরাতে চাঁদের পূর্ণ তিথিতে
চাঁদনি হাসে
জ্যোৎস্না ভাসে
মেঘের খেলা, আকাশেতে;
লুকোচুরি খেলি চাঁদ আর আমি
প্রতি জ্যোৎস্না রাতে মেঘের সাথে
কখনো মেঘ জেতে
কখনো চাঁদ
জ্যোৎস্নার দিকে বাড়ানো আমার
পরাজিত হাত;

মানুষ চাঁদ ধরতে পারে না
আমার চাঁদনি ধরা হয় না
তবুও কথা বলা চাঁদের সাথে
প্রতি চাঁদনি রাতে
তোকে মনে করে।



পাথর



পাথর
- যাযাবর জীবন

একসময় জীবনে বন্ধুর আগমনে আনন্দিত হতাম
বন্ধু অভিমানে মুখ ফেরালে একসময় দুঃখ পেতাম,
কোন এক সময়;
যখন হৃদয় ছিল রক্ত মাংসে গড়া।

তারপর সময় গড়ানোর সাথে সাথে জীবন গড়ালো
বন্ধুত্ব পেঁচিয়ে যেতে লাগলো স্বার্থের নাগপাশে
বাস্তবতার নির্মম আঘাতগুলো সয়ে যেতে যেতে
হৃদয় শক্ত হয়ে যেতে লাগলো
ক্রমাগত আঘাতে আঘাতে একসময় পাথরে পরিণত হলো।

আজ আর কোন আঘাতেই কষ্ট পাই না;
বন্ধুত্বের দরজাটা খোলা রেখেছি এখনো,
যখন যার ইচ্ছে ঘরে ঢুকে পড়ছে
আবার ইচ্ছে ফুঁড়লেই চলে যাচ্ছে
পাথর, অনুভূতিহীন চেয়ে থাকে;
কারো আসা আর যাওয়াতে
পাথরের কি যায় আসে?




শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

দেহ ঘড়ি


দেহ ঘড়ি
- যাযাবর জীবন

আমি অতীতে বাস করতাম
যদিও অতীত ভুলে গেছি
আমি বর্তমানে বাস করি
কিন্তু বর্তমান মানি না
আমি ভবিষ্যতে যাবই না
আমার কোন ভবিষ্যৎই নেই;

দেখা হয় নি কখনোই আমার
সময় পরিব্রাজকের সাথে
সময়ের কাঁটা তাই আমার ঘড়িতে
স্থির হয়ে আছে,
তবুও কোথায় জানি দেহ ঘড়ির কাঁটাটা
ঘুরেছে ঠিকই
টিক টিক টিক টিক
বলে গেছে ক্রমাগত কানে কানে
ফুরলো সময়
ফুরলো সময়;
মনকে চোখ ঠেরে বলেছি
এত তাড়াতাড়ি?
শুরুই তো করলাম না জীবনটা এখনো;
এখনই শেষ হবে কেন?

ঐ তো পড়ে আছে মাটির দেহ
অবহেলায় মাটিতে
টিক টিক টিক টিক
দেহ ঘড়ির কাঁটাটা
থেমে যেতেই।



শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

আমি, তুই ও সে


আমি, তুই ও সে
- যাযাবর জীবন

তপ্ত বালুতে পেতে রেখেছিস তপ্ত বিছানা
তপ্ত কড়াইয়ে ঢালছিস তপ্ত তেল
আমাকে কি বরফ মনে হয়?

আমি হিমবাহতে শয্যা পাতি বরফ বিছানায়
তোর তপ্ত প্রেমে হিমবাহ গলে যায়
তোকে আমার বড্ড ভয়।

আমি রক্তমাংসে গড়া মানুষ
ঝলসে গিয়েছি তপ্ত প্রেমে
হিম প্রেমে গিয়েছি জমে
মনুষ্য প্রেমের আঙিনা পেড়িয়ে
কেওর দিয়ে ফেলেছি মনের ঘরে
সেই কবেই,
চাবি খুঁজছে চাঁদনি আজো;

আমি তপ্ত বরফে ডুবেছি
তার হিম প্রেমে।


বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

প্রেমের চোরাবালি


প্রেমের চোরাবালি
- যাযাবর জীবন

প্রেম উড়ে মন পুড়ে
প্রেম ভাসে মন ডুবে
অস্থির পাগল মন
হৃদয় লাগে খালি খালি
এ নয় পিরীতি
প্রেমের চোরাবালি;
কেও প্রেম করে
কেও ডুবে মরে
যারা প্রেম বোঝে, তারা থাকে দূরে
বুঝেও প্রেম করে মরার তরে পুড়ে
কিছু পাখি ডানা পোড়ায় মনের হরষে
প্রেমের আকাশে ভাবাবেগে ভেসে ভেসে
ডানা পুড়ে প্রেম মরে
জীবন কাটে জ্বলে পুড়ে।

বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

প্রেমের স্বাদ


প্রেমের স্বাদ
- যাযাবর জীবন

চাঁদের রাতে ভালোবাসার রংধনু
সাজানো থরে থরে
ফোঁটায় ফোঁটায় চাঁদনি চুইয়ে
রঙিন আলো তোর ঘরে;
অমাবস্যার বৃষ্টি সারারাত ঝরে
আমার টিনের চালে
ভালোবাসার রঙে সাজিয়েছি নিজেকে
সেজেছি বিষের নীলে।

তপ্ত রাতে পুড়ছিস তুই
প্রেমিকের গরম কামে
দুপুরের প্রেম গলছে রাতে
তোর অশ্রু ঘামে;

জিহ্বায় লোনা স্বাদ আমাকেই নিতে হয়
বারবার, বারবার;
ঘামের
রক্তের
আর
প্রেমের কান্নার।


রঙের মেলা


রঙের মেলা
- যাযাবর জীবন

আমরা শূন্যে উড়তে চেয়েছিলাম
অনেক আশে
নানা রঙের স্বপ্নে ভেসে
সাদাকালো ভালোবেসে;
তারপর কোথা থেকে যেন
এক ঝাঁক রঙের মেলা
রং ছড়ালো
আমাদের প্রেমের আকাশে।

সেদিন ঘুমন্ত প্রিয়ার চোখে মেলতেই
অভিমানের লাল আবির;
সন্দেহের কালো থাবায়
হাতের মুঠো ভরে উঠলো সাদা শূন্যতায়
আর ধুসর বেদনায় নীল হলাম আমি,
এখন ক্ষরণের লাল পুরোটা আকাশ জুড়ে;

তোকে একটা আস্ত প্রেমের মাঠ দিতে চেয়েছিলাম
অথচ সবুজ রঙটা কেন জানি আমাদের মোটেই সইলো না।



মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

স্বপ্নে তুই, স্বপ্নে প্রেম



স্বপ্নে তুই, স্বপ্নে প্রেম
- যাযাবর জীবন

চাঁদের কাছে চাই
চাঁদনি হাসে, রাত্রি কাঁদে;
সূর্যের দেশে যাই
চামড়া পোড়ে, আলো হাসে;
প্রেমের কাছে যাই
আকাশছোঁয়া ভাবনারা মাথায় নাচে
হৃদয় কাঁপে;
ছুঁতে না ছুঁতেই তুই হারিয়ে যাস
অন্ধকার রাতে
হৃদয় কাঁদে,
কাঁদে অন্ধকারে ভালোবাসায় গান।

তোর কাছে বসি,
স্বপ্নেরা হাসে;
হাত বাড়ালেই ভালোবাসা
স্পর্শে তুই,
কাঁচের জলে টুংটাং সেতার প্রেম
স্বপ্নে তুই আমার হতেই
আমি তোর হলাম
যেভাবেই হোক, তোকে তো পেলাম!
ভালোবাসার একটুখানি স্পর্শ মনে মাখলাম;
তারপর,
ঘুম ভাংতেই হাহাকার জাগানিয়া গান।

তোর আর আমার মাঝের দূরত্ব
এক রাত স্বপ্ন।


রবিবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৪

স্বপ্নে স্বপ্নে তুই


স্বপ্নে স্বপ্নে তুই
- যাযাবর জীবন

নদীপারের একলা গাছটা সেজেছে সবুজে আজ
আমাদেরই জন্য
ডালপালা মেলে দিয়েছে তোর আব্রু ঢাকতে
জানে সে, আমি তোর প্রেমে বন্য;
গাছের ছায়ায় তুই আর আমি
পাশ দিয়ে পায়ে হাটা মেঠো পথ
আকাশে মেঘ, ঝিরিঝিরি বৃষ্টি
সামনে বয়ে চলেছে নদী
আর চারিদিকে সবুজ ঘাসের গালিচা বেছানো রথ;
তুই গাছে হেলান দিয়ে
আমি তোর কোলে
তুই, আমি, বৃষ্টি আর নদীর কুলকুল ধ্বনি
নিস্তব্ধতায় কান পেতে
ভালোবাসার গুনগুন শুনি।

চোখ বুজে দিবাস্বপ্ন দেখতে কার না ভালো লাগে?
হোক না অবাস্তব কিংবা অলীক
না হয় অল্প কিছু সময়ের জন্যই
তুই আর আমি
স্বপ্নে স্বপ্নে দুজনে;
তারপর না হয় চোখ মেলে আবার যে যার পথে
বাস্তব কষাঘাতে।





খাদ্য কিনিও ক্ষুধার লাগি


খাদ্য কিনিও ক্ষুধার লাগি
- যাযাবর জীবন

ফুল স্পীডে ফ্যান
বড্ড গরম
উন্মত্ত শীৎকার
কাম চরম;
কে ঐ মেয়েটা? পাশে শুয়ে,
কারো না কারো তো মেয়ে
ঘুমিয়ে আছে ক্লান্ত হয়ে
পর পুরুষের বিকৃত অত্যাচার সয়ে।

একের পর এক
পর পুরুষের আনাগোনা প্রমোদঘরে
তাদের নোংরা বীর্য প্রমোদ-বালার দেহের পরে;
ঘরে পঙ্গু স্বামী, শিশু সন্তান
ক্ষুধার কামড়ে ক্রমাগত পেটে টান,
বেশ্যার দেহ বেচা উপার্জনে
স্বামী-সন্তানের পেট ভরে।

ওহে পর পুরুষ!
শিশ্নের ক্ষুধা মিটে গেলে
বেশ্যার বুকে শুয়ে
তৃপ্তির আবেশ কাটার পর;
বিবেকে আঁচর পরে কি?



শনিবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৪

আগে আর পরে


আগে আর পরে
- যাযাবর জীবন

অতৃপ্ত চাওয়ায়
তুই না আমি?
জীবন থেকে সব পাওয়ায়
তুই না আমি?
ক্লান্তির সীমানায়
তুই না আমি?
মরণের আঙ্গিনায়
তুই না আমি?

চিরনিদ্রায় কে যাবে?
তুই না আমি?

চাওয়ার নেশা পাওয়ার আশা
তোর যেমন আমার তেমন
ক্ষুধা তৃষ্ণা কামের নেশা
তোর যেমন আমার তেমন;
মনের মাঝে ভালোবাসা
তোর যেমন আমার তেমন;
দেহ ভরা রোগের বাসা
তোর যেমন আমার তেমন;

যেতেই হবে ঘুমঘরে চিরতরে;
তোর আর আমার
দুজনেরই
সবাই জানে
সবাই মানে;
কে আগে আর কে পরে
কে জানে'রে
কে জানে?


শুক্রবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৪

অঙ্কুশ-তাড়না


অঙ্কুশ-তাড়না
- যাযাবর জীবন

দুপুরের তপ্ত চাঁদে আকাশে ছিপ ফেলে
অন্ধকার ধরেছি অনেক
জ্যোৎস্না ধরা হয় নি,
মাছের ডানায় ভর দিয়ে পাখা মেলার আগেই
আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে মাথার ওপর;
রাতের কোমল সূর্যে নদীতে ডুব সাঁতারে
মেঘ ধরেছি অনেক
পানি ছোঁয়া হয় নি
পাখির ডানায় কতটুকু আর সাঁতার দেয়া যায়?
গভীর জলে বিচরণ তোর;
সকালের প্রেমের ইলশে গুঁড়িতে
বজ্র ওঠে দুপুরের ভালোবাসার নদীতে
বানভাসি আমি আশ্রয় খুঁজি আঁধারের তো'তে।

আমার আকাশ কুসুম কল্পনায় তুই চাঁদ অমাবস্যার
আমার ভালোবাসার আকাশে তুই চাঁদনি অধরার
ব্যবধান আকাশ পাতাল, আমা'তে আর তো'তে
ব্যবধান বয়সের
ব্যবধান সময়ের
ব্যবধান অনুভবের
ব্যবধান ভালোবাসার।

অন্ধ প্রেম অকাল বোধন, অন্ধকার দেখে চোখে
আলোকিত ভালোবাসা শুধু ভাগ্যবানের কপালেই জোটে;

কাক ভূষণ্ডী এ জীবন বয়ে কি হবে?
যদি তোকে নাই পেলাম।





বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৪

পাথর



পাথর
- যাযাবর জীবন

কাকপুকুরে চাঁদ হাসলে বিনুনিতে চাঁদনি বেঁধে রাখিস তুই
ধুসর রাতে নূপুর না হয় আমিই পড়াব তোকে
সূর্যের কান্নায় অমাবস্যা হাসলে;
পাথরের কান্নায় ধুতুরা ফুটলে
তবেই ভালোবাসিস আমায়
যদি ভাসতে চাস বিষাদের বিষে।

আকাশের দুই চাঁদ নিয়ে কি করব আমি?
চাঁদনি'তো তোর কাছে;
পাথরে হৃদয় ঘষে কেন শুধু আগুন জ্বালাস
অশ্রু'তো তোর চোখে।



পার্থক্য


পার্থক্য
- যাযাবর জীবন

কাল আর আজকের মাঝে পার্থক্য অনেক
পার্থক্য সময়ের
অনুভবের
স্পর্শের
ভালোবাসার;
কালকের ভালোবাসা আজকের বেদনা
আজকের স্পর্শ কালকের ঘৃণা
দুপুরের রৌদ্রালো রাত্রির কালো
কেও বোঝে কেও বোঝে না;
কালকে প্রাপ্তি
প্রাপ্তিতে তৃপ্তি
প্রেমে প্রশান্তি
খুব সাময়িক;
আজকে বিচ্ছেদ
প্রেমে রাহুর ছায়া
মনে অশান্তি
তাও সাময়িক;
কেও বোঝে
কেও বোঝে না
ধৈর্য ধরার ধৈর্য নেই কারো
পেতেই হবে যেন চাহিবা মাত্র;
পার্থক্য কেও বোঝে না
চাহিদা আর প্রাপ্তির
কালকের আর আজকের
দুপুর আর রাত্রের।


বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৪

ভালোবাসা


ভালোবাসা
- যাযাবর জীবন

ভালোবাসা মনের মাঝে বসত করে চিরদিন
ভালোবাসায় কাঁদা হাসা, ভালোবাসা অমলিন
ভালোবেসে সূর্যের হাসি ভালোবাসা জ্যোৎস্নার ঢল
ভালোবেসেই দুঃখ বিলাস ভালোবেসেই কান্নার ঢল।

আলো হবি হাসি হবি হাতটা যখন ধরে রইবি
দুঃখ হবি কান্না হবি যখন আমায় ছেড়ে যাবি
যখন যেথায় যেমন ভাবে যেমন করে চাইবি আমায়
তখন সেথায় তেমন ভাবে তেমন করেই পাবি আমায়।

তুই চাইলেই ভালোবাসার বৃষ্টি নামে আমার চালে
তুই চাইলেই কান্নার ঢেউ উথাল পাথাল মনের ডালে
ভালোবেসে বাঁচি আমি তোকে নিয়েই প্রতিদিন
ভালোবেসেই মরি আমি তুই বিহনে প্রতিদিন।


মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৪

ডাক



ডাক
- যাযাবর জীবন

খুব বেশি আরামপ্রিয় এ শরীরটা
এসি না হলে বড্ড হাঁসফাঁস, গরমে
হিটার না চললে বড্ড কাবু, একটু ঠান্ডা পড়লে
সহ্যই হয় না যেন অন্ধকার
ভালো লাগে না ঘরে সন্ধ্যের কালে
তিনটা বাতি একসাথে না জ্বললে
ফুল স্পীডে ফ্যান সে তো বারো মাস
দরকার থাক আর না থাক
ঘুরছেই বনবন করে মাথার ওপরে;
আর ছোট ঘর! সে তো সহ্যই হয় না
ডবল খাটে ফোমের বিছানা, না হলে তো চলেই না
সকালে বিকালে সন্ধ্যে আর রাতে
এক এক প্রহর এক এক কাপড়
আরামদায়ক মোলায়েম
দামী আর বাহারি রঙ এর
একটু ঘামের দাগ তো ছুড়ে ফেলা
নিত্যই নতুন নতুন কাপড় গায়ে তোলা।

শুনেছি সে ঘরটা নাকি খুব ছোট
জানালা বিহীন গুমোট গরম
তিনদিক বন্ধ মাথার ওপর দরজা
ঘরে ঢুকতেই মাটির দরজা বন্ধ
অন্ধকার সেখানে মিশমিশে কালো
শুতে হয় নাকি মাটির বিছানায়
একই সাদা থান কাপড়ে বছরে বারোমাস;
কদিন পর পর বন্ধুবান্ধব সব
একে একে সে ঘরে ঢোকে
আত্মীয় স্বজন চেনা মানুষজন
আর ফিরে না আসে
কদিন পর পর নতুন নতুন ঘর
যাওয়া আসা বারবার আমারই সেথা
আমিই পুরাতন
নতুন নতুন ঘরের দরজা আমি খুলি
এক এক করে কাছের মানুষগুলো
ঘরের ভেতর তুলি
সযতনে চোখের জলে দরজা বন্ধ করি
খুব অভিমানে পেছন না ফিরে
আমার বড় ঘরে ফিরি;
এসির বাতাস খাই, বিছানায় গা এলাই
বড্ড আরামপ্রিয় শরীর।

ধুর! ভালো লাগে না আর
কেন জানি ইদানীং প্রায়ঃশই বড্ড টান অনুভব করি,
মাটির টান, যেন ডাকছে আমায় ছোট্ট সে ঘর;
যেতেই হবে?
বড্ড ভয় লাগে যে!
তোমরা কেও চলো না আমার সাথে।












মন মাটি খেলা


মন মাটি খেলা

- যাযাবর জীবন

বেলায় বেলায় বেলা গড়ালো
নেচে গেয়ে হেসে খেলে
হলো, অনেক তো হলো!
মন বলে, আর বেঁচে তুই কি করবি রে মন
সন্ন্যাস সন্ন্যাসে মিলে নষ্ট গাঁজন
অনেক তো খেলা হলো
মন বলে এবার চলো, ঘরে চলো;
দরজা নাই
জানালা নাই
মাটির ঘর
আরামের শরীরে
ধর! এবার পোকায় ধর!!
তারপর মন আর আমি
মাটিতে মাটি।



সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৪

বোধের ওপারে বোধ



বোধের ওপারে বোধ

- যাযাবর জীবন

একে একে ছেড়ে যায় সবাই
আমাকেই;
কেও রাগে
কেও দুঃখে
কেও অভিমানে
আর আপনজনেরা একে একে চিরতরে অন্যভূবনে;
বোধহীন আমি ভেসে থাকি
বোধের সাগরে একা,
লাল নীল সাদা কালো সব বোধের ঝড়
সয়ে যাই নীরবে।

ভেবো না,
খুব সহসাই অন্যভূবনের ডাক আসবে আমারও;
তোমরাই রেখে আসবে আমায় সেদিন মাটির ঘরে
যারা মুখ ফিরিয়ে রেখেছ আজ
রাগে
দুঃখে
অভিমানে;
সেদিন কি দোলা লাগবে তোমাদের বোধের ঘরে?
বন্ধ চোখেও সেদিন আমি
দেখব ঠিকই তোমাদের মনের
লাল নীল সাদা কালো সব বোধের ঝড়;
অনুরোধ সেদিন
কেঁদো না।


রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৪

এভাবেই কেটে যায় সময়


এভাবেই কেটে যায় সময়
- যাযাবর জীবন

সূর্যের বৃষ্টি সারা দিনমান
ফোঁটায় ফোঁটায় তপ্ত গরম
দুপুর থেকে ঝরে পরে,
তীর্থের কাক চেয়ে থাকে আকাশ পানে
জ্যোৎস্না বৃষ্টির আশায়
গা জুড়োবে বলে,
মেঘবালিকার কালো মুখ
বিকেলের গোধূলি জুড়ে
বালিহাঁসের সারা গায় হিমেল অশ্রুকণা
সন্ধ্যেয় ঝরে পরে;
বেদনার বিবাগী সময়
বুনোহাঁসের ডানায় ভর দিয়ে
অজানায় উড়ে চলে;
ধুসর রাতে আধারের চোখে ছোপ ছোপ কান্নার দাগ
হৃদয়ের নীলঘরে আমার কারাবাস
স্পর্শের ওপারে তুই।

শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৪

দিনরাত্রি



দিনরাত্রি
- যাযাবর জীবন

এখানে ওখানে যেতে হয়
নানা কাজে
নানা সময়
তোর থেকে অনেক দূরে
ভাবিস কেন রে?
থাকিস তো তুই সবসময়ই আমার হৃদয় ঘরে
বুকের খুব গোপন পকেটে
যখনই সুযোগ পাই বুক খুলে তোর যুঁই গন্ধ মাখি
পথের ক্লান্তি ভুলে থাকি
তারপর আবার তুই মন পকেটে
আমি ব্যস্ত ভীষণ কাজে;
কেটে যাচ্ছে আমার ব্যস্ততার দিন
আর তোর গন্ধে মাখা অলস রাত্রি
তোকে ছাড়া
আর তোকে নিয়ে
বুকের নরম ঘরে
খুব একান্তে
তো'তে আর তো'তে
মাখামাখি হয়ে।



শুক্রবার, ২২ আগস্ট, ২০১৪

ধ্রুবতারা


ধ্রুবতারা
- যাযাবর জীবন

রাতের কথাগুলো দিনে অন্যরকম
রাতের লেখাগুলো সকালে বড্ড অচেনা লাগে
যেমন অচেনা লাগে আমার
নিজেকে নিজে,
সকালে
দুপুরে
সন্ধ্যায়
রাতে,
এক এক প্রহর
এক এক রূপে;
শুধু তোর চাঁদ মুখ ভাসে
মনের আকাশে;
বাকি সব হলোই বা অচেনা
তাতে আমার কিছুই যায় আসে না
তুই থাকিস ধ্রুবতারা হয়ে।

বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০১৪

তুই আর আমি


তুই আর আমি
- যাযাবর জীবন

পুবের হাওয়ায় পশ্চিমে দাঁড় বাওয়া তোকেই মানায়
ঈশান কোনে নীল ঝড় ওঠে অভিমানের আনাগোনায়
একপ্রান্তে চাহিদার পাহাড়
অপর প্রান্তে জালটেনে ঝাঁকে ঝাঁকে রূপালী প্রাপ্তি
মাঝে শূন্যতার নদী
নদীতে দখিণা বাতাসে পাল উড়িয়ে
মনে উত্তুরে হাওয়ায় চাদর গাঁয়ে
সেই তোর কাছেই ফিরে আসা
নৈর্ঋত ঘুরে;
চাঁদ আর চাঁদনি দুজন দুজনার
তবুও পায় না ছুঁতে কেও কাওরে
আমি তোর না হলেও তুই আমার
তবুও দুজন স্পর্শের ওপারে।

ব্যবধান সময়ের, কালের, নিয়তির
ব্যবধান তোর আর আমার
ব্যবধান আমাদের ভালোবাসার;
তোর ভুল হয়েছিল আমাকে ভালোবাসা,
সহজেই শুধরে নিয়েছিস;
আমার ভুল হয়েছিল তোকে মনে রাখা,
মনের মাঝে গেঁথে রেখেছি।

ঘুরে ফিরে তোর কাছেই,
অভিমানের শুকনো ছাতু গিলতে হয় আমাকেই
পানি দিতেও বড্ড আলসেমি তোর
গলায় ঠেকে গেলে বৈধব্য সইতে পারবি?





শনিবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৪

মধুচন্দ্রিমা


মধুচন্দ্রিমা
- যাযাবর জীবন

অন্ধকার চুঁইয়ে রাত্রি
প্রভাত চুঁইয়ে আলো
আকাশ চুঁইয়ে নীল
বেদনা বড্ড কালো;
মেঘ চুঁইয়ে জল
চোখ চুঁইয়ে কান্না
চাঁদ চুঁইয়ে জ্যোৎস্না
তোর মধুচন্দ্রিমা।

কোথায় হারিয়ে গিয়েছিস?
মন চুঁইয়ে ভালোবাসার দেয়াল বড্ড স্যাঁতস্যাঁতে
কান্নার পথ তো সমান্তরাল হতেই হবে
আমাকে ছাড়া তুই ভালো থাকিস কিভাবে?
এখানে ডুবছি আমি
ওখানে চাঁদনি
তুই ডুবেছিস ভালোবাসার ঘোরে।

বেদনা চুঁইয়ে অন্ধকার
আমি ছুঁয়ে দিতেই কান্না
কাঁচের স্বপ্নে হৃদয় কাটে আমারই
তোর মধুচন্দ্রিমা।



শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৪

অভিমান কথা বলে


অভিমান কথা বলে
- যাযাবর জীবন

রাতের দরজা খুললেই ঝপ করে অন্ধকার
অন্ধকারের ওপারেই অভিমানের উঁচু দেয়াল;
যদি দেয়াল পাড়ি দেয় প্রেমিক হাঁচরে পাঁচরে
হোঁচট খাওয়া প্রেম অভিমানের পদতলে,
আর নয়তো প্রেম'ই মুখ থুবড়ে পড়ে
অভিমানের দেয়ালটা একটু বেশী উঁচু হলে;
একটু হয়তো চোখ থেকে টুপ করে দু-ফোঁটা কান্না
খুব সাময়িক, বিচ্ছেদে এটাই তো স্বাভাবিক;
তবে ক্ষতি কারোর'ই হয় না খুব বেশী,
না প্রেমিকের না প্রেমিকার;
আদতে "প্রেমের'ই সমাধি" অভিমানের সরোবরে
আর 'অভিমান' বিজয়ীর বেশে সদর্পে নৃত্য করে
'প্রেম'এর মাথার পরে;

অন্ধকারে ওপারেই নতুন সূর্য, নতুন কিরণ
জীবন ধেয়ে চলে আবার নতুনের সন্ধানে
নতুন প্রেম কথা বলে;
পুরানো প্রেম! কে কয়দিন মনে রাখে?
ক্রমাগত একই ধারা চলে আসছে সেই প্রেমের আদিকাল থেকে,
তুই তা বদলাবি কি ভাবে?


বুধবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৪

লাটাই


লাটাই
- যাযাবর জীবন

অর্ধেক তুই
অর্ধেক আমি
অর্ধেক প্রেম
ভালোবাসা বলে দামী
তবুও যখন তখন প্রেম উবে যায়
দুজন দুদিকে হর হামেশায়;

অর্ধেক ঘুড়ি
অর্ধেক লাটাই
কড়া মাঞ্জা
পুরো সুতাই
তবুও যখন তখন সুতা ছিঁড়ে যায়
ঘুড়ি উড়ে চলে দূর অজানায়;

জীবন ঘুড়ির লাটাই অন্য কারো হাতে
আমরা আকাশে উড়ি
সুতো ছাড়ে সে
আমরা ভেসে চলি
কাটাকাটি খেলে সে
মাটির দেহ মাটিতে।



ভয়


ভয়
- যাযাবর জীবন

যেদিন ঝুম বৃষ্টি হবে
সেদিন খোলা আকাশের নীচে ভিজতে ভিজতে মনে করিস
এক প্রতিবন্ধী আধামানব তোকে ভালোবেসেছিল;
যেদিন আকাশে জ্যোৎস্নার প্লাবন হবে
সেদিন চাঁদের আলোয় ভিজতে ভিজতে মনে করিস
এক প্রতিবন্ধী আধামানব তোকে ভালোবেসেছিল;
আর যেদিন তোর চারিদিক অন্ধকার হবে
যেদিন কেও রইবে না পাশে
যেদিন বৃষ্টি হবে না আর পৃথিবীতে
যেদিন জ্যোৎস্নায় পূর্ণ-গ্রহণ হবে
সেদিন না হয় একবারেই চলে আসিস
প্রতিবন্ধী অর্ধমানব এর কাছে;
পাশাপাশি দুটো ছোট্ট মাটির ঘর
চেয়ে নিয়েছি আমি ওপরওয়ালার কাছে
জানিসই তো আমার একা থাকতে বড্ড ভয় করে।


মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০১৪

হাসি কান্না


হাসি কান্না
- যাযাবর জীবন

কেও কেঁদে হাসে
কেও হেসে কাঁদে
কেও বোঝে
কেও অভিমানে পথ খোঁজে;
কেও ওপরে হাসে ভেতরে কাঁদে
কেও ভেতরে হাসে ওপরে কাঁদে,
জীবনেরই অংশ হাসি-কান্না, দুঃখ-বেদন
জীবনের দৃশ্যপট পরিবর্তনের সাথে সাথে
অনুভূতির পরিবর্তন;

হাসি আনন্দের অনুভূতি
ছড়িয়ে দিতে হয় সবার মাঝে
সবাইকে হাসিমুখ দেখাতে হয়;
কান্না শুধুই নিজের
হাসিমুখে দুঃখগুলো বয়ে যেতে হয়
মানুষ থেকে সযতনে ঢেকে রাখতে হয়।

জীবন ঘুড়ি


জীবন ঘুড়ি
- যাযাবর জীবন

নানা রঙের ঘুড়ি ওড়ে নীলাকাশে
নানা রঙের লাটাই মানুষের হাতে
ছোট-বড় নানা মানুষের হাসি-আনন্দের চোখ থাকে রঙ্গিন ঘুড়ির দিকে
তারই ফাঁকে কিছু মানুষ নামক জানোয়ার খুব সঙ্গোপনে
দাঁড়ায় পাশে এসে বন্ধু বেশে
ঈর্ষার কাঁচি কিংবা ঘৃণার সিগারেট হাতে
খুব গোপনে লাটাইয়ের সুতোতে কাঁচি চালায়
কিংবা সিগারেটের একটু স্পর্শ সুতোর গায়
সুতো কেটে দূর আকাশ পানে ঘুড়ি উড়ে যায়
মানুষ লাটাই হাতে হতাশ চেয়ে থাকে
এভাবেই ক্রমাগত জীবন ঘুড়ির সুতো কেটে চলে
মানুষ নামক জানোয়ারের হাতে।


অনুভব


অনুভব
- যাযাবর জীবন

এই তো কিছুক্ষণ আগে
এখানে কিছু ভালোবাসা রেখে গিয়েছিলাম;
বুক ঠুকরে খেয়ে গেলো কাকে,
কপাল আমার!
যাক গে, উচ্ছিষ্ট যেটুকু পড়ে আছে তাতেই আমার চলে যাবে
বাকি কটা দিন, যতটুকু এখনো অবশিষ্ট আছে;
পাথরে ঘাস বুনে গোলাপ তোলার স্বপ্ন আমি দেখি না
জংলা-ঘাটার দু চারটা ধুতরাতেই আমার বেশ কাজ চলে যায়
চাহিদার সীমাবদ্ধতা বোঝে কজন?
ফড়িঙের পিছু দৌড়ে কি হবে?
যদি দিবাস্বপ্ন উড়ে যায় প্রজাপতির ডানায়।

আমি ভালোবাসার উচ্ছিষ্টাংশটুকুই না হয় সযতনে পুষে রাখব
বুকের খাঁচায়;
কেও জানবে না,
না তুই
না কাক
না গোলাপ
না প্রজাপতি
না আমাদের ভালোবাসা।

শুধু নিথর দেহে ঘাসফুল ফুটলে
সযতনে তুলে রাখিস সেদিন তোর ফুলদানীতে
সাদা কাপড়ে ঢাকার আগে;
সেটুকুতেই তোর ঘর আলো হবে।




সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০১৪

চাঁদের সাথে ভাগাভাগি

চাঁদের সাথে ভাগাভাগি
- যাযাবর জীবন

প্রতিটি চাঁদনি রাতে মন কষাকষি চাঁদের সাথে
তাইতো চাঁদ'কে ভাগ করে দিয়েছি চাঁদনি
আমার ভাগে তুই;
কলঙ্কিত চাঁদ
কলঙ্ক সব আমার
শুভ্র চাঁদনি
শুভ্র তুই;
চাঁদের কলঙ্ক তোকে স্পর্শ না করুক
আমি দূরে সরে রই।

হাত বাড়িয়ে ধরতে জ্যোৎস্নার ঢল
উঠে আসে হাতে চটচটে নোনাজল
কত যুগ হয়ে গেছে কাঁদি নি আমি
তবুও রক্তের মাঝে অশ্রুর কোলাহল।



স্বামী সোহাগী


স্বামী সোহাগী
- যাযাবর জীবন

বড্ড হারিয়ে যাবার ইচ্ছে ছিল তোর, আমাতেই;
পা কোথায়?
কোথায় নূপুর?
বিছানায় জড়াজড়ি প্রেমের পূজারী
তুই আর আমি
আদিম পুরুষ
আদিম নারী।

রমণের শীৎকার তুঙ্গে তোর মুখ থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসলো
তোরই স্বামীর নাম,
আমার বোধোদয়ের ঘুম ভাংলো
সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়লো অর্ধভুক্ত হিংস্র বাঘ;
'কি হলো'? বলে চিৎকার করে উঠলি তুই;
নিশ্চুপ আমি তোর খালি পায়ে নূপুর পড়িয়েছিলাম
অভিমানের ঝমঝম শব্দে পথ ফিরেছিল তোর সংসার;
রমণ প্রেমের তরে
শীৎকার স্বামীর ঘরে।


বোকারামের বোধন



বোকারামের বোধন
- যাযাবর জীবন

ঢাক ঢোল কানারা বাজিয়ে
ধুমধাম গাঁয়ের লোক খাইয়ে
ঘরে বৌ এনেছে বোকারাম;
বাসর রাতে রমণ সুখে
বৌ এর মুখ থেকে ছিটকে বের হলো হরিনাম!
বোকারাম বোকা হয়ে কয়
ও কি বৌ! রমণে কোথায় গো হরির স্থান?
বৌ বলল, ওরে ও বোকা
কালে কালে শুনবে আরও কত কথা
কত সব মহা-মনীষীর নাম
যখন যেভাবে যেখানে যে গুরু
আমারে করেছিল দীক্ষাদান
পদে পদে আমি সেসকল গুরুর, চরণে করি গো প্রণাম;
সেদিন থেকে বৌ এর সাথে সাথে
চলতে ফিরতে
খেতে বসতে
শয়নে স্বপনে
ঘুম ও জাগরণে
কাম আর রমণে
বোকারামও জপতে লাগল
হরি
তোপসে
বুবাই
কানাই
আরও কত কত সব নাম না জানা গুরুজীর নাম।

একদা শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে দেখে বোকা
সকল মহা-মনীষীই যে আছে সেথা
কেও মাসতুতো ভাই
তো কেও পাড়া'তো ভাই
কেও কর্মচারী
তো কেও পাশের বাড়ি
হরি, তোপসে, বুবাই, কানাই
মলয়, প্রলয়, গুরু সবাই
আছে তার শ্বশুরকুলে
জপত বৌ এর সাথে যে সকল নাম
আছে তারা সকলেই
শ্বশুরবাড়িতে সশরীরে বিদ্যমান।



শনিবার, ৯ আগস্ট, ২০১৪

"তুই"


"তুই"
- যাযাবর জীবন

'তুই' নামক এক যন্ত্রণা
কাঁদার, হাসার, ভালোবাসার
পুষে যাচ্ছি সেই বোধেরও আগে থেকে;
'তোকে' না পারি দেহে জড়িয়ে নিতে
না পারি ভুলে যেতে,
'তোকে' ছাড়া দিন কাটে না
'তুই'বিহীন রাত্রি আসে না;

'তুই' আছিস কোন না কোনভাবে
অষ্টপ্রহর জড়িয়ে আমায়
চিন্তায়
চেতনায়
স্বপ্নে
অনুভবে;
দিনে, মনের ঘরে
রাতে, ঘুমের ঘোরে।



বুধবার, ৬ আগস্ট, ২০১৪

এলোমেলো নস্টালজিয়া


এলোমেলো নস্টালজিয়া
- যাযাবর জীবন

এইতো সেদিন,
আধকপালি ব্যথাতে যখন মেঘ জমেছিল তোর পটলচোখে
আমি আধশোয়া তোর মাথার কাছে, তুই ছিলি আধোঘুমে
ডুকরানো বজ্রপাতে যেই না অঝোর বৃষ্টি নামলো
কিংকর্তব্যবিমূঢ় আমি নিয়েছিলাম তোর অশ্রু চুমে,
ঘুমভাঙ্গা আধচোখে যেই না তুই তাকালি
ওমনি সূর্যের উঁকি রাতের আকাশে
দূর হলো থিকথিকে গাঢ় বেকুব অন্ধকার
তুই হাসলি, ছড়িয়ে পড়লো চাঁদনি;
আলোকিত রাতের কথা কার না মনে পড়ে, অন্ধকার দিনে!

অনেক দিন নিক্বণ হাসি ভেসে আসেনি ঘুমঘোর স্বপ্নে
ঘুঙুরের ঝমঝম শব্দ শুনিনি বহুদিন বোবাকানে
আধকপালি মাথাব্যথাটুকু থাকুক অর্ধ-মানবের ছায়াসঙ্গী হয়ে
আবার সূর্য ওঠার আগে, মায়ারাতে।



মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট, ২০১৪

পানিপথের জীবন


পানিপথের জীবন
- যাযাবর জীবন

মানুষ মরে
মানুষ মরবে
পিপীলিকার মত মরছে প্রতিদিন
তলাফাটা নৌকোতে নৌকাডুবি
গাদাগাদি ভীরে লঞ্চ-ডুবি
পানিপথে চলবেই,
চলবেই প্রতিদিন।

আমরা দেখে যাব
কিছুক্ষণ উহ্ আহ্
তারপর প্লেট উপচানো ভাত নিয়ে
তরকারিতে ঝাল কিংবা লবণের কম-বেশে গলা ফাটানো;
মরছে মানুষ
মরছে প্রতিদিন
দিনে উঁহু আহা মরণ দেখে
রাতে প্রিয়ার বুকে রমণ সুখে;
তারপর, নির্লিপ্ত ঘুম।

মানুষ মরছে,
মরছে মনুষ্যত্ব,
মরছে প্রতিদিন।




ন-মানুষের কথা


ন-মানুষের কথা
- যাযাবর জীবন

তোমাদের কাছে ভালো খাবার বলতে
একসময় ছিল পোলাও, কোরমা, কোপ্তা, কালিয়া
ইদানীং ষ্টেক হাউজ, গ্রীল হাউজ, রেডিসন কিংবা ওয়েস্টিন;
আমার কাছে সেদিন থেকে এখন পর্যন্ত কব্জি ডুবিয়ে পানিভাত
সাথে একটু পোড়া মরিচ বা শুঁটকি ভর্তা, তো সোনায় সোহাগা।

তোমাদের কাছে বেড়াতে যাওয়া মানে
একসময় ছিল নেপাল, ভুটান, ইন্ডিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া
ইদানীং ইউরোপ ঘুরে আফ্রিকা কিংবা আরও দূরে অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা অথবা এন্টার্কটিকা;
আমার কাছে ঘোরাঘুরি বলতে বাড়ির কাছে খোলা মাঠ, হাঁটা-রাস্তা, নানা রঙের মানুষ
খুব বেশি হলে মাছ-সাঁতারে মাছেদের সাথে নদী জলে কচুরিপানা।

তোমাদের কাছে বন্ধুত্ব মানে
সামনাসামনি বসে গল্পে মাতা, খাওয়ার প্লেট সামনে আড্ডার তুবড়ি
ইদানীং আবার একসাথে লাল পানি কিংবা কি কি সব পাউডার নেশায় বুঁদ;
আমার কাছে বন্ধুত্ব মানে মনের খোলা বই, দুজন দুজনার'টা পড়ে নেওয়া
খুব বেশি হলে অবসরে একসাথে কিছুদূর পথ হাঁটা।

তোমাদের কাছে প্রেম মানে
খেলা খেলা, আজ এ তো কাল সে তারপর বদল; নতুন তো হরহামেশাই পাওয়া যায়
ইদানীং আবার স্পর্শের খেলা থেকে বিছানায় চলে যাওয়া, খুব ডালভাত হয়ে গেছে;
আমার কাছে একটাই মাত্র প্রেম
প্রাগৈতিহাসিক হৃদয়ে দিনরাত্রির অষ্টপ্রহরে 'একঘেয়ে তুই'।

তোমাদের আর আমার চাহিদা সম্পূর্ণ ভিন্নমুখী
সাধ্য ও সামর্থ্যের মাঝেও রয়েছে বিস্তর ফারাক;
তোমাদের সাথে কখনই আমার মেলে নি
না মন ও মানসিকতায়
না আর্থিক অবস্থানে,
তবুও একসাথেই আছি, ছায়া হয়ে পাশাপাশি - সামাজিক জীব বলে কথা;
পুরোপুরি সত্যি কি?
তোমরা মানুষ; আমায় "ন-মানুষ" ডাক কেন?





সোমবার, ৪ আগস্ট, ২০১৪

উজান ভাঁটি


উজান ভাঁটি
- যাযাবর জীবন

নদীতে উজান
নদীতে ভাঁটার টান
নদীর পানি নদীতেই থাকে
স্থান পরিবর্তন শুধুই কচুরিপানার;

প্রেমের আগমন
হৃদয়ে রক্তসঞ্চালন
প্রস্থান? সে তো প্রেমেরই প্রতিদান,
একটাই হৃদয়
আনাগোনা ভালোবাসার।


ঘর


ঘর
- যাযাবর জীবন

একটা ঘর
ঝিল্লী ঝিল্লী
পিচ্ছিল দেয়াল
ধুকপুক ধুকপুক শব্দ
লাল লাল তরল
আসে যায় আসে যায়
ক্রমাগত ক্রমাগত;

ঘরটা একা, দরজা খোলা
নানা রঙের মানুষ
ঢুকে আর বের হয়
অবিরত কোলাহল ঘরের ভেতর
কেও থেকে যায়, লাল আরও লালচে হয়
কেও চলে যায়, লাল কালচে হয়
ধুকপুক ধুকপুক শব্দটা অবিরত রয়।

আমি নৈঃশব্দ্যের অপেক্ষায়।



শনিবার, ২ আগস্ট, ২০১৪

নানা রঙের সম্পর্ক



নানা রঙের সম্পর্ক
- যাযাবর জীবন

আমাদের দৈনন্দিন সম্পর্কগুলো
কাছের, দূরের
নানা রকম মানুষের সাথে
নানাবিধ মানুষগুলো নানা রঙের
নানা পদের, নানা ঢঙের।

মায়ের কোলে সন্তান
নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার সর্বোত্তম স্থান
বাবার কাঁধে যদি থাকে মাথা
নিশ্চিন্ত নির্ভাবনা মনেতে রয় গাথা
সন্তানের কাঁধে যদি বাবা-মা হয় ভার
কেন এত কম পড়ে যায় রে হায়!
সন্তানের বড্ড যে টানাটানির সংসার।

ছোট বেলায় ভাই-ভাই দুজনা দুজনার
বৌ ঘরে এলো তো আলাদা পরিবার
ভাই-বোন সম্পর্কটা জড়িয়ে থাকে মায়ায়
স্বার্থের সংঘাত তাতে যদি না ফাটল ধরায়।

বন্ধু-বান্ধব!
একরাশ পাগলামি
যথা ইচ্ছে তথা চলা
যা ইচ্ছে কথা বলা
নেই কোন সীমা'র গণ্ডি
তুই তোরা আমি তুমি।

প্রেমিক-প্রেমিকা?
বড্ড নাজুক এ সম্পর্ক
চপলতা, চটুলতা, রাগ, দুঃখ, ঘৃণা
মান অভিমান; কি নেই এতে?
তবুও হঠাত আসা দমকা বাতাসে
সম্পর্কে ফাটল ধরে, পারে না থামাতে।

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক?
সে তো রামায়ণ থেকে মহাভারত হয়ে
পাহাড় থেকে নেমে এসে সাগরে গিয়ে মেশে
হাঁড়ি খুন্তির লড়াইয়ের কথা কে না জানে?
তবুও সকলেই প্লেট পেতে বসে;
কখনো জাউ ভাত তো কখনো পোলাও
কখনো বৈশাখ তো কখনো হেমন্ত
কখনো তপ্ত দুপুর তো কখনো মধুচন্দ্রিমা
পরস্পর জড়িয়ে থাকে একে অন্যের সাথে
কখনো অভিমানে মুখ ফেরে তো কখনো পথ গোনে
ভালোবাসার স্পর্শের অপেক্ষার কড়ানাড়া
খুব অল্প ব্যতিক্রম বাদে আদতে বিশ্বাসের এ সম্পর্কটি
পরস্পর নির্ভরতায় ভরা।

সম্পর্ক গড়ে
সম্পর্ক ভাঙে
নানা রঙের নানা ঢঙের মানুষের সাথে
কারণে আর অকারণে।





পূর্ণতা


পূর্ণতা
- যাযাবর জীবন


অর্ধেক মন
অর্ধেক শরীর
একটু দেখা চোখের
একটু স্পর্শ ঠোঁটের
অর্ধেক আবেগ মনে
অর্ধেক ভালোবাসা কামে
দুই অর্ধেকে মিলে পূর্ণ যে নাম
তাকে কি প্রেম বলে?

মন মরে গেলে শরীর দিয়ে কি হবে?
কিংবা শরীর মরে গেলে?
ভালোবাসা কয়দিন, বাসা বেঁধে রবে মনে?

শুধুমাত্র অনুভবে কি ভালোবাসা হয়?
পড়ে থেকে দুজন দু-ভুবনে।


বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০১৪

বন্ধুত্ব টিকে থাক


বন্ধুত্ব টিকে থাক
- যাযাবর জীবন

অনুভবে তোকে ধরতে যাই
বন্ধুত্বের তিতলি উড়ে যায়
প্রেম কানে কানে কয়
তারে ধরতে নয়;
যতই মন পোড়াই
ততই তোতে জড়াই
যেন এই আছি এই নাই
প্রেমের অন্ধ গলিতে বন্ধু, তোরে হারাই;
তার থেকে তোর জন্য যত ভালোবাসা
উড়িয়ে দিলাম
তুই ছুঁয়ে দিলি
আমি তোর হলাম
ভালোবাসা একান্তই আমার হলো
অনুভবে অনুভূত
হৃদয়ে একান্তে,
শুধু হাত বাড়ালে নাই
তুই
ভালোবাসা
অনুভব
ক্ষরণ আমার, লাল থাকুক তোর মনে
হৃদয় আমার পোড়ে, দাবানল বনে বনে।

বন্ধুত্বকে ভালোবাসার মাত্রায় নিয়ে গেলে
সম্পর্ক পরিধি হারায়
বৃত্তের কেন্দ্রে হয়তো ভালোবাসা কেন্দ্রীভূত হয়
বন্ধুত্ব অবশ্যই অতলে ডুবে যায়;
তার থেকে বন্ধুত্ব হোক অমলিন
তোর আর আমার
বন্ধুত্বের সম্পর্ক টিকে থাক চিরদিন।





রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০১৪

টুকিটাকি


টুকিটাকি
- যাযাবর জীবন

...
দর্পণে হাত রাখি
ধরি তোর হাত
স্পর্শের অনুভব তো মনের ভেতরেই
মুঠোতে না হয় নাই বা পেলাম।

...
কিছু অনুভূতি ভেঙ্গে যায়
ইচ্ছা বা অনিচ্ছায়
মুখ নিঃসৃত কিছু কথায়
কিছু স্পর্শহীনতার টোকায়
আর কিছু ভালোবাসা-হীন পরে থেকে থেকে
অনুভূতিটাই ঝরে যায়.........

...
এক গ্লাস ভালোবাসা
এক চিমটি চুমু
প্রেমের চামচে ঘুঁটা;

এই নে তোর ঘুমের ওষুধ.....


...
একে একলা
দুইয়ে ঝগড়া
তিনে তা ধিন ধিন তা

...
কেও বাকি নেই,
সবাই খেলছে মাঠে
যে যার সামর্থ্যে;
ব্যাট তোর হাতে তো ছক্কা
বল তোর হাতে তো আউট;
আমি গ্যালারীতেই বেশ আছি, একা।

হাত তালি দেওয়ার কেও না থাকলে চলে?


...
অনুভূতিহীন হলেই কেবল
তীক্ষ্ণ অনুভূতিগুলোকে ধারণ করা যায়
সূক্ষ্ম আর তীক্ষ্ণ অনুভূতির মুখোমুখির পরিণাম
সম্পর্কের ক্ষয়


...
না মেঘ না বৃষ্টি
না রাত না চাঁদনি

কথা বললেই কি ভিজে যেতে হয়?



...
আকাশে জ্যোৎস্নার ঢল

মন পালানোর রোগটা বড্ড বেয়াড়া
বাড়ী থেকে বের হতেই রাস্তা হারানো
ফিরে আসার পথটা খুব সংকীর্ণ
জানা আছে
তবুও কি অমাবস্যা চাঁদকে ধরে রাখে?

চাঁদের টর্চ জ্বেলে চাঁদনি খুঁজছি;
তোকে খুঁজে এনে
এবার আমি হারাবো।


...
একটা সুতা ছেড়া ঘুড়ি
একটা ভাঙা লাটাই
কাঁচের মাঞ্জায়
সুতোর দু প্রান্তে জড়িয়ে;
কাটাকাটি খেলায় দুজন বিচ্ছিন্ন হলো
পেছনে মায়া রেখে গেলো।

অর্ধেক আমি
না হয় তুই অর্ধ মানবী
অধুরা যদি থাকে ভালোবাসা
তবুও তা বড্ড যে দামী।

বৃষ্টিতে অঙ্কুরোদগম
বৃষ্টিতে বন্যা
আমরা না হয় গাছের ছায়া খুঁজি।


...
"সহজ সুন্দর বন্ধুত্বের সম্পর্কের ইতি টানার জন্য প্রেমের একটি ঝাপটাই যথেষ্ট"

তবুও বন্ধুত্বের দেয়াল ভেঙ্গে কেও প্রেমে পড়ে
হয়তো কিছুদিন প্রেম করে
তারপর প্রেমে মরে
তারও পরে প্রেম মরে
অবশেষে আবার হাত বাড়ায় বন্ধুর খোঁজে;

বন্ধুত্ব মরে গেছে কবেই তো সেদিন
প্রেমের প্রথম ঝাপটা এসেছিল যেদিন।


...
ফেসবুকে সারারাত প্রেমের ফেরিওয়ালা
মধ্যাহ্ন ঘুমে দিনের অর্ধাংশ পাড়,
পিঠে মাটি ঘষে মালকোঁচায় নেমে পড়ে ডুবপুকুরে
চাঁদ ওঠার আগে
নুনজলে হাতরে ফেরে রাতের ছিপের আধার;
খুব বেশি পানসে হয়ে গেলো কি চাঁদের রুটিটা?


...
চিনেছিস কতটুকু?
মনের দর্পণে দেখেছি যতটুকু;
পারদ সরে গেলে?
ভাবব নতুন করে;
সেদিন চিনতে পারবি আমায়?
রাতের অন্ধকারে দিবাস্বপ্ন দেখতে হয় না।

...
তোকে ফিরিয়ে দেবার সময় মনে মনে বলেছিলাম
ভালোবাসি অনেক;
জবাবে তাকিয়ে ছিল আমার পানে তোর চোখের জল
নীরবে বয়ে গিয়েছিল সেদিন অশ্রু হয়ে,
আজো প্লাবন হয়ে ভাসায় আমায়
প্রতি পূর্ণিমা রাতে;
খিলখিল হাসিতে চাঁদ ওঠে
রিনঝিন হাসে বক্র চোখে
দেখতে দেখতে পূর্ণিমা হারিয়ে যায়
অমাবস্যার বাঁকে
চাঁদনি ধরা হলো না আজো আমার
চাঁদের রাতে।

...
টিকটিক দৌড়ে চলেছে জীবন ঘড়ির কাঁটা
কেও ভুল করে ভুলে থাকতে চাই
কেও ভুলে ভরা জীবন কাটাই
হঠাৎ ঘড়ির কাঁটা থেমে গেলে তবে
বোধের ঘুম ভেঙ্গে সেদিন লাভ কি হবে?


...
চোখের ভাষা ভিজে যাওয়ার পর
টুপ করে গড়িয়ে পড়লো কিছু মুক্তোদানা
মন পেতে কিছু নিলাম
বাকিটুকু হারালাম;

যা ঝরার তা তো ঝরে যাবেই
তবুও কোথায় জানি আটকে থাকে
দলা পাকানো কিছু ব্যথা
অব্যক্ত রয়ে যায় কিছু কথা;

ক্ষরণ না হলে ভালোবাসার সার্থকতা কোথায়?

...
খুব হঠাৎ করেই হয়ে যায় শেষ
হঠাৎ করে ঠেলে আসা মনের যত আবেগ
ভালোলাগা আর ভালোবাসার রেশ;

দ্রুত লয়ের তালে সুর মেলাতে পারে ক-জন?

...
তুই হিব্রু ভাষায় কথা বলিস
আমি ল্যাটিন ভাষায় প্রেম করি
মাঝে মাঝে ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে যায়
চুমু নাকি একে বলে বাংলায়
ভালোবাসার আলাদা ভাষা আছে নাকি?

...
উত্তরে বলি
দক্ষিণে শোনে
পূবে হাসে
পশ্চিমে কাঁদে
ঝড়ের ভাষা কেও বোঝে না
বাতাস ছোটে আকাশ পানে

...
কারণ যে থাকতেই হবে
এমন তো কোন কারণ নেই
যা ঘটার তা ঘটে যায়
ভুল করে অথবা ঠিক ভাবে
চাইতে আর না চাইতে
জানতে আর অজান্তে
অবহেলায় কিংবা ভালোবেসে
কারণে আর অকারণে।

...
একদিন ঠিক আমি পাখি হব
একদিন ঠিক আকাশে উড়ে যাব
না হয় হাঁসের ডানাই পিঠে বেঁধে নেব
তবুও সাধ উড়ে যাবার একবার
ঐ দূর আকাশের গায়
না হয় ডানা ভেঙ্গে পড়েই যাব
মরণ তো হবেই একবার
তবুও বড্ড সাধ ইকারাস হবার
মাত্র একবার
মরণের আগে শুধু একবার.



শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০১৪

সর্বনাশ


সর্বনাশ
- যাযাবর জীবন

চিন্তার ঘূর্ণনে তুই
এক বার দুই বার, সারাদিনে বার বার
পেন্সিলের ঘূর্ণনে নিব ভাঙ্গে কত বার
কবিতা হয় না;
আমি মায়া আঁকতে যাই যতবার,
বিন্দু থেকে বৃত্তের ছায়াপথ ঘুরে
তোর আঙ্গিনাতেই এসে হোঁচট খায়
বার বার;
আমি ছায়া এঁকে যাই তোর মায়ায়।

রাতের প্রহরান্তে সর্বনাশ উড়ে বেড়ায়
আমি ডানা মেলে দেই তোর ভালোবাসায়।

পুকুর


পুকুর
- যাযাবর জীবন

অঢেল পানি কাকচক্ষু পুকুর জলে
কত মানুষ বেড়াতে আসে
কতজন পাড়ে বসে
কতজন গল্প করে
কতজন ঢিল ছুঁড়ে
কেও খেলার ছলে
কেও ভালোবেসে
কেও ব্যথা দিতে
কেও বা পাশ দিয়ে আসতে যেতে
পুকুর দেখলেই ঢিল ছুড়তে ইচ্ছে করে।

ঢিলের আকার অনুযায়ী ঢেউ ওঠে পুকুর জলে
অল্প বা বেশি
ছোট ছোট মাটির ঢিল গলে যায় পুকুর জলে
কিছু বড় মাটির ঢিল হয়তো অন্দোলন তোলে
তারপর একসময় পুকুরের বুকে মিশে যায় গলে;
খুব মাঝে মাঝে কিছু পাথরের ঢিল এসে পড়ে
পুকুরের বুকে বড় অন্দোলন জাগায়
পুকুর গায়ে কিছু ব্যথাও হয়তো পায়
সময়ের সাথে গড়িয়ে নামে পুকুর তলে
আঁচড়ায়, কামড়ায়, ক্ষরণ তোলে
তারপর এক সময় শান্ত হয় পুকুর জল,
পাথরের ঢিল কি গলে?
সে ঢিল রয়ে যায় পুকুরের বুকে
পুকুর জলে
পুকুরের গভীর তলে।

পুকুরের কান্না দেখেছে কে?
ক্ষরণ পুকুর তলে
নোনাজল মিশে চলে পুকুর জলে।





শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০১৪

অন্ধকার ঘরে একা


অন্ধকার ঘরে একা
- যাযাবর জীবন

তোদের জন্য কত বড় বাড়ি করে দিয়েছি
আমায় এত ছোট ঘরে কেন রে নিয়ে এলি?
তোদের কি খুব অভাব চলছে এখন?
পাশ ফেরার জায়গা মেলে না।
তোদেরকে বুকে করে রেখেছি সারাটি জীবন
তবে আজ মাটিতে কেন শুইয়েছিস আমায় এখন?
একটা খাট কিনে দেবার সামর্থ্যও কি নেই তোদের আজ?
বালিশটাও দিলি না।
অন্ধকারে বড্ড ভয় পেতি তোরা ভাই বোন
বাবার গায়ের গন্ধে পেঁচিয়ে শুতি তোরা তখন
আমায় এখন অন্ধকারে কেন রাখলি?
কারেন্টের কি এতই আকাল পড়েছে
নাকি তোদের হাতটান যাচ্ছে
আচ্ছা তা হলে একটু মোমবাতিই দিয়ে যা জ্বালিয়ে
অন্ধকার বড্ড দমবন্ধ লাগে আমার।

ও কি?
ও কি?
আমায় একা ফেলে সবাই কোথায় চললি তোরা?

ও আমার ভাই বোন
ও হে পরিবার পরিজন
আমার সোনা মানিক সন্তান
ওরে ও আমার আত্মীয় স্বজন
আমায় একা রেখে কোথায় যাচ্ছ তোমরা?

এই এই
একটু দাঁড়াও না,
আমাকে একা ফেলে যেও না।

ছোট্ট এ সাড়ে তিন হাত ঘরে
বড্ড অন্ধকার এখানে চারিদিক চোখের পরে
আমার বড় দমবন্ধ লাগে
আমার বড্ড ভয় করে।

কেও কথা শোনে না কেন?

ওরে ও বাছাধন
আমায় একা ফেলে যাস না রে বাবা
ও আমার পুত্রধন
কি করি নি তোর জন্য সারাটা জীবন
এখন এ অন্ধকার মাটির ঘরে আমায় একা ফেলে
চলে যাচ্ছিস কেন তোরা সবাই মিলে
এই কি দিলি আমার ভালোবাসার প্রতিদান?
তুই না ছিলি আমার কত আদরের সন্তান?

আমার বড্ড ভয় করে
এত অন্ধকার কেন এখানে চোখের পরে
ছোট্ট এ সাড়ে তিন হাত মাটির ঘরে।

সোমবার, ২১ জুলাই, ২০১৪

অনুভব


অনুভব
- যাযাবর জীবন

একটা সুতা ছেড়া ঘুড়ি
একটা ভাঙা লাটাই
কাঁচের মাঞ্জায়
সুতোর দু প্রান্তে জড়িয়ে;
কাটাকাটি খেলায় দুজন বিচ্ছিন্ন হলো
পেছনে মায়া রেখে গেলো।

অর্ধেক আমি
না হয় তুই অর্ধ মানবী
অধুরা যদি থাকে ভালোবাসা
তবুও তা বড্ড যে দামী।

বৃষ্টিতে অঙ্কুরোদগম
বৃষ্টিতে বন্যা
আমরা না হয় গাছের ছায়া খুঁজি।



বন্ধুত্ব ও প্রেম


বন্ধুত্ব ও প্রেম

- যাযাবর জীবন

"সহজ সুন্দর বন্ধুত্বের সম্পর্কের ইতি টানার জন্য প্রেমের একটি ঝাপটাই যথেষ্ট"

তবুও বন্ধুত্বের দেয়াল ভেঙ্গে কেও প্রেমে পড়ে
হয়তো কিছুদিন প্রেম করে
তারপর প্রেমে মরে
তারও পরে প্রেম মরে
অবশেষে আবার হাত বাড়ায় বন্ধুর খোঁজে;

বন্ধুত্ব মরে গেছে কবেই তো সেদিন
প্রেমের প্রথম ঝাপটা এসেছিল যেদিন।




রবিবার, ২০ জুলাই, ২০১৪

হিসেব


হিসেব
- যাযাবর জীবন

'মাশুল গুনতেই হয় মানুষকে'
অন্যায় কৃতকর্মের
কিংবা ভুল পথে জীবন যাপনের
আজ, কাল বা পরশু
এ জীবনে কিংবা অন্যভূবনে;
যদি সুদাসলে মাশুল চড়ে এ জীবনে
ভেবে নিও খুব বাঁচা বেঁচে গেলা অল্প-দামে,
তোমার থেকে হতভাগা আর কে আছে?
যদি মূল্য দিতে হয় সে জীবনে;

হিসেবে বড্ড পাকা সে
ওপরে বসে কলকাঠি নাড়ে যে।

শুক্রবার, ১৮ জুলাই, ২০১৪

আমিও মানুষ


আমিও মানুষ
- যাযাবর জীবন

ষড়রিপুর কবল থেকে বের হয়েছে কবে, কে?
মানুষ না বলে তাকে দেবতা বলে;
বাইরে দেখি চোখ ঝলসে যাওয়া আলো
মনের ঘরেই তো আছে অন্ধকার কালো
সেখানে ঘুমিয়ে থাকে
কাম ক্রোধ লোভ মোহ মদ ও মাৎসর্য
যখনি রিপুর জোয়ার আসে রাতের অন্ধকারে
যা কিছু সামনে পায় মুখে পুরে
সাপের ছোবলে টুক করে
তারপর আবার নিপাট ভালোমানুষ
কদিন রিপুর খাদ্যে জাবর কাটে
আবার থাবা মেলে খিদে পেলে
ক্রমাগত
মানুষ বলে কথা!

খুব মাঝে মাঝে নিজের ভেতর তাকাই
নিজেই চমকে যাই
রিপু এসে মাথা কুটে আমার চৌকাঠে
দরজা খুলে স্বাগত জানাই
রিপুর কবলে সঁপে দেই নিজেকে
মহানন্দে ভূরিভোজন রিপুর খাদ্যে
তারপর নিপাট ভালোমানুষটি সেজে
আবার কেওর দেই মনের ঘরে;
আরে আরে
দ্বিচারিণী শ্বাপদ দেখি আমারই ভেতরে।






বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০১৪

সিঁড়ি



সিঁড়ি
- যাযাবর জীবন

সিঁড়িটা ওপর থেকে নীচে নেমে গেছে
কিংবা নীচ থেকে ওপরে উঠে গেছে
কেও ওপর থেকে দেখে
কেও নীচে দাঁড়িয়ে
দুজনাই যার যার জায়গায় ঠিক
সিঁড়ি সিঁড়ির জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে স্থবির।


উল্টোরথ


উল্টোরথ
- যাযাবর জীবন

আমি উত্তরে বলি, দখিনা বাতাস বয় তোর কানে
আমি পূবে চলি তোর কদম বাড়ানো পশ্চিমে
আমি যা বলি তুই তা বুঝিস না
তুই যা শুনতে চাস আমি তা জানি না
শুরু থেকেই শুরু হয়েছিল ভুল বুঝাবুঝির খেলা
ভালোবাসা গাছের সাথে হয় না
অশ্রুধারা পাথরে দাগ কাটে না;
চল উল্টোরথে চেপে বসি
তুই
আমি
দুজনেই
আলাদা হয়ে
পূর্ব ,পশ্চিম ,উত্তর ,দক্ষিণ,ঈশান ,বায়ু,অগ্নি, নৈঋৎ, ঊর্ধ্ব, অধঃ
একবার যাত্রা শুরু করলে কোথাও তো যাব!

ক্রমাগত ভুল বুঝার চেয়ে
কিছু না বুঝে দূরে সরে যাওয়া, ঢের ভালো;
প্রথম প্রথম ক্ষরণ হবে হয়তো
সময়ে সয়ে যাবে
তোর
আমার
দুজনারই,
হাঁড়িকুঁড়ি তো বেঁচে যাবে
কিংবা কানের পর্দা
সেই ভালো, সেই ভালো।




বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০১৪

দুরকম ভালোবাসা


দুরকম ভালোবাসা
- যাযাবর জীবন

দুজনের বাস দু-ভুবনে
দুজন জীবনের দুরকম ছবি আঁকে
দুজন দুরকম স্বপ্ন দেখে
দুজন দুভাবে ভালোবাসে
কেও কাওকে পায় না ছুঁতে
তবুও দুজন একরাশ ভালোবাসা বুকে বাঁচে
পরস্পরের তরে
হৃদয়ের অনেক গভীরে;

আকাশ আর মাটি একে অপরকে টেনে রাখে
তবুও কেও কারো পারে না হতে
অনেক দূরে তারা এক সাথে মিশে
ঠিক রেললাইনের পাতের মত;
কোথাও না কোথাও ব্যবধান রয়েই যায়
আকাশ আর মাটিতে
রেলের দুটি পাতে
জীবনের পথে
দুজনের স্বপ্নে
কিংবা ভালোবাসায়।

কালের স্রোত


কালের স্রোত
- যাযাবর জীবন

সময়ের নৌকা
কি দ্রুতবেগেই না পারি দেয় জীবন সমুদ্র
চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই;
এইতো সেদিন মায়ের কোলে
তারপর হামাগুড়ি
বায়নার শিশুকালটা চোখের নিমিষে
কোথা দিয়ে দিলেম পাড়ি
লাটিম ঘুরতে না ঘুরতেই
কৈশোরের দাড়িগোঁফের ভিড়ে হারিয়ে গেল ছেলেবেলা;
জানা ছিল না প্রেম কাকে বলে
তবুও কি এক ভালোলাগার অনুভূতি তাকে দেখতেই
কৈশোরকে ল্যং মেরে তারুণ্য এগিয়ে গেলো
নারী যেন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হলো;
বারে বারে প্রেমের দুধবমিতে অস্থির যৌবনের পদার্পণ
থিতানো ভালোবাসায় থিতু হলো যৌবন।

ষাঁড়ের শিঙে রঙ মেখে সং সেজে শুরু হলো সংসার
চাকুরীর জোয়ালের ওপরে, উপরি বৌ এর জোয়াল
নুন আনতে পান্তা ফুঁড়োয় সকাল বিকেল
কাচ্চাবাচ্চা ট্যাঁ টো
কোথা দিয়ে সময় উড়ে গেলো
দেখতে না দেখতে প্রৌঢ়ত্ব
আল্লাহ্‌ বিল্লাহ তসবি হাতে
সংসার তখন অনেক বড়
ছেলে মেয়ের বিবাহ
কত ব্যস্ততা, কত খুশি, কত আয়োজন
প্রথম নাতি হওয়ার দিনটির কথা ভুলতে পারে কজন?
চোখের পলক ফেলার আগেই
প্রৌঢ়ত্বের দোরগোরে বার্ধক্যের কড়া নাড়া
সময়কে কি বেঁধে রাখা যায়?
দিতে হয়েছিল সাড়া।

তারপর যেন সব এলোমেলো
আষ্টেপৃষ্ঠে জীবনকে জড়িয়ে বুড়িটা বেশ তো ছিল
জীবন থেকে কেমন জানি হঠাত করেই বিদায় নিলো
কাওকে কিছু না বলেই না ফেরার দেশে চলে গেলো;
অনেক অনেক দিনের পুরনো অভ্যেস বসে
রাতে ঘুমের ঘোরে হাত ছড়িয়ে দেই পাশে
খুব ফাঁকা লাগে
যেন বুকের কোথায় কি একটা নেই হয়ে গেছে
বড্ড একলা লাগে।

সময় পিছলে নামে সময়ের ফাঁকে
ছেলেমেয়ে কেমন দূরে সরে থাকে
বুড়োটাকে আর কাহাতক সহ্য হয়?
বৌমার ইদানীং বড্ড কষ্ট হয়
নাতি নাতনীদের ঘরের বড় টান
তিনটে মাত্র ঘরে এতগুলো মানুষের অবস্থান
বুঝি, হয়না আর জায়গার সংকুলান।

তার পরের কিছু কথা না হয় থাক অজানা
আমার এখন অনেক বন্ধু, সবার চেনা ঠিকানা
বড় সংসারে অনেক বড় বাড়ি, পারি নি আমি দিতে
বড্ড ইচ্ছে করে আমার বুড়ির কাছে যেতে
এখন যেন সময় কাটে না আর অপেক্ষার দিনগুনে
বড্ড আরামে ছেলে আমায় রেখেছে বৃদ্ধাশ্রমে।



https://www.youtube.com/watch?v=Ya8MkAV71eg


ভাঙন



ভাঙন
- যাযাবর জীবন

আয়না ভাঙে
ঝরে পরে টুকরো হয়ে
আয়নাতে মায়া
সাজায় টুকরো কুড়িয়ে;
টুকরোতে মুখ দেখে
টুকরোরে স্বপ্ন
আবার ভাঙে টুকরো হয়ে
ঝরে পড়ে অবিরত
ক্রমান্বয়
আবার টুকরো হয়
আবার সাজায় কুড়িয়ে;
একসময় টুকরো গুড়ো গুড়ো হয়
প্রেম গুড়ো গুড়ো সেদিন হয়, নিশ্চয়
গুড়ো দর্পণে হৃদয় কাটে হয়তো
রক্ত ঝরে কি?

ভাঙা আয়না হাতে বসে আছি।

ভালোবাসার ধরণ



ভালোবাসার ধরণ
- যাযাবর জীবন

প্রেমের উৎস কোথায়?
মনে?
মন কোথায়?
মস্তিষ্কে, না হৃদয়ে?
মস্তিষ্কে তো হলুদ পদার্থ, লজিক বোঝে
মন বুঝবে কি করে?
তবে, হৃদয়ে?
সেখানে তো অন্ধ অলিগলি
ধুকপুক রক্ত সঞ্চালন
লাল লাল ক্ষরণ;
আরে, প্রেম মানেই তো ক্ষরণ।
লজিক বলে হলো না,
দেহের ভেতর অনুভূতি নামক
অণু পরমাণুর সঞ্চালন
ছোঁয়াছুঁয়িতে ইলেক্ট্রিসিটি প্রবাহ
শরীর গরম
কামে উল্লাস, ভালোবাসার প্রকাশ;
আরে, আরে তাই তো?
কে বলে প্রেম মনের ভেতর!
মনেতে প্রেম দেহতে প্রকাশ
ভালোবাসার অনুভূতি
আদতে সবটাই শরীর নির্ভর।

চোখের দেখা, ভালোলাগা
স্পর্শে ছোঁয়া, কাছে আসা
উত্তপ্ত দেহ উত্তেজনা চরম
কামে ঠাণ্ডা অথবা মেজাজ গরম
ভালোবাসার আঠা ধরে রাখে
অথবা প্রেম গলে দুজন দুদিকে।